গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১৪

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 14


🍂🍂🍂


ভার্সিটির যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে মেহের। রিকশা পাচ্ছে না বলে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে হেঁটেই ভার্সিটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হটাৎ পাশেই একটা প্রাইভেট কার থামায় মেহের কিছুটা হকচকিয়ে যায়। বিরক্তিভাবটা যেনো আরো কয়েকদফা বেড়ে গেছে। ড্রাইভারের ওপরে ভীষণ রাগ হয়। এভাবে হুট করে রাস্তায় গাড়ি থামানোর মানে হয়! হয় না। ড্রাইভারকে দুটো কড়া কথা শুনানোর জন্য মেহের গাড়ির দিকে আরেকটু এগিয়ে যেতেই গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিট থেকে রুদ্র নামে। মেহের কোমড়ে হাত রেখে কপাল কুঁচকে চোখ পিটপিট করে রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজা খুলে দেয়। মেহের প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই রুদ্র বলে,

জলদি গাড়িতে বসো তো মেহেরজান। তোমাকে ভার্সিটি পৌঁছে দিয়ে অফিস যেতে হবে আমার। জলদি উঠো।

ভার্সিটি যেতে দেরি হচ্ছে ভেবে মেহেরও গাড়িতে উঠে বসে। মেহেরকে বসিয়ে রুদ্র এসে ড্রাইভিং সিটে বসতেই রুদ্রর ফোন বেজে উঠে। রুদ্র ফোন রিসিভ করে। কিন্তু ওপর পাশ থেকে কি বলছে শুনতে পায় না মেহের। শুধু রুদ্রর গম্ভীর স্বরে বলা কথাই শুনতে পায়,

~মাত্র তোর ভাবীকে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম মান। পৌঁছাতে একটু দেরি হবে।

~ওদের অপেক্ষা করতে বলো। মিটিং টা বিকেলে পোষ্টপন করো।

~বেশি ঝামেলা করলে ডিল ক্যান্সেল। মেহেরজান এর থেকে বেশি জরুরি কেউ না।

~গুড। রাখছি।

রুদ্রর কথা বলার সময় মেহের এক ধ্যানে রুদ্রর দিকে চেয়ে থাকে। ফরমাল ড্রেস দেখে মনে হচ্ছে এখন অফিসে যাবে, তবে এখানে কি করছে রুদ্র ভেবে পায় না মেহের। রুদ্র ফোন রেখে মেহের এর দিকে তাকাতেই মেহের অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। রুদ্র মেহেরকে দেখে নিঃশব্দে হাসে। মেহের নিজেকে সামলে নিয়ে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে,

এইসময় আপনি এখানে কি করছেন?

~দেখতেই পাচ্ছো ড্রাইভিং করছি। (রুদ্র)

রুদ্রর এমন জবাবে মেহের রেগে জানালার বাহিরে দৃষ্টি স্থির করে। মেহের মনে মনে ভাবে,

"লোকটা কখনোই কোনো প্রশ্নের সোজা জবাব দেয় না। সোজা জবাব দিলে কি এমন ক্ষতি হবে? যত্তসব ঢং।"

~তোমাকে ভার্সিটি ড্রপ করতে এসেছি। তোমার বাড়িতে গিয়ে শুনি তুমি আগেই বেরিয়ে গেছো। তাড়াহুড়ো করে এসেছি জানো! আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলে কি এমন হতো? আমি তোমাকে নিয়ে আসতাম।

রুদ্রর কথা কানে আসতেই রুদ্রর দিকে ঘুরে তাকায় মেহের। মুখ বাঁকিয়ে বলে,

আপনি আসবেন আমি কি জানতাম নাকি? জানলে তো ওয়েট করতাম। আপনি তো বলেন নি।

~জানতে হলে ফোনটা চেক করতে হতো। কয়টা মেসেজ দিয়েছি? রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডার চক্করে ফোন দেখতেই ভুলে গেছেন আপনি। এই প্রথম ছিল বলে মাফ করলাম। আর কখনো যদি দেখেছি আমার থেকেও বেশি প্রায়োরিটি অন্য কাউকে দিয়েছেন তবে দেখবেন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। 

রুদ্র শান্ত কণ্ঠে বললেও ধমকিটা ভয়ে জমিয়ে দেওয়ার মতো ছিল মনে করে মেহের। শুকনো ঢোক গিলে হাতে থাকা মোবাইল টা চেক করে মেহের। সত্যিই অপরিচিত একটা নম্বর থেকে অনেকগুলো কল আর মেসেজ এসেছে। মেহেরের বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে এটাই রুদ্রর নম্বর। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রুদ্রর দিকে একবার আড়চোখে তাকায়। রুদ্রকে দেখলেই কেনো যে অজানা এক ভয় হানা দেয় মেহেরের মনে তা মেহের বুঝে উঠতে পারে না। আবারো রুদ্রর দিকে ঘুরে বসে মেহের। মিনমিনে গলায় বলে,

সরি। আমি খেয়াল করিনি। আর করবো না এমন।

~সত্যি? (আড় চোখে চেয়ে বলে রুদ্র)

~একদম সত্যি। (জোরপূর্বক হেসে বলে মেহের)

মেহের এর কথা শুনে ঠোঁট কামড় হাসে রুদ্র। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই এই মেয়েটা তার বউ হবে, তার রুদ্রানী হবে ভাবতেই এক রাশ ভালো লাগা ছেয়ে যায় রুদ্রর মনে।

~অফিসে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে জানো! মান বার বার কল দিচ্ছে দেখো।

