গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব: ১৬
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়--
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়--
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥
গান টা থামিয়ে মেহরাব বলে
- সময় কারো জন্য যেহেতু নিজের গতি পল্টায় না আমাদের ও উচিত না সময়ের পিছে ছুটে যা চলে গিয়েছে হারিয়ে গিয়েছে তার প্রতি আসক্ত হওয়া।বরং সময়কে ধন্যবাদ দিয়ে নতুন আমি কে উপভোগ করা।
তার কথার পিঠে তাহিয়ানা নামক মেয়েটি বলে ওঠে
- স্যার, আপনার কি মনে হয় না পুরনো সময়ই আমাদের জন্য সব থেকে বেশি স্মৃতিময়?
মেহরাব শান্ত স্বরে বলে
- যে সময় চলে যায় তা বহমান স্রোতের ন্যায় চায়লে ও আপনি ফিরে পাবেন না।
তাহিয়ানা বলে
- স্যার সেখানে আমাদের জীবনের সব থেকে মূল্যবান মানুষ আর তাদের সাথে কাটানো স্মৃতি আছে।
মেহরাব বলে
- মিস তাহিয়ানা সিদ্দিকা আপনি একটু ভুল বললেন আছে নয় ছিলো।
তো ক্লাস গুড বাই ফর টুডে।সি ইউ টুমরো।
মেহরাব চলে যায় ক্লাস রুম থেকে।তাহিয়ানা নামক মেয়েটা কিছুক্ষন সময় নিশ্বাস বন্ধ করে বসে থাকে।তারপর তার পাশে বসা বান্ধবী রিসাকে উদ্দ্যেশে করে বলে
-জানু'রে মেহরাব স্যার আমার সাথে এতক্ষন কথা বলল।
- এ পাগল এ, স্যার'কে প্রশ্ন করবি তা স্যার উত্তর দেবেন না?
- আহা তা না তুই বুঝবি না কুচ কুচ হোতা'হে।
- হাট,চুপ থাক।
- ইশশ,,,হায় হায়,,,
- আরে যন্ত্রনা চুপ থাক।
তাদের বাক-বিতন্ডিতার মধ্যে আরো একজন প্রফেসর চলে আসে তাদের ক্লাসে।মেহরাব তার সুবিশাল অফিস কক্ষে বসে আছে।এতো অল্প বয়সে সনামধন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হওয়া চারটে খানি কথা নয়।প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে।তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক চাপা অতীত এক দুঃসময়ের হাতছানী।হাত থেকে ঠিক এক মিনিটের দুরত্বে রাখা ফোন টা নিশ্বব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে।মেহরাব ফোনের দিকে তাকিয়ে একটু বিরক্ত হয় তবু ও ফোন হাতে তুলে নেয়।
- কি'রে ফোন তুলিস না কেনো? মানুষ কি তোকে অপ্রয়োজনে ফোন দেয়?
- আমার তো তাই মনে হয়।
- এভাবে সত্য কথা বলে অপমান না করলে ও হবে।
- কাজের কথায় আয়।
- একটা নতুন কেস এসেছে যাবি?
- আবার?
- প্লিজ ভাই দু বছর ধরে পিছে পড়ে আছে।
- ওকে আই উইল ট্রাই।
- আরে কিসের চেষ্টা যেতেই হবে আমাদের ও একটা ট্যুর হয়ে যাবে।
- আচ্ছা।
সোহরাব এর কথা শেষে ফোন টা কেটে যায়।মেহরাব বসা থেকে উঠে দাড়ায়।সামনেই একটা ট্যুরে যেতে হবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর কিছু বাচ্চাদের নিয়ে বাইরের দেশে।আজ সকালেই সিলেক্টেড বাচ্চাদের নাম এসেছে।তার মধ্যে এই কেস টায় জড়ানো কি ঠিক হলো?
