গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ২৭ সমাপ্ত

 গল্প: বাধন হারা বেনী

পর্ব:২৭(শেষ পর্ব)

লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা


সপ্তাহ পেরিয়েছে তারা দেশে ফিরে এসেছে। আলোরা জাপান একেবারে ছেড়ে আসেনি।এসেছে কিছু দিনের জন্য বেড়াতে তার মামনি আর তার ফুফু তাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছে।জড়িয়ে ধরে আবেগী মনরম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিলো।মেহরাব মনে মনে ভীষন খুশি অবশেষে সে বিয়ে টা করতে পারবে।বাড়িতে ফিরে সকলে প্রথমে দুটো দিন আড্ড গল্প ও হাসি মজায় কাটায় এরপর একদিন রাতে মেহরাব তার মায়ের রুমে যায় মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মা এতো বড়ো ছেলের এমন ভাব দেখে হেসে ফেলেন আদরে চুম্বনে ছেলে গাল ভরিয়ে দেন।মায়ের কোলে মাথা রে মেহরাব তাকে বলতে শুরু করে জাপানের ঘটনা।

একে একে সব ঘটনা বলা শেষে সে তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।তার মা তখন মলিন মুখ করে সামনের জানালা ভেদ করে দৃষ্টি দিয়েছে সুদূরে।মেহরাব বোঝার চেষ্টা করে বাবা-মাকে ছেড়ে এসে এমন ভাবে তাদের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ঠিক কেমন লাগছে তার মায়ের কিন্তু সে বুঝতে ব্যর্থ কারণ সে তার মায়ের কোলে শুয়ে আর মায়ের অভাব বুঝবে কিভাবে? সে মাকে কিছু সময়ের জন্য একা ছেড়ে দেয়। হয়তো মেহরাব এর সামনে কাঁদতে চায়ছে না কিন্তু কাঁদলে মন ভালো হয়।সমস্ত চাপা কষ্ট যা আমরা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু পারি না কিছুক্ষন কাঁদলে তা এমনিই আমাদের মস্তিষ্কে আঘাত করা থামিয়ে স্মৃতি চারন করা বন্ধ করে দেয়।মেহরাব উঠে পড়ে শব্দহীন পায়ে চলে যায় রুম থেকে।রুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় পাবেল কে।পাবেল এর সাথে ছোট থেকেই তাদের সখ্যতা খুব একটা না।এর একমাত্র করণ তার দাদী আর ফুফু তারা নিজেদের নিজেদের অহমিকার কারনে ছোট থেকে পাবেলকে সবার থেকে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে ফলে সে এখন ও সকলের সাথে মিলে মিশে চলতে অসস্তি অনুভব করে।পাবেল মেহরাবকে সালাম দেয়, মেহরাব ও উত্তর দেয়।তারপর টুকি টাকি কথা বলে চলে যায় যে যায় উদ্দ্যেশে। দুপুরে খাবার টেবিলে ভুরিভোজ এর আয়োজন করে আলোরার ফুফু বাড়ির সব বাচ্চাদের পছন্দের খাবার রান্না করেছে।মেহরাব এর পছন্দের চালের আটার রুটি আর রাজহাসের মাংস,আলোরার পরোটা আর গরুর ভুড়ী রান্না,সোমেহরার জন্য মোরগ পোলাও,তনিমা ও অনিমার জন্য চিলি চিকেন ও বাটার নান।পাবেল এর জন্য সাদা ভাত আর গরুর মাংস,সোহরাব এর জন্য গরুর কলিজা ভোনা, নিহারী আর তন্দুর রুটি।সকলে টেবিলের সামনে এসে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো তারা জলজ্যান্ত জীন চোখের সামনে দেখে নিয়েছে কোন মাধ্যম ছাড়া।আলোরা করুন স্বরে তার ফুফুকে বলে...


আলোরা: ফুপ্পি এতো খাবার কারা খাবে?


ফুফু: কারা আবার তোরা খাবি।


আলোরা সহ বাকিরা ভীষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার ফুফুর দিকে।সকলে দুপুরের আবার খেতে শুরু করে।পদ অনেক হলে ও অতিরিক্ত রান্না করা হয়নি যত টুকু সকলে খেতে পারবে ততটুকুই রান্না হয়েছে।সোমেহরা খাওয়ার সময় বার বার ফোন চেক করছে দেখে অনিমা তাকে টিজ করে বলে


অনিমা: তোমার উনি অসুস্থ না!রেস্ট নিচ্ছে হয়তো।হাইপার হয়ো না।


সোমেহরা: আ..আমি তো সময় দেখছিলাম।


অনিমা: আ..আপু এখন এখানে দুপুর ৩ টা মানে ওখানে এখন বিকাল ৬ এখন হয়তে উনি ডিউটিতে আছেন।


সোমেহরা: বেশি পেকেছো না?


