গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব:৯
ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে দেখে মেহরাব কালকের পর পুরো বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে।কি এমন জিনিস বা কি এমন রহস্য রয়েছে যার জন্য এই এতো সমস্যার সম্মুখীন সকলের হতে হচ্ছে।আলোরা অনিমা অনেকটাই ভয় পেয়ে গিয়েছে।তাই তারা আজ লম্বা একটা ঘুম দিচ্ছে।সোমেহরা, তনিমা,সোহরাব,মেহরাব সকলে মিলে আলোচনা করছিলো তারা কতদুর আগাতে পেরেছে এই রহস্যের ব্যাপারে। তারা এসেছিলো গণধর্ষনের শিকার তাসলিমা বেগমের উধাও হওয়া রহস্য বের করতে এসে ফেসে গিয়েছে এই জমিদার বাড়ির রহস্যে।সারাদিন তারা তাদের পাওয়া তথ্য গুলো জুড়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে পৌছালো যে এখানে একটা কিছু আছে যা মিথ্যা।কিন্তু তা কি সে বুঝতে পারছে না।
দিন গড়িয়ে রাতের আধার নেমেছে।তনিমার ঘুম না আসায় সে যে রুমে থাকে তার বেলকনিতে হাটাহাটি করছিলো।এমন সময় একটা দমকা গরম বাতাস তার শরিরে এস্পার ওস্পার হয়ে গেলো।সে বিষটা অতটা পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।কারণ তার বেশ ঘুম আসছিলো এখন।রাতে ঘুমের মধ্যে সে কিছু খন্ড চিত্র দেখে চিত্র গুলো এমন যে গ্রামের লোক এক সাথে লাশ নিয়ে কোথা ও যাচ্ছে।তারপর কোন একটা অল্প কিশোরী মেয়ে লাশ জড়িয়ে কাদছে।তার ঘুম ছুটে যায়।যতবারই ঘুমায় ততবারই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্চে তাকে।এরপর পাশ ফিরে সোমেহরাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুম তখন তার চোখে পাকাপক্ত হয়ে পড়েনি হঠাৎ তার খেয়াল হলো সোমেহরাকে সে কিভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে? সেমেহরা তো অনিমার কাছে ঘুমিয়েছে আজ।তাহলে তার পাশেকে? ঘুম ছুটে যায় তার কারো গায়ে রাখা হাতটায় ঠান্ডা শরিরের ছোয়া পায় সে।
ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে দেখে পাশে কেউ নেই।তখন তার অন্যপাশ থেকে একটা কনকনে শিতল কন্ঠ বলে ওঠে "ঘুমিয়ে পড়ো রাত হয়ে গিয়েছে।"তার ঘুম ছুটে গিয়েছে বহু আগে একটা ঠান্ডা হাত তাকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।সে না পারছে নড়তে আর না পারছে কোন ভাবে এখান থেকে ছুটে যেতে।সে তো ভয়েই অস্থির।মেহরাব এর চোখটা ঘুমে একটু লেগে আসছিলো এমন সময় একটা বিড়াল এর কর্কশ আওয়াজ কানে এলে ঘুম ভেঙে যায় তার।এদিক ওদিক তাকিয়ে বিড়াল খুজে না পেয়ে ল্যাপটপের স্কিনে তাকাতে চোখে বাধে তনিমাকে সে অদ্ভুতভাবে হেটে চলেছে যেনো কোন এটা কিছু তাকে আকর্ষন করছে মেহরাব খেয়াল করে সে ছাদের দিকে যাচ্ছে।সে দ্রুত সোহরাবকে জাগিয়ে তোলে এবং ছাদের দিকে ছুটে যায় দুই ভাই।সেখানে সোহরাব দ্রুত তনিমাকে আটকে নেয়।তনিমা যেনো নিজের মধ্যে নেই তাকে ধরতে গেলেই গর্জন করে উঠছে।সোহরাব সামলাতে পারছে না দেখে মেহরাম দ্রুত তার ও সোহরাব এর শরির বন্ধ দিয়ে তনিমার কড়ে আঙুল এর নখে চাপ দিয়ে দোয়া পড়তে শুরু করে।একটা সময় এসে তনিমা জ্ঞান হারায় সোহরাব তাকে পাজা কোলে করে নিয়ে যায় তার রুমে। সেখানে গিয়ে তো তারা চরম পর্যায়ের অবাক তনিমা খাটে সুয়ে আছে অচেতন অবস্থায় তাহলে তাদের কোলে কে?
কোলে থাকা তনিমা তখন সোহরাব এর গলা চেপে ধরে বিদঘুটে ভঙ্গিতে হাসতে থাকে।মেহরাব দ্রুত আজান দেওয়া শুরু করে।আজান শেষ হতেই পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যায় বিছানায় থাকা তনিমা গায়েব হয়ে গিয়েছে।আর সোহরাব এর কোলে থাকা তনিমা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে।তখন দুর থেকে খুব ক্ষীন আওয়াজে আজান এর শব্দ ভেসে আসছে।
.................................................
সকালে সকলে মিলে একটা রাউন্ড টেবিলে সকালের নাস্তা করতে করতে মিটিং এ বসে।
অনিমা- সেদিন রিসার্চ করার সময় আমি একটা চঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি।কিন্তু গত একদিনে তা বলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সেমেহরা- কি এমন তথ্য আছে তোর কাছে?
আলোরা: রাজেন্দ্রর চারটে নয় তিনটে কন্যা ছিলো। তিন জমিদার গিন্নীর চার কন্যা নয় তিন কন্যায় ছিলো।
মেহরাব- তাহলে চার কন্যার কথা বলে কেনো সকলে?
