গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব:৮
নিস্তব্ধ নিশুতি রাত ঘড়ির কাটায় সবে সাত টা বেজে আট মিনিট।
এর মধ্যেই জঙ্গলে ঘেরা জমিদার বাড়িটা কেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।অনিমা তার জন্য বরাদ্ধ রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।এমন সময় আলোরার চিৎকার তার কানে আসে।সে এগিয়ে যায় নিচের দিকে দোতলার করিডর বেয়ে এসে ডান কর্নারের সিড়ি ঘেসে নিচে তাকিয়ে দেখে দরজাটা বন্ধ করা কিন্তু আলোরা কোথাও নেই।তখন ও একটা ক্ষীন চিৎকারের আওয়াজ কানে আসছে সে একে একে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে এরপর আস্তে আস্তে সদর দরজার কাছে এগিয়ে যায় বাইরে থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে আলোরা কাদছে না অন্য কেউ কাদছে। এই জঙ্গলে এমনি সময় দিনের আলোতে মানুষ খুজে ও পাওয়া যায় না এখন কে এলো? দরজার ছিটকিনি খুলবে অনিমা এমন সময় আলোরা পিছে থেকে তার কাধে হাত রাখে অনিমা ভয়ে চিৎকার করলে আলোরা ও তার সাথে চিৎকার জুড়ে দেয়।দুজনেই বেশ ভয় পেয়ে আছে।জমিদার বাড়িটায় এখন তারা দুজন জীবিত প্রানী ছাড়া আর কেউ নেই।দুজনে দোতলায় উঠে খোলা বারান্দা থেকে দেখার চেষ্টা করে বাইরে কে এসেছে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এরিয়াটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।ভাবতেই গা শিউরে ওঠে ওদের।বার বার সোহরাব কে ফোন করতে থাকে আলোরা।কিন্তু তারা ফোন ধরছেনা।কান্নার আওয়াজ টা আবার ও তীব্র হচ্ছে।দুজনে দ্রুত নিজেদের শরির বন্ধ দিয়ে ফেলে।এরপর তারা ভালো ভাবে খুজতে থাকে বেইরের কোন পাশ থেকে আওয়াজ টা আসছে।আওয়াজের মাত্রা এতোই তীব্র হচ্ছে যে যত সময় যাচ্ছে তা শোনা যেনো ততই অসহ্য হয়ে উঠছে। কিছু সময় পর ভারি বাতাসের সৃষ্টি হয়। বাতাসের দাপট এতো বেশি যে তা ঘরের মধ্যের জানালা দরজা ভেঙে ফেলতে সক্ষম এমনিতেই বিদ্যুৎ এর ভালো ব্যবস্থা এখানে ছিলো না।সোলার আর এমনি কিছু মোমবাতি তারা কিনে এনেছিলো।তার মধ্যে এই ঝড় আসবে কে জানতো দুজনে দু দুদিকে ছুটে জানালা আটকাতে গেলো যাতে করে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো বাতাসের দাপটে ভেঙে না যায়। আলোরা জানালা আটকে দ্রুত বাড়িটা বন্ধ দিয়ে দিলো তারপর একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে অনিমার কাছে গেলো দেখলো অনিমা বাইরে তাকিয়ে আছে।আলোরা ও গিয়ে বাইরে তাকাতেই এক বিভৎস দৃশ্য চোখে এলো তার সেখানে সোহরাব বাড়ির বাইরে বসে কিছু একটা করছে আসলে সে সোহরাব কিনা তা ও বোঝা যাচ্ছে না।অবয়ব টা তার মতো এজন্য সোহরাব মনে হচ্ছে। কি করছে বুঝা যাচ্ছে না দেখে জানালার আরো কাছে এগিয়ে এলো তারা বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখা গেলো বুনো শুকর এর মাংস খুবলে খাচ্ছে সে এবং অনিমা ও আলোরা দিকে ফিরে বিদঘুটে একটা হাসি দিলো ।এরপর এক দৌড়ে এলো জানালার সামনে ঠিক অনিমা আলোরার মুখোমুখি ইংলিশে যাকে বলে Face to Face এতে অনিমা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে মাটিতে আলোরা খুব একটা শক্তি পাচ্ছে না টিকে থাকার।তাদের কপাল ভালো যে তখন শরির বন্ধ দিয়ে দিয়েছিলো।আর বুদ্ধি করে বাড়ি বন্ধ দিয়ে ছিলো।না হলে আজ তারা নির্ঘাত মারা যেতো।জিনিস টা জানালা থেকে সরে যেতেই আলোরা সজোরে জানালার কপাট টা লাগিয়ে দিলো।টেবিল থেকে পানির বোতল এনে অনিমার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু অনিমার কিছুতেই জ্ঞান ফিরলো না এর মাঝে সোহরাব এর মতো দেখতে অবয়ব টা আবার ও চার হাত পা দিয়ে বাড়ির বাইরে টিকটিকির মতো বাওয়া বাই করছে জানালায় ধাক্কা দিচ্ছে এমন সময় বাইরে থেকে সোমেহরার আদুরে ডাক ভেসে আসে আলোরা কান্না করে দেয়।এতো সময় একা ভীষণ ভয় করছিলো তার ।এর আগে একা সে এতটা সময় কোন জিনিসের মোকাবেলা করেনি সবসময় মেহরাব তাকে আগলে নিয়েছে।কোথায় মেহরাব ভাই তার মন টা হু হু করে কেঁদে ওঠে তার জন্য মা-বাবা নেই তার মরে গেলে এই ভাই-বোন গুলো ছাড়া কেউ মনে রাখার মতো নেই।তবে আজ কেনে সবাইকে রেখে শুধু আসন্ন নরকীয় মৃত্যু দেখে বার বার মেহরাব ভাইকে মনে পড়ছে।লোকটা থাকলে আজকে তাকে আগলে নিতো যেমন করে খোলসের আবরনে ডিমের কুসুম লুকিয়ে থাকে। সে দৌড়ে দরজার কাছে যেতেই তার পিলে চমকে যায় কোথায় সোমমেহরা আপু এখানে তো একটা আধমরা শুকর পড়ে আছে।শুকর এর গলা থেকে মাংস খুবলে নেওয়া হয়েছে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আলোরা।
এরপর যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন মেহরাব তার মুখের কাছে অনেকটা ঝুকে ছিলো। চোখ মুখ কোচকানো মুখে চিন্তার ছাপ।আলোরা তাকে দেখে সাত-পাঁচ না ভেবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আর কান্না করে দেয়।বার বার বলতে থাকে।
- আমি আপনাকে ডেকে ছিলাম আপনি কেনো আসেননি আমাকে কেনো একা রেখে গেলেন।
- আমি যদি আজ মরে যেতাম
- আমাকে কেনো একা রেখে গেলেন।
- আমি বাসায় ফিরে যাবো।
মেহরাব শান্ত কিন্তু উদ্বিগ্ন স্বরে বলল
-আলু
শান্ত হ
আমি আছি তো কোন চিন্তা নেই দেখ সবাই আছে।
আলোরার তাতে কোন হেলদোল নেই সে যেনো তার সব থেকে নিরাপদ স্থানে আছে।শক্ত পোক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে লাগলো।সকলে তাদের কিছু সময় একা ছেড়ে দিলো কারণ আজ সকলের উপর দিয়ে ভীষন ঝড় গিয়েছে।আলোরা ভীষন ভয় পেয়েছে তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ভয় কাটাতে হবে না হলে এই পেশায় টিকে থাকা যাবে না।
সকলে চলে যেতেই মেহরাব আলোরাকে নিজের মতো করে জড়িয়ে নেয় আর বাচ্চা ভোলানোর মতো করে কথার ছলে ভুলাতে থাকে।কিন্তু বার বার সে একই কথা আওড়াতে থাকে মেহরাবকে সে ডেকেছিলো মেহরাব আসেনি।
মেহরাব বোঝে কিছু একটা হাসে সে।জানালার বাইরে দিয়ে চাঁদের চিকচিকে আলো দেখা যাচ্ছে আজকের চাঁদটা একটু বেশি লাল।
আলোরা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।মেয়েটা এতো ভয় কেনো পেয়েছে সে ছিলো না বলে নাকি তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ?
মেহরাব তাকায় চাঁদের দিকে চাঁদ বোদ হয় বোঝে এই চাহনি।তাই তো ভেসে আসা মেঘ কে সরিয়ে দিয়ে বিজ্ঞ দের মতো করে জ্বল জ্বল করে জ্বলে রইলো।
মেহরাব তার পানে তাকিয়ে মনে মনে বলল
- যাতা কলে ফেল্লি আমাকে?মজা নিস?
চাঁদ হয়তো তার অসহায়ত্বে হাসলো।
মেহরাব আবার ও মনে মনে বলল
- জানিস চাঁদ আমার অষ্টাদশী আমাকে তার বিপদে খোজে দেখ ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে সে আমার বুকে ঠায় খুজেছে।
চাঁদ এবার তাচ্ছিল্য করে হয়তো বলল
- সজ্ঞানে কখনো পাশে বসে?
আলোরা এবার তাদের কথোপকথনে ভাটা টানলে।সে নড়ে চড়ে বসল।মেহরাব তাকে পানি খেতে দিলো।অনিমার থেকে সবটা শুনেছে তার অজ্ঞান হওয়ার পর আলোরার কি হয়েছিলো তা শুনতেই সে অস্থির হয়ে আছে।আলোরা কাঁপা কাঁপা গলায় সব টা বলল।
মেহরাব এর কপালে তখন চিন্তার ভাজ স্পষ্ট।
চলবে।
" এখন থেকে নিয়মিত গল্প দিবো। আর কোন সমস্যা নেই☺️☺️।"
0 Comments:
Post a Comment