গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৮

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 8


🍂🍂🍂


আহমেদ ভিলার দ্বিতীয় তলায় উঠে অনেকক্ষণ যাবৎ স্নেহার রুম খুঁজছে মেহের। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় ভুলবশত এক ওয়েট্রেস এর সাথে ধাক্কা লাগায় কিছুটা জুস মেহেরের জামায় পড়ে। সাদা ড্রেস এ দাগ বসে গেলে বিচ্ছিরি এক অবস্থা হবে বলে স্নেহা মেহেরকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে উদ্দ্বত হয়। কিন্তু দোতলায় উঠতেই একটি মেয়ে এসে জানায় যে স্নেহা কে তার শাশুড়ি মা জরুরী তলব করেছে। স্নেহা একটু পর যাবে জানালেও মেয়েটা জোর করে স্নেহাকে নিয়ে যেতে থাকে। স্নেহা ওর রুমের দিক নির্দেশনা বলে গেলেও মেহেরের মাথায় ঠিক মত ঢুকে না তাই সে নিজেই খুজে নিতে শুরু করে। যে ব্যক্তি এই বাড়িটা এভাবে বানানোর আইডিয়া দিয়েছে বিরক্ত হয়ে তাকে ইতিমধ্যে মনে মনে কয়েকশ বকাও দিয়েছে মেহের। প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ ঘুরার পরও মেহের বুঝে উঠতে পারছে না যে কোনটা স্নেহার ঘর। হাঁটতে হাঁটতে একটি রুমের সামনে এসে থেমে যায় মেহের। বাড়িতে অনুষ্ঠান হলেও এদিকটায় কেউ ই নেই দেখে একটু ভয় অনুভব করে মেহের, পরে এই রুমটাই হয়তো স্নেহার রুম ভেবে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। বাম দিকে তাকাতেই ওয়াশরুম দেখতে পায় মেহের তাই ডানে বামে নজর না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায় সে। জামা পরিষ্কার করে বের হতেই অন্ধকার দেখে কিছুটা ভরকে যায়।

"একটু আগেই দেখলাম আলোতে অতিমাত্রায় ঝকঝক করছিল পুরো ঘর, এই টুকু সময়ের মধ্যে আবার কালো আঁধার নামলো কিভাবে! আজব বাড়ি। মোবাইলটাও তো দিয়ার কাছে রেখে আসছি। এখন এই অন্ধকার এ গেট কই খুজবো কচু!" বলেই ভয়ে ভয়ে হাতড়ে ঘরের দরজা খুজার চেষ্টা করতে থাকে মেহের। হটাৎ ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব হতেই পিছন ফিরতে নেয় মেহের কিন্তু তার আগেই এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে আষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। হটাৎ এভাবে কারো জড়িয়ে ধরায় অবাক হয়ে নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার মত অবস্থা তার। লোকটি হটাৎ মেহেরের ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে থুতনি রাখে আর ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,

~কেমন আছো রুদ্রানী? ডিড ইউ...মিসড মি?

মেহের যেনো ভয়ে জমে গেছে কিন্তু পরক্ষণেই লোকটির আবদ্ধ হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করে মেহের কিন্তু ফলাফল শূন্য। লোকটির হাত থেকে যতই ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে, লোকটি ততই শক্ত করে তাকে নিজের সাথে চেপে ধরছে।

~ইশশশ!!! এত মোচড়ামোচড়ি করছো কেনো রুদ্রানী! চুপচাপ শান্ত হয়ে কিছুক্ষন দাড়াও তো।

~ক্ কে আ আপনি? ছা ছাড়ুন বলছি! (আমতা আমতা করে বলে মেহের)

~তোমাকে ছাড়ার জন্য তো ধরিনি মায়াবতী। তোমাকে তো সারাজীবন আমার সাথে রেখে দিবো আমি। (ঘাড়ে থুতনি রেখেই নিঃশব্দে হেসে বলে)

~কি সব আবোল তাবোল বলছেন! ছাড়ুন আমাকে! আমি কিন্তু এবার চিৎকার করবো। ছাড়ুন বলছি! অসভ্য, বজ্জাত লোক! (মেহের)

মেহেরের কথায় লোকটি হো হো করে হেসে উঠে যেনো মেহের ভীষণ মজার কৌতুক বলেছে এখন। মেহের আহাম্মক এর মত দাড়িয়ে থাকে। লোকটি হাসি থামিয়ে বলে,

~তুমি দেখছি খুব ভুলো মনের মায়াবতী। তোমার বান্ধবী কি বলেছে মনে নেই? এই বাড়ির প্রতিটা রুম সাউন্ড প্রুভ। তুমি এই ঘরে চিৎকার করে গলা ভেঙে ফেললেও কেউ শুনতে পাবে না।

এইবার মেহেরের মন চাইছে শুধু বকা দিতে না বরং যে ব্যক্তি এই বাড়িটা বানিয়েছে তার মাথায় ১০ ইঞ্চির ইট দিয়ে গুনে গুনে ৩০ টা বারি দিতে। মেহের মনে মনে বলে,

বেটির ঘরে বেটা! এমন বাড়ি বানানোর জন্য আর কারো বাড়ি পেলো না, আমার বান্ধবীর শ্বশুরের বাড়িটাই পেলি! মন তো চাইছে...

~মনে মনে বকা হলে আমার দিকে একটু নজর দাও না রুদ্রানী। সারাক্ষণ দেখি বন্ধুবান্ধব নিয়ে মত্ত থাকো। আমার দিকে তো একবারও চোখ তুলে তাকাতে দেখলাম না। জানো তোমার চোখে চোখ রেখে মনের অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু এখন না। সময় হোক তখন কথার ঝুড়ি নিয়ে বসবো তোমার সাথে।

লোকটির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না মেহের।


এক ফোঁটা অশ্রু গাল গড়িয়ে ছেলেটির হাতে পড়তেই আঁতকে উঠলো ছেলেটি। সঙ্গে সঙ্গে মেহেরকে ছেড়ে তার দিকে ঘুরিয়ে মেহেরের দু গালে হাত রাখতেই মেহের বলে,

~কে আপনি? এমন করছেন কেনো? আমাকে যেতে দিন প্লীজ! (কান্না ভেজা গলায় বলে মেহের)

~কে আমি, কেনো এমন করছি ধীরে ধীরে সব জানতে পারবে মায়াবতী। তুমি শুধু এটুকু জানো যে তুমি শুধু আমার। #আমার_রুদ্রাণী।

বলেই মেহেরের চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে হালকা ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে যায় সে। দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় মেহের লোকটির অবয়ব দেখতে পায়। ভ্রু কুচকে ভাবতে থাকে যে ব্যক্তিটি কে হতে পারে। ব্যক্তিটি রুম থেকে বের হতেই রুমের সব লাইট জ্বলে উঠে। মেহের দরজা দেখতে পেয়ে দ্রুত সে রুম ত্যাগ করে।

মেহের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে রুদ্র। মুচকি হেসে বলে,

তোমার ঐ ভীত হরিণী চোখ দেখেই তো আমি মুগ্ধ হয়েছি রুদ্রাণী। তোমার প্রতি ভয়ানক ভাবে আসক্ত আমি। তোমার মায়া কেটে উঠা আমার পক্ষে সম্ভব না। শীঘ্রই তোমাকে আমার বানিয়ে নিবো। তখন তুমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবতে পারবে না। শুধু মাত্র আমার_রুদ্রাণী হয়ে থাকবে তুমি।

~~~

চলবে?

(রুদ্রর চরিত্র টা কেমন লাগে আপনাদের কাছে?)

0 Comments:

Post a Comment