গল্প suddenly_fall_in_love পর্ব ২

 #suddenly_fall_in_love 

#লেখনীতে_সামিয়া_স্নিগ্ধা 

#পর্ব_০২ 


আজকে সুমাইয়ার গায়ে হলুদ। বাড়ি ভর্তি মেহমান। ওর কাজিন নাবিলা আর মাওয়া আরো বেশ কয়েকদিন আগেই চলে এসেছে। নাবিলা আর সুমাইয়া সমবয়সী। নাবিলার ছোট বোন মাওয়া। তবে তিনজনেরই বন্ডিং বেশ ভালো।

সুমাইয়ার হলুদ থেকে বিয়ে সবকিছুতেই ওর বাবা বেশ ধুমধাম করে আয়োজন করেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। গ্রামের সবাইকেই নেমন্তন্ন করা হয়েছে। 


সন্ধ্যা থেকে হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু। আরুশির পরিবারের সবাই এসেছে,শুধু আরুশি বাদে।আরুশিকে  না দেখে মাওয়া উঠে গিয়ে আরুশির মাকে জিজ্ঞাসা করল,,,


-কি ব্যাপার আন্টি,আরুশি আসলো না? 


-আসলে ওর নাকি শরীরটা তেমন ভালো না, তাই আসেনি। 


-ওহ।


বলে মন খারাপ করে মাওয়া চলে গেল। মাওয়া আর আরুশি বেস্টফ্রেন্ড। ওরা একই সাথে একই কলেজে পড়ে।।আরুশি আজকে এখানে না আসায় মাওয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল।


একে একে সবাই মিলে সুমাইয়াকে গায়ে হলুদ দিতে লাগলো।


সুমাইয়া গায়ে হলুদ এর সাজ তুলতে গিয়ে ভাবলো একেবারে শাওয়ার নিয়ে বেরোবে। শাওয়ার নিয়ে এসে ওর এখন বেশ ঠান্ডা লাগছে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসলো।কাল বিয়ের কথা মনে হতেই খানিকটা লজ্জা আর ভালোলাগারা এসে ওকে ঘিরে ধরলো,,,


পছন্দের মানুষটার সাথে বিয়ে হচ্ছে। যাকে চেয়েছিল তাকেই পেতে চলেছে। বিয়ে করে কাল নতুন আরেকটা বাড়িতে যাবে। নতুন সব মানুষজনের সাথে থাকতে হবে এসব ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতিরা ওকে ঘিরে ধরছে।


চুল মুছে তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে লাইট অফ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো সে।

________________


ভোরবেলা পুকুর পাড়ে উদাসীন হয়ে বসে আছে আরুশি। চোখের কোন থেকে অনবরত জল গড়াচ্ছে। সারারাত ঘুম হয়নি তার। ভালোবাসার মানুষটার আজকে বিয়ে এটা ভাবতেই যেন ভীতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে।


গ্রামের ধান ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছে মাহমুদ।গ্রামে আসা হয় না তেমন একটা তার। শহরেই সে আর তন্ময় পড়াশোনা করে।আসলে একসাথে দুজনেই গ্রামে আসে। ভোরে দুজনে একসাথে হাঁটতে বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তন্ময় ঘুমের কারণে উঠে আসতে পারেনি।তাই মাহমুদ একাই বের হয়।


হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে এসে আরুশিকে দেখে খানিকটা এগিয়ে আসে।পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,


-গুড মর্নিং। বসতে পারি।


আরুশি চোখ মুছে মাথা তুলে তাকায়। খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বলে,,,


-হুম।


মাহমুদ আরুশির পাশে বসে পড়ে।বলে,,,,


-আজকেও তার কথা মনে করে কাঁদছিলেন?


আরুশি চোখের পানি ভালোভাবে মুছার চেষ্টা করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,,,


-ক্ কই না্ নাতো।


-আচ্ছা সে যাই হোক। সেদিন তো আপনার সঙ্গে পরিচয়ই হয় নি।নামটাও জানা হয় নি।নাম কি আপনার?


