গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২৬

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 26


🍂🍂🍂


মেহেরকে চেয়ে থাকতে দেখে রুদ্র এক লম্বা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে।

"বাবার কোম্পানির ম্যানেজার ছিল শরীফ মির্জা। শুধু ম্যানেজার বললে ভুল হবে। বাবার সাথে গলায় গলায় বন্ধুত্ত্ব ছিল বটে। বিজনেস যখন বড় হতে শুরু করলো তখন শরীফ মির্জার লোভ ও বাড়তে শুরু করলো। আমি তখন ভার্সিটিতে পড়ি। শরীফ মির্জার সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। আয়মানকে তখন বাবার কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে দিয়েছিলাম। আয়মান একদিন জানতে পারে যে শরীফ মির্জা বাবার সব সম্পত্তি সহ সম্পূর্ণ ব্যবসা হাতিয়ে নেওয়ার চিন্তায় আছে। আমি জানতে পারার পর পরই সব প্রমাণ জমিয়ে বাবাকে জানাই। সে অলরেডী কোম্পানির অনেক টাকা মেরে খেয়েছিল। বাবা পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেয়। চার বছর আগে আমি তোমাকে দেখি। ক্লাস টেন এর ছাত্রী ছিলে তুমি। স্কুল ড্রেস পরিহিত, দুই কাধে দুটো বেনি, চোখে হালকা কাজল। একদম পিচ্চি লাগছিল তোমায়।" 

বলেই হেসে দেয় রুদ্র। আবারও মেহেরের কোলে মাথা দিয়ে শোয়। রুদ্র আবার বলতে শুরু করে,

"তোমাকে রোজ দেখার একটা অভ্যাস হয়ে গেছিলো জানো! আয়মানকে দিয়ে তোমার খবর নিয়ে ছিলাম। তোমার চেহারা দেখে নয় বরং তোমার বাচ্চামো দেখে তোমার প্রতি এক প্রকার ঝোঁক সৃষ্টি হয়েছিল। ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করলাম।  শরীফ মির্জার যে যে মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এর সাথে কানেকশন ছিল তা জানা ছিল না আমাদের কারোই। অগত্যা সে জেল থেকে ছাড়া পেল। দেখতে দেখতে তুমিও স্কুল এর গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখলে। আমি দুর থেকেই তোমার প্রতি নজর রাখতাম। কোনো ছেলে যেনো তোমার কাছেও না ঘেঁষতে পারে তার জন্যও সুব্যবস্থা নিয়ে রাখা ছিল।"

বলেই বাঁকা হাসে রুদ্র। এবার বুঝতে পারে মেহের। ক্লাস টেনের শুরু দিকে অনেক প্রপোজাল পেলেও হুট করে সব ছেলেরাই মেহেরকে দেখলেই দৌড়ে পালাতো। তখন তার কারণ বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছে মেহের। রুদ্র মেহেরের চোখের সামনে তুড়ি বাজাতেই মেহের কপাল কুঁচকে রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র ফের বলতে শুরু করে,

"আমি তো প্রথম প্রথম আহিল আর কাব্যকে দেখেও ইনসিকিউর ফিল করতাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তোমরা একে অপরকে আপন ভাই বোনের মতো ভাবো। যাই হোক, শরীফ মির্জা ছাড়া পাওয়ার পর বিভিন্ন ভাবে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। আল্লাহ এর রহমতে আমরা কোনো না কোনো ভাবে বেচেঁ যেতাম। আড়াই বছর আগে জানতে পারি আত্মগোপনে থেকে এসব কিছু শরীফ মির্জা করছে। এমনকি তার মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এর সাথেও কানেকশন আছে। শরীফ মির্জা ২ বছর আগে কোনো এক ভাবে খবর পায় যে আমি কাউকে ভালোবাসি। আমার সূত্র ধরে তোমার ক্ষতি করতে পারে ভেবে ভাইয়া আমাকে মানা করে যেনো আপাতত তোমাকে দেখতে না যাই আমি। বাবা জোর করে বিদেশ পাঠাতে চাইলে আমি জিদ ধরে বসি যে আমি যাওয়ার আগে #আমার_রুদ্রাণীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রাখতে হবে। তবেই আমি যাবো। মা তো তোমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলে। আমার সাথে একদিন ভাইয়া তোমাকে দেখতে গিয়েছিল। তোমার সাথে বউমনি কে দেখে ভাইয়ার খুব পছন্দ হয়। যার ফলস্বরূপ আজ সে ভাইয়ার বউ। অথচ দেখো সবার আগে প্রেমে পড়লাম আমি কিন্তু আমারই এখনও বিয়ে হচ্ছে না।"

ঠোঁট উল্টে বলে রুদ্র। মেহের ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। মেহেরকে কেউ নজরে নজরে রাখছিল আর সে জানতোই না! কি অদ্ভুত! মেহেরের কৌতূহল আরো বেড়ে যায়। মেহের জিজ্ঞেস করে,

তারপর কি হলো?

