গল্প suddenly_fall_in_love পর্ব ৭

 #Suddenly_fall_in_love

#লেখনীতে_সামিয়া_স্নিগ্ধা

#পর্ব_০৭


-ইয়েস,আই উইল।


মাওয়ার থেকে এই উত্তর তন্ময়ের প্রত্যাশায় ছিল না।ভেবেছিল মাওয়া রিয়েক্ট করবে। তন্ময়ের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। উচ্ছসিত হয়ে বলল,,,


-সত্যি তুমি রাজি?


মাওয়া তন্ময়ের হাত থেকে গোলাপ নিয়ে বললো,,,হুম, সত্যি।


আরুশি তখনো চুপচাপ।কি বলবে বা কি বলা উচিত ভেবে পাচ্ছে না সে।সে তো একজনকে ভালবাসে,অবশ্য তাকে পাওয়াটা এখন অসম্ভব। আরুশি ভেবে চলেছে মাহমুদের প্রথম দিনের বলা কথা গুলো। বারংবার মাথায় সেই কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। মাহমুদ এখনো তার উত্তরের অপেক্ষায় সেভাবেই বসে আছে। মাওয়া আরুশির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,,,


-আর কতক্ষণ ভাইয়াকে এভাবে বসিয়ে রাখবি?


-আমার কিছু ভালো লাগছে না।চল এখান থেকে। 


বলে মাওয়ার হাত ধরে টেনে ক্যাফের বাইরে চলে এলো। একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়ল। মাহমুদ আর তন্ময় দৌড়ে আসতে আসতে ওরা দুজন চলে গেল। তন্ময় বলল,,,,


-এটা কি হলো?


মাহমুদ কিছু না বলে বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। তন্ময় দৌড়ে গিয়ে নিজের বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল,,,


-আরে তোরা সবাই আমাকে ফেলে যাচ্ছিস কোথায়? 

--

রিকশা ছুটে চলেছে ওদের গ্রামের দিকে। উদাসীন ভাবে রিক্সায় বসে আছে আরুশি।মাওয়া বলল,,,


-ওভাবে ওখান থেকে চলে এলি কেন? ভাইয়াকে কি তোর পছন্দ নয়? 


শেষ প্রশ্নে মাওয়ার দিকে তাকালো আরুশি। ছোট্ট করে জবাব দিল,,,


-জানিনা। 


-আচ্ছা তুই কি কাউকে ভালোবাসিস? 


-না। 


-আমার ভাইয়া কিন্তু খারাপ না। ওকে দেখে যা বুঝলাম তোকে ভীষণ ভালোবাসে। এত তাড়াতাড়ি কোনবারই ভাইয়া গ্রামে আসে না। তোর জন্যই এবার তাড়াতাড়ি এসেছে। কত সুন্দর করে আমাদের সারপ্রাইজ দিয়েছে। শুধুমাত্র তোকে ভালোবাসে বলে। তুই ভাইয়াকে একসেপ্ট করতে পারিস।


আরুশি বেশ কিছুক্ষণ মাওয়ার কথাগুলো নিয়ে ভাবল। বলল,,,


-বাড়ি গিয়ে ভেবে জানাবো।


-আচ্ছা ঠিক আছে, সে না হয় তুই ভেবেই জানাস। কিন্তু উত্তরটা যেন 'হ্যাঁ' হয়। 


-দেখা যাক। 


বাড়ি এসে পৌছালো ওরা।মাওয়া যাওয়ার সময় বলল,,,


-টাটা, যাচ্ছি।গুড নিউজের অপেক্ষায় থাকবো।


সারারাত ধরে এই ব্যাপারটা নিয়েই ভাবলো আরুশি। কিছুতেই ওর ঘুম আসছে না। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর ভাবলো কাল দেখা করবে মাহমুদের সাথে।টেক্সট করলো মাহমুদের নাম্বারে,


         "কাল ভোর বেলা নদীর পাড়ে আসবেন, কথা আছে"


মেসেজ টোন বেজে উঠতেই মাহমুদ ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ চেক করলো। মেসেজটা পড়ে ভাবতে লাগলো,,,


- কী বলবে আরুশি?ও কি তাহলে রাজী?


এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো মাহমুদ।

--

ভোরবেলা নদীর সেই ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে মাহমুদ। চারদিক কুয়াশার চাদরে আবৃত।হিমশীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।খানিক বাদেই আরুশি এলো। পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো।মাহমুদের দৃষ্টি নদীর পানিতে নিবদ্ধ।সেদিকে তাকিয়েই বলল,,,


-কী বলবে বলো?


-এতো তাড়া কীসের আপনার?নাকি রেগে আছেন আমার উপর?


-রেগে থাকবো কেন? তোমার উপর রাগ দেখানোর কোনো অধিকার কি আমার আছে?


-যদি বলি, আজ থেকে অধিকার আছে...


মাহমুদ এবার ঘুরে দাঁড়ালো।আরুশির দিকে তাকিয়ে বলল,,,


-মজা করছো?


-মজা কেন করতে যাবো?


মাহমুদ আর কিছু বলল না।আরুশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ করেই বলে উঠলো।


-আমি রাজি।


মাহমুদ এবারেও কিছু বলল না।আরুশি মাহমুদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,,,


-কি বললাম শুনতে পেয়েছেন?


মাহমুদ শুনেছে ঠিকই কিন্তু মুখে বলল,,,


-উহু, শুনতে পাইনি। আবার বলো।


-বলেছি যে,আপনাকে বিয়ে করতে আমি রাজি।


-তাহলে কাল ওভাবে চলে এসেছিলে কেন?


-বাড়ি এসে সবটা ভেবে তবেই ডিসিশন নিয়েছি।


-বুঝলাম।


-হাঁটবেন?


-হুম, হাঁটা যায়।


দুজনে পাশাপাশি ব্রীজের উপর দিয়ে হাঁটছে।এই ব্রীজেই ওদের প্রথম দেখা। তখন দুজনের কাছে দুজনেই ছিল অচেনা-অজানা।আর আজ দুজনেই একে অপরের সাথে সারাজীবন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

--

নাবিলার বিয়ে ঠিক হয়েছে পারিবারিকভাবেই। ছেলে শহরের হসপিটালের ডাক্তার।তাই তার ফ্যামিলি সহ তাঁরা সেখানেই থাকে। আজকে নাবিলাকে দেখতে এসে ছেলের বেশ পছন্দ হয়েছে।তাই সামনের সপ্তাহেই বিয়ের ডেট ফিক্সড করে গেছে।

মাওয়া কলেজ শেষে তন্ময়ের সাথে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে নাবিলার বিয়ের খবর শুনেই দৌড়ে নাবিলার রুমে যায়। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,


-আপুউউউ আমি ভীষণ ভীষণ এক্সাইটেএএএড।তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে,তা আমাদের হবু দুলাভাইয়ের নাম কি?


-তামিম।

--

ঘুম থেকে উঠেই মাওয়ার মাথাটা গরম হয়ে গেছে।ওকে নাকি এখন ছেলেপক্ষের সামনে শাড়ি পরে তৈরি হয়ে যেতে হবে। নাবিলা ওকে বারবার তাড়া দিচ্ছে। একপ্রকার বিরক্ত হয়েই শাড়ি পরে ড্রয়িংরুমে যায় সে। সামনে বসে থাকা ছেলে আর তার পরিবারের দিকে তাকাতেই চারশো চল্লিশ বোল্টের শক খায় ও। তন্ময় আর ওর ফ্যামিলির সবাই এসেছে।


তন্ময়ের ফ্যামিলির সবার ও মাওয়াকে পছন্দ হয়েছে। ওদের বিয়ের ডেট ও নাবিলার বিয়ের দিনেই ফিক্সড হয়েছে।


এদিকে মাহমুদও ওর ফ্যামিলি নিয়ে আরুশির বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।আরুশির বাবা প্রথমে এতো তাড়াতাড়ি মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হলেও পরে রাজি হন। মাহমুদের ফ্যামিলির অনুরোধে ওদের বিয়েও একই দিনেই ঠিক করা হয়।

মূলত এটা মাহমুদেরই প্ল্যান।যখন শুনেছিল নাবিলার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখনই প্ল্যান করেছে ওদের ফ্যামিলিকে মানিয়ে তিনজনের বিয়েই একদিনে ঠিক করবে।


চলবে,,,,


কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।আপনাদের সবার দাওয়াত রইলো ওদের বিয়েতে। সবাই গিফট নিয়ে চলে আসবেন কিন্তু।

0 Comments:

Post a Comment