#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 5
🍂🍂🍂
তীব্র সকাল থেকেই বেশ কয়েকবার রুদ্রকে কল করেছে। তার প্ল্যান অনুযায়ী আজ বাবা মাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা। আহমেদ ভিলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে বসে আছে রুদ্র। ড্রাইভার এর পাশের সিটেই বসে আছে আয়মান। আরেকবার তীব্র কল করায় রিসিভ করে রুদ্র,
~হ্যা বলো (রুদ্র)
~কিরে কোথায় তুই? সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করছি। তুই আসবি বলে আজ বাবাকে অফিসে যেতে আর তোর ভাবীকেও ভার্সিটিতে যেতে নিষেধ করেছি। বাসার সবাই কতে বললাম কেন। (ধীর স্বরে বলে তীব্র)
~আসছি ভাইয়া কিন্তু তুমি এখন কোথায় বসে কথা বলছো বলোতো।
রুদ্রর কথা শুনে তীব্র এবার ডানে বামে তাকায় তারপর জবাব দেয়,
বাথরুমে বসে আছি। বাথরুমে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে তোকে কল করেছি।
ফোনের ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনে তীব্র করুন স্বরে বলে,
হাসিস না রে ভাই। বাবা বাগানে বসে আছে, রহিমা খালাকে নিয়ে মা ছাদে গেছে, তোর ভাবীকে আজ ভার্সিটি যেতে না দেওয়ার কারণ বলিনি বলে মুখ ফুলিয়ে রুমে বসে আছে। তাই কথা বলার জন্য বাথরুম ই বেস্ট স্পেস মনে হয়েছে।
কোনো রকমে হাসি থামিয়ে রুদ্র জানায় যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে আহমেদ ভিলায় পৌঁছে যাবে।
.
গাড়ি আহমেদ ভিলার সামনে থামতেই রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়। তীব্র আগে থেকেই গেট এর সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। তীব্র যেই না রুদ্রকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই রেদোয়ান আহমেদ (রুদ্র ও তীব্রর বাবা) দৌড় এসে তীব্র কে ধাক্কা দিয়ে নিজে যেয়ে রুদ্র কে জড়িয়ে ধরেন। ধাক্কা খেয়ে তীব্র পাশেই দাড়িয়ে থাকা আয়মানের ওপর পড়ে। সোজা হয়ে তীব্র তার বাবা এবং ভাই এর দিকে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে থাকে আর বলতে থাকে,
ছোট ছেলেকে পেয়ে আমাকে পর করে দিলো! মীরজাফর বাপ!
তীব্রর কথা শুনে আয়মান ঠোঁট টিপে হাসে। রেদোয়ান আহমেদ তীব্রর কথা শুনে তীব্রকে রাম ধমক দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই রুদ্র বলে,
বাইরেই দাড় করিয়ে রাখবে নাকি বাবা। বাড়িতে ঢুকতে তো দাও।
~হ্যা হ্যা চল। আমি তো ভুলেই গেছিলাম।(রেদোয়ান আহমেদ)
~ভুলবাই তো। বয়স হইছে না!(তীব্র)
~গেলি তুই!!!(মেকি রাগ দেখিয়ে বলেন রেদোয়ান আহমেদ)
তীব্র হেসে দৌড় দেয় বাড়ির ভেতর। হেসে রুদ্র, আয়মান আর রেদোয়ান বাড়ির ভিতর যেয়ে দেখে যে এতক্ষণ এ বাড়ির সকলে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত। তিথি বেগমকে(রুদ্রর মা) তীব্র তাড়া দিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসছে আর উনি বার বার তীব্রকে জিজ্ঞেস করছেন যে আসলে কি হয়েছে। তীব্র তার মা কে সামনের দিকে ইশারা করতেই তিনি তাকায়, সামনে এত বছর পর রুদ্র কে দেখে তিনি দৌড়ে যেয়ে রুদ্র কে জড়িয়ে ধরেন। কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করেন, এতদিন পর বাড়িতে ফিরতে মন চাইলো! আমাকে জানিয়ে এলি না কেন?
