গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৭

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 7


🍂🍂🍂


রুদ্র সিড়ি দিয়ে নামার সময় সব স্পট লাইট তার দিকে স্থির করা হয়। রুদ্রর থেকে ২ কদম পেছনেই দাড়িয়ে আছে আয়মান। সকলেই মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে রুদ্র আর আয়মান এর দিকে। রুদ্র সাদা শার্ট এর ওপরে নীল রঙের ব্লেজার পড়েছে, হাতে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি, চুলগুলো স্পাইক করা। অন্যদিকে আয়মান সাদা আর কালোর কম্বিনেশন এর একটি সুট পড়েছে। সকলের দৃষ্টি ওদের দিকে থাকলেও রুদ্রর দৃষ্টি দূরে দাড়িয়ে থাকা মেহের এর দিকে। রুদ্র কে দেখেই তীব্র, আর ওদের বাবা মা রুদ্রর দিকে এগিয়ে যায়। নিচে নেমেই রুদ্র সোজা তার মা বাবা আর ভাই এর কাছে যায়। তারা মেহমান দের সাথে রুদ্রকে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে।

.

অবাক হয়ে চোখ গোল গোল করে আহিল আর কাব্য এক সাথেই স্নেহা কে জিজ্ঞেস করে,

সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র তোর দেবর!!!

স্নেহা জোরপূর্বক হেসে মাথা হ্যাঁ বোধকে মাথা নাড়ায়।

ওদের এমন আচরণ মেহেরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আর দিয়া তো এখনও এক ধ্যানে আয়মানের দিকেই চেয়ে আছে।

~তুই যে দ্যা সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র এর ভাবি তা আগে বলিস নি কেন? (রেগে প্রশ্ন করে আহিল)

~তোদের ভাইয়া বলেছিল যে রুদ্র আসার আগ পর্যন্ত ওর ব্যাপারে কাউকে না বলতে। আর ওনার সাথে আমার এমনিও আগে দেখা হয়নি। আমার বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন না তাই আর বলিনি। (মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলে স্নেহা)

~এভাবে রিয়েক্ট করছিস কেনো তোরা? ওনাকে কি তোরা আগের থেকেই চিনিস? কে উনি?(মেহের)

কাব্য আর সাহিল একে ওপরের দিকে একবার চেয়ে তারপর মেহের, দিয়া আর স্নেহা কে টেনে এনে এক সাইড এ দাড়ায়। হাতে টান পড়ায় দিয়ার ধ্যান ভাঙে আর ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকায়। কাব্য ধীর স্বরে বলে,

~সুফিয়ান আহমেদ রুদ্র। যাকে এক নামেই সবাই চিনে। বিশ্বের টপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে তার কোম্পানি একটি। এতদিন ফ্রান্স এ ছিল। সেখানেও নাকি তার বিশাল নাম ডাক রয়েছে। একটা আর্টিকেলে পড়েছিলাম যে মাফিয়া জগতেও নাকি তার আনাগোনা রয়েছে।

~মা...মাফিয়া! (ভীতস্বরে বলে মেহের)

~হুঁ। কিন্তু তা শুধু গুঞ্জন মাত্র। জানিস  তার খ্যাতি দেশে বিদেশেও ছড়িয়ে আছে। ওনাকে এক প্রকার সেলিব্রিটি বললেও চলে। (আহিল)

আহিল আর কাব্যর কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিলে মেহের।

~আচ্ছা উনি যদি সত্যিই মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এর হয়ে থাকে তার মানে কি সে মানুষ খুন করে? (দিয়া)

~যারা মাফিয়া তাদের কাছে এইসব খুন খারাপী হাতের ধুলার মত।

~উফফো! তোরা এত ভয় পাচ্ছিস কেন! সুফিয়ান ভাইয়া খুব ভালো। তোরা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস।

~আমার তো ওনার কাজের ওপর আগের থেকেই অনেক ইন্টারেস্ট ছিল। ভালোই হলো আজকে দেখা হলো। (এক্সসাইটেড হয়ে বলে কাব্য)

