গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪১

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 41


🍂🍂🍂


~বউ? বউ? এই বউ? রুদ্রাণীইইইই!!!!!!

~ইশ! কানের পোকা মেরে ফেলছেন। কি সমস্যা? চেঁচাচ্ছেন কেনো?

রুদ্রর চিৎকারে খুন্তি হাতে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এলো মেহের। মেহেরের হাতে খুন্তি দেখে জোরপূর্বক হাসলো রুদ্র।

~একটু এদিকে এসো না।

~আমি রান্না করছি। কি বলবেন বলুন।

~বাড়িতে কাজের মানুষের অভাব? তুমি রান্না করছো কেনো? তুমি না অসুস্থ? ঘরে বসো চুপচাপ। আমি রান্না করে আনতে বলছি।

~আজ নিজ হাতে রান্না করে খেতে ইচ্ছে করছে তাই। কি জন্য ডেকেছেন তা বলুন। আমার তরকারি পুড়ে যাবে তো!

রুদ্র বত্রিশ পাটি বের করে হাসলো। মেহেরের কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,

একটু রুদ্র বলে ডাকো না! বড্ড মিস করছি তো।

~আপনি এই জন্য ডেকেছেন আমাকে?

রুদ্র দ্রুত মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালো। মেহের রাগান্বিত স্বরে বললো,

যেদিন থেকে আপনার নাম ডেকেছি এর পর থেকে এভাবে জ্বালিয়ে মারছেন। কি সমস্যা?

~সমস্যা তো এখানে।

রুদ্র মেহেরের এক হাত নিয়ে তার বুকের বা পাশে রাখলো। বললো,

যেদিন থেকে তোমার মুখে নিজের নাম শুনেছি সেদিন থেকে দিনে কয়েকবার তোমার মুখে আমার নাম না শুনলে মনে হয় শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছি। ইশ বউ! তুমি চাও তোমার বর তোমার মুখে ডাক শুনার অভাবে মারা পড়ুক?

~মশকরা করছেন আমার সাথে?

রুদ্র গাল ফুলিয়ে বললো,

মোটেও না রুদ্রাণী। তোমাকে আমি কত্তওওও ভালোবাসি। তোমার সাথে মজা কেনো করবো? ডাকো না প্লীজ!

~তরকারি পুড়ে যাবে। ছাড়ুন প্লীজ। পরে ডাকবো।

~না! না! এখনি ডাকো। ডাকো না!!!!

~উফফ! রুদ্র! রুদ্র! রুদ্র! ছাড়ুন এবার।

রুদ্র চোখে মুখে এক উজ্জ্বল হাসি দেখা দিলো। মেহেরের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বললো,

ধন্যবাদ মেহেরজান। ভালোবাসি।

বলেই খাটে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। গত দুইদিন যাবত রুদ্র অফিসে যাচ্ছে না। দরকারি সব কাজ বাড়িতেই করে। মেহেরের শরীরটা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। মাথায় ঘুরায়, ঠিক মত খেতেও পারে না, একটু খেলেই বমি করে ভাসিয়ে দেয়। রুদ্র মেহেরের হেলথ নিয়ে বেশ চিন্তিত। মেহেরের খাওয়া দাওয়া তে বেশ কঠোরভাবে নজর রাখছে। গতকাল হাসপাতালে গিয়ে ডক্টর এর কথামত কিছু টেস্ট করিয়ে এসেছে। আজ সন্ধ্যায় রিপোর্ট দিবে। রুদ্র বেশ কড়াভাবে মেহেরকে বলেছে রিপোর্ট খারাপ এলে মেহেরের খবর আছে। একদম নিজের খেয়াল রাখে না। সবসময় বেখেয়ালিভাবে চলা ফেরা ভালো লাগে না রুদ্রর। সকলের প্রয়োজন অপ্রয়োজনের খেয়াল রাখে আর নিজের বেলায়ই যত তালবাহানা এই মেয়ের।

__________________________________


~রিপোর্ট কখন দিবে? (তিথি)

~আজ সন্ধ্যায়। (রুদ্র)

~মেহেরকে সাথে নিয়ে যাবি না? (তিথি)

~শুধু রিপোর্ট ই তো দেখাবো। ও না গেলেও চলবে। তাও নিয়ে যাবো। যদি কোনো দরকার হয়। (রুদ্র)

মেহের নিজের প্লেট এ খাবার নিতে নিতে বললো,

দরকার পড়লেও আমি যাচ্ছি না। ডক্টর দেখবেন অকারনেই এক বোঝা ওষুধ ধরিয়ে দিবে। আমি বলছি কি রুদ্র আপনারও যাওয়ার দরকার নেই।

রুদ্রর দিকে তাকালে দেখলো রুদ্র অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকেই চেয়ে আছে। তিথি বললো,

এই মেয়ের নিজের যত্ন নেওয়ার বেলায়ই যত বাহানা। ঠিক মত খাস না আবার কথা বলিস! রুদ্র তুই ডক্টরকে বলে ওর জন্য রুচির ওষুধ নিয়ে আসিস তো!