-আরুশি।


-ওহ,নাইচ নেম।


প্রত্যুত্তরে আরুশি কিছু বলল না।বেশ কিছুক্ষণ নীরবতায় কেটে যায়। নীরবতা ভেঙে আরুশিই প্রথমে বলে,


-আপনাকে তো আগে গ্রামে দেখিনি। বেড়াতে এসেছেন নাকি?


-তেমনটাই বলতে পারেন। আমার নিজ বাড়িতে এক-দুদিন এর থাকাটা বেড়ানোই বলা যায়।


-এখানে আপনার বাড়ি?


-হুম,তবে থাকা হয় না এখানে ।আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড শহড়ে থেকেই পড়াশোনা করি।


-ওহ আচ্ছা।


বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় ওদের।উঠে আসার আগে মাহমুদ বলে,


-কাল তো আপনাকে আমার বোনের গায়ে হলুদে দেখলাম না।আজ কিন্তু বিয়েতে আসতেই হবে। অবশ্যই আসবেন কিন্তু,,,


আরুশি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল। অবাক হওয়া কন্ঠে বলল,,,


-মানে সুমাইয়া আপু আপনার বোন?


-হুম। বোনের বিয়ের জন্যই মূলত গ্রামে আসা।


আরুশি ছোট্ট করে জবাব দিল,


-ওহ।


-আচ্ছা উঠি আমি।আসবেন কিন্তু আজ।


মাহমুদ চলে গেল।আরুশির মনটা আবারো বিষাদে ভরে উঠলো।যাকে ভালোবাসে তার বিয়েতে যাবে কি করে? চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটার বিয়ে তো সে সহ্য করতে পারবে না।


________


তন্ময় বেশ খুশিতে আছে ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে। আজকে ওর বড় ভাই রাজুর বিয়ে সুমাইয়ার সাথে। তন্ময় আর মাহমুদ ছোটবেলা থেকেই বেস্টফ্রেন্ড।তাই মাহমুদের বাড়িতে যাওয়া আসা প্রায়ই হতো।তাই সুমাইয়ার সাথে ও তন্ময় এর বেশ ভালো সম্পর্ক।

রাজু ও অনেক আগে থেকেই সুমাইয়াকে ভালোবাসতো।তাই সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়েই সুমাইয়াদের বাড়ি গিয়েছে। সুমাইয়া নিজেও পছন্দ করতো রাজুকে।


--


রাজুরা সবাই চলে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

সুমাইয়াকে দুটো মেয়ে পার্লার থেকে এসে সাজিয়ে গেছে। নিজের রুমেই বসে ছিল সুমাইয়া আর ওর কাজিনরা। সুমাইয়ার আম্মু এসে ওদেরকে ড্রয়িংরুমে আসতে বলে।ওর কাজিনরা ওকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যায়। রাজুর পাশে নিয়ে ওকে বসায়। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে সুমাইয়া। কেমন যেন লজ্জা লাগছে তার।


ইসলামিক ও আইনত নিয়ম মেনে সুমাইয়া আর রাজুর বিয়ে সম্পন্ন হলো।খাওয়া-দাওয়ার পর এখন বিদায়ের পালা।যতই পছন্দের মানুষকে বিয়ে করুক তবুও সারাজীবন এর জন্য বাবার বাড়ি ছেড়ে যেতে কষ্ট তো হবেই। সুমাইয়া ওর বাবা-মা সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। যাওয়ার আগে আশপাশে তাকিয়ে মাহমুদকে দেখতে না পেয়ে সুমাইয়া দৌড়ে যায় মাহমুদের রুমে। সেখানে গিয়েই ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।ভাই বোন দুজনেই কাঁদছে। দুজনের চোখেই জল।


অবশেষে মাহমুদ সুমাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,,,


-চল, এবার তো যেতে হবে।


তারপর সুমাইয়াকে নিয়ে গিয়ে রাজুর হাতে ওর হাত তুলে দেয়।রাজু আর সুমাইয়াদের গাড়ি যাওয়ার পর রুমে চলে আসে মাহমুদ।বাড়িটা যেন কেমন খালি খালি লাগছে।

-

-

-

~চলবে~


সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ। তাহলে লিখতে অনুপ্রেরণা পাই।

0 Comments:

Post a Comment