কাব্যের কথা শুনে দিয়া, আহিল আর মেহের আড় চোখে কাব্যের দিকে তাকায়।

~পাগল হয়েছিস! এই লোককে দেখেই কি গম্ভীর মনে হয়। মাফিয়া মানে তো ভয়ানক মানুষ। তোরা খবরদার ওনার কাছে যাবি না। আর স্নেহা! তুই বিয়ে করার জন্য আর পরিবার পেলি না! আমার তো ভয় করছে। যদি মেরে টেরে দেয়? (মেহের)

~কি বলছিস! আমার মনে হয় না সুফিয়ান ভাইয়া কোনো মাফিয়া। উনি তো বিজনেসম্যান। উনি মারতে যাবে কেন! তুই টেনশন নিস না তো।

.

তীব্র মেহেরদেরকে রুদ্রর সাথে পরিচয় করাতে চাইলে সকলে রাজি হলেও মেহের ভয় পেয়ে না করে দেয়, পরে স্নেহা আর দিয়া মেহেরকে জোর করে সাথে নিয়ে যায়। তীব্র রুদ্র আর আয়মানকে ডাক দিতেই তারা তীব্রদের কাছে আসে। সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে মেহেরের দিকে খেয়াল করে দেখে যে মেহের স্নেহার পেছনে লুকিয়ে কাধের দিক দিয়ে উকি দিয়ে ভীতু চোখে চেয়ে আছে। সকলে মেহেরকে সামনে আসতে বললে মেহের মাথা নেড়ে না জানায়। রুদ্রকে ভ্রু কুঁচকে মেহেরের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে এতে যেনো মেহের ভয়ে আরো গুটিয়ে যায়। দিয়া বিরক্ত হয়ে মেহেরকে টেনে সামনে আনে। তীব্র রুদ্র আর আয়মানের সাথে মেহেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। মেহের মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে, জোরপূর্বক হেসে ওদের সাথে পরিচিত হয়। ওদের সাথে পরিচিত হওয়ার পরপরই রুদ্রকে রেদোয়ান আহমেদ ডাক দিতেই সে অন্যদিকে চলে যায়। এতে যেনো মেহেরের আত্মায় পানি ফেরে।

~তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেনো মেহের? আরে বাবা ওনাকে ভয় পাওয়ার কি হলো! আর মাফিয়া হলেও তুই কি ওনার কোনও ‌ক্ষতি করেছিস যে উনি মারতে যাবে। (স্নেহা)

~হ্যাঁ তাইতো। ধুর!!! আমি কেনো ওনাকে ভয় পাচ্ছি। আমি কি ওনাকে কিছু করেছি নাকি! (ভাবার মত করে বলে মেহের)

এতে সবাই চোখ গোল গোল করে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের বলে,

আসলে তোরা তো জানিস ই আমি মারামারি পছন্দ করি না। তার ওপর রক্ত এসব ভয় পাই। তখন তোরা ওইসব কথা বলছিলি বলে একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। এখন আর ভয় পাবো না। সত্যি!!!

~আমরা আছি তো তোর সাথে। আমরা থাকতে ভয় কিসের!!!(মেহের এর মাথায় গাট্টা মেরে বলে কাব্য)

এতে মেহের কাব্যের পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয়। একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে সবাই এক সাথে হেসে উঠে আর পার্টি এনজয় করতে শুরু করে।


🍂🍂🍂


এত কিছুর মধ্যে মেহের খেয়াল করেনি যে কেউ একজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে আর বিড়বিড় করে বলছে,

'কে বলেছে তোমায় এত মায়াবতী হতে রুদ্রানী! দিন দিন নিজের প্রতি আসক্ত করে চলেছো আমায়। এজন্য ইউ ডিজার্ভ আ পানিশমেন্ট।' বলেই বাকা হাসে ছেলেটি।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment