গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ২৫

 গল্প:বাধন হারা বেনী

লেখিকা:সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব:২৫


একটা নয় দুইটা নয় পরপর তিন চারটে বিড়াল এর আক্রমন প্রতিহত করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে আলোরা আর সোহরাব এর।এক পর্যায়ে সোহরাব বোঝে এগুলো সাধারণ বিড়াল নয়।তখন সে জোরে আজান দেয়।আজান এর শব্দে মুহূর্তেই বিড়াল গুলো পালিয়ে যেতে শুরু করে।দুর থেকে তখন ফজরের আজানা ও ভেসে আসতে শুরু করে আলোরা আর সোহরাব চোখে চোখে কিছু কথা বলে যার ভাব অর্থ এই দাড়ায় যে আজান এর শব্দ যতক্ষন হবে ততক্ষন এর মধ্যেই মেহরাবকে খুজতে হবে।তারা দ্রুত কফিন গুলো সরিয়ে দেখতে থাকে এখানে প্রায় হাজার এর পরে কফিন এতো কফিন কয়েক মিনিটে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। তবু ও তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করতে থাকে যেভাবে হোক আজান শেষ হওয়ার আগে মেহরাবকে খুজে বের করতে হবে কিন্তু তারা প্রায় ব্যর্থ তখন আলোরার চোখ যায় একেবারে দুরে একটা কফিনের দিকে কফিনের মাঝখানে অল্প একটু ছিদ্র।আলোরা দ্রুত অন্য একটি কফিনের উপর সুয়ে পড়ে এবং নিজের হাত দিয়ে আঘাত করে শূন্যে আঘাত এর জায়গা আন্দাজ করে বুঝতে পারে মেহরাব ওখানে আছে এবং নিজের জীবন বাচাতে হয়তো অতটুকু শ্বাস নেওয়ার জন্য ছিদ্র করতে পেরেছে। এরপর দ্রুত উঠে সেই কফিনের ঢাকনা খুলতে থাকে ওদিকে আজান ও প্রায় শেষ সোহরাব ও আসে তার কাছে আর সাহায্য করতে থাকে আজান ও শেষ প্রায়। এমন সময় কফিনের মুখ খুলতে তারা সক্ষম হয়।আলোরা দ্রুত মেহরাবকে বের করে নিয়ে আসে।এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।তার চোখমুখ নীল হয়ে গিয়েছে।আলোরা ক্লান্ত হয়ে সোহরাব এর কাধে মাথা রেখে বসে পড়ে।


-ভাই আমরা এসব থেকে অনেক দুরে চলে যাব, আর এসবের মধ্যে নিজেদের জড়াবো না।


-এসব কি বলছিস তুই?


- ঠিকই বলছি।আমি ক্লান্ত।


এই কথা শুনতেই সোহরাব আলোরার কড়ে আঙুল চাপ দিয়ে ধরে আয়তুল কুরছি পড়ে।আলোরা প্রথমে অবাক হয়ে তাকায় আর এরপর একটি শয়তানি হাসি দিয়ে বাদুর হয়ে উড়ে চলে যায়।সোহরাব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।সে বুঝতে পারছে না এসব আসলে কি হচ্ছে।আলোরা কোথায় আর এই যে কেবল যা হলো তা আসলে কি ছিলো?তখন ডাক্তার এলো এবং সোহরাবকে জানালো মেহরাব এর হুস ফিরেছে।মেহরাব এর সেলাইন চলছে সে বেশ দুর্বল তা তাকে দেখলে বোঝা যাচ্ছে।সোহরাব মেহরাবকে দেখতে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।মায়ের পেট থেকে তারা একসাথে একই নাড়ির দুটি মিলিত অংশ তারা।সেই ভাইকে প্রায় হারাতে বসেছিলো সে।মেহরাব সোহরাবকে বলে 


- আমি ঠিক আছি।বাকিরা কই?আলু কই


সোহরাব সোমেহরার থেকে জানা আর মাত্র যা হলো বাইরে ঘটলো সবটা মেহরাবকে বলল।মেহরাব পড়ে গেলো গভীর ভাবনায় সে তো এখানে তাহলে আলোরা কোথায় গেলো।ততক্ষনে মেহরাব এর উদ্বার এর কথা জানতে পেরে বাকিরা এসে হানা দেয় হাসপাতালে।মেহরাব তাদের ছলছল চোখ দেখে মজা করে বলে


-কি এম হলো বলতো? আমার বাঘিনীরা এভাবে ভেঙে পড়লে হবে।


কেউ কিছু বলার আগে ভীড় ঠেলে এগিয়ে এলো তাহিয়ানা মেহরাব এর দিকে এগিয়ে এসে বলল


 "খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে বস" 


মেহরাব এই প্রথম বার তাহিয়ানাকে দেখে প্রশন্ন হাসলো। সোহমেহরা, অনিমা ও তনিমার মনে প্রশ্ন জাগলো বাচ্চারা তো চলে গিয়েছিলো তাহলে তাহিয়ানা থেকে গেলো কিভাবে?

