1t/Banner 728x90

গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ১০

 **গল্প: বাধন হারা বেনী**  

**লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা**  

**পর্ব: ১০**


সেদিন এর পর তারা একটি ফাঁদ পেতে ছিলো। সেই ফাঁদে যে আটকে পড়েছিলো, সে আর কেউ না, স্বয়ং রাহিলা বেগমের বোন তাসলিমা বেগম। তিনি জীবিত ছিলেন এবং বেঁচে ছিলেন। উনি এবং রাহিলা বেগম মিলে গ্রামের মানুষদের পরিকল্পনা করে ভয় দেখাতেন; এখানে সাহায্য করত রাহিলা বেগমের ছেলে। ঐ যে টেপরেকর্ডারটা সেদিন পেয়েছিলো, তার উপর থেকে পরিষ্কার করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ল্যাব টেস্টে পাঠানো হলো। এখানে দুজন নয় বরং চারজন মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়। মেহরূব তার একটি বিশেষ পাওয়ার খাটিয়ে সরকারি ডেটাবেজ থেকে সেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং করায়। এখানে সাফ সাফ প্রমাণ হয় এই চারটি ফিঙ্গারপ্রিন্টের; এর দুটি মেহীাব ও আলোরার আর দুটি রাহিলা বেগম এবং উনার ছেলে জসিমের। এখন রাহিলা বেগমের প্রথম জবানবন্দি অর্থাৎ প্রথমবার অফিসে এসে যা যা বলেছেন, তা অ্যানালাইজ করে দেখা গেলো যে উনি সন্দেহজনক। সেই মোতাবেক ওনাকে জানানো হলো যে আমরা একটি বিশেষ জিনিসের জন্য পাচ্ছি জমিদার বাড়িতে, হয়তো আপনার বোনের জন্য গায়েব হয়ে গিয়েছিলো। উনি মিনিট পনেরো’র মধ্যে ছেলেকে নিয়ে হাজির। তিনি ফাঁদে পা বাড়ান।


উনাকে জেরা করা শুরু হয়। দারুণ সুচতুর ব্যক্তি তিনি, সহজে হাতে আসার মতো নন। এরপর যখন মেহরাব সবটা সামনে তুলে ধরে, তখন তিনি তাঁর আসল রূপে ফিরে আসেন।


নিজের বাবা-মায়ের নামে কঠিন সব কথা শুনে হয়তো সহ্য হয়নি তাঁর; এজন্যই কঠোর খোলস থেকে বেরিয়ে এসে সত্য শিকার করেন।


রাজতরঙ্গীনি ও সাধু কামরূপ কামাক্ষায় অগ্নি সাক্ষী রেখে বিবাহ করেন। আর দেশে ফিরে সেই ভালোবাসার পরিণতি স্বরূপ তাঁর গর্ভে আসেন তাসলিমা বেগম ও রাহিলা বেগম। যাদের প্রকৃত নাম কেউ রাখেননি। রাজা এই খবর বাইরে যেতে দেননি। এক বিশস্ত দাসের মাধ্যমে কন্যা দুটি হত্যা করার জন্য মহল থেকে বের করে দেন। তরঙ্গীনিকে বলা হয়, তার মৃত বাচ্চা হয়েছে। এরপর থেকে কালো যাদুর প্রভাবে সে সাজা নিতে শুরু করে। কিন্তু সেই দাস নিঃসন্তান থাকায়, তার স্ত্রী সেই সন্তানদের অন্য গ্রামে এসে মানুষ করতে শুরু করে। তারা প্রাণে বেঁচে যায়, হিন্দুর ঘরে জন্ম নিয়ে ও মুসলমানের ঘরে বড় হলো তারা। নাম পরিচয়, আদর স্নেহ সবই পেলো। তবে জমজ হলেও তাদের চেহারায় খুব একটা মিল ছিল না। তবে তাদের প্রকৃত বাবা-মায়ের সঙ্গে বেশ মিল ছিলো বলে জানায় তার পালিত মা। মরার আগে তিনি এ সম্পর্কে বিশদ সব বলে যান। এবং তাদের প্রমাণ স্বরূপ জন্মের সময়ের গয়নাগুলো ও বাকি সব তথ্যে দিয়ে যান। কিন্তু তা তাদের জমিদার বাড়ির সন্তান প্রমাণিত করতে বসার্থ হয়। সেখান থেকে শুরু হয় দুই বোনের নিজেদের অস্তিত্ব ফিরে পাওয়ার লড়াই। কিন্তু তারা যে কখন ভুল পথে পা বাড়িয়ে ফেলেছে, তা তারা বুঝতে পারেনি। সম্পত্তির লোভ, জমিদার নাতনীর পরিচয় এবং একটু ভালো থাকার আশায় তারা মত্ত হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, পুরো গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।


