গল্প:বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব: ৬
তোমারে দেখিলো পরণ ও ভরিয়া
আসমান জমিন দরিয়া....(।।)
হুমমমমমম
চলিতে চলিতে আমি ও দেখিবো তোমারে
হোওও...
রুপে দিলা তুমি পাগল করিয়া
ও কাজলটা মাখিতে,ডাগরও আখিতে
নজর পড়িলে কি হবে.....
আড় চোখে তাকিয়ে আছে আলোরা।পাশেই একটা পাথরের উপর বসে গান গাইছে মেহরাব।গানটা প্রতিধ্বনিত হয়ে পুরো রুমে আবার বেজে উঠছে।আলোরা ভীষণ বিরক্ত এখন মেহরাব এর উপর।সে ভেবেছিলো মেহরাব এই রুম থেকে নিজেকে এবং তাকে বের করার চেষ্টা করবে তা না সে মনের আনন্দে গান গাইছে? এটা কেমন কথা ভাই?
- তুই কি বেয়াদব?
- কি?
- সমস্যা কি তোর চোখ দিয়ে একটা ছেলেকে এভাবে গিলে খাচ্ছিস কেন?
- আমি?
- একা ছেলে পেয়ে ওমনি মেয়ে রুপটা বেরিয়ে এসেছে তোর?
- হায় হায় কি বলেন এসব অস্তাগফিরুল্লাহ।
- নাওজুবিল্লাহ পর বেয়াদব।
- এই তো ভালোই গান গাচ্ছিলেন এখন আবার আমার পিছে হাত পা ধুয়ে লেগেছেন কেনো?
- সে'কি'রে আলু একা একটা ছেলে পেয়ে এভাবে অপবাদ দিলি?
- কি অপবাদ দিলাম আমি?
- এই যে তোকে উতক্ত করছি
- আল্লাহ মাফ করো।
- এই আলু শোন
- জ্বি বলেন
- সত্যি বলবি
- কি সত্যি বলবো
- তুই যে বেয়াদব হয়েছিস আগে বলিস নি কেনো?
-মাথাটা কি গেলো আপনার?
- আবার ও বেয়াদবি।
-ভাই আমরা গত একটা ঘন্টা এই রুমে আটকা ফোন টা ও আনা হয়নি বের হবো কিভাবে তা ও জানি না আর আপনি কিসব আজগুবি কথা বলছেন?
- তো আমি বলেছিলাম চাবি টা পেয়ে লাফ দিয়ে রুম খুলে ঢুকে যা?
- আটকান নি কেনো?
- আটকালে থেকে যেতি?
- না থেকে যেতাম কোথায়?
- বেয়াদব আলু....
আলোরা বুঝে ওঠে না মাঝে মাঝে তার দোষ টা কোথায় হয়? তখন মেহরাব চাবি দিলে সে কোন বাজ-বিচার না করেই দরজা টা খুলে এই রুমটায় প্রবেস করে। এরপর দরজাটা খট করে আটকে যায় আন্ধকার ঘর থেকে বের হওয়ার কম চেষ্টা সে করেনি।উল্টো মেহরাব চুপচাপ একটা পাথর খুজে তাতে বসে গান গেয়ে যাচ্ছে।কি সাংঘাতিক আপবাদ তাকে দিলো মেহরাব সে নাকি চোখ দিয়ে মেহরাব কে গিলে খাচ্ছে। ছি ছি কি জঘন্য ভাষা।
- আলু
- জ্বি ভাই
- একটা থাবা খাবি?
- কি?
- বলছি একটা থাবা খাবি?
- না
- খা
- না
- একটা থাবা
- না
- খা না
- আল্লাহ কেনো খাবো
- আমার তোকে থাবা দিতে মন চাচ্ছে তাই খা
- না
- খা না
- না বললাম না
- আপনি এমন কেন?
- কেমন
- ভালো না
- তাহলে একটা থাবা ঠাস করে খেয়ে নে
- না
- খা না
- না
- খা
- না
-ধুর
অনেকক্ষন যাবৎ হাতড়ানোর পর মেহরাব রুমের ভেতর একটা নড়বড়ে পাথর পায়।অন্ধকার টা আরো আগেই কিছুটা চোখে সয়ে গিয়েছিলো।নড়বড়ে পাথর টায় জোরে চাপ দিতেই দরজাটা খুলে যায়।মেহরাব আর আলোরা অবশেষে বের হতে সক্ষম হয়।তবে তারা যে আওয়াজ টা পেতো তার উৎস হিসাবে একটি টেপরেকর্ডার তারা সেই রুমে পেয়েছে বেশ পুরানো এবং তাতে একটা টাইমার সেট করা প্রতি রাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা বেজে ওঠে।অর্থাৎ ভৌতিক এর সাথে মানুষের একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ রয়েছে।মেহরাব আসে আলোরা রা পৌছানোর ঘন্টা দুয়েক পরে।সে কিভাবে নদি পার হয়েছে তা অবশ্য এখনো কেউ জানে না।অনেক বার শুনতে চাওয়ার পর ও সে বলেনি। চাবিটা মেহরাব পেয়েছিলো এই বাড়ির ছাদের পাশের চিলেকোঠার আড়ালের একটা ছোট্ট কক্ষে। তার পাসে অবশ্য কয়েকটা কালো কুচকুচে সাপ ছিলো।মেহরব আলোরা আশার পর পর ছাদ থেকে নেমে আসতে চেয়েছিলো সেখানে কিন্তু চিলেকোঠার ঘর থেকে ফোস ফোস আওয়াজ শুনে সে দুবার চলে আসতে যেয়ে ও আটকে যায়।এরপর সে দোটানা দুর করে এগিয়ে যায় দরজার কাছে। দরজার পাশে দাড়িয়ে ও ভাবে দরজাটা সে খুলবে নাকি খুলবে না। এক পর্যায়ে একটা দীর্ষশ্বাস নিয়ে সে দরজায় কয়েকটা আঘাত করে কিন্তু দরজাটা খোলে না।তখন তার মনে পড়ে এটা একটা জমিদার বাড়ি সহজে দরজা খোলা যাবে এমন হলে তো জমিদার বাড়িতে হর হামেশাই আক্রমন চুরি ডাকাতি হতো।সে বুদ্ধি খাটায় কয়েক মিনিট অতিবাহিত করে সে পুর দরজাটা লক্ষ্য করে।দরজায় সাপলুডুর একটা কোট আকা আছে।এবং ৬টা সাপ আকা আছে কাঠের সেই সাপ গুলো সব ঐ একটা মানুষের আকৃতি ছোট কাঠের দিকে তাকিয়ে সে মানুষ এর আকৃতিতে একটা কোট আগালে কয়েকটা সাপ তার জায়গা পরিবর্তন করে।সে বুঝলো এটা সাপসিড়ি খেলা তবে অনেকটা পাজেল গেম এর মতো। সাপেরা প্রতিবার মানুষ টা নড়াচড়া করলে নিজেদের আকার ও জায়গা পরিবর্তন করবে এবং মানুষটাকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করবে। মানুষটা যদি শেষ পর্যন্ত যেতে পারে তবে দরজা খুলে যাবে। না হলে.....?
মেহরাব ভাবে না হলে একটা কিছু সাজা তো থাকা উচিত কি হতে পারে সেই সাজা তখন সে দেখতে পায় তার পা টা যেখানে তার পাশে ছোট্ট একটা ফাকা অর্থাৎ যদি সে না পারে এই খেলাটায় এগোতে তবে এখান থেকে একটা সাপ বের হবে এবং তাকে দংশন করবে।কিন্তু কথা হলো দরজার ওপারে এমন কি আছে যে এতোটা কড়া পাহারা? এমন জান এর ঝুকি নেয়ার মতো পাসওয়ার্ড?সে খেলা শুরু করে এটা যেনো তাকে একটা চ্যালেন্জ এর সম্মুখিন করে তুলেছে সে প্রতিবার মানুষটাকে নড়ালে সাপ গুলো তাকে আষ্টে পিষ্টে ধরতে চায়।প্রায় দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করার পর চার বার অসফলতার কাছাকাছি এসে ও সে সফল হয়ে যায়।দরজাটা ও খড়খড় কড়কড় আওয়াজ তুলে নিজে নিজে খুলে যায়।সে ফোনের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে খুজতে গিয়ে দেখে রুম টা কেমন স্যাঁতসেতে।একটা ভ্যাপসা গন্ধ আর বেশ অনেকটা পানি জমে জমে আছে জায়গায় জায়গা।অনেক গুলো ব্যাঙ।ব্যাঙ যেহেতু আছে সেহেতু সাপ থাকার সম্ভাবনা ও প্রচুর যেহেতু পাসওয়ার্ড টা সাপের। মেহরাব নিজের উত্তেজনাকে চাপিয়ে রাখতে না পেরে রুমটা খুজে দেখতে চায় কি অবস্থা রুমের? কেনো এতো পাহারা প্রতিটা দেয়াল খেয়াল করে দেখে সে একটা পাজেল এর মতো খন্ড চিত্র। চিত্রটা সে জোড়ানোর চেষ্টা করে প্রতিটা ইট নাড়ানো যাচ্ছিলো।নাড়ানো ইট গুলো সরালে বোঝা যাচ্ছিলো চিলে কোঠার বাইরে যে দেওয়াল তারা দেখেছে এটা তার সাথে তৈরি করা অন্য আর একটি দেওয়াল।সে যখন ইট সরাচ্ছিলো তখন কেবল তিনটে দেওয়ালের ইট সরানো যাচ্ছিলো আর একটা দেওয়ালের ইটের কেবল অধেকটা সরানো গেলো।সে তার সাধ্য মতো পাজেল টা সমাধান করে ফলাফল পেলো এমন একটি চিত্র যা সে কল্পনা ও করেনি।
সে ঐ গল্পটায়ই চিত্র আকারে পেলো যা সোহরাব সকলকে জমিদার বাড়ি ঢোকার আগে শুনিয়েছিলো।কি কথা হলো জমিদার যদি মারা যায় নিঃসন্তান হয়ে তাহলে এই গল্পকে পাজেল এর আকার দেওয়ার কারণ কি আর কেই বা দিলো কেনো দিলো?
চলবে.....
0 Comments:
Post a Comment