প্লেস টা একই শুধু জায়গার দুরত্ব একটু বেশি।সে যায় হোক স্রোতের টানে এবার গা ভাসাতেই হবে।আর কত দিন নিজেকে আড়ালে রাখা যায়।হাতে একটা সিট নিয়ে প্রোফেসর'স দের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো মেহেরাব তার হাটার ফোর্স সব সময় একটু বেশিই থাকে। সিলেক্টেড দের নাম গুলো আর একবার পড়ে দেখছিলো সে।এমন সময় তার বুকের সাথে কিছু একটার ধাক্কা লাগে ব্যাথা না পেলে ও চোখের পলকে মনে হলো ধাক্কা লাগা জিনিস টা দুরে ছিটকে গিয়ে পড়েছে।চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখে ক্লাসে তাকে প্রশ্ন করা মেয়েটা।কি যেনো নাম ছিলো? ও হ্যা মিস তাহিয়ানা সিদ্দিকা।আরে এই মেয়েটার নাম ও তো মনে হয় লিস্টে আছে। তাহিয়ানা বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে আশা করে ছিলো মেহরাব স্যার তাকে সহানুভূতি দেখিয়ে টেনে তুলবে কিন্তু সে বরং উল্টো তাকে ননসেন্স বলে প্রফেসর'স দের রুমে ডুকে যায়।অপমানিত বোধ হওয়া উচিত হলে ও এখন কেনো জানি তাহিয়ানার মনে হচ্ছে সে ভীষন বড় অপরাধ করে ফেলেছে মেহরাবকে এভাবে ধাক্কা দিয়ে। আবার লজ্জা ও লাগছে এভাবে কিভাবে সে মেহরাব এর সাথে ধাক্কা খেতে পারে।ইশশ আজ কি যে হচ্ছে তার সাথে।এভাবে চললে সে তো খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।তার পাশে থাকা রিসা তার দিকে অদ্ভুত নজরে চেয়ে আছে দেখে নিজেকে সংযত করে সামনের দিকে হাটা শুরু করে সে।
অন্য দিকে আলোরা আজ মেডিকেল এ যায়নি।তার ফ্লাট থেকে হাটা পথের দশ মিনিট দুরত্বে একটি খুন হয়েছে।অস্বাভাবিক খুন ফলে আজ রাস্তা ঘাট ব্লক করে দিয়েছে পুলিশ।তার ও বেশ ভালো হলো একটু নিজের শরির টাকে আরাম দেওয়া যাবে ভেবে সকাল চার টায় ওঠা মানুষ টা বেলা ১০ টায় ঘুম থেকে ওঠে।সকালের নস্তা খেয়ে একটা হরর মুভি চালিয়ে সাওয়ার নিতে চলে যায়।বেশ সময় সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে মুভি দেখতে শুরু করে।এই মুভিটা সে আরো সাতারো বার দেখেছে তবে তার বেশ ভালো লাগে তেমন হরর না হলে ও বর্তমানে রিলিজ পাওয়া মুভি গুলো থেকে শত গুনে হরর স্কিল আছে। এই মুভিতে কোন আজাইড়া চিপকাচিপকি মোমেন্ট নাই, কোন গান নাই তবে যা আছে তা একটু ভীতু মানুষের হাড় হিম করে দিতে সক্ষম মুভিটার নাম HORROR STORY।২০১৫ সালের দিকে রিলিজ পায়।আলোরা এক মনে সিনেমাটা উপভোগ করতে থাকে এমন সময় তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে পর পর আসে একটা ফোন কল।অনিহা সত্বে ও সে ফোন তুলে নেয় হাতে, কানে ফোন দিতেই জরুরি ভাবে ডাকা হয় তাকে হাসপাতালে।এই হাসপাতালের জব টা সে ছেড়ে দেবে অন্য হাসপাতালে জব নেবে রাতে এই হাসপাতাল টা যেনো কেমন।