গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 2


🍂🍂🍂


মেহের ভার্সিটি থেকে বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার 'স্বপ্ন কুটির' এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। স্বপ্ন কুটির হচ্ছে মেহের এর বাবার বানানো রেস্টুরেন্ট। মেহের ছোট থাকতেই তার বাবা পরলোক গমন করেন। পরবর্তীতে মেহের এর মা মিসেস মেহরিশ তার বাবা মায়ের সাথেই মেহেরকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। মেহের আর তার মা ই এখন এটি পরিচালনা করেন। প্রায় সময়ই মেহের এর বন্ধুবান্ধবরাও রেস্টুরেন্ট এর কাজে সহায়তা করে।

.

দুপুরের উত্তপ্ত রোদে দাড়িয়ে আছে দিয়া। খিটখিটে মেজাজে একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রাস্তার দিকে। অনেকক্ষণ যাবত মেহেরের অপেক্ষা করছে কিন্তু মেহেরের আসার নাম নেই। আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর মেহের এসে দিয়ার পাশে দাড়িয়ে একটা হাসি দিতেই দিয়া যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। কিছুটা চিল্লিয়ে ই বলে উঠলো,

~বাড়ি থেকে আসলি নাকি উগান্ডা থেকে! এতক্ষণ লাগে তোর আসতে! আমি তো ভেবেছি আজকে তোর অপেক্ষা করতে করতেই আমি বুড়ি হয়ে যাবো, আমার হয়তো আর নাতি নাতনীদের মুখ দেখা হবে না।

দিয়ার কথা শুনে মেহের ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো যেনো দিয়ার কথায় আসলে কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত বুঝে উঠতে পারছে না। পরক্ষনেই বলে উঠলো,

~সো সরি ইয়ার। রাস্তায় এত্ত জ্যাম ছিলো যে আসতে দেরি হয়ে গেছে। নেক্সট টাইম থেকে পাক্কা জলদি জলদি আসবো। তুই রাগ করিস না। প্লীজ!!!

~সত্যি তো? (আড়চোখে তাকিয়ে)

~হুঁ। একদম সত্যি। (মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো মেহের)

মেহরের হাসি দেখে দিয়াও আর রাগ করে থাকতে পারলো না। এরপর দুজনে এক সাথেই রওনা দেয় রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে।


🍂🍂🍂


মাত্রই জরুরি এক মিটিং শেষ করে নিজ কেবিনে ফিরলো রুদ্র। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে তার দৃষ্টি আবদ্ধ করে সিলিং এ। তার বাদামি চোখ জোড়া যেনো নিঃসংকোচেই তার ক্লান্তির ছাপ প্রকাশ করছে। কিছু মুহূর্ত পর সিলিং হতে নজর সরিয়ে তার পি.এ এর দিকে তাকায়। কিছুটা দূরেই দাড়িয়ে আছে তার পি.এ আয়মান হাসান। 

আয়মান দেখতে শ্যাম বর্ণের, উচ্চতা ৫ ফিট ৮ ইঞ্চ এর কাছাকাছি, চোখের মনি কুচকুচে কালো, নাক একদম সরু না হলেও বোচাও বলা যায় না। আয়মান খুব চঞ্চল প্রকৃতির, অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং বিশ্বাসযোগ্যও। তাইতো রুদ্র ওকে সব সময় নিজের সাথে সাথেই রাখে। যেখানে রুদ্রর সামনে কথা বলতে গেলেই মানুষের হাঁটু কাপে সেখানে আয়মান নির্দ্বিধায় রুদ্রর সামনে কথা বলতে পারে। ভার্সিটি থেকেই আয়মান এর সাথে রুদ্রর পরিচয়। আয়মান রুদ্র হতে ২ বছরের জুনিয়র। প্রথম দেখা থেকেই আয়মান রুদ্রকে নিজের বড় ভাই এর মত দেখে।

রুদ্র হটাৎ আয়মান কে প্রশ্ন করে উঠে,

~এতদিন পর নিজ দেশে ফিরে এসে কাজ করতে কেমন লাগছে মান?

~ভালো লাগছে। নিজ দেশে থাকতে অন্য রকম এক শান্তি অনুভব হয়। যা এতদিন বিদেশের মাটিতে পাইনি। আপনার কেমন লাগছে স্যার? (স্বভাবসুলভ ভাবেই উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে আয়মান)

আয়মানের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সচ্ছ কাচের দেওয়ালের বাইরে জমজমাট রাস্তার দিকে তাকায় রুদ্র। ঐদিকে আয়মান উত্তরের আশায় নয় বরং রুদ্রের মনে আসলে কি চলছে তা বোঝার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বরাবরের মতই সে ব্যর্থ। রুদ্র নিজ থেকে না বললে তার মনের খবর জানা অসম্ভব বলে আয়মান মনে করে।

ঘাড় ঘুরিয়ে পুনরায় আয়মানের দিকে তাকিয়ে শান্তভঙ্গিতেই বলে উঠে রুদ্র,

~দেশ তো আমাদের মাতৃভূমি। মায়ের কাছে এসে মনে শান্তি পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

রুদ্র কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে,

~যে কাজটা করতে দিয়েছিলাম তা করেছো মান?

~লোকদের সাথে কথা হয়েছে। আর একটা দিন সময় লাগবে স্যার।(আয়মান)

~ ১ দিনটা যেনো আবার ২ দিনে পরিবর্তন না হয়। নেক্সট মিটিং এর ব্যবস্থা করো। (গম্ভীর স্বরে)

~জ জ্বি স্যার। (আমতা আমতা করে)


🍂🍂🍂


অন্ধকার রুম। জানালার পাশের ফিনফিনে পাতলা পর্দাটা মৃদু বাতাসে উড়ছে। জানালা দিয়ে চাঁদের আবছা আলো প্রবেশ করছে, চারিদিকের নিস্তব্ধতা জানান দিচ্ছে এখন মধ্যরাত। বিছানার কোণ ঘেঁষে বসে আছে একটি ছেলে। তার চোখ দুটো যেনো তার অগণিত নির্ঘুম রাতের সাক্ষী দিচ্ছে। হাতে তার কালো নকশাকৃত একটি ছবির ফ্রেম। বেশ কিছুক্ষণ ছবিটির দিকে তাকিয়ে থেকে বাঁকা হেসে বলে উঠলো,

খুব শীঘ্রই তোমার কাছে আসছি রুদ্রানি। শীঘ্রই আমরা একে ওপরের মুখোমুখি দাড়াবো। আর মাত্র কিছুদিন।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment