#suddenly_fall_in_love
#লেখনীতে_সামিয়া_স্নিগ্ধা
#পর্ব_০৮[অন্তিম পর্ব]
সবার পরিবারের সম্মতিতেই ওদের গায়ে হলুদ, বিয়ে সমস্ত কিছুর আয়োজন গ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক সাথেই করা হয়েছে। আরুশি,মাওয়া আর নাবিলা তিনজনেই একসাথে পার্লার থেকে সেজেছে। তিনজনকেই হলুদ এর সাজে খুব সুন্দর লাগছে। সুমাইয়া ওদেরকে দেখে বলল,,,
-বাহ, খুব মিষ্টি লাগছে তিনজনকেই।একদম হলুদ পরী।
মাওয়া আর নাবিলা তো সুমাইয়ার কাজিন তাই সুমাইয়ার সাথে বন্ডিং বেশ ভালো ওদের।তবে আরুশির সাথে খুব কমই কথা হয়েছে সুমাইয়ার। তাই আরুশি একটু ইতস্তত বোধ করেছে। সুমাইয়া ওদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে। হঠাৎ রাজুর দিকে আরুশির দৃষ্টি পড়তেই আরুশি তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে নেয়।
সুমাইয়া ওদেরকে নিয়ে গিয়ে স্টেজে বসায়। সবাই এসে একে একে ওদেরকে হলুদ ছোঁয়ায়।হলুদের পর মেহেদির অনুষ্ঠান শুরু হয়। দুজন মেহেদী আর্টিস্টকে মাহমুদ বলে দিয়েছিল চলে আসতে।ঐ মেয়ে দুজনেই একে একে ওদের সবাইকে মেহেদী পরিয়ে দিল। বেশ নাচ-গান হই-হুল্লোর মিলিয়েই ওদের হলুদ সন্ধ্যা শেষ হলো।
--
আরুশি,মাওয়া আর নাবিলা তিনজনেই খয়েরী রঙের ব্রাইডাল লেহেঙ্গায় সেজেছে। তিনজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে।
কিছুক্ষণ আগেই ওদের বিয়ে পড়ানো হয়েছে।আইনত এবং ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী আরুশি অবশেষে মাহমুদ এর বউ হয়েই গেল।আরুশি ভেবেছিল হয়তো কখনোই কাউকে আপন করে নিতে পারবে না,ভেবেছিল কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবে না, কিন্তু মাহমুদ তার জীবনে আসার পর তার সব চিন্তা বদলে গিয়েছে।অল্প কয়েক দিনেই মাহমুদ তার মনের অনেকটা জুড়েই জায়গা করে নিয়েছে।সে জানে মানুষটা খুব ভালোবাসে তাকে।
বিয়ের পর, সবাই একসাথে সেলফি আর ছবি তুলতে ব্যস্ত। সবাই আনন্দে মেতে উঠেছে। মাহমুদ আর আরুশি একে অপরের দিকে তাকালো। দুজনের ঠোঁটের কোণেই হাঁসির রেখা ফুটে উঠেছে। তন্ময় ও মাওয়া নিজেদের মতো কাপল ফটোশুট করতে ব্যস্ত।নাবিলা-তামিম, মাওয়া-তন্ময়, মাহমুদ- আরুশি, সুমাইয়া-রাজু সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো আড্ডা আর ছবি তোলায় ব্যস্ত।তাহা এগিয়ে এসে ওদের সামনে মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে বলল,,,
-সবারই কি সুন্দর একজন, একজন পার্টনার হয়ে গেল।আর আমি এখনো সিঙ্গেলই রয়ে গেলাম।
'তাহা'র কথায় সবাই হেসে উঠল।সুমাইয়া এগিয়ে এসে বলল,,,
-খুব তাড়াতাড়ি তোমার জন্য ও পার্টনার খুঁজে দিব ননদিনী। তারপর আর সিঙ্গেল থাকতে হবে না।
--
বিয়ের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়া পর, সবাই বেরিয়ে যেতে শুরু করেছে।নাবিলাকে নিয়ে তামিমরাও এক্ষুনি বেরিয়ে পড়বে।শহরে যেতে যেতে অনেকটা সময়ের ব্যাপার তাই। নাবিলা আর মাওয়া দুজন-দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।কেউ কাউকে ছাড়ছে না। মাহমুদ আর তামিম এসে ওদের ছাড়িয়ে নিল।
নাবিলা আর তামিমদের গাড়ি চলে যায়। তারপর মাওয়ার বাবা-মা তন্ময়ের হাতে মাওয়ার হাত তুলে দেন। মাওয়াকে নিয়ে তন্ময়রাও চলে যায়।মাহমুদ-আরুশিরাও একে একে বেরিয়ে পড়ে।
সবার বিদায়ের পর কমিউনিটি সেন্টারের আঙিনা যেন এক অদ্ভুত নীরবতায় ছেয়ে গেল।চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোটখাটো জিনিস গোছানোর দায়িত্বে ব্যস্ত কিছু লোক।
অন্যদিকে মাহমুদ-আরুশি গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে। গাড়ি চলতে শুরু করার পরও দুজনের মাঝে কোনো কথা হয়নি। গাড়ির জানালার বাইরে আরুশিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহমুদ হঠাৎ বলল,,,
-কিসের এত চিন্তা করছো?
আরুশি একটু চমকে তাকাল মাহমুদের দিকে। তারপর নরম স্বরে বলল,,,
-চিন্তা না...., হঠাৎ সবকিছু এত দ্রুত হয়ে গেল যে, মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছি।
মাহমুদ মৃদু হেসে বলল,,,
-স্বপ্ন না, এটা আমাদের নতুন জীবনের শুরু। ইনশাআল্লাহ, সব ঠিকঠাকই হবে।
আরুশি হাসল। দারুন দেখালো সেই হাসি।তার মনের ভেতর এক ধরনের প্রশান্তি বয়ে গেল। মাহমুদ সত্যিই একজন ভালো মানুষ। তার এই নতুন জীবনের যাত্রা যেন আনন্দ আর ভালোবাসায় পূর্ণ হয়—এই আশাতেই মনের ভিতর আশার আলো জ্বলে উঠল আরুশির।
--
নাবিলা আর তামিম শহরের ফ্ল্যাটে এসে পৌঁছাল। দিনভর নানা আয়োজনের পর দুজনেই বেশ ক্লান্ত, কিন্তু একসাথে এই নতুন যাত্রার উত্তেজনাও তাদের মনের গভীরে স্পষ্ট। রাতের খাবারের পর তামিম নিজের রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই মৃদু হেসে বলল,,,
-এটা আমাদের ছোট্ট পৃথিবী। কেমন লাগছে?
নাবিলা চারপাশে তাকিয়ে দেখল। ফ্ল্যাটের ঘরগুলো বেশ গোছানো, সাজানো বিছানার ওপরে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে। জানালার পর্দায় মৃদু বাতাসের স্পর্শ। ঘরে হালকা ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধি। নাবিলা মুগ্ধ হয়ে বলল,,,
-খুব সুন্দর।
তামিম ধীরে ধীরে তার কাছে এসে হাত ধরে বলল,,,
-ক্লান্ত তো? কিছুক্ষণ বিশ্রাম নাও।
নাবিলা বলল,,,
-আমি ঠিক আছি।
তামিম একটু সামনে ঝুঁকে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
-ঠিক আছে, আজকের রাত শুধু আমাদের। চলো, গল্প করি।
তারা দুজন বিছানায় বসে কথা বলতে লাগল। নিজেদের ছোট ছোট স্মৃতি, হাসির গল্প, আর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা কথা। তামিম নাবিলার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
-জানো, আমি তোমাকে প্রথম দেখার দিন থেকেই ভেবেছি, তুমি ঠিক আমার জন্যই তৈরি।
নাবিলা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,
-আপনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন?
-হুম।
-কী করে?
-ইটস সিক্রেট,বলা যাবে না।
গল্প করতে করতে রাত গভীর হলো। তামিম মৃদু আলো নিভিয়ে বলল,,,
-এবার ঘুমোও। অনেক রাত হয়ে গেছে।
নাবিলা মাথা এলিয়ে সম্মতি জানাল। দুজনেই জানত, এই রাতটা তাদের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। একে অপরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়েই তারা এক নতুন ভোরের অপেক্ষায় থাকল।
--
তন্ময়ের ঘর ওর সব কাজিনরা মিলে সাজালো।মাওয়াকে সুমাইয়া আর তাহা বসিয়ে রেখে গেছে।তন্ময় বাসর ঘরে প্রবেশ করল। ঘরটি ফুল দিয়ে সজ্জিত, হালকা গোলাপি রঙের আলো যেন এক স্বপ্নময় পরিবেশ তৈরি করেছে। মাওয়া একটু লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। তন্ময় ধীরে ধীরে তার কাছে এসে বসল। বলল,,,
-তোমার চোখে আজ সেই লজ্জা দেখছি, যা হয়তো কখনো দেখিনি।
মাওয়া লজ্জায় মৃদু হাসল। তন্ময় তার হাতে হাত রেখে বলল,,,
-আজ থেকে আমরা একে অপরের জীবনসঙ্গী। তুমি জানো তো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
মাওয়া তার দিকে তাকিয়ে সম্মতিসূচক হাসি দিল।
--
অন্যদিকে, মাহমুদ আর আরুশি তাদের নতুন সাজানো ঘরে প্রবেশ করল। ঘরে সাদা ফুলের সৌরভ, হালকা সুগন্ধি মোমবাতির আলো যেন পুরো পরিবেশটাকে স্বর্গীয় করে তুলেছে। আরুশি একটু অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাহমুদ তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,,
-এই লাজুক চেহারা আমার আরেকবার দেখা উচিত ছিল বিয়ের আগে।
আরুশি লজ্জা পেলো খানিকটা।মৃদু হেসে বলল,,,
-সবকিছু এত দ্রুত হলো যে, বুঝতেই পারলাম না।
মাহমুদ তার হাতটি ধরে পাশে বসিয়ে বলল,,,
-জীবনে কোনো কিছুই নিখুঁত হয় না। তবে আমরা একসাথে থাকলে সবকিছু নিখুঁত মনে হবে।
আরুশি তার চোখে চোখ রাখল। সেই মুহূর্তে তার মনে হলো, এই মানুষটিই তার জন্য সঠিক। সে সত্যিই ভালোবাসে তাকে এবং সারাজীবন তাকে ঠিক আগলে রাখতে পারবে।
বাসর রাতের এই মুহূর্তগুলো যেন প্রত্যেক নবদম্পতির জীবনে এক নতুন প্রতিশ্রুতি এবং ভালোবাসার বন্ধন দিয়ে ভরে উঠল। দূরের গ্রামের পুকুরপাড়ে জোনাকির আলো, আর আকাশে ভরা পূর্ণিমা যেন এই নতুন শুরুর সাক্ষী হয়ে রইল।
~~সমাপ্ত~~
[অতঃপর এই গল্পের ও ইতি টানলাম।সবাই নিজেদের অনুভূতি জানিয়ে যাবেন। সবার থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। লেখালেখির জগতে যেহেতু নতুন তাই ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরতিতে যাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য
0 Comments:
Post a Comment