অনিমা: দেখতো তনিমা আমার গা থেকে পাকা পাকা গন্ধ আসছে নাকি আপুর গা থেকে প্রেম প্রেম সুবাস আসছে।


সোমেহরা: ঠাটিকে এক থাপ্পড় খাবে তুমি আমার কাছে বেয়াদপ মেয়ে।


তনিমা অনিমা সহ টেবিলের সকলে জোরে জোরে হাসতে থাকে।সেদিন জাপান থেকে ফিরে আসার পথে যখন ফ্লাইট এর জন্য সকলে অপেক্ষা করছিলো তখন কাফি হাপাতে হাপাতে এসে এক গুচ্ছ সাকুরা ফুল হাতে নিয়ে হাটুতে ভর দিয়ে বসে এক এয়ারর্পোট ভরা মানুষের মধ্যে জোরে জোরে চিৎকার করে বলে


" আমার হৃদয়ের অন্তহীনে লুকিয়ে থাকা আমার সম্রাজ্ঞী, আমি তোমার অনুগত এক প্রেমিক সম্রাট, তোমার তরে লুটিয়ে দেবার জন্য আমার আছে অফুরাম্ত নীলাকাশ সমান ভালো বাসা ছাড়াতো আর কিছুই নেই।হবে কি তুমি আমার অন্ধকার আকাশের নীলচে তারা ?"


সোমেহরা ভয়ে লজ্জায় জড়সড় হয়ে যায়।আলোরা তখন তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে তার কাধে হাত রেখে ইশারা করে সোমেহরা ভরসা পায় এগিয়ে যায় কাফির কাছে হাত থেকে ফুলটা নেয়।কাফি আনন্দে কয়েকটা ডিগবাজি খায় প্লাটফর্মে তারপর জোরে চিৎকার করে

 বলে 

        

愛してます

     

  Aishitemasu


এরপর পরই ফ্লাইটের ডাক আসে আর সকলে চেক আউট করে জাপান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে।আশার পর থেকে কাফির সাথে আর যোগাযোগ হয়নি সোমেহরার।অন্য দিকে সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে গেলে যখন তারা বিশ্রাম নিচ্ছিলো তখন বাড়িতে হাজির হয় তাহিয়ানার পরিবার।এক দিনে এত এক্সসাইটমেন্ট নিতে পারছেনা মেহরাবদের পরিবার।তারা সোহরাব ও তাহিয়ানার বিবাহ দিতে যান।কিন্তু তাহিয়ানা জেদ ধরেছে আজকেই বিয়ে করবে।পরে না হয় অনুষ্ঠান করা যাবে বাবা ভাইয়ের আল্লাদী হলে যা হয়।একটু চোখের জ্বলে সকলে গোলে পানি হয়ে যায়।তখন মেহরাব এর বাবা বলে আপত্তি তো নেই তবে আমার বড়ছেলে তো এখনো অবিবাহিত।আগে ওর বিয়েটা দিয়ে দেয় তারপর না হয়।তাহিয়ানার বাবা বলেন তারা মায়ের গর্ভ থেকে এক সাথে আছে। বিয়ে টা ও না হয় এক সাথেই হোক।


সকল কথা বলা না বলার মাঝে সিদ্ধাম্ত হলো যে আগামী দুই দিন পর যে শুক্রবার আসছে সেদিন মেহরাব সোহরাব আলোরা ও তাহিয়ানার বিয়ে সম্পন্ন হবে।বিয়ের দিন ধার্যের কথা শুনে মুখ গম্ভীর করে উঠে যায় সোহরাব আর মেহরাব তারপর দুজনে ঢোকে যার যার রুমে সকলে মনে করে তারা হয়তো বিয়েতে এই মুহূর্তে রাজি না।তনিমা অনিমা সোমেহরা দৌড়ে যায় দরজার সামনে পাশাপাশি দুই রুম হওয়াতে দরজার সামনে দাড়িয়ে তাদের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করে কিন্তু তারা বুঝতে ও পারেনি তাদের ভাইদ্বয় এমন একটা কাজ করবে...


