গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব:২
সোহরাব- এই তোদের কত দুর হলো চল বের হতে হবে।
সোমেহরা(সোমে)- দাড়া ভাই মেয়ে মানুষ রেডি হতে সময় তো লাগবেই।
অনিমা- ভাই তোমার কি মনে হয় আমরা যে এই কাজ করি বাড়ির কেউ জানতে পারলে গণ ধুলাই না দিয়ে ছাড়বে?
তনিমা- আহা চুপ কর তো,কাজে যাওয়ার সময় ওসব বলতে নেই।
সোহরাব- উড়নচন্ডী আরেক টা কই?
মোমেহরা- উনি হয়তো এখনো ছাদে।
সোহরাব- এ বোইন এ তোরা আমাকে কি পেয়েছিস? ১০ টায় মিটিং এখন বাজে ৯.৩০ যাবো কখন?
তনিমা- আমি দেখছি কি করে আপু, সে আসলে কোথায়?
সোহরাব- যাহ বোইন যাহ।
আলোরা- কাউকে কোথাও যেতে হবে না আমি তৈরি।
সোহরাব- তো আমার অপ্রিয় বোন গন চলেন যাওয়া যাক।
সোমেহরা-তনিমা-অনিমা-আলোরা- চলো....
পাঁচ জনে মিলে অতি গোপনে যে যার মতো করে বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে।সোহরাব গাড়ি চালাচ্ছে আর টুকি টাকি প্রয়োজনীয় কথা বলছে।সকলে মিলে মিনিট বিশেক এর মধ্যে গন্তব্য স্থলে পৌছে যায়।তারা ভেতরে গিয়ে দেখে আজ একজন মাত্র বুড়ি দাদি এসেছে।তাকে সামনে নিয়ে বসে আছে মেহরাব।
তাদের আসতে দেখে মেহেরাব উঠে দাড়ায় আর কাজ শুরু করতে বলে সে বাইরে বেরিয়ে যায়।
..........................
গণ ধর্ষনের শিকার হওয়ার পর থেকে তাসলিমা নামক মেয়েটা কোথায় যেনো নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলো।কোন মানুষের দ্বারা যে তার এমন দুর্দশা হয়নি তা সে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিলো।তার ভাষ্যমতে সে সেদিন সন্ধ্যায় পানি আনতে ঘাটে গিয়েছিলো সেই ঘাটেই বসে ছিলো দুটো মানুষ প্রথমে মানুষ দেখে ভয় পেলে ও মনে সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় কিন্তু সে যখন কাছাকাছি গিয়েছিলো তখন দেখতে পায় সেখানে আসলে কিছুই নেই।সন্ধ্যাবেলার দৃষ্টিভ্রম ভেবে সে আর ভয় না পেয়ে জল তুলতে ঘাটের কাছে গিয়ে কলসি যখন পানিতে ডুবিয়েছিলো একটা লোমশ হাত তার হাত ধরে টান দেয় আর পানির অতলে নিয়ে যায়।এরপর তার আধ্যাত্মিক কথা গুলো কারো বিশ্বাস হলো -কারো হলো না। তবু ও সে বলে গেলো,
-পানির নিচে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো পানি থাকলেও তা দিনের মতো ঝকঝকে পরিক্ষার ছিল সেখানে ঘরবাড়ি গাছপালা ছিলো।মানুষ ছিলো না যে আমার হাত ধরা ছিলো সে মানুষের মতো কিন্তু সারা শরিরে লোম আর মুখ টা বিভৎস সিম্পান্জির মতো।আমি মনে মনে আল্লাহ কে সরণ করছিলাম যেনো জানে বেচে ফিরি।এরপর আমার আসে পাসে আরো কয়েকটা একি প্রানি এসে উপস্থিত হলো ভয়ে আমার জান শরির ছাড়ার মতো অবস্থা তবুও অদৃষ্টের দোষে আমি কোনভাবেই হুশ হারালাম না।তারা আমার সাথে পাশবিকতা চালাতেই লাগলো কখন শেষ হলো তাদের হিংশ্রতা জানানেই শুধু মনে আছে আমি মারা যাচ্ছিলাম আমার চোখে অন্ধকার ছিলো আমার হাত-পা অসাড় হয়ে গিয়েছিলো। আমার নিশ্বাস শেষ পর্যায়ে ছিলো হয়তো। এরপর কিছু জানি না যখন চোখ মেললাম তখন পরিচিত অপরিচিত মুখ আমাকে ঘাটের পাড়ে ঘীরে রেখেছিল আমার গায়ে ছিল সামান্য কিছু কাপড়।সন্ধ্যায় পঞ্চায়েতে সে এমন কথাই বলে একরাশ চাপা কষ্ট নিয়ে উঠান থেকে হেটে ঘরে যায় তারপর আর কোন খোজ তার পাওয়া যায়নি।
