গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব:৭
পাজেল সমাধান করার কিছুক্ষন পর দেওয়াল কাপিয়ে একটা ছোট্ট রুম তার সামনে উন্মুক্ত হয়।সে এগিয়ে গিয়ে দেখে সেখানে একটা চাবি রয়েছে কিন্তু অনেক গুলো কুচকুচে কালো সাপ তা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।মেহরাব সর্পভাষী হওয়ায় তার চাবিটা পেতে বেশি বেগ পেতে হয় নি।সে তার মায়ের থেকে এই সর্পভাষা রপ্ত করেছিলো ছোট বেলায়।চাবি নিয়ে সে বের হয়ে আসে।সে বের হতেই দরজা পুনরায় লেগে যায়।সে চাবি নিয়ে হাতে নিয়ে ভাবছিলো এটা কিসের চাবি আর এতো পাহারায় কেনো ছিলো? হাটছিলো ছাদ থেকে নেমে আসতেই তার সামনে থেকে এক অপরুপা রমনী চাঁদের আলোই যার #বাধন হারা বেনী খুলে এলো মেলো হয়ে যাচ্ছিলো কেশগুচ্ছ। সে একের পর এক পা ফেলে তাকে পেরিয়ে সামনের দিকে চলে গেলো।মেহরাব আর আগু-পিছু না ভেবে তার পিছু পিছু এগোতে থাকে।
(এর পর এর কাহিনী তো পর্ব ৫-৬ এ পড়েছেন)
........ ......... ............. ............
দুজনে রুম থেকে বেরিয়ে এসে বার রুমের সকলকে জাগায়।সকলে আধা ঘুম থেকে উঠে এসে বসে আলোরার রুমে।তখন দরজা দিয়ে মেহরাব টেপরেকর্ডার টা বাজাতে বাজাতে রুমে প্রবেশ করে।সকলে বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে একে একে সকলের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তর দেওয়ার জন্য সব টা খুলে বলে তারা।
সোহরাব- এর মানে তোরা বলতে চাচ্ছিস যে এটা শুধুই তহমিনার অলৌকিক ধর্ষণ এর রসহ্য নয় এর সাথে জড়িত পুরো হেমল পুরের রহস্য?
মেহরাব- একদম তাই।
তনিমা- কিন্তু ভাই একটা কথা বোঝাও কাহিনীতে মিল কোথায়?
অনিমা- হ্যা মিল কোথায়?
আলোরা- মিল হলো এই টেপরেকর্ডার টা।দেখ মেহরাব ভাই যেভাবে ঐ রুম এর চাবিটা পেয়েছে তাতে ঐ রুমে আরো সংঘাতিক কিছু থাকার কথা সমান্য অন্ধকার আর একটা টেপরেকর্ডার এর থাকা টা একটু বেশিই অস্বাভাবিক।
সোমেহরা- এর মানে ঐ দরজা আরো আগেই খোলা হয়েছে।
আলোরা- হ্যা।
সোমেহরা- তাহলে তো #দর্পনে ছায়া খোজার সময় চলে এসেছে।
মেহরাব- best of luck guys.
রবির চিকচিকে আলোতে ঘুম ভাঙে তনিমার এটা হেমলপুরের জমিদার বাড়িতে তাদের তৃতীয় দিন।তারা আজ যাবে রাহিলা বেগমের বাড়ি।কারণ তার থেকেই সব টা শুরু।সেই অনুযায়ী তনিমা ও সোমেহরা বেরিয়ে পড়ে।অন্যদিকে সকাল থেকেই অনিমা আর আলোরা ইন্টার নেট থেকে সমস্ত তথ্য জোগাড় করতে শুরু করে এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে।সোহবার ও মেহরাব গিয়েছে সেই কোয়াটার কাছে যেখান থেকে আওয়াজ শুনেছিলো আশার দিন সোহরাব।সকলের কাজের দাপট প্রচন্ড।
বেলা ১১ টা বেজে ১৮ মিনিট......
