গল্প এক_তুমিতেই_আসক্ত পর্ব ২৫

 #এক_তুমিতেই_আসক্ত 

#আয়ান_মাহমুদ 

|২৫|


---


ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়া। কফির কাপ ঠোঁট ছোঁয়ায়নি কেউ। তাসনিম যেন মুখে আগুন নিয়ে বসে আছে।


– “তন্নী, তুই কি সত্যি চুপ করে থাকবি?”

তাসনিম গর্জে ওঠে।


তন্নী ধীরে মাথা নেড়ে বলে,

– “আমি জোর করতে চাই না, তাসু। আব্বু সময় চাইছে…”


– “ওই ‘সময়’ নামক ধারণাটা তো তোর আব্বু একাই নিয়েছেন! তুই কি জানিস, তোর আব্বু এখনো কেমন ভেবে বসে আছে সমাজটাকে? তুই কি জানিস, তুর্যকে নিয়ে ওরা কত নিচু ধারণা পোষণ করছে?”


তিহান শান্তভাবে বলে,

– “তাসু, রাগ দিয়ে কিছু হবে না। আমাদের যুক্তি দিয়ে ওদের মানাতে হবে।”


রাফায়েল সোজাসুজি বলে,

– “We need to face him. Tanni’s father. Eye to eye.”


---


তুর্য তাসনিমের কথা শুনে বলে,

– “আমি কারও বাবার সামনে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই না। আমি আমার মতো চলতে চাই, কারো কাছে বিক্রি হতে চাই না।”


তাসনিম হঠাৎ থেমে যায়। তারপর হালকা গলায় বলে,

– “তুই বিক্রি হচিস না তুর্য। তুই দাঁড়িয়ে যাচ্ছিস। তোর মতো একজন ছেলের সামনে মাথা নত করা উচিত ছিল ওদের।”


তিহান বলে,

– “তুর্য, তুই তন্নীর জীবনে আছিস কারণ তুই ভালোবাসিস, না? তাহলে তোর ভালোবাসাকে ওর পরিবারকে বোঝানোও তোর দায়িত্ব। জোর নয়, বোঝানো।”


রাফায়েল জানায়,

– “তন্নীর বাবা কিছুদিন পর পর্তুগাল আসবেন বিজনেস ট্যুরে। আমাদের কাছে সময় আছে নিজেকে মেলে ধরার।”


---


ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিগগিরই হতে যাচ্ছে Cultural Night। প্রতিটি দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের দেশের সংস্কৃতি ও পরিচয় তুলে ধরবে।


তাসনিম বলে,

– “এই হচ্ছে আমাদের প্ল্যাটফর্ম। আমরা এখানে তুর্যকে মঞ্চে দাঁড় করাবো—তাকে নিয়ে এক ডকু-পারফর্ম্যান্স বানাবো। ওর জীবন, সংগ্রাম, ওর অর্জন, ওর আবেগ—সব।”


তন্নীর চোখ বড় হয়ে যায়।

– “কিন্তু সেটা তো ব্যক্তিগত হয়ে যাবে না?”


তিহান হাসে,

– “না, ওটা হবে সত্যিকার ভালোবাসার একটা মঞ্চ। যেখানে তোর বাবা বসে দেখবে, সেই ছেলেটা কতটা অন্যরকম।”


---


রাতের লাইব্রেরি রুমে সবাই মিলে স্ক্রিপ্ট লিখছে। তুর্য হালকা বিরক্ত হয়,

– “তোমরা এত কিছু করছো, অথচ আমি কিছুই বলতে পারছি না।”


তাসনিম বলে,

– “তুই শুধু থাক, তোর মতো করে। বাকিটা আমরা সামলে নেবো।”


তিহান হেসে বলে,

– “ভালোবাসা যখন শুধু অনুভবেই সীমাবদ্ধ থাকে, তখন তাকে প্রমাণ করার দায়িত্ব পড়ে বন্ধুদের উপর।”


---


তন্নী একদিন সকালে আব্বুর চিঠির উত্তর পায়। সংক্ষিপ্ত, কেবল এক লাইন:


> “ভালোবাসা বুঝতে পারি, কিন্তু বিশ্বাস গড়তে সময় নিতে হয়।”


তন্নীর চোখে জল আসে। সে চিঠি তুর্যকে পড়ে শোনায়।


তুর্য বলে,

– “আচ্ছা, তাহলে সময়ই সঠিক উত্তর হবে। তবে এবার সময়কে আমাদের পক্ষে কাজ করাতে হবে।”


---


রাত বাড়ছে, তাসনিম স্টেজ রিহার্সালের জন্য পাগল। তিহান একজোড়া কবিতা তৈরি করেছে। রাফায়েল ভিডিওর জন্য পুরোনো ছবি আর ফুটেজ জোগাড় করছে।


তাসনিম বলে,

– “এই রাতটা হবে এমন, যেটা তন্নীর বাবাও ভুলতে পারবে না। যে কোনো সমাজের পুরনো চিন্তাধারা হঠাৎই ভেঙে পড়ে, যদি সেখানে ভালোবাসার আলো পড়ে।”


---


রাতের ছাদে তুর্য ও তন্নী চুপচাপ দাঁড়িয়ে। দূরে টাগুস নদীর জলরাশি হালকা জ্যোৎস্নায় ঝিকমিক করছে।


তন্নী মাথা হেলিয়ে বলে,

– “তুই জানিস, আমি জিততে চাই না তুর্য। আমি শুধু চাই, আমরা কেউ হেরে না যাই।”


তুর্য উত্তর দেয়,

– “তুই পাশে থাকলেই আমি জিতেই থাকি, তন্নী।”


---

0 Comments:

Post a Comment