গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহার
পর্ব: ৩
- এখানে এভাবে জঙ্গলী পেত্নীর মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো আলু?
- এমনি ভালো লাগছিলো।
- দুর হ যা এতো ভালে লাগতে হবে না।
- আপনি সব সময় এমন জঘন্য ব্যবহার করেন কেন?
- আহা আলুর কি ভালো ব্যবহার পাওয়ার শখ হয়েছে।
- হবে না কেনো? আমি কি মানুষ না?
- নাহ
- আপনি যান তো এখান থেকে
- কি বললি রে আলু?
- কিছু না।
- যা তো নিচে যা এই অন্ধকারে আমার সামনে কম আসবি।
- আর তো ক'টা দিন তারপর মোটেই আসবো না।
- হ্যা হ্যা আসিস না।
- তখন বুঝবেন আমি কি ছিলাম!
- কি ছিলি তুই?
- কিছু না
কথা আর না বাড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য ছাদের রেলিং থেকে সরে যায়।মেহরাব এসে তার জায়গা টায় দাড়ায়।সামনের বিশাল চাঁদ হীন তারকা পূর্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোট নাড়িয়ে গলা সুর তোলে...
সোনা বরণ রুপ কন্যার
কুচ বরণ কেশ
তুই দিনের শুরু কন্যা
তুই রাতের শেষ
মেহরাবের গান সে বহু বার শুনেছে।
কিন্তু প্রতিবারই কেনো যেনো আলোরার মনে হয় লোকটা তাকে কিছু বলতে চাইছে,বোঝাতে চাইছে,গান টা সে তার জন্য গেয়েছে।আসলে লোকটা কি বুঝাতে চায়? নতুন কিছু নাকি পুরনো জিনিসে আবার পট্টি দিচ্ছে।আলোরার ভাবনার সাগরে ডুবে যাবে এমন সময় আবারো ডাক পড়ে তার।
মেহরাব- আলু
আলোরা- জ্বি
মেহরাব-তুই যে চুরি করে মানুষের গান শুনিস আগে জানতাম না তো।কবে থেকে চোর হয়েছিস রে ?
আলোরা- আমি চোর?
মেহরাব- হ্যা তুই মস্ত বড়ো চোর।ছি ছি আলু,ব্যাড মেনার্স।
আলোরা- আমি চোর না...
মেহরাব- তুই চোর..
- না আমি চোর না..
- না তুই চোর...
- না আমি চোর না
- তুই চোর
- না
- তুই
- না
- তুই
- না
- তুই
- না
- তুই
- আর একটা কথা বললে আপনার খবর আছে মেহরাব ভাই
- কি করতে পারবি তুই তুচ্ছ প্রানী জঙ্গলী পেত্নী একটা
- আমি!
- হ্যা তুই
- আমি আপনাকে
- হ্যা তুই আমাকে
- আপনাকে তো আমি
- হ্যা বল বল
আলোরা আর নিজের রাগ অভীমানকে কন্ট্রোল করতে না পেরে শক্ত করে মেহেরাবের দু'বাহু ধরে তার দিকে ঝুকে পড়ে মেহরাদ আকস্মিক আক্রমনে তাল সামলানোর জন্য আলোরার কোমর আকড়ে ধরে এক হাতে অন্য হাতে রেলিং টা শক্ত করে ধরে।মেহরাবের ডান চোয়ালে ধরালো দাঁতের কামড় বসায় আলোরা মেহরাদ কিনচিত ব্যাথায় গলা দিয়ে আহ্ সূচক শব্দ বের করে।
এভাবেই অতিবাহিত হয় কিছু সময়..
রাগ নিয়ন্ত্রণে এলে লজ্জায় আলোরা গুটিয়ে যায় তার অবস্থান আক্রমন এবং চরম লজ্জা জনক পরিস্থিতে সে দিশেহারা হয়ে পড়ে।লজ্জা ভয়ে তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে মেহরাব বোঝে।সে ও কম অসস্থিতে পড়েনি এহেন আক্রমনে এটা তার জন্য আশাতীত।মেহরাব ছেড়ে দেয় আলোরাকে।আলোরা একছুটে নিজের ঘরের দিকে দৌড় লাগায় পথি মধ্যে মেহরাব এর ফুফু ও সোমেহরার সাথে আঘাত লাগে তার দুজনে তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করে কি হয়েছে। সোমেহরা তাকে হাপাতে দেখে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে জানার জন্য কোন সমস্যা হয়েছে কি তার?
ফুফু তীক্ষ্ণ চোখে তাকে পর্যাবেক্ষন করে প্রশ্ন করে তার ঠোটে কিসের রক্ত লেগে আছে।আলোরা গুটিয়ে যায় প্রশ্ন এড়াতে সে ছুটে বেরিয়ে যায় নিজের জন্য বরাদ্ধ করা রুমে।দুজনেই তার যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।শান্ত মেয়েটা এমন দুরন্ত হয়ে উঠলো কেনো?রুমে গিয়ে দরজা টা খট করে লাগিয়ে দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নেয় সে।যেনো হাপ ছেড়ে বেঁচেছে।
তার আঠারো বছরের জীবনে আজকের মতো চরম লজ্জা জনক রাতের সম্মুখীন সে এর আগে হয় নি।মেহরাব ভাইকে সে...ছি ছি।সে দ্বিতীয় বার আর কিভাবে যাবে উনার সামনে।অদ্ভুত এক মিশ্র অনুভূতিতে জর্জরিত হয়ে সে দিশেহারা।ঘন ঘন শ্বাস ছেড়ে এগিয়ে যায় ওয়াস রুমের দিকে লম্বা একটা সাওয়ার নেওয়া ভীষন দরকার তার।একটু ঠান্ডা পানির ভীষন প্রয়োজন তার।
অন্য দিকে মেহরাবের গালে আলোরার চার দাঁতের দাগ নিয়ে আকাশের দিকে অভিযোগের নজরে তাকিয়ে আছে।আজ আবার চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে।
মেহরাব আকাশ পানে তাকিয়ে চাঁদকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে
- ঐ চাঁদ তুই আমার বেহাল দশা দেখে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে হাসিস? হাস.. তবে
অষ্টাদশীকে বলে দিস আগুন জ্বালালে তাকে ও পুড়তে হবে আমি কিন্তু ভীষন রকম স্বার্থপর একা পুড়ি না।
-চাঁদ হয়তো মেহরাব এর এমন হুমকিতে ভয় পায়নি সে হয়তো হেসেই খুন।
মেহরাবের গাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে কয়েক ফোট এসে পড়ে তার শার্ট এ।মেহরাব মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার ও আকাশের দিকে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে...
একটা ছিলো সোনার কন্যা
মেঘ বরন কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিলো
সেই কন্যার দেশ (।।)
চলবে....
0 Comments:
Post a Comment