গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৬

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৬ ] 


এই তো আর কয়েকদিন বাদে রুমুর এইচএসসি পরিক্ষা শুরুতে পড়াশোনা নিয়ে মেয়েটার খুব বেশি চিন্তা নেই কিন্তু উজ্জ্বলের আছে।উজ্জ্বল বারবার বলেছে এই বছর গ্যাপ দে আগামী বছর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে পরিক্ষায় বসবি কিন্তু রুমু এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।সে চায় না এক বছর গ্যাপ চলে যাক ভাগ্যে যা আছে হবে।

শরীরের ক্ষত ধীরে ধীরে শুকিয়ে এসেছে রাশেদ এখনো ফনা তুলে আছে কখন সুযোগ পাবে আর কখন ঝামেলায় জড়াবে।উজ্জ্বলকে দেখা গেল তার ভিন্ন চিত্র সে চাইছে না ঝামেলা হোক।


পড়ার টেবিলে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ল রুমু নার্গিস পর্দার আড়ালে মেয়েটার অবস্থা দেখে ছুটে আসলেন,


" রুমুরে উঠ মা।"


রুমু চোখ খুলল।ঘুম ঘুম চোখে বলে,


" কী হয়েছে?"


" কী হয়েছে?ঘুমিয়ে পড়লি কেন?উজ্জ্বল দেখলে রাগারাগি করবে।"


" করুক রাগারাগি।যে ঔষুধ পেটে পড়ছে সারাক্ষণ শুধু ঘুম আর ঘুম।"


" চা করবো?"


" করো।"


নার্গিস ছুটে গেলেন রান্না ঘরে।ইদানীং রুমুর প্রতি তার আদর যত্ন বেড়েছে যদিও আগেও ছিল কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় দূরত্ব বাড়েছে।তবে উজ্জ্বলের বাবার রাগটা পড়ল না তিনি এখনো নিজের রাগে সচল।

.

গরমে দরদরিয়ে ঘামছে উজ্জ্বল হাতে চায়ের কাপ।থেকে থেকে চুমুক দিয়ে তাকাচ্ছে সৈয়দ ইসমাইলের পানে।ভরা বাজারে একটা ছোট চায়ের দোকানে বসেছে তারা।রাশেদ আজ শহরে নেই বিশেষ দরকারে সকাল সকাল শহরের বাইরে গেছে।


" চাচাজান আমাকে ডাকলেন কেন?"


" কিছু জরুরি কথা ছিল।"


" বলেন।"


" শোন তোর এবং তোদের ভালোর জন্য বলছি রাশেদের সাথে ঝামেলা করিস না।ওর মাথা ঠিক নেই কখন কি করবে... আমি এসব চিন্তায় দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছি।"


" গতকাল আমি রুমুকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম জিডি করে এসেছি।এভাবে তো ভয় ভীতি নিয়ে থাকা যায় না।আমি চাইলেই ওর সাথে লড়াই করতে পারি ঠিক আগের মতো দু'পক্ষের লড়াই।এতে লাভ কি হবে চাচাজান?সেই তো রক্তারক্তির খেলা।তাছাড়া আমি লড়াই করবো কেন? আমার যা চাই তা আমি পেয়েছি।"


" তোকে আমি এটাই বোঝাতে চাই।তোরা সাবধানে থাক।রাশেদ পাগলা কুকুরে পরিণত হয়েছে আর এসব করার সাহস দিচ্ছে ওর মা।ওর মায়ের ইন্ধনে ছেলেটা এত বাড় বেড়েছে।"


" তোমার জন্য আফসোস হয়।তোমার একমাত্র ছেলেটা..."


সৈয়দ ইসমাইল হতাশার শ্বাস ছাড়লেন।পকেট থেকে একটি চেক বের করে বাড়িয়ে দিলেন উজ্জ্বলের নিকট।


" এটা কি চাচাজান?"


" রুমুর নামে একটা একাউন্ট ছিল টুকটাক টাকা জমিয়েছি তার বিয়ের জন্য।আমার একমাত্র মেয়ে বিয়েতে অনেক বড়ো আয়োজন করার ইচ্ছে ছিল তবে এসব এখন কিছুই হবে না তাই বলছি যে টাকাটা তুই রাখ।এটা রুমুর টাকা রুমুর মানেই তো তোর।"


" আশ্চর্য!এই কথা বলতে আপনি আমাকে এখানে ডেকেছেন?"


" তোর বাবা যে রেগে আছে আমি জানি।তোদের সংসারব কি হচ্ছে টুকটাক আমার জানা আছে।তুই তো নিজেই বললি ব্যবসা করবি কিন্তু টাকা কোথায় পাবি?"