রুদ্র হেসে তার মাকে জড়িয়ে ধরতে ধরতেই বলে,
কেমন আছো মা? জানিয়ে এলে কি তোমাদের চোখে এত খুশি দেখতে পারতাম! বাই দ্যা ওয়ে, সারপ্রাইজ দেওয়ার আইডিয়া কিন্তু ভাইয়ার ছিল।
তীব্রর দিকে চেয়ে দেখেন তীব্র দাত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে। তা দেখে তিথি বেগম বলেন, তোরা দুই ভাই ই এক। বজ্জাত দুটো।
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সকলকে দেখছে স্নেহা। রুদ্রকে কখনো সামনাসামনি না দেখলেও ছবিতে বেশ কয়েকবার দেখেছে তাকে। তাই আর চিনতে বেগ পেতে হয়নি স্নেহার। স্নেহার দিকে নজর পড়তেই রুদ্র গিয়ে স্নেহার পাশে দাঁড়ায় আর বলে,
তুমি বুঝি বউমনি? ভাইয়ার সাথে কথা হলে বেশিরভাগ সময় সে তোমার কথা বলতো। কোনো এক কারণে তোমাদের বিয়ে তে আসতে পারিনি। তাই হয়তো তুমি আমাকে চিনতে পারছো না, তাই না?
স্নেহা হালকা হেসে বলে,
না না ভাইয়া আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। উনি আপনার ব্যাপারেও অনেক কথা বলেছেন আমাকে আর অনেক ছবিও দেখিয়েছেন।
~বাহ! তাহলে তো ভালোই। আমি ভাবলাম আমার বুঝি এসে আবার নিজের পরিচয় দেওয়া লাগবে। যাক বেশি কষ্ট করতে হলো না।(রুদ্র)
রুদ্রর কথা শুনে স্নেহা হেসে দেয় আর ভাবতে থাকে, উনার ব্যাপারে শুনেছিলাম উনি অনেক গম্ভীর কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে অনেক মিশুক স্বভাবের।
~হ্যা কিন্তু আমি মিশুক শুধু মাত্র আমার বাড়ির মানুষ আর হাতে গুনা কয়েকটা বন্ধুর সাথেই।(রুদ্র)
স্নেহাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে,
ভাইয়া নির্ঘাত বলেছে যে আমি গম্ভীর স্বভাবের কিন্তু এখন দেখছো যে আমি হেসে হেসে কথা বলছি। তাই ভাবছো তো?
স্নেহা একবার হ্যা বোধক এ মাথা নাড়িয়ে আবার দ্রুত না বোধক এ মাথা নাড়ায়। তা দেখে সকলেই হেসে উঠে। এর পর রুদ্র জানায় যে তার বিশ্রাম প্রয়োজন তাই সে রুমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আয়মানকেও যেনো তার জন্য বরাদ্দকৃত রুমটা দেখিয়ে দেওয়া হয়।
🍂🍂🍂
ভার্সিটির মাঠে বসে আছে মেহের আর তার বন্ধুরা। সকলের মনই কিছুটা খারাপ কারণ আজ স্নেহা আসেনি। বন্ধুদের মধ্যে একজন না থাকলেই যেনো পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলটাই খালি খালি লাগে। হটাৎ একটি ছেলে এসে মেহেরের পাশে বসতেই মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে চেয়ে দেখে তাদের সিনিয়র ইভান এসে বসেছে। মেহের এতে কিছুটা বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করে না। ইভান একটা টেডি হাসি দিয়েই সকলের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে,
কেমন আছো সবাই?
~আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। (এক সাথে সবাই জবাব দেয়)
~মন খারাপ নাকি? (মেহের যে জিজ্ঞেস করে ইভান)
~ না তো ভাইয়া। (মেহের)
মেহের জানে যে ইভান মেহেরের প্রতি ক্রাশড কিন্তু মেহের এর মনে তার জন্য কোনো ফিলিংস না থাকায় সে জেনেও না জানার ভান করে থাকে। মেহের ইভানকে ইগনোর করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
🍂🍂🍂
রাত ১০ টা বাজে। মেহের তার রুমে বই নিয়ে বসে আছে। হটাৎ পাশে থাকা মোবাইলটা ভাইব্রেট হওয়ায় বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফোনের দিকে তাকায় মেহের। কিন্তু ফোনের স্ক্রীনে চেয়ে যেনো মুহূর্তেই বিরক্তি ভাব টা দুর হয়ে যায়। বন্ধুদের গ্রুপ কল দেখে জলদি জলদি রিসিভ করে মেহের। স্নেহা এক্সসাইটেড হয়ে জানায় যে আগামীকাল বিকেলে স্নেহার দেবর দেশে ফেরার খুশিতে তাদের বাসায় গেট টুগেদার হবে। এবং তাতে স্নেহার বন্ধুবান্ধবদের তীব্র স্পেশালি ইনভাইট জানিয়েছে। পার্টির কথা শুনে সবাই অনেক খুশি হয় পাশাপাশি এক্সসাইটেড ও।
.
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। দৃষ্টি আকাশের দিকে। রুদ্রর পিছনেই দাড়িয়ে আছে আয়মান। ঘাড় ঘুরিয়ে আয়মানকে কাচুমাচু করতে দেখে রুদ্র বলে,
এত মোচড়ামুচড়ি না করে যা বলার বলে ফেলো মান।
আয়মানকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে দুষ্টুমিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
আমি জানি মান বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারে না। পেটের মধ্যে জমানো কথা বলতে না পেরে যদি পেট ফেটে যায়? তখন আমি আরেকটা মান কোত্থেকে আনবো?
রুদ্রর কথা শুনে আয়মান মাথা চুলকে হেসে দেয়। আর বলে,
আপনি মনের খবর বুঝেন কিভাবে স্যার?
~যার সাথে চলাচল করি তার মনের খবর বুঝে যাওয়া আমার কাছে অস্বাভাবিক না। তুমি তো আমার ছোট ভাই এর মত সো তোমার খবর রাখাটাও আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তা এতক্ষণ যা বলার জন্য ঘুরঘুর করছিলে তা বলে ফেলো। (আয়মানের দিকে ঘুরে রেলিং এ হেলান দিয়ে বলে রুদ্র)
~কালকের পার্টির জন্য সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে স্যার।
~ হুঁ তো?
~বলতে চাইছিলাম যে, স্নেহা ভাবি আর তীব্র ভাইয়া সকলকে আসতে রাজি করিয়েছে। তার মানে মেহের ম্যামও আসবে। (কিছুটা এক্সসাইটেড হয়ে)
আয়মানের কথা শুনে নিঃশব্দে হাসে রুদ্র আবার পরক্ষণেই চোখ মুখ গম্ভীর করে আয়মানের দিকে তাকায় রুদ্র। জিজ্ঞেস করে,
কালকে কে আসছে মান?
রুদ্রর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে আয়মান বেক্কল মার্কা এক হাসি দিয়ে বলে,
ম্যাম না, ম্যাম না! ভাবিমা।
~কতবার বলেছি তোমায় যে বাকি সবার জন্য ম্যাম হলেও তোমার জন্য সে ভাবি। বার বার কেন ভুলে যাও তুমি!
~সরি স্যার।
~হুঁ। রাত অনেক হয়েছে, যাও ঘুমাও।
~জ্বি স্যার, শুভ রাত্রি।
যেতে যেতেই মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বলে আয়মান, যতটা গম্ভীর হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে তার থেকেও বেশি নরম সে মনের দিক থেকে। মেহের ম্যাম আই মিন ভাবিমা স্যার কে পেয়ে আপনি জিতছেন!!!
~~~
চলবে~
(এই গল্পের কোন চরিত্রটা বেশি ভালো লাগে আপনাদের?)
0 Comments:
Post a Comment