রাহিলা বেগমের বাড়িতে এসে পৌছালো তনিমা আর সোমেহরা।মাটির প্রাচীরে একটা বাশের বেড়া দিয়ে গেট বানানো।তারা রাহিলা বেগম কে ডাকলেন কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া এলো না।তখন তারা বাড়ির দরজা নিজেরাই খুলে ভেতরে গেলেন।সেখানে রাহিলা বেগম বিছানায় কাতর হয়ে শুয়ে আছেন তার ভীষন জ্বর।এটা দেখে তার দ্রুত তাকে পরিষ্কার করে ওষুধ ও খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।বিকালের দিকে তিনি সুস্থ হলেন অনেক টা।তার রুম তখন পরিষ্কার করছিলো তনিমা।খাটের নিচ টায় একটা ছোট্ট পুরাতন কাঠের বাক্সতে তার হাত লাগে কি আছে এই বাক্সে তা নিয়ে সে ভাবেনি বরং পা দিয়ে আরো খানিকটা দুরে ঠেলে দিয়ে কাজ শেষ করে।যদি ও বা এতো কাজ করতে তাদের কেউ বলেনি।কিন্তু এখানে রাহিলা বেগম একা থাকেন দেখে ভীষন খারাপ লাগে তাদের তারা অসুস্থ মানুষ টাকে দাদী সসম্মোধন করতে চেয়েছিলো বিধায় আর নিজেদের আটকাতে পারেনি। সোমেহরা রাহিলা বেগমের রাতের খাবার টা এনে পাশে রাখে এরপর তার কাছে বসে।তাকে আদুরে স্বরে প্রশ্ন করে
সোমেহরা- দাদি আপনার সন্তানরা কোথায়?
রাহিলা- তারা কিছু কাজে শহরে গিয়েছে দুই চার দিন পর ফিরে আসবে।
তনিমা- দাদি আমরা হেমলপুরের জমিদার বাড়ি সম্পকে আরো কিছু জানতে এসেছিলাম আপনি কি আর কিছু আমাদের বলতে পারনে যা আমাদের জানা জরুরি।
রাহিলা- তোমরা কতটুকু জানো তাতো আমার জানা নেই।
সোমেহরা- আমরা তেমন কিছুই জানি না।
রাহিলা- আমি তাহলে তোমাদের সত্যি টা শুনাই।
তখন জমিদারদের প্রভাব প্রতিপত্তিতে তাদের ধারে কাছে যাওয়া ও যেতো না।সেখানে হেমলপুরের জমিদার রাজেন্দ্র ছিলেন মাটির মানুষ ভগবান সমতুল্য ব্যাক্তি।আমার যারা প্রবীণ ছিলো তারা ওনার গুনোগান করতে ভুলতেন না।তিনি চেয়েছিলে কন্যা সন্তান। একে একে তার কোল আলো করে চার কন্যা এলো।সে কন্যাদের নাম রেখেছিলো রাজেশ্রী,রাজনন্দিনী, রাজলক্ষ্মী, রাজতরঙ্গীনি।কন্যাদের নামের সাথে তিনি সর্বদা চেয়েছিলেন ঐর্শ্বর্য বজায় রাখতে তাই এমন নাম করণ করেন তিনি।সময়ের সাথে কন্যারা বড় হতে শুরু করে।তিন মায়ের চার মেয়ে পুরো গ্রামের দৃষ্টি আর্কষন করত থাকে।জমিদারকন্যা হওয়ার পর ও তাদের মধ্যে অহংকার ছিল না।তারা সর্বদা নিপিড়িত মানুষের পাশে দাড়াতো।একটা সুখ বজায় ছিলো হেমলপুরে।রাজেন্দ্র ছিলো এই এলাকার শেষ জমিদার।তিনি প্রায় বিভিন্ন দেশে যেতেন নিজের মনের আত্মতুষ্টির জন্য।এমনি একবার তিনি যান ভারতে সেখানকার কামরুপ কামক্ষার আশ্চর্য যাদু বিদ্যা তাকে আর্কষন করে।তিনি যাদু বিদ্যা শিক্ষা নেন । নিজের প্রজাদের কল্যাণ এর কথা ভেবে।তখন মাঝে মাঝেই সেই গুহায় তার সাথে দেখা করতে তার সব থেকে আদরের ছেট কন্যা রাজতরঙ্গীনি সেখানে যেতো।যাতায়াতের মধ্যে তরঙ্গীনির একজন সাধুর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে কিন্তু ভোলাভালা তরঙ্গীনি সাধুর মায়া বুঝতে পারেনি সাধু তার আলাভোলা চেহারার মায়ায় তরঙ্গীনিকে বশীভূত করে তার বলি চড়ায়।তার আত্মা শয়তানের কাছে হস্তান্ত করে সিদ্ধি লাভ করার জন্য।এরপর থেকেই রাজতরঙ্গীনি শারিরিক অসুস্থতা দেখা দেয়।তখন জমিদার রাজেন্দ্রও পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে আসে কিন্তু জমিদারিতে আর মনোযোগ দিতে পারেনি আকষ্মিক ভাবেই তার ছোট কন্যাটি বিধস্ত অবস্থায় মারা যায়।