#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 9
🍂🍂🍂
মনে একরাশ ভয় আর চিন্তা নিয়ে সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নীচে নামতে থাকে মেহের। নিচে নামতেই স্নেহার সাথে দেখা হয়। স্নেহা অনেকবার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও মেহের জবাব দেয় না। দিয়ার সাথে আগে এই ব্যাপারে কথা বলে তবেই স্নেহাকে কিছু জানাবে বলে ঠিক করে মেহের। পার্টি শেষে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসে ওরা।
.
সারা ঘরে পায়চারি করছে মেহের। ভ্রু কুচকে চিন্তা করতে থাকে সেই অচেনা লোকটির কথা। অনেক চিন্তার পরও খুঁজে বের করতে না পারায় হাল ছেড়ে দেয় মেহের। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে রাত ১ টা ৪৭ বাজে। এই সময় দিয়া জেগে আছে কিনা মেহেরের জানা নেই। তাও সাত পাঁচ না ভেবে কল দেয় দিয়া কে। প্রথম রিংয়েই কল রিসিভ হওয়ায় কিছুটা আশ্চর্য হয় মেহের।
~হ্যা বল মেহের।
~তুই এখনও জেগে আছিস! ঘুমাস নি কেন?
~ভাবছিলাম।
~কি ভাবছিলি?
~পার্টি তে কি কিছু হয়েছে মেহের? (শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে দিয়া)
মেহের মনে মনে ভাবে, এই মেয়েটা মনের খবর বুঝে কিভাবে?
~এই চিন্তায় জেগে ছিলি? (মেহের)
~কথা ঘুরাস না মেহের। তুই ভালো মত জানিস যে তোর চেহারা দেখলেই আমি বুঝতে পারি তুই ভালো আছিস নাকি নেই। যদি না বুঝতে পারতাম তবে অবশ্যই একে ওপরের প্রিয় বন্ধু হতে পারতাম না তাইনা! জলদি বল কি হয়েছিল পার্টিতে?
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়া কে একে একে সব বলে মেহের। দিয়া মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনে।
~তোর কি মনে হয় লোকটা কে হতে পারে?(দিয়া)
~নো আইডিয়া। কিন্তু এই টুকু বুঝতে পেরেছি লোকটা বড্ড অসভ্য। পরের বার সামনে পেলে কেলানি দিয়ে উগান্ডা পাঠাবো। কত্ত বড় সাহস আমাকে জড়িয়ে ধরে! (মুখ ফুলিয়ে বলে মেহের)
মেহের এর এমন কথা শুনে গম্ভীর মুহূর্তেও হেসে দেয় দিয়া।
~জানিস লোকটার যখন আমার কাছে ছিল তখন তার গায়ের থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছিল। এই ঘ্রাণ টা এর আগেও পেয়েছিলাম হয়তো। কিন্তু মনে পড়ছে না। (ঠোঁট উল্টে বলে মেহের)
~চিন্তা করিস না। আমরা খুঁজে বের করবো। বেটাকে পেলে আচ্ছা করে ধোলাই দিয়ে দিবো। ঠিক আছে। (দিয়া)
~হুঁ, আচ্ছা শুন। বাকিদের এখন কিছু বলিস না। শুধু শুধু টেনশন করবে। স্নেহার বাড়িতে প্রথম গিয়েই এমন একটা সিটুয়েশন এ পড়েছি জানলে ওর মন খারাপ হবে। (মেহের)
~আচ্ছা মেহের ওই রুমটা কি এক্সাক্ট স্নেহার ছিল?
~হয়তো। হয়তো না। (মিনমিন করে বলে মেহের)
মেহের এর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে দিয়া,
আচ্ছা চিন্তা করিস না। ওই লোক তো বলেছেই আবার আসবে। আবার এলে একদম বেধে উত্তম মাধ্যম দিবো বেটাকে। এখন চিন্তা না করে ঘুমা।
~তুইও ঘুমা।
দিয়ার সাথে কথা বলা শেষে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে মেহের। বন্ধুত্ব ব্যাপারটাই এমন। হাজার দুশ্চিন্তার মাঝেও এদের সাথে এক মিনিট কথা বলতে পারলে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে হয়ে যায়।
🍂🍂🍂
ভার্সিটির মাঠে বসে আছে মেহের, দিয়া, আহিল আর কাব্য। স্নেহা এখনও না আসায় কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে অপেক্ষা করছে ওরা। গালে হাত দিয়ে বিরক্তি ভঙ্গিতে বলে কাব্য,
ওই স্নেহার বাচ্চাটায় কখন আসবে রে? লেট লতিফ এর পদবীটা মনে হয় মেহেরের থেকে স্নেহা নির্দ্বিধায় ছিনিয়ে নিতে মাঠে নামছে।
কথাটা বলে হাসতে হাসতে মেহেরের দিকে তাকাতেই হাসি বন্ধ হয়ে যায় ওর। মেহের কটমট দৃষ্টিতে চেয়ে আছে কাব্যের দিকে। কাব্য জোর পূর্বক হেসে বলে,
খেপস কেন! তোরে লেট লতিফ এর পদ থেকে বহিষ্কৃত করায় তো তোর খুশি হওয়ার কথা।
কথা টা বলতেই ধুম করে এক কিল বসে কাব্যের পিঠে।
লেট লতিফ এর পদবী দিলেও মারে। আবার পদবী ফেরত নিলেও মারে। বাহুবলীর বইন জানি কোথাকার।
