#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 34
🍂🍂🍂
স্নিগ্ধ সকাল। পাখিরা তার নীড় ছেড়ে বেরিয়েছে আহার খোঁজার উদ্দেশ্যে। নতুন দিন, নতুন এক সূর্যোদয়, নতুন আশা নিয়ে শুরু হয় এক নতুন যাত্রার।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মেহের বিছানায় রুদ্রকে পায় না। সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে ৭ টা ১৫ বাজে। মেহের দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। নিচে বাগানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো রুদ্র আর তীব্র ব্যায়াম করছে। রুদ্রকে দেখে মেহেরের দ্রুত পায়ে ঘরে চলে এলো। ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে বারান্দা দিয়ে ছুড়ে মেরেই ডানে বামে না চেয়ে দিলো ভো দৌড়। নিচ থেকে তীব্র সহ আরো কয়েকজনের হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে কিছুতেই ঘরে থাকা যাবে না, মোটেও না, ভুলেও না। রুদ্র নাহলে ঘরে এসেই এক দফা ধমকাবে তাকে। নিচে নামতেই দেখতে পেলো মিসেস তিথি, স্নেহা আর দিয়া বসে আছে। মেহের গিয়ে তাদের পাশে বসতেই দেখলো তীব্র আর রুদ্র স্বশব্দে হাসতে হাসতে বাড়িতে প্রবেশ করছে। পাশেই আয়মান, আহিল আর কাব্য ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। এক বালতি পানি মারার পরও রুদ্র একদম শুকনো, ঝরঝরে, ফুরফুরে। এক বালতি পানি তো দূরে থাক, তার গায়ে এক ফোটা পানি পড়েছে কিনা সন্দেহ। মেহের চোখ ছোট ছোট করে রুদ্রর দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্রর পেছনে আসা মানুষটাকে দেখেই মেহের চমকালো। রেদোয়ান আহমেদ এক প্রকার কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছেন। রুদ্রকে পানি মারতে গিয়ে সে না দেখেই শ্বশুরের ওপর পানি মেরে এসেছে জানতেই জিভ কামড়ালো মেহের। মিসেস তিথি এগিয়ে গিয়ে অবাক কণ্ঠে বললেন,
একি অবস্থা! এতো সকালে তুমি সুইমিং পুলে নামতে গেলে কেনো?
রেদোয়ান আহমেদ তার স্ত্রীর দিকে কাতর চোখে তাকালেন। বললেন,
এই মনে করেন খুশিতে, ঠেলায়।
~মানে? কি বলছো এসব!
তিথির কথায় জবাব দিলেন না রেদোয়ান। তীব্র হাসতে হাসতে বললো,
রুদ্র আর আমি ব্যায়াম করছিলাম মা। বাবা এসে বললো সে নাকি আমাদের থেকে বেশি ফিট। আমাদের সরিয়ে নিজের ফিটনেস দেখানোর জন্য দাড়াতেই কে যেনো ওপর থেকে ফুলের বদলে এক বালতি পানি ছুড়ে বাবাকে সম্বর্ধনা জানিয়েছে।
তীব্র আর রুদ্র আবারো এক সাথে হু হা করে হেসে উঠলো। এবার কাব্য ওরাও আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না।
~কিন্তু পানিটা মারলো কে?
স্নেহার প্রশ্নে মেহের আড় চোখে তাকালো। কাপা হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি পান করতেই রুদ্র বলে,
~কি জানি বউমনি? আমার তো জানা নেই। আচ্ছা! পানিটা কে মারতে পারে বলোতো মেহেরজান।
রুদ্রর কথা কর্ণপাত হতেই বিষম খেলো মেহের। কাশতে কাশতে যেনো যক্ষারোগীর পদবীটা এবার জয় করেই ছাড়বে সে। মিসেস তিথি মেহেরের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। রেদোয়ান আহমেদ মেহেরকে বললো,
পানি দেখে মারিসনি বুঝলাম। কিন্তু পানি পান তো সাবধানে করবি নাকি রে মা!
মেহের করুন দৃষ্টিতে শশুরের দিকে তাকালো। লজ্জায় সে পারলে এখন মিলখা সিং এর মতো এক দৌড় লাগায় এখান থেকে। কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না তাই মাথা নিচু করে বললো,
সরি বাবা। আমি একটু দুষ্টুমি করতে চেয়েছিলাম। আমি খেয়াল করিনি যে তুমি ওখানে। তুমি প্লীজ রাগ করো না।
রেদোয়ান আহমেদ আলতো হাসলেন। মেহেরের মাথায় হাত রেখে বললেন,
বাড়ির সব থেকে ছোট তুই। তুই আর স্নেহা দুষ্টামি না করলে আর কে করবে?
মেহের জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। যে শয়তানের তাড়নায় সে এমন বাঁদরামি করেছে তাকে পেলে এখন বেধে রেখে ফুল ভলুমে আধ ঘন্টা কুরআন তেলাওয়াত শুনাতো। তার শয়তানি ছুটিয়ে তবেই দম নিতো সে। মিসেস তিথি বললেন,
~তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো? যাও কাপড় পাল্টে আসো আগে!
~যাচ্ছি যাচ্ছি! এতো ধমকানোর কি আছে!
~যাবে তুমি!
বউয়ের রাগী চেহারা দেখে দৌড়ে ঘরে চলে গেলেন রেদোয়ান। মেহের শাশুড়ির দিকে ঘুরে বললেন,
মামনি তুমি কি রাগ করেছো?
~পাগলী একটা! রাগ করবো কেনো? পরের বার থেকে আমরা এক সাথে প্র্যাঙ্ক প্ল্যান করবো ঠিক আছে?
~আমি সাথে আছি।
স্নেহার কথায় একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফিক করে হেসে উঠলো মেহের আর মিসেস তিথি।
~মেহেরজান ঘরে আসো তো। ইটস আর্জেন্ট।
বলেই রুদ্র ঘরে চলে গেল। শাশুড়ি চোখ দিয়ে ইশারা করে যেতে বলতেই মেহেরও ঘরে চলে এলো।
ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো রুদ্র ঘরে পায়চারি করছে। মেহেরকে দেখতেই দু হাত দুদিকে মেলে দিয়ে বললো,
ব্যায়াম করে খুব ক্লান্ত আমি। একটু জড়িয়ে ধরো তো মেহেরজান!
~~~
চলবে~
0 Comments:
Post a Comment