" সে জোগাড় হয়ে যাবে।"


"উজ্জ্বল ব্যবসা করলেই যে লাভবান হবি এত সোজা নয়। ব্যবসায় পরিশ্রম,বুদ্ধি,দক্ষতা,কুটিলতা সবটা জানতে হয়।"


" কিন্তু করবো কি তা ভেবেই.... "


" যা করবি ভেবে চিনতে কর।আর টাকাটা রাখ টাকার কথা যেন কেউ না জানে।"


" এই টাকা আমি রাখতে পারব না চাচাজান।"


" ত্যাড়ামি ছাড় টাকাটা রাখ উজ্জ্বল।"


" মাফ করবেন চাচাজান।আপনি শুধু দোয়া করবেন আমরা যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারি।


সৈয়দ ইসমাইল আশাহত হলেন।চেকটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইলেন উজ্জ্বলের পানে।উজ্জ্বল তাতে অবশ্য হাসল সে কিছুতেই এই টাকা নেবে না।

.

রুমু পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে উঠেছে কোল থেকে বইটা ছুড়ল বিছানায়।উজ্জ্বল তার কান্ডকারখানা পর্যবেক্ষণ করে বলে,


" কিরে বই ছুড়লি কেন?"


" পড়াশোনা কঠিন উজ্জ্বল ভাই।"


" এই কে তোর ভাই?"


উজ্জ্বল ধমকে উঠল অথচ এই ধমককে পাত্তা দিল না রুমু,


" অভ্যস তো মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।"


" পড়া শেষ করা ছাড়া উঠবি না।পড়া শেষ কর তোর সাথে জরুরি কথা আছে।"


"আমারো জরুরি কথা আছে।শুনেন, উজ্জ্বল আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?কতদিন হলো বাইরে যাই না।"


" বাইরে যাওয়া যাবে না।রাশেদ ভাইপারের আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাক।"


" রাশেদ ভাইপার মানে!"


" রাসেল ভাইপারের জমজ ভাই।"


রুমু ফিক করে হেসে ফেলল।মেয়েটা হাসতে হাসতে চেয়ার উলটে পড়ার আগে উজ্জ্বল দ্রুত হাতে ধরে ফেলল।


" কথাটা মন্দ বলেননি তবে যাই হোক আমাকে আজ ঘুরতে নিয়ে যাবেন।"


" কোথায় যাবি?"


" চলেন ফুসকা খাইতে যাই।"


" তোর ভাই দেখলে কিন্তু ঝামেলা করবে।"


" আপনি কি ভয় পান?"


" একদমি না।রুমু আমি তোর জন্য ভয় পাই।রাশেদ তোর ক্ষতি করবে এই ভয়ে দম আটকে আসে।"


" ভয় পাবেন না।মনে করুন আমরা লুকিয়ে প্রেম করছি ব্যাপারটা মজা না?"


" তুই পাশে থাকলে সবটাই মজার।"

.

রাস্তার ধারে ফুসকা হাতে বসে আছে রুমু।মেয়েটা গপাগপ ফুসকা মুখে তুলছে।উজ্জ্বল পাহারাদারের ন্যায় আশেপাশে তাকিয়ে পরখ করছে।রুমু দ্রুত একটি ফুসকা পুরে দিলো উজ্জ্বলের মুখে।


" এসব মেয়েলী খাবার আমি খাই না।"


" মেয়ে তো ঠিকি খান।"


রুমুর জবাবে উজ্জ্বল বিষম খেল দাঁত কিড়মিড়িয়ে রুমুর পানে তাকাল কয়েক সেকেন্ড।


" দিন দিন তুই বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।"


" জানি।"


" এই দুপুরের খাবার শেষে ওষুধ খেয়েছিস?"


" না খাইনি রাতে খেয়ে ফেলব।"


" তুলে একটা আছাড় মারব।টাইম টু টাইম ওষুধ না খেলে তুই সুস্থ হবি?তোর কি আর আক্কেল হবে না?"


" আমি দুপুরের ওষুধ রাতে খাব,ঔষুধ কি করে জানবে রাত নাকি দুপুর?"


উজ্জ্বল এবারো চুপসে গেল।রুমুর যুক্তির কাছে সে পেরে উঠে না।


"তোর সাথে জরুরি কথা আছে।"


" বলুন।"


" চাচাজান আজ আমাকে একটা চেক দিল।তোর বিয়ের জন্য নাকি টাকা জমিয়েছে সেই টাকা দিয়ে আমাকে বলল ব্যবসার কাজে লাগাতে।"


" আপনি কি বললেন?"


" বারণ করেছি।"


" বারণ করলেন কেন?"


" তোর বাপের টাকা আমি নেব?"


" ওটা আমার টাকা।আব্বা যেহেতু দিতে চাইল আপনি অবশ্যই আনবেন।"


" অবশ্যই আনব মানে?"


" উজ্জ্বল টাকাটা যেহেতু আমার আমি যে পথেই খরচ করি সেটা আমার সিদ্ধান্ত।আমি বলছি টাকাটা আনুন ব্যবসার কাজে লাগান।"


" আমি তোর টাকায় কেন ব্যবসা করব?প্রয়োজনে লোন নেব।"


" আপনাকে লোন কে দিবে?"


" আমি সিয়ামের সাথে কথা বলেছি একটা এনজিও থেকে লোন নেওয়ার চেষ্টা করছি।"


" বেশ যা ভালো হয় করুন।"


" আমার একটা ফ্রেন্ড বুদ্ধি দিল রেস্টুরেন্ট করাটা বেস্ট হবে।"


" হুম করুন আমিও তো তাই বললাম।"


" তোর শ্বশুরকে দেখিয়ে দেব আমি কি করতে পারি আর না পারি।"


" দেখান বারণ করেছি?কিন্তু রেস্টুরেন্টের জমিটা? "


" তোর শ্বশুরের কম জমি আছে?"


" যদি না দেয়?"


" আন্দোলন হবে।"


সারাটা বিকাল উজ্জ্বল আর রুমু একসাথে সময় কাটাল।উদ্দেশ্যেহীন পথে হাঁটল তারা আগাম জীবন নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত একে অপরকে জানাল।


রাতের খাবার শেষ করে সৈয়দ শামসুলের কক্ষে গেল উজ্জ্বল তার বুক কাঁপছে।কি করে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবে?পাশে দাঁড়িয়ে নার্গিস ভরসা দিলেন রুমু তখন দরজায় দাঁড়িয়ে।


" আব্বা একটা কথা ছিল।"


" বল।"


" বাজারের যে খালি জমিটা পড়ে আছে ওই জমিটা আমার লাগবে।"


" কি দরকার?"


" আব্বা আমি রেস্টুরেন্ট দিতে চাই।"


সৈয়দ শামসুল হেসে ফেললেন।হাত থেকে  মোবাইল সরিয়ে তাচ্ছিল্য সুরে বলেন,


" ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এই রুমে এলি নাকি? যা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমা।"


" আব্বা আপনি মজা নিচ্ছেন?"


" মজা নেওয়ার মতো কথা বললে মজা নেব না?"


" আব্বা আমাকে একটা সুযোগ দেন।জায়গাটা তো পড়েই আছে আমি কাজে লাগাই।"


" কাজে লাগাবি?তা বাকি টাকা কোথায় পাবি শুনি?আমি কিন্তু এক টাকাও দেব না।"


" টাকার জোগাড় আমি করব।আমার শুধু জমিটা চাই।"


" শুনো উজ্জ্বল আর লোক হাসাবি না।যা পারবি না তা নিয়ে তামশা করা বাদ দে।রেস্টুরেন্ট খোলা এতই সহজ?আমি তোর এসবে নেই আমি জমিও দেব না।"


" আমি তো বলিনি সহজ।আপনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমার কোন বিষয়ে সাহায্য করবেন না তখন আমি আর কি বলতে পারি?আমার জীবনের বড় সিদ্ধান্ত গুলোতে আপনি বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছেন এখনো দাঁড়াচ্ছেন।"


" উজ্জ্বল!"


সৈয়দ শামসুল ধমকে উঠলেন তবে উজ্জ্বল ভয় পেল না।সে দৃঢ় চিত্তে এখনো দাঁড়িয়ে।


" আব্বা আমি ভুল বলেছি?পড়াশোনায় বাঁধা দিয়েছেন নিজে কিছু করতে চেয়েছি তাতেও বাঁধা দিয়েছেন।রুমু নিখোঁজ হওয়ার পর যখন খুঁজতে সাহায্য চাইলাম তখনো বাঁধা দিয়েছেন।"


" তোকে..."


শামসুল উজ্জ্বলের দিকে তেড়ে আসার আগে নার্গিস এগিয়ে এলেন।স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলেন,


" ওগো রাগ করে লাভ নেই উজ্জ্বল যা করতে চাইছে করতে দাও।আমাদের একমাত্র ছেলে তার ... "


" কে আমার ছেলে?আমার ছেলে হলে ও এসব কথা বলতে পারত?"


"  রাগের মাথায় এসব না বলে উজ্জ্বলকে জমিটা দিয়ে সাহায্য করুন।"


" কাগজে কলমে লিখে দিতে হবে নাকি?আমি কাল জমি তোমার ছেলের নামে করে দেব দুইদিন পর দেখা গেল সে জমি বিক্রি করে টাকা উড়াচ্ছে তখন?"


উজ্জ্বল হেসে ফেলল,


" আব্বা আমি জমি লিখে দিতে বলিনি আমি শুধু বলেছি অনুমতি দেন আমি সেখানে রেস্টুরেন্ট করতে চাই।"


" বেশ দিলাম অনুমতি আমিও দেখতে চাই কি কি করতে পারিস।"


উজ্জ্বল বুকের মাঝে হাত ভাজ করে শামসুলের মুখোমুখি দাঁড়াল এবং শুধায়,


" পারতেই হবে আব্বা।লড়াইটা আমার আর আপনার আমি দেখিয়ে দেব সৈয়দ উজ্জ্বল আনিস কি কি করতে পারে।"


" এত বড় বড় কথা বলিস না,আমি দেখব কি করতে পারিস।"


" ইনশাআল্লাহ পারব।"


" যদি না পারিস?"


" যদি না পারি তবে আমি শামসুইল্লার পোলা না।"


চলবে...


0 Comments:

Post a Comment