রুদ্রর কথা মত মেহের রুদ্রর ফোনের দিকে তাকায়। আসলেই আয়মান কল দিচ্ছে। কল হতে হতেই কেটে যায়, স্ক্রীন এ ভেসে উঠে এই নিয়ে ৭ বার কল দিয়েছে আয়মান। রুদ্রর কথা শুনে আবারও রুদ্রর দিকে তাকায়,

তোমাকে আমি কত্ত মিস করি। তুমি একটাবারও আমাকে কল করোনি। এমনকি কল রিসিভও করোনি। অনেক রেগে ছিলাম কিন্তু তোমার মুখটা দেখতেই সব রাগ যেনো পানি হয়ে গেলো।

বলেই গা দুলিয়ে নিঃশব্দে হাসে রুদ্র। মেহের উত্তরে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এক দৃষ্টিতে রুদ্রর হাসি দেখে। কি অমায়িক এই হাসি। আজ যেনো রুদ্রকে মেহেরের কাছে অনেক বেশিই আকর্ষণীয় লাগছে। রুদ্রকে দেখলেই যে কেউ নির্দ্বিধায় বলতে পারবে এই ছেলের ওপর অনেক মেয়ে ক্রাশিত। রুদ্র কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলে,

রাগ উঠলে আগে প্রায় সময়ই ভাঙচুর করতাম। কাল রাতেও করেছি। তোমাকে সামনে পেলে কঠোর শাস্তি দিবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি! নিজের মায়াময়ী চাহনিতে আমার রাগ মুহূর্তেই ঠান্ডা করে দিলে। ঠিক এই জন্য... এজন্যই তো তোমাকে এতটা চাই মেহেরজান। তুমি আমার ভালো থাকার অন্যতম কারণ।

মেহের রুদ্রর দিকে চেয়ে ভাবে,

"লোকটা আসলেই খুব সুন্দর করে কথা বলে। ভাগ্যিস রাগ ঠান্ডা হয়েছে। নাহলে না জানি কি শাস্তি দিতো।"

ড্রাইভিং করতে করতেই রুদ্র একটা প্যাকেট মেহেরের দিকে এগিয়ে দেয়। মেহের প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে একবার প্যাকেটটির দিকে তো একবার রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র বলে,

সকালে নাস্তা না করা তোমার খুব বাজে অভ্যাস। আজকেও নাস্তা করোনি আমি জানি। একবার বিয়ে টা হয়ে নিক। আমিও দেখবো খাবারে অনিয়ম কিভাবে করো। নাও দ্রুত নাস্তা করো।

নাস্তার প্যাকেট মেহেরের হাতে ধরিয়ে দেয় রুদ্র। মেহের মানা করতে নিলেই রুদ্রর এক ধমক খেয়ে চুপ চাপ প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করে মেহের। স্যান্ডউইচে এক কামড় বসিয়ে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে,

আপনি খেয়েছেন?

উহুম খাইনি (রুদ্র)

কেনো? একটু আগে তো নাস্তা না করার জন্য আমাকে ঝাড়ি দিলেন। এখন আপনি খাননি কেন? (মুখ বাঁকিয়ে বলে মেহের)

~আমার মেহেরজান এখনও খায়নি তাই। ভেবেছিলাম তোমার সাথে খাবো। কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে যে। আর আমি ড্রাইভ করছি দেখছো না!

কিছু একটা ভেবে মেহের রুদ্রর মুখের সামনে একটা স্যান্ডউইচ ধরতেই রুদ্র অবাক হয়ে মেহেরের দিকে তাকায়। মেহের চোঁখ পিটপিট করে চেয়ে বলে,

আমি খাইয়ে দিলে সমস্যা হবে?

রুদ্র হেসে না বোধকে মাথা নাড়িয়ে স্যান্ডউইচে কামড় বসায়।

.

ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামতেই মেহের গাড়ি থেকে নামার জন্য উদ্ব্যত হয়। যেই না গাড়ি থেকে নামতে যাবে রুদ্র হটাৎ মেহেরের হাত ধরে মেহেরকে থামায়। মেহের অবাক হয়ে রুদ্রর দিকে ঘুরে তাকাতেই রুদ্র মেহেরকে জড়িয়ে ধরে বলে,

আহিল, কাব্য বাদে আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলবে না মেহেরজান। সারাক্ষণ বউমনি, দিয়া, আহিল আর কাব্য এর সাথেই থেকো। তোমাকে খুব মিস করবো।

বলেই মেহেরের কপালে হালকা ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। মেহের চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। হার্টবিট বেড়ে যায় মেহেরের। এক অজানা অনুভূতি মেহেরের মনে কাজ করছে যা মেহেরের কাছে খুবই অপরিচিত। রুদ্র দুষ্ট হেসে মেহেরকে বলে,

বসেই থাকবে নাকি ক্লাসে যাবে? বসে থাকলে আমার সমস্যা নেই। আমি প্রাণ ভরে তোমাকে দেখতে পারবো।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়। জানালা দিয়ে উকি দিয়ে বলে,

আসছি। নিজের খেয়াল রাখবেন। আর সাবধানে যাবেন।

রুদ্রকে বলেই দ্রুত ভার্সিটির ভেতরে ছুট লাগায়। মেহেরের ঠোঁটের কোণে দেখা মেলে এক লজ্জামিশ্রিত হাসির রেখা। রুদ্রর মুখ খুশিতে চকচক করে উঠে। তার রুদ্রানী কি তবে ধীরে ধীরে তার প্রতি দূর্বল হচ্ছে? ভেবেই একরাশ প্রশান্তি ছেয়ে যায় রুদ্রর মনে।

~~~

চলবে~

(একটু ব্যস্ত থাকায় ২ দিন গল্প দিতে পারিনি। মোটেও নেক্সট নেক্সট করবেন না। গল্প কেমন হয়েছে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। আর ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।)

0 Comments:

Post a Comment