তবে তারা রহস্যময় সেই জমিদার বাড়ির রহস্যের বেড়া জালে আটকা পড়েছিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো নিজের বাবার সমাধিটা খুঁজে বের করা। পালিত মায়ের থেকে জেনেছিলো, সকলে মারা যাওয়ার পূর্বে তাদের প্রিয় ও মূল্যবান গয়না কোনো এক গোপন জায়গায় রাখা। তা খুঁজে বের করার জন্য এই জায়টা জনমানব শূন্য হওয়া প্রয়োজন ছিলো। তাই প্রথমে এত সেনসিটিভ ইস্যু নিয়ে নাটক করে মনোযোগ ও ভয় সৃষ্টি করেন তাসলিমা বেগম। এরপর মাঝে মাঝে এখানে ওখানে বা জেলেদের দেখা দিয়ে ভয়টাকে মনে টিকিয়ে রাখেন। যদি কোন পথচারি ঐ পথ দিয়ে রাতে যেতেন; তবে ঐ নিদিষ্ট সময়ে বাঁধা পড়লে সেই আওয়াজ শুনতেন এবং ভয় পেতেন। মাঝে মাঝে ভয় অনুযায়ী লেজার লাইটের ছায়া ভয় প্রদর্শন করা হতো, তাতে ভৌতিকতার মাত্রা আরো বেড়ে যেতো। যেমন ভয় পেয়েছিলো আলোরা ও অনিমা।


ঐ পাজেল সমাধান প্রথম করেন রাহিলা বেগম। তিনি দরজা খুলে প্রথম চাবি বের করেন; এরপর তা দিয়ে দরজা খুলে ঐ অন্ধকার ঘরের নিচের বেসমেন্টে তার জন্মদাতা পিতার জীবন্ত সমাধি দেখেন এবং তাদের এই করুন পরিস্থিতির জন্য কষ্ট পান। এরপর গুপ্তধনের খোঁজে পড়েন কিন্তু তা পাওয়ার সম্ভাবনা আসতীত হলে তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি ভেবেছিলেন, আমরা হয়তো তার ফাঁদে পা দিয়ে তাসলিমা বেগমকে খুঁজে বের করবো এবং এক সময় আমাদের মাথা খাটিয়ে তা গুপ্তধন খুঁজে বের করবে, এবং আমাদের বিপদে ফেলে পালানোর একটা সম্ভাবনা আছে। কারণ রাজেন্দ্র জানতেন, অপুত্রক তিনি মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণের পর পরই তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে এবং তার সব ধন সম্পত্তি আত্মীয়রা লুটে নিবে। যেহেতু শেষ সময়ে তার কোনো وارিস নেই, তাই তিনি তার সঙ্গে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিত্ব শেষ করে যান। সে সব সম্পত্তির কাগজ আর বাকি ধন-সম্পত্তি পাহারায় আছে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক সরীসৃপ জ্বীনের কাছে। আর এই তথ্য মেহরাব জানতে পারে, সেই বৃদ্ধা মহিলা জৃবীন সাপের কাছ থেকে, যিনি প্রথম দিন সোহরাবকে ফিরে দিতে বলেছিলেন ঐ জমিদার বাড়ির।


নিজেদের আমলনামা সামনে আসার পর রাহিলা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন, নিজেদের অস্তিত্ব ফিরে পেতে চাওয়ার অনশায়। কিন্তু তারা যে পথ অবলম্বন করেছে, তা ভুল ও অন্যায় পথ। এরপর রাহিলা বেগম আড়াল থেকে তাসলিমা বেগমকে সামনে নিয়ে আসেন এবং সে সময় তাদের ছলে ছলে চোখের দৃষ্টিতে মায়া হয় সবার। এদের ভুল সুধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়। বৃদ্ধা দুজনকে গ্রামে রেখে তার ছেলে জসিমকে নিয়ে যায় শহরে এবং চাকরি দেয় তাকে।


এর সাথে শেষ হয় #দর্পনে_ছায়া টিমের আর একটি রোমাঞ্চকর একটা যাত্রা। তারা রওনা দেয় শহরের সেই কোলাহল পূর্ণ শরগমে জায়গায়। যাওয়ার সময় সকলে এই সবুজ গাছপালা, জমিদার বাড়ি, এই মায়াময় গ্রাম এবং জমিদার বাড়ির সকলের করুন পরিণতির কথা ভেবে অন্যরকম এক কষ্টের অনুভব হতে থাকে তাদের। তবে যে কাজে এসেছিলো তারা, তা সম্পন্ন করতে পেরে সকলের মনে একটা আলাদা শান্তি বিরাজ করছে।


**চলবে.....

No comments

Powered by Blogger.