কাব্যের কথা শুনে দিয়া আর আহিল খিল খিল করে হেসে উঠে। মেহের কাব্যকে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই দেখে ইভান মুচকি হেসে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। ইভান এসেই মেহেরের পাশে বসে। ভার্সিটির গেট দিয়ে তিনটি প্রাইভেট কার এক সাথে ঢুকতেই দিয়া সহ অনেকেই সেদিকে তাকায়। প্রথম আর তৃতীয় গাড়ি থেকে কত গুলো কালো পোশাক পরিহিত লোক বের হয়। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনারা বডিগার্ড। মাঝের গাড়িটি থেকে প্রথমেই স্নেহা নামে, এরপর একে একে রুদ্র আর আয়মান নেমে আসে। স্নেহা মিষ্টি হেসে ওদেরকে নিয়ে মেহেরদের কাছে যায়। দিয়া যেনো আয়মানকে দেখে আরেক দফা ক্রাশ খায়। আয়মান একবার দিয়ার দিকে চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে মুচকি হাসে। মেহের ইভান এর সাথে কথা বলতে থাকায় খেয়াল ই করেনি যে এক জোড়া চোখ তাদের গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মেহের আর ইভান কে এক সাথে হেসে কথা বলতে দেখেই রাগে দাতে দাঁত কামড়ে চেয়ে থাকে রুদ্র।
স্নেহা যেয়ে ওদের সাথে বসে। রুদ্রকে বেশ কয়েকবার টিভি ম্যাগাজিন এ দেখার পর রুদ্রকে চিনতে আর বেগ পেতে হয় না ইভানের। কিন্তু এত বড় মাপের মানুষ এখানে কি করছে তা আন্দাজ করতে না পেরে রুদ্রর দিকে হা করে চেয়ে থাকে ইভান। স্নেহা হেসে রুদ্র আর আয়মান এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ইভানের,
~উনি হচ্ছেন সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র আমার দেবর। আর উনি হচ্ছেন আয়মান হাসান আমার ছোট দেবর আর সুফিয়ান ভাইয়ার পি এ। আর ভাইয়ারা উনি হচ্ছেন ইভান ভাইয়া, আমাদের সিনিয়র।
ইভান হেলো বলে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়াতেই রুদ্র শক্ত করে ইভানের হাত চেপে ধরে। এতে ইভান কিছুটা ব্যাথা পেলেও ইভান কিছু বলে না। রুদ্র ইভানের হাত ছাড়তেই আয়মানের সাথে হ্যান্ডশেক করে ইভান। ইভান ওদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলে মেহেরের দিকে তাকায় রুদ্র। ইভানের যাওয়ার দিকে মেহেরকে ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকতে দেখে মেহেরের সামনে যেয়ে দাড়ায় রুদ্র। গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে,
আপনাদের ক্লাস শুরু হবে কখন?
~এইতো পনেরো মিনিট পর। (কাব্য)
~তো এখনও এখানে বসে আছেন কেন! দ্রুত ক্লাস এ যান। গো! (কিছুটা ধমকের সুরে)
ধমকের আওয়াজে মেহের সহ ওর পুরো পল্টনও কেপে উঠে। মেহের বাদে সকলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। মেহেরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রর এতক্ষন যাবত জমিয়ে রাখা রাগ যেনো আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিরবির করে "জান বাঁচান ফরজ" বলে আয়মান দৌড় দিয়ে গাড়িতে যেয়ে বসে। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে মেহেরকে জিজ্ঞেস করে,
এখনও দাড়িয়ে আছো কেনো? জলদি ক্লাসে যাও।
~আপনি বললেই যেতে হবে নাকি আজব!
~তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করো! (মেহেরের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে রুদ্র)
ঝাড়ি খেয়ে আর রুদ্র কে এত কাছে দেখে মেহেরের মনে জমানো সাহসটুকু যেনো ফুস করে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মেহের এদিক ওদিক নজর ঘুরিয়ে মিন মিন করে বলে,
আসলে ভা ভাইয়া ই ই ইভান ভাইয়ার থেকে কিছু নোট নেওয়ার কথা ছিল। সে ওইগুলো তার বান্ধবীর কাছে রেখে এসেছিল। এখন ওইগুলো আনতে গেছে আর আমাকে এখানে ওয়েট করতে বলে গেছে।
মেহের এর দিকে কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রুদ্র। তারপর মেহেরের পাশে বসে পড়ে। মেহের অবাক হয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে,
~আপনি এখানে বসলেন কেনো?
~কেনো? এখানে বসার অধিকার কি শুধু তোমার সো কল্ড ইভান ভাইয়ার ই নাকি!
~আপনি তো ভারী অসভ্...
কালকের সেই মিষ্টি ঘ্রাণটা আবারও পেতেই কথার মাঝেই থেমে যায় মেহের। তার ঘ্রাণেন্দ্রিয় জানান দেয় যে মিষ্টি ঘ্রাণটির অধিকারী আর কেউ নয় বরং তারই পাশে বসে থাকা মানুষটি। মেহের এর বুক ধক করে উঠে। একরাশ ভয় এসে মনে ভয় করে। কালকেও যখন পরিচয় হওয়ার জন্য রুদ্র সামনে দাড়িয়েছিল তখনও এই ঘ্রাণটিই পেয়েছিল মেহের। আবার অন্ধকারের মধ্যেও ওই লোকটির গায়ের থেকে এই একই ঘ্রাণটিই পেয়েছিল মেহের। তবে কি উনি ই সেই লোক? নাহ! আর ভাবতে পারছে না মেহের। সোজা রুদ্রকেই জিজ্ঞেস করে,
কালকে পার্টিতে কি তবে আপনিই ছিলেন?
~~~
চলবে~
(নেক্সট আর নাইস ছাড়া আর কিছু বলেন না দেখি আপনারা। সবাইকে কি নেক্সট ভূতে ধরলো নাকি হু!!!)
0 Comments:
Post a Comment