~মামনি! (মেহের)

~ভাইয়া আপনি ওর জন্য ওষুধের পাশাপাশি কিছু চকোলেট নিয়ে আসবেন। মহারানীর ওষুধের পর চকোলেট না পেলে পরে মুখখানা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ঘুরবে। (দিয়া)

~হ্যা পিচ্চি নিয়ে এসেছি না! বাড়িতে চকোলেট চিপস এগুলো না থাকলে চলে?

রুদ্র কথায় স্নেহা আর দিয়া খিল খিল করে হেসে উঠলো।

__________________________________


কতক্ষন যাবত রুদ্রর পেছন পেছন ঘুরছে মেহের। রুদ্রকে সে কোনোমতেই হাসপাতালে যেতে আটকাতে পারছে না। হাসপাতালে গেলেই তার জন্য এক বোঝা ওষুধ দিয়ে দেবে ভেবে নিয়েই রুদ্রকে মানানোর যত চেষ্টা।

~শুনুন না!

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

তুমি একটু চুপ থাকবে? দ্রুত রেডী হয়ে এসো। নয়তো তোমাকে রেখেই চলে যাবো আমি।

~রুদ্র

~হাজার বার নাম ধরে ডাকলেও পটছি না আমি রুদ্রাণী। তোমার হেলথ নিয়ে কোনো হেরফের নয়। যাও রেডী হয়ে এসো।

মেহের ভেংচি কেটে আলমারি থেকে বোরকা নিয়ে তা পড়তে শুরু করলো। বিড়বিড় করে অসংখ্য বকা ঝাড়লো রুদ্রর উদ্দেশ্যে। রেডী হয়ে রুদ্রর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই রুদ্র উঠে মেহেরের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গাড়ির কাছে এলো। রাস্তায় রুদ্র অনেক কথা বললেও মেহের গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রুদ্রর কোনো কথার জবাব দিলো না।

____________________________________


ডক্টর এর কেবিনের বাহিরে দাড়িয়ে আছে রুদ্র। হার্ট প্রচন্ড বেগে বিট করছে। মেহেরের হাত টা কে আরেকটু শক্ত করে ধরলো। লম্বা এক শ্বাস নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। ডক্টর রিপোর্ট দেখে কি বলবে তা নিয়েই গভীর চিন্তা রুদ্রর। চেয়ারে বসে নিচের ঠোঁট কামড়ে ডক্টর এর হাতে থাকা রিপোর্ট এর দিকে চেয়ে আছে রুদ্র। ডক্টরের রিপোর্ট দেখা শেষেই বিস্তর হাসলেন তিনি। রুদ্র আর মেহের কেউই তার এই হাসির কারণ বুঝলো না। ডক্টর রেহানা হেসে বললেন,

কংগ্রেচুলেশনস! আপনারা মা বাবা হতে চলেছেন।

রুদ্র বিস্ফোরক দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,

মানে?

~মানে ইউর ওয়াইফ ইজ প্রেগনেন্ট।

কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই মেহের রুদ্রর দিকে চেয়ে তার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করলো। মেহের খুশি হয়েছে কিন্তু রুদ্র এতে খুশি কিনা তা বুঝতে পারছে না মেহের। এবার সারা রাস্তা রুদ্র নিজেই কোনো কথা বললো না। মেহের চাইলেও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারলো না। বাড়িতে এসেও রুদ্র মেহেরের সাথে কোনো কথা বললো না। সোজা নিজের রুমে চলে এলো। মেহেরের মনে অজানা ভয় বাসা বাঁধলো। ওইদিন রুদ্রর কথায় মেহেরের রাগ উঠলেও মেহের ভেবেছিলো রুদ্র ভয়ের কারণে এমন করেছে। কিন্তু আজ রুদ্রর এমন ব্যবহার মেহেরকে ভাবতে বাধ্য করছে। রুদ্র কি সত্যিই এই বাচ্চা চাইছে না?

~~~

চলবে~


(ঈদের তৃতীয় দিন আজকে। Late wish "ঈদ মোবারক"। সবাই নিজ দায়িত্বে সালামি পাঠিয়ে দিবেন 😁 গল্পটা ২/৩ পর্বের মধ্যেই শেষ করে দিবো। এর পর লেখিকাকে ভুলে যাবেন না। গল্প কেমন লেগেছে তা অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)

0 Comments:

Post a Comment