অনিমা- এই কন্যাটিই হলো ছোট কন্যা রাজ তরঙ্গীনি।তিনি একজন দাসীকন্যা।কিন্তু তার পিতা ছিলো রাজেন্দ্র স্ত্রীরা যখন গর্ভাবস্থায় ছিলো তখন রাজেন্দ্র তার এক দাসীর সঙ্গে কুকর্মে লিপ্ত হয় এবং মাসের মাথায় দাসী সন্তান সম্ভাবা হয়।নিজের এই অপকর্ম লুকাতে সে দাসীকে অন্য এক জায়গায়তে সরিয়ে দেয়। যখন স্ত্রীদের সন্তান প্রসব হয় তখন তাদের সাথে ওই দাসীকন্যাকে মিলিয়ে দেয় এমন ভাবে যেনো তারা ঐ সন্তানের জন্ম দিয়েছে।কিন্তু জমিদার গিন্নীদের সন্দেহ হতে থাকে ছোট কন্যার উপর।একদিন জমিদারকে তার ছোট স্ত্রী সেই দাসীর সাথে দেখে নেয় এবং তাদের গোপন কথা শুনে বাকি গিন্নীদের বলে দেয়।এরপর তিন গিন্নী মিলে ফন্দি এটে রাজাকে ভারতে কামরুপ কামাক্ষাতে যাদু বিদ্যা শিখতে পাঠায়।এরপর নিজেরা ও যায়।তারা ভেবেছিলো জমিদারের অগচরে দাসীকন্যাকে যেকোন ভাবে হত্যা করবে তার মধ্যেই তরঙ্গীনি এক সাধুর প্রণয়ে আসক্ত হয়।এতে করে জমিদার গিন্নীরা তার ক্ষতি করতে ব্যর্থ হওয়ায় এক সাধুকে অর্থ দিয়ে কিনে নিয়ে তাকে দিয়ে তরঙ্গীনির উপর যাদু করায়।এতদিনে জমিদারের ও যাদু শেখা শেষ তারা বাংলাদেশে ও ফিরে আসে এরপর থেকে যাদুর প্রভাবে তরঙ্গীনি অসুস্থ হতে শুরু করে।আর সব কিছু না জানা রাজা তরঙ্গীনির প্রণয়ে আসক্ত সাধুকে দোষারোপ করে ও খুজতে থাকে।অন্যদিকে তরঙ্গীনিকে খুজতে এসে তার সাথে এমন অন্যায় হয়েছে সেই খবর গোপনে পেয়ে সেই সাধু রাগের বষবর্তী হয়ে জমিদার গিন্নীদের শিক্ষা দিতে তার কন্যাদের উপর চরম যাদু করে।এরপরের কাহিনী সকলেই জানি তবে এখানে কথা হচ্ছে কোনটা আসল ঘটনা আর কোনটা নকল তা এখন আমাদের কে বলবে? কারণ দুটো ঘটনার মুল কাহিনীই এক।
সোহরাব- ওয়েট ওয়েট এর মানে তুই কি বোঝাতে চাচ্ছিস এখানে সাধু আর রাজতরঙ্গীনি জমিদার গিন্নদের ক্রোধের শিকার।
সোহমেহরা- আরো একটা টুইস্ট আছে গাইজ।
মেহরাব- হোয়াট?
সোমেহরা:তনিমা আর আমি যখন রাহিলা বেগমের বাড়ি গিয়েছিলাম তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন তার বাড়িতে কেউ ছিলো আমরা যথাসম্ভব তাকে যত্ন করেছিলাম তিনি আমাদের আবারো কাহিনী ডিটেইলছে বলে তবে এখানে একটা কাহিনী নতুন ছিলো তা হলো ঐ সেই পশুর হাতে ধর্ষন।আমি ঘর পরিষ্কারের সময় একটা বাক্স পেয়েছিলাম তার ঘরে তো সেই বাক্স টা পা দিয়ে আর একটু ভেতরের দিকে ঠেলা দিতে গিয়ে কিভাবে যেনো খুলে গেলো বাক্সটা তখন তাতে আমি কিছু পুরাতন আমলের গয়না পায় এরপর তার ছবি তুলে গুগোল করতেই তার বয়স বেরিয়ে আসে প্রায় ১০০ বছর পুরনো গয়না ওগুলো।এখন কথা হলো সাধারণ মানুষের ঘরে একশো বছরের পুরনো গয়না কিভাবে আসবে?আর কেনোই বা আসবে এর মধ্যে নিশ্চই কিন্তু আছে।
অনিমা- চলো রাহিলা দাদিকে চেপে ধরি সত্যিটা তিনিই জানবেন।
মেহরাব- না এটা আমরা করতে পারি না।
সোহরাব- কেনো?
মেহরাব- কারণ পুরো পাজেল টা উনি ক্রিয়েট করেছে।
উনি সবটা জানেন কিন্তু একটা জিনিস জানেন না আর তা আমরা জানি এখন।
আলোরা- আমরা কি জানি?
মেহরাব- সব বললে মজা থাকবে না।যা তো আলু সবার জন্য গরম গরম চা নিয়ে আয়।
আলোরা- মানে সিরিয়াস মোমেন্ট এ এটা কেমন কথা?
মেহরাব- সোমেহরা আলু আজকাল বড্ড কথা বলে তাই না।
চলবে...
ভালো হয়ে গেছি বলায় আবার ও সমস্যায় ভুগছি তাই এবার আর কিছু কমু না😑।
0 Comments:
Post a Comment