তাদের সন্দিহান চেহারা থেকে বিস্তার হাসলো মেহরাব।

মেহরাবকে ঘুমের ওষুদ দেওয়া হয়েছে তাহিয়ানাকে নিয়ে সোহরাব বাহিরে গিয়েছে তনিমা অনিমা একমনে দোয়া দুরুদ পড়ছে।সোমেহরা একটু বাহিরে আসে এদিক ওদিক তাকিয়ে এগিয়ে যায় লিফ্টের দিকে লিফ্টের ভেতর সাত চেপে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছে।একটু বাদেই কাঙ্খিত কেবিনের সামনে এসে লিফ্ট ওপেন হয়। সোমেহরা বের হয় এবং কাফির কেবিনে ঢোকে।মানুষটার প্রতি তার অদ্ভুত মায়া জন্মেছে এই দুই তিন দিনে।তাইতো সবার অগচরে নিয়ম করে রোজ দেখতে আসে।আজ ও এসেছে কত কথা যে বলে সোহমেহরা কাফিকে।কিন্তু নিষ্ঠুর কাফি শুধু এক দৃষ্টিতে চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে।সোহমেহরার কান্না পায়।যত দিন যাচ্ছে তত যেনো কাফির হার্টরেট বিট কমিয়ে দিচ্ছে।অবনতি ছাড়া উন্নীতর কোন লক্ষন প্রকাশ পাচ্ছে না।কাফির কেবিনে চুপ চাপ বসে আছে সোহমেহরা তখন সে দেখতে পায় কাফির কেবিনের বাহিরে আবেদিন স্যার দাড়ানো। সোহমেহরা বাকরুদ্ধ হয়ে যায় তাকে দেখে যেই লোক মৃত্যু সজ্জায় আছে কালকে ও ডক্টর জোরাজুরি করেছে তার লাইফ সার্পোটা খুলে দিতে সে এখন কাফির কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছে দেখে সোমেহরা তার দিকে এগিয়ে যায়।আবেদিন স্যার তাকে দেখে বলল


- আলোরাকে বাচাতে হবে।কাফিকে বাচাতে হবে ওরা সময়ের জালে আটকে পড়েছে।দ্রুত মেহরাব এর কাছে যাও না হলে সে ও সময়ের জালে আটকে যাবে আমাদের মতো।মনে রাখবে"


(তৈরি হও এই মোকাবেলা সহজ হবে না।তারা সংখ্যায় অধীক তোমরা দুর্বল।তোমাদের দুর্বলতা তাদের শক্তি।তাদের শক্তিতে তারা হিংস্র।ছল-কপাট,নাটক,আর ধুর্ততায় তারা পটু।

এবার আর পালাতে পারবে না।মোকাবেলা করতেই হবে।)


সোহমেহরা আবেদিন স্যারের কথা কিছুটা বুঝল আর বাকি টা বিশ্লেষণ করতে করতে দ্রুত লিফ্টের কাছে গেল চার এ চাপ দিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। তখন হঠাৎ তার খেয়াল হলো যে আবেদিন স্যার তাদের ডেকে ছিলো হাসপাতাল এর কেস টা সমাধান করতে তাহলে তারা কেনো এই জীন এর আক্রমন এর শিকার হচ্ছে।তাদের কেনো বার বার সাবধান করা হচ্ছে।আলু কিভাবে সময়ের জালে আটকে গেলো আর মেহরাব ভাই  কিভাবে সময়ের জ্বালে আটকে যাবে?হঠাৎ লিফ্ট থামায় সোমেহরা নিজের সংবদ এ ফিরে আসে দ্রুত ছুটে যায় সে মেহরাব এর কেবিন এর দিকে। যেতে পথে সে কারো সাথে ধাক্কা খায় কিন্তু ব্যাস্ততায় সে আর পিছু ফিরে দেখে না লোকটি কে।সোহমেহরা দ্রুত মেহরাব এর কেবিনে এসে আয়তুল কুরছি পড়তে থাকে তার এমন কাজ দেখে তনিমা অনিমা ও ভড়কে যায় কিন্তু সোহমেহরা ইশারা করলে তারা প্রশ্ন না করে আয়তুল কুরছি পড়তে থাকে।এক পর্যায়ে মেহরাব এর ঘুম ভাঙে আর সে উঠে বসে।সোহমেহরা তাকে সবটা খুলে বলে আবেদিন স্যার তাকে যা যা বলেছে।মেহরাব এবার ভাবনায় পড়ে যায়।সময় জাল মানে তো Time trap এটার সাথে কিভাবে জড়ালো আলোরা।সোহমেহরা জানতে চাইলো এই সময় জাল বা Time trap কি?


চলবে....

0 Comments:

Post a Comment