সোহরাব ও মেহরাব যার যার রুমের দরজা দিয়েছে কিন্তু জানালা আটকাতে ভুলে গিয়েছে ফলে তারা যে রুমে ডুকে লুঙ্গি পড়ে উরা ধুরা লুঙ্গি ড্যান্স করছে তা বাকিরা দেখেই ফেলে।দুই দিকে দুই ভাই এর নাচ দেখে সকলে হাসতে হাসতে শেষ।বিয়ের দিন ঠিক হওয়াতে এরা এভাবে লুঙ্গি ড্যান্স দিচ্ছে বিয়ের দিন কি করবে?

.......................

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে ধরনীর বুকে।আলোরা মেহরাব এর বাগান টায় বসে উপন্যাস পড়ছে।


এই আলু অনেক পড়ে ফেলেছিস যা রুমে যা।


-মেহরাব ভাই আর একটু সময় দাও।


-এক মিনিট ও না, আমার বাগান টাকে কি তুই নিজের রাজত্ব পেয়েছিস?যা এখান থেকে।


-ভাই প্লিজ,এখানে বসে উপন্যাস পড়তে বেশ ভালো লাগে।


-এই তুই আমার মুখে মুখে কথা বলছিস?


-দুঃখিত ভাই


মাথাটা নিচু করে উঠে চলে গেলো আলোরা।সে জানে বাগানে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ কিন্তু এই নিষিদ্ধ জিনিসেই তো মানুষের টান বেশি থাকে।বাগানে কি ধন-রত্ন আছে কে জানে একটু গেলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে?আগে ও এমন করতো এখন ও এমন করে আস্ত খাটাশ একটা।মেহরাব আলোরার যাওয়ার পানে না তাকিয়ে আকাশের পানে তাকালো ঠোট দিয়ে বেরিয়ে এলো কিছু গানের লাইন...

         " এমন ও নিদানের দিনে

         বিনীত প্রার্থনা গো,

            লক্ষ্য কোটি ভুল আর ত্রুটি 

         করিও মার্জনা গো,

            শোনাইবো তোমারে আজ

         করেছি বাসনা গো..


              ঐরাবতের হৃদয় হতে ক্ষুদ্র এ রচনা

          আমি কি করিব, কোথায় যাবো

                কোন সাধনে  পাবো গো,

           আর একটি বার তোমারই দর্শন


আলোরার পা থেমে যায় গান টা যে তার বড্ড প্রিয়, এই তো সেই সময়ের পুরাবৃত্তি যা শুরু হয়েছে বহু বছর আগে। মেহরাব ভাই কি তা জানে? হয়তো জানার কথা,সে তো আাবার কিছু ভোলার পাত্র নয়।আলোরার ভাবনার মাঝে ভেসে এলো মেহরাব এর গম্ভীর স্বরের ডাক...


মেহরাব: আলু


আলোরা: জ্বি ভাই


মেহরাব: তুই কি আলু যে প্রতিবার ডাকের উত্তর দিস?


আলোরা: আপনি তো আর অন্য কোন নামে ডাকেন না। ডাক না শুনলে তো বাড়ি প্রলয় নেমে আসবে তাই উপায় হীনা হয়েই ডাক শুনি।


মেহরাব: ডাকবো ডাকবো আজ থেকে  বহু নামে ডাকবো।যা দুর হ' এখন সামনে থেকে। না হয় তুই ও আমার মতো অশান্ত হয়ে উঠবি।

 