আদরের বোনের লথা বলতে গিয়ে চোখ ভরে পানি চলে আসে রাহিলা বেগমের ।
-পিঠোপিঠি হওয়ায় কতশত বার মারামারি বেধেছে তাদের।একবার শীতের শুরুর রাতে দুইবোন কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম প্রতি রাতে সে সব টুকু কাঁথা নিজের কাছে গুছিয়ে নেয় বলে আজ ইচ্ছে করে শক্ত করে ধরে টেনে সব টুকু কাথা নিজের কাছে রেখে দেন তাসলিমা বেগম কতবার টেনেছিলেন কাঁথা নেওয়ার জন্য কিন্তু তিনি দেননি।এরপর যখন সকালে ঘুম ভাঙে দেখতে পায় যে তাসলিমা বেগম শীতে গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছেন তার সারা শরির শীতে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।নিজের কাজের জন্য অনুসূচনা হয় রাহিলা বেগমের পরম যত্নে বোনের গায়ে কাঁথা টেনে দেন।আর কখনো এমন করেননি তিনি।আম্মাকে বলে নিজের জন্য অন্য একটি কাঁথা বানিয়ে নেন।বিয়ের আগে সেই কাঁথা আবার বোনকে দিয়ে ও আসেন।সে সব এখন সোনালি অতীত।
একে একে কথা গুলো বলে থামলেন বৃদ্ধ রাহিলা বেগম।90's সকলের কাছে একটা ভীষন রকম আবেগ এর জায়গা তাই না?আমার কাছে ও।ফেলে আশা দিন গুলো আমাদের সোনালী অতিত যে সময় গুলোকে আমার ছেড়ে আসতে ব্যাস্ত থাকি।পেরিয়ে গিয়ে ফিরে থাকালে মনে হয় ঐ তো আমি।আর এই যে সত্ত্বা আমি ধারন করে আছি তা আমি রুপী অন্য কেউ।ফিরে যেতে ইচ্ছা করে সেই সোনালী অতিতে যেখানে ফেলে এসেছি আমরা আমাদের প্রিয়জনদের যারা ছিল আমাদের সর্বস্ব।
সোহরাব- দাদি তাহলে এখন আপনি কি চান? আমরা আপনার বোনকে খুজে বের করি?
রাহিলা- আমার সাত কুল গিয়ে এক কুল ঠেকেছে।বৃদ্ধ মানুষ লোকে বলে এক পা আমার কবরে ঝুলছে।আমার তোমাদের দেওয়ার মতো কিছু নেই। আমি শুধু চাই সত্যটা বের হোক।
তনিমা- এতো বছর পর কেনো এই সত্য খুজতে চান আপনি?
রাহিলা- কারণ গ্রামের মানুষ আমার হারিয়ে যাওয়া বোনটাকে পিশাচ,ডাকিনি হয়ে ফিরে এসেছে তাই বলে।আমার কষ্ট হয় সেদিন বাড়ি বয়ে এসে তাকে গাল মন্দ করে গিয়েছে কয়েকজন।তারা নাকি আমার বোনকে মাঝরাতে নদীর পানিতে হাতটে দেখেছে। তারা গিয়েছিলো মাছ শিকারে।
অনিমা- আচ্ছা দাদি আমরা আপনাকে সাহায্য করবো।
সোমেহরা- আপনি আমাদের ঠিকানা জানলেন কিভাবে?
রাহিলা- সে কথা নয় না জানাই থাক দাদুভাই।
কথা শেষ করে রাহিলা বেগম হেটে বেরিয়ে গেলেন।তার চলে যাওয়াতে রুম থেকে কেমন একটা ঠান্ডা আবহাওয়া চলে গেলো।স্বাভাবিক তাপমাত্রা এলো হয়তো রুম টা। সোহরাব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় আলোরার দিকে।সে মাথা নাড়ায় অর্থাৎ কাজ হয়ে গিয়েছে। এরপর যার য়ার মতো কাজ শুরু করে।
" মেহরাব,সোহরাব, সোমেহরা,তনিমা,অনিমা,আলোরা মিলে হারিয়ে যাওয়া লোক অথবা ভৌতিক কোন তথ্য পেলে তা খুটিয়ে দেখে এবং তার সত্যতা জানার চেষ্টা করে সেই ছোটবেলা থেকেই।এছাড়া ও তাদের আলাদা নিজেস্ব জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা আছে।তবে এই কাজ গুলো তারা ছুটির সময় করে থাকে।বা কাজে এক ঘেয়েমো লেগে গেলে একটু নতুনত্বের খেজে এই কাজে লেগে পড়ে। তাদের এই গ্রুপটার নাম #দর্পনে ছায়া..
এবারও তাই স্কুল কলেজ এর ছুটিকে কাজে লাগিয়ে নতুন রহস্য উন্মচনে পা বাড়াবে তারা।
চলবে.....
0 Comments:
Post a Comment