কন্যা হারানোর শোকে পাগল প্রায় রাজা শয্যা নিলেন।মনে কারোরই শান্তি ছিলো না।তখন সেই কপট সাধু এ দেশে আসে।জমিদার তার সিদ্ধির জ্ঞানে বুঝতে পারেন কেনো তার আদরের কন্যার প্রান গেলো।এরপর তিনি সেই সাধুকে খুজতে শুরু করলেন।অন্য দিকে শয়তান সাধু তার রাজ্যেই ছিলো সে একদিন জঙ্গলে নিজের সিদ্ধির শক্তি আরো বৃদ্ধির জন্য জমিদার বাড়ির উত্তর পাশের বাগানে ধ্যানে বসেন খড়খড়ে রোদ্দুরের তাপে গাছের নিচে সে ধ্যান করছিলো সেখান থেকে খানিকটা ভেতরে ছিলো জমিদার কন্যাদের অবসর কাটানোর জায়গা তারা সেখানে শুধু মাত্র দাসিদের নিয়ে আমোদ করতো।সেই আমোদ হাসির আওয়াজ ও উচ্চ বার্তা স্বরে সাধুর ধ্যান ভঙ্গ হয় সে তার সঙ্গে থাকা একদল পাপিষ্ঠ জীনদের এই পুরো গ্রামে ছড়িয়ে দেন।এবং কিছু জঘন্য জীনদের জমিদার কন্যাদের উপর চালান করেন। কয়েক দিনের ভেতরে জমিদারকন্যারা অদৃশ্য কিছু পশু দ্বারা ধর্ষনের শিকার হন।রাজেন্দ্র নিজের অক্ষমতায় নিজেকে আরো দোষারোপ করতে থাকে কেনো তিনি কন্যাদের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না।এরপর তিনি যখন কন্যাদের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পাগল প্রায় হয়ে সে তার গুরুকে খবর জানায় তার সাথে হওয়া সব কথা বলে তার গুরু তার হয়ে একটি ভয়ংকর জাদু করে যার ফলে সে সাধু ধরা পড়ে এরপর তাকে জমিদার বাড়িতে জ্যান্ত দাফন করা হয়।
তারপর থেকে জমিদার বাড়িতে আর কেউ থাকতো না
জমিদার মারা গেলে জমিদার গিন্নীরা কাশি চলে যান।রাজত্বের হাল বেহাল হয়ে পড়ে।জমিদার বাড়ি ধীরে ধীরে পরিত্যাগতো হয়ে যায় এরপর ইউনিয়ান পরিষদ এর আমলে সেই বাড়িটা একটু বাসযোগ্য করে তোলে যাতে কোন বাহির থেকে মেহমান বেড়াতে বা ঘুরতে এলে সেখানে থাকতে পারে। কিন্তু জঙ্গলের ভেতর হওয়াতে কউ আজ পর্যন্ত সেখানে থাকতে চায়নি।
রাহিলা বেগম থামলেন।বাহিরে সন্ধ্যা নেমেছে।তনিমা ও সোমেহরা রাহিলা বেগম এর থেকে বিদায় নিয়ে বাহির হবে এমন সময় রাহিলা বেগম বলল
রাহিলা- তোমরা যাওয়ার সময় পেছন ফিরে তাকাবে না যাই হয়ে যাক।আর একটা কথা সাধুর কিন্তু এই গ্রামে সেই সব জঘন্য ভয়ংকর জীনদের এখনো ছাড়া রয়েছে ।কারণ তার মৃত্যুর পর আর কেউ তাদের আটকায়নি।সাবধান হিন্দু সাধু বামন গোত্রের ছিলো অতৃপ্ত আশা নিয়ে মরেছে। সে আবার তার প্রতিশোধ নিতে ফেরত আসবে।।
সোমেহরা ও তনিমা মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে।আকাশে একটা থালার মতো চাঁদ উঠেছে পরিবেশ টা এতো সুন্দর ভয়ংকর কিছু হবে বা হতে পারে এই পরিবেশে তা মেনে নেওয়া ও যেনো কেমন একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার।তারা মেহরাবকে ফোন দিতে দিতে এগিয়ে যায় জমিদার বাড়ির দিকে।কথা বলতে থাকে রাহিলার বলা কথা নিয়ে।তখন তাদের পাশ দিয়ে সাই করে একটি ইন্জিন চালিত ভ্যান চলে যায়।এত দ্রুত যায় যে সোমেহরা রীতিমত ভয় পেয়ে যায়।সে মনে মনে বলে খালি ভ্যান এতো জোরে যাওয়ার দরকার টা কি?মুখে কিছু বলে না।
অন্যদিকে জমিদার বাড়িতে আলোরা আর অনিমা একা।তারা ল্যাপটপে আজ সারা দিন ভীষন কাজ করেছে। বিকালের দিকে সব তথ্য একত্রে করে একটা রহস্য জনক তথ্যের আবিষ্কার করে।
চলবে.....
0 Comments:
Post a Comment