আলোরা কথা ভাব বুঝতে চায়ছে না তাই সে বলে আমি এখনই চলে যাচ্ছিলাম আপনিই ডেকে থামলেন।মেহরাব চাঁদের পানে তাকিয়ে আলোরা দিকে উঠে যায়।আলোরা এখনো দাড়িয়ে আছে মেহবার তার সামনা সামনি গিয়ে দাড়ায় দুজনের মাঝের দুরত্ব কেবল গায়ে জড়ানো কাপড় টুকু।আলোরা থমকে যায় ব্রু কুচকে তাকায় মেহরাব এর দিকে মেহরাব নির্বিকার হয়েই দাড়িয়ে আছে।আলোরা এদিক ওদিক সরতে চায় কিন্তু তার পা দুটো বেইমানি করছে তার সাথে নড়তেই চায়ছে না। তখনি ছুটে আশা ঠান্ডা শিতল দমকা বাতাসে আলোরার মাথার কাপড় টুকু সরে গেলো #বাধন_হারা_বেনীর কেশ গুচ্ছ এলোমেলোল হয়ে জাপটে পড়লো আলোরার চোখে মুখে।মেহরাব আলোরা চুল গুলো ঠিক করে দিলো হালকা হাতে এরপর মাথার কাপড়টা টেনে দিলো।এই সন্দুর মুহূর্তটাই যেনো আলোরা হাজার বছর ধরে উপভোগ করতে চায়।সে চোখ বুজে পুরাটা সময় যেনো নিজের মস্তিষ্কে সংরক্ষন করে নিতে চায়।মেহরাব তার বন্ধ চোখের ব্রুতে ছোট ছোট করে কয়েকটা কামড় দেয় এই কামড়ে যেনো আলোরা সারা শরিরে তীব্র শিহরণ বয়ে যেতে শুরু করে।কামড়ে দেওয়া জায়গাটায় মেহরাব আবার একেকটা চুমু খায়।আলোরা নিশ্বাসের গতি পরির্বতন হচ্ছে হৃদপিন্ডটা লাগামহীন উঠানামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।মেহরাব আলোরার গলার কাছে তার ঠোট নিয়ে চুমু দিতে শুরু করে প্রতিবার স্পর্শকাতর গলায় শক্ত দাড়ি ও নরম কিন্তু পুরোট ঠোটের জ্বালাময়ী স্পর্শে আলোরা বেহাল দশায় পড়তে যাচ্ছে। হাতে থাকা উপন্যাসের বইটা মেহরাব কখন যে দুরের চেয়ারে ছুড়ে মেরেছে তা আলোরা জানে না।মেহরাব এর হাত লাগামহীন হয়ে তীব্র পায়তারা শুরু করেছে। আলোরার পায়ের পাতায় ভর করে দাড়ানো শক্তি টুকু নেই।মেহরাব তার কোমরের পাশের কামিজ গলিয়ে উন্মুক্ত কোমরে হাত রাখে অন্য হাতে আলোরার বাধন হারা চুল শক্ত করে ধরে আলোরা হাসফাস করে এই পর্যায়ে। আলোরা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মেহরাব এক অদ্ভুত নেশাময় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখটা কেমন যেন লাল ঘোলাটে।মেহরাব এর এই দেরি টুকু যেনো সয্য হলো না আলোরার সে এক হাতে মেহরাব এর চুল খামচে ধরে নিজের পায়ের পাতা উচু করে আঙুলে ভর দিয়ে মেহরাবের নরম ওষ্ঠদ্বয়ে সঙ্গে নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের সম্মিলন ঘটায়।সময়ের সাথে আলোরা বেকাবু আর অস্থির হয়ে ওঠে মেহরাব তা বুঝতে পেরে আলোরার কানে কাছে ঠোট মিশিয়ে বলে 


" I swear, যদি তুই নিজেকে আর আমাকে এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন করিস, তাহলে ভয়াবহ কিছু ঘটতে বেশি সময় লাগবে না।I can't control myself,বাকিটা তুই কল্পনা করে নিতে চাস নাকি আমি বাস্তবতার ছোয়া দিবো?


আলোরা এক ছুটে মেহরাব এর বাধন থেকে পালায় নিজের রুমে।এই ভয়ংকর যাত্রা দুই দিন পরেই না হয় শুরু হবে।

মেহরাব আলোরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসে, তারপর চেয়ারে গিয়ে উপন্যাস এর দিকে চোখ যেতে আবারো হেসে ওঠে। তার পাগলী বউ..... চাঁদের পানে তাকিয়ে মেহরাব বলে


- জীবনে বহু জ্বালা দিয়েছিস আজ pre-romance করলাম তোর সামনে বিয়ের দিন দেখি তকে জ্বালিয়ে মারবোে নিষ্ঠুর চাঁদ।


বেচারা চাঁদ সাতে ও পাঁচে ও নাই তবু সব দোষ তার😓।


(সমাপ্ত)


[ বহুদিন ধরে চলে আশা এই গল্পের সমাপ্তিতে অনেক কিছু করতে চেয়ছিলাম কিন্তু আপাতত এখানেই সমাপ্তি কারণ আমার ইনর্কোস পরিক্ষার ডেট দিয়েছে।তবে একটা বোনাস পর্ব তো দিবোই সময় সুযোগ করে]

0 Comments:

Post a Comment