যদি ও বা হাসপাতালের মালিক একজন বাংলাদেশী এ জন্য আলোরা ফ্যাসিলিটি ও খুব একটা খারাপ পায় না তবু ও সে থাকতে চায় না সে তো প্যারা নরমাল ব্যাপার গুলো জানে,বোঝে এ জন্য রাতে তার হাসপাতাল টা একদমই সুবিধার লাগে না তবু ও ডাক্তারের ধর্মের কাছে সে ভয় কে তুচ্ছ করেছে।মুভি দেখতে দেখতে বেশ সময় গড়িয়ে গিয়েছে। যেহেতু ছুটি ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে তাই সে রেডি হতে যায়।প্রায় ঘন্টা পার করে রেডি হয়ে দুপুরের খাবার শেষ করে ফ্লাট লক করে নিয়ে বের হয় রাস্তায়।নিজের আইডি কার্ড ও প্রফেশন এর সুবাদে ইমারজেন্সির কথা বলে সে রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পেয়ে যায় কর্মরত অফিসারদের থেকে।তার গাড়িটি চলতে থাকে নিরিবিলি রাস্তা বেয়ে।মাত্র আধা ঘন্টায় সে আজ হাসপাতালে পৌছে যায়।হাজিরা ম্যাশিনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে হাসপাতালে ডুকে পড়ে।তাকে দেখে দুজন নার্স এগিয়ে এসে বলে চার তলার আটারো নম্বর রুমের পেসেন্ট আপনাকে বার বার স্মরণ করছে।আলোরা কি একটা ভেবে সোজা লিফ্টে উঠে যায়।আলোরা রুমে যেতেই লোকটা জাপানিজ ভাষায় তাকে কিছু একটা বলে এরপর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।আলোরা অবাক হয় সাথে এই ভেবে ভয় পেয়ে যায় যদি এই লোকের কথা সত্যি হয় তাহলে তার এত বছরের কষ্ট মাটি হয়ে যাবে।তবে মানুষ মরার আগে মিথ্যা কথা কেনো বলবে?এরপর অবশ্য সে নথি পত্র থেকে জানতে পেরেছে লোকটি একজন স্যামন অর্থাৎ তান্ত্রিক গোছের একজন মানুষ।তার যৌবন থেকে অসুস্থ হওয়ার আগের সময় পর্যন্ত সে তন্ত্র সাধনা করে গেছেন।
আলোরা বিচলিত হয়ে পড়ে সামনের ভবিষ্যৎ নিয়ে।তার এতদুর পাড়ি দেওয়া কি তবে বিফলে চলে যাবে? মাননি কি তবে কথা রাখতে পারেনি? নাকি অন্য কোন বিপদ হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাদের।কিভাবে সে সবটা জানবে? তবে কি আবার ও মুখামুখি হতে হবে অতীতের?আলোরার ছোট্ট হৃদপিন্ড টা ধক ধক করছে।ভয় হচ্ছে তার।সময় কে সে কিভাবে হারাবে?
তার কানে বার বার স্যামন লোকটির কথা ভেসে ভেসে আসছে
-Kakugo shite kudasai, kono tatakai wa yōide wa arimasen. Karera wa anata yori mo sū ga ōidesu. Anata no jakuten wa karera no tsuyomidesu. Karera wa sono chikara ni oite bōryoku-tekidearu. Karera wa giman, dorama, kōkatsu-sa ni takete imasu. Imasara nigeru koto wa dekinai. Anata wa sore ni tachimukawanakereba narimasen.
(তৈরি হও এই মোকাবেলা সহজ হবে না।তারা সংখ্যায় অধীক তোমরা দুর্বল।তোমাদের দুর্বলতা তাদের শক্তি।তাদের শক্তিতে তারা হিংস্র।ছল-কপাট,নাটক,আর ধুর্ততায় তারা পটু।
এবার আর পালাতে পারবে না।মোকাবেলা করতেই হবে।)
চলবে....
[আপনাদের ডিমান্ড অনুযায়ী সাজাতে পারতে ছিলাম না এজন্য দিতে দেরি হলো আশা করি ভালো লাগবে ]
0 Comments:
Post a Comment