রুদ্র নিঃশব্দে হেসে বলে,

"তোমাকে পছন্দ করার পর আমার পাশাপাশি মা ও জিদ ধরলো যেনো আমি যাওয়ার আগেই বিয়ে পাকা করে যাই। মা ভাইয়ার কান টেনে আমাদের পক্ষে আনলো। বাবা আর কি করবে বেচারা। শেষ মেষ হার মেনে তোমাদের বাড়ি গেল। তোমার মা প্রথমে একটু নাকোচ করলেও পরবর্তীতে মায়ের কথায় রাজি হয়। ওহ তোমাকে তো বলতে ভুলেই গেছিলাম। তোমার মামনি আর আমার মা দুজন ছোট বেলার বেস্ট ফ্রেন্ড। যা আমিও জানতাম না। মাকে রাজি করানোর পর আমিও বিদেশ যেতে রাজি হই। মা কে বলে যাই যেনো তোমাকে এখন কিছু না জানায়। তাই তুমিও জানতে পারোনি। আমার সাথে আয়মানকেও বিদেশে নিয়ে যাই। ওর এই দুনিয়ায় আমরা ছাড়া কেউ নেই। ওকে একা ছাড়তে মন সায় দেয়নি। এই জানো! আয়মান কিন্তু দিয়ার ওপর ক্রাশড। একদম প্রথম থেকে। আমি একা কেনো দহনে পুড়তাম! ওকেও পুড়িয়েছি। আগে জানলে ভাইয়াকেও নিয়ে যেতাম। সে মীরজাফর এর মত পোল্টি নিয়ে কিভাবে তাড়াতাড়ি বিয়ে করলো! বিদেশে যাওয়ার পর একদিন জানতে পারলাম বাবার গুরুতর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। দেশে আসতে চাইলেও সবাই কড়া ভাবে মানা করে দেয়। সেদিন সিদ্ধান্ত নেই আমিও মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এ ঢুকবো। ভাইয়া আর বাবা প্রথমে মানা করলেও, রাজি করিয়েছি। গত কয়েক বছরে অনেকভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আমার পরিবারের ওপর বেশ কয়েকবার প্রাণঘাতি হামলা চালিয়েছে। শরীফ মির্জাকে এবার উপযুক্ত শাস্তি দিবো। দু বছরে বিজনেসের পাশাপাশি মাফিয়া জগতেও বেশ নাম ডাক অর্জন করেছি। আমি বিনা কারণে কারো ক্ষতি করি না মেহেরজান। যারা আমার পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টা করে শুধু তাদেরই শাস্তি দেই। ভাইয়ার যে অ্যাকসিডেন্টটা হয়েছিল তাও শরীফ মির্জা করিয়েছে। খবর পেয়েছি সে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।"

মেহের প্রশ্ন করে,

সে যদি আপনার ক্ষতি করে?

~ "পারবে না। আমি এখন ওর থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে আছি। আজকে যেই লোকটাকে মারলাম! তাকেও শরীফ মির্জা পাঠিয়ে ছিল"

~কারো কোনো ক্ষতি করেনি তো?

~করেনি কিন্তু আমি আসতে আরেকটু দেরি করলে অবশ্যই ক্ষতি হতো। সব থেকে বড় ক্ষতি হতো আমার।

~আপনাকে মারতে এসেছিলো?

~ন্যাহ্!

~তবে?

রুদ্র মেহেরের কানের পিঠে চুল গুজে দিয়ে বলে,

~আমার প্রাণভোমরার ক্ষতি করতে এসেছিল। যে হাত দিয়ে খুন করতে এসেছিল সেই হাত এতক্ষণে বাবা, আয়মান আর ভাইয়া হয়তো ভেঙ্গেও দিয়েছে।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের অবাক হয়ে তাকায়।


🍂ফ্ল্যাশব্যাক🍂


ল্যাপটপ হাতে বসে আছে রুদ্র। ল্যাপটপের স্ক্রীনে বাড়ির বিভিন্ন জায়গার দৃশ্য ভেসে উঠছে। হটাৎ কিছু একটার দিকে নজর পড়তেই রুদ্র উঠে মেহেরের ঘরের দিকে যায়। যেতে যেতে আয়মানকে একটা মেসেজ করে। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পায় ওই লোকটি ছুরি হাতে দাড়িয়ে আছে। আর মেহের বেঘোরে ঘুম। রুদ্রকে দেখতে পেয়ে লোকটি ঘাবড়ে যায়। রুদ্রর ওপর হামলা করতে নিলেই রুদ্র খুব সুক্ষ্ম ভাবে তার হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নেয়। লোকটি অবাক হয়ে তাকাতেই রুদ্র হাসে। লোকটির কাধে হাত রেখে বলে,

~তোকে গুন্ডার পদবী কোন গাধায় দিয়েছে রে? নির্ঘাত ওই শরীফ মির্জা? ওই বেটা আসলেই গাধা।

বলতে বলতেই আয়মান আর তীব্র কয়েকজন গার্ড নিজে ঘরে প্রবেশ করে। লোকটি ওদের দেখে কিছু করার আগেই রুদ্র লোকটির সামনে কিছু স্প্রে করতেই লোকটি জ্ঞান হারায়। এরপর গার্ডদের বলে যেনো নিঃশব্দে ওকে নিয়ে যায়। ওরা যাওয়ার সময় রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দরজার দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে,

ভেবেছিলাম তোকে খুব সহজ মৃত্যু দিবো কিন্তু আজ আমার মেহেরজানের দিকে হাত বাড়িয়ে বড্ড ভুল করে ফেলেছিস শরীফ মির্জা।

 তখনই মেহের ঘুম থেকে উঠে রুদ্রকে দেখতে পায়।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment