#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 23
🍂🍂🍂
অনুষ্ঠানের জন্য রেডী হয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় সকলের দৃষ্টি মেহেরের দিকে আবদ্ধ হয়। গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা, হালকা মেকআপ আর গায়ে জুয়েলারি। রুদ্রর ভারী মেকআপ পছন্দ নয় বলেই মেহেরকে তেমন গর্জিয়াস ভাবে সাজায়নি। মেহেরের এই সিম্পল লুকটিই সবার পছন্দ বেশ হয়। রুদ্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার রুদ্রাণীর দিকে চেয়ে থাকে। তীব্র আর আয়মান রুদ্রকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রর কাছে এগিয়ে টিজ করতে শুরু করে। রুদ্র ওদের দিকে চেয়ে মাথা চুলকে হেসে দেয়। মেহেরের দিকে এগিয়ে গিয়ে মেহেরকে নিয়ে স্টেজ এ বসতেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবার আগে রুদ্র মেহেদি নিয়ে মেহেরের হাতে ছোট করে নিজের নাম লিখে দেয়। এর পর মেহেদি আর্টিস্টরা মেহেরকে মেহেদি দিতে শুরু করে। প্রায় সব মেয়েরাই একে একে মেহেদি লাগাতে শুরু করে। আহিল, কাব্য, স্নেহা, দিয়া আর রুদ্র বসে গালে হাত দিয়ে বসে মেহেরের মেহেদি দেওয়া দেখতে থাকে। পাশাপাশি মেহেরের বন্ধুদের আড্ডা তো আছেই। তীব্র আর আয়মান মাইক নিয়ে কথা বলতেই সকলে তাদের দিকে তাকায়। তীব্র হেসে কিছু কথা বলে আয়মান আর দিয়া কে নাচার জন্য ডাকতেই আয়মান আর দিয়া ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। দিয়া অপ্রস্তুত হয়ে জোরপূর্বক হেসে তীব্রর কাছে যেয়ে মিনমিনে স্বরে বলে,
ভাইয়া আপনি পাগল হয়ে গেছেন! এই বাঁদরের সাথে আমি নাচবো! উনি আদৌ নাচতে পারে কিনা সন্দেহ। দেখা গেলো নাচতে গিয়ে পড়ে পরে আমার কোমর ভেঙে দিল।
আয়মান চোখ ছোট ছোট করে দিয়ার দিকে চেয়ে বলে,
ভাইয়া এই পিচ্চির সাথে আমি মোটেও নাচবো না। এ তো আমার হাঁটুর সমান। আমার সাথে নাচতে গেলে একে তো কেউ দেখতেই পাবে না।
~আমি মোটেও পিচ্চী নই। (গাল ফুলিয়ে বলে দিয়া)
তীব্র একবার দিয়া তো একবার আয়মানের দিকে তাকাচ্ছে। এদের নাচের জায়গায় ঝগড়া দেখে কেউ কেউ না বুঝে দুর থেকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে আবার কাছাকাছি থাকার ফলে কেউ কেউ ওদের কথা শুনে হাসছে। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকা দলগুলোর মধ্যে রুদ্র, মেহের আর ওর বন্ধুরাও আছে। তীব্র এবার এক ধমক দিয়ে বলে,
নাম এনাউন্স করা হয় গেছে। আমি গান প্লে করছি তোরা নাচ শুরু কর।
দিয়া কাদো কাদো মুখ করে তীব্রর দিকে তাকাতেই তীব্র বলে,
মেহের না তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড? ও অবশ্যই আসা করেছে যে তোমরা সব বন্ধুবান্ধব ওর বিয়ে তে নাচ গান করবে? আর রুদ্রও অবশ্যই চেয়েছে যে তার মানও তার বিয়েতে নাচবে। তোরা দুইজনই বর আর কনের বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে?
দিয়া আর আয়মান বুঝতে পেরে মাথা নেড়ে সায় দিতেই তীব্র হেসে বলে,
ওকে আমি গান প্লে করছি যেয়ে।
দিয়া আর আয়মান 'লুঙ্গি ড্যান্স' আর 'উচি হে বিল্ডিং' গানে নাচে। এরপর তীব্র আর স্নেহা একটি রোমান্টিক গান নাচে। আয়মান আর কাব্য "কালা চাশমা' আর 'দিল চোরি সাড্ডা' গানে নাচে। পরবর্তীতে কাব্য, আহিল, দিয়া আর স্নেহা মিলে 'জোর কা ঝাটকা' গানে নাচতে শুরু করে। এই গানে নাচতে দেখে রুদ্র বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে চেয়ে থাকে। রুদ্রর রিয়েকশন দেখে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই মুখ চেপে হাসতে থাকে। এক পর্যায়ে তীব্র আর আয়মান গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে থাকে। নাচ শেষ হতেই মেহেরের বন্ধুরা স্টেজ এ আসতেই রুদ্র সাথে সাথে প্রশ্ন করে,
গান টা কে সিলেক্ট করেছে? আইডিয়া টা কার ছিল?
রুদ্রর ঠান্ডা স্বরে ধমক শুনেই তীব্র আর আয়মান হাসি থামিয়ে সোজা হয়ে বসে পড়ে। ধমক খেয়ে স্নেহা গড়গড় করে বলে দেয় যে এটা তীব্রর আইডিয়া ছিল। তীব্রর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাতেই তীব্র জোরপূর্বক হাসি দেয়। মেহের ফিসফিস করে রুদ্রকে বলে,
বিয়ে শাদি তে এই রকম দুষ্টুমি চলেই। এত রাগার কি আছে? আপনি প্লীজ ঠান্ডা হন।
মেহেরের কথা শুনে রুদ্র ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে। তীব্রর দিকে চেয়ে বলে,
তুমি অনেক ফাজিল ভাইয়া। আমার বউকে ভাগানোর প্ল্যান করো!
তীব্র হেসে বলে,
এখন তুই গান গাইবি। (তীব্র)
~মোটেও না। (রুদ্র)
~অবশ্যই হ্যাঁ। (তীব্র)
~উনি গান পারেন? (মেহের)
~স্যার অনেক ভালো গান করেন। (আয়মান)
~সত্যি? আপনি গান গাইবেন? (মেহের)
~না (নির্লিপ্তভাবে বলে রুদ্র)
~গান না প্লীজ
চোখ পিটপিট করে তাকায় মেহের। রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে আলতো হাসে। হাসির মানে বুঝতে পেরেই তীব্র আর আয়মান রুদ্রকে গান গাওয়ার জন্য আহ্বান করে। আয়মান একটা গিটার এনে দিতেই রুদ্র গিটারে সুর তুলে গান শুরু করে,
Teri saanson ki saans mein
Jo hoon toh main hoon
Tere khwabon ki aanch mein
Jo hoon toh main hoon
Tere hone se hi mera hona hai
Tujhko khona jaise khudko khona
Tu jo hai toh main hoon
Yun jo hai toh main hoon
Tu jo hai toh main hoon
Yun jo hai toh main hoon
(বাকি টুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন 😒)
পুরোটা গান রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়েই গায়। মেহের রুদ্রর গান শুনে অনেক ভালো লাগে কিন্তু রুদ্রর চাহনি তে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাটির দিকে চেয়ে থাকে। গান শেষ হতেই চারদিক থেকে করতালির আর শিষের আওয়াজ এ মুখরিত হতে থাকে।রুদ্র একজন গার্ড এর হাতে গিটার দিয়ে মেহেরের সাথে যেয়ে বসে। তীব্র মাইকে সারপ্রাইজ ড্যান্স এর এনাউন্স করতে সবাই সেদিকে চেয়ে থাকে। গান শুরু হতেই দেখা যায় তীব্র, আয়মান, রেদোয়ান, তিথি, মেহরিশ, মেহেরের নানা - নানি, স্নেহা, কাব্য, আহিল, আর দিয়া 'গাল্লা গুরিয়ান' গানে নাচে। রুদ্র আর মেহের অবাক হয়ে ওদের নাচ দেখে। মেহের তার মা আর নানা - নানীর দিকে দৃষ্টি স্থির করে। এর আগে কখনোই তাদের এতটা খুশি হতে দেখেনি মেহের। মেহেরের এই বিয়েতে যে তারা কতটা খুশি তা উপলদ্ধি করতেই মেহেরের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।
~~~
চলবে~
(রিচেক করা হয়নি আজকে। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
0 Comments:
Post a Comment