গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৬

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 6


🍂🍂🍂


প্রায় ১ ঘণ্টা যাবৎ কোমরে হাত দিয়ে সারা রুমে পায়চারি করছে মেহের। বিরক্তিভাব নিয়ে আলমারির পাশে দাড়িয়ে আছে মেহেরের নানি। মেহের পায়চারি থামিয়ে আরেকবার বিছানায় ছড়িয়ে রাখা জামাগুলোর দিকে নজর দেয়। সব কাপড়ে চোখ ঘুরাতেই হটাৎ সাদা রঙের থ্রি পিসটির দিকে নজর পড়ে তার, সেলোয়ার আর কামিজ সাদা আর ওড়নাটা নীল রঙের। বিছানা থেকে থ্রি পিসটি হাতে নিতেই নানি বলে,

~এটা পড়বি?

~হুঁ (মুচকি হেসে জামা দেখতে দেখতে)

~যাক অবশেষে জামা সিলেক্ট করলি। তুই রেডী হ। এখন আমি আমার রুমে গেলাম।

~আচ্ছা।

নানি যেতেই মেহের রেডী হতে শুরু করে। সালোয়ার কামিজ পড়ে, নীল রঙের ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নেয়, হাতে নীল রেশমি চুড়ি, কানে ঝুমকো, সোজা সিথি করে কোমর অব্দি ঘন চুলগুলো ছেড়ে দেয়। সাজ হিসেবে শুধু মুখে একটু পাউডার, চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোটে নুড লিপস্টিক। মেহের রেডী হয়েই বন্ধুদের গ্রুপ কল করে,

~কিরে কই তুই। এখনি তোকে কল দিতাম(দিয়া)

~আমি মাত্র রেডী হয়েছি। তোরা কই?(মেহের)

~তোর বাসার নিচে (আহিল)

~জলদি আয় ছেমরি। কত সুন্দর করে রেডী হয়ে আসছি। তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে অবস্থা কাহিল হইয়া গেলে পরে তো আর পার্টিতে কোনো মাইয়া পটাইতে পারমু না। (কাব্য)

কাব্যের কথায় মেহের হেসে বলে, আসছি, দাড়া একটু।

মেহের তার নানিকে বিদায় জানিয়ে রওনা দেয়।


🍂🍂🍂


রেডী হয়েই বারান্দার দোলনায় গা এলিয়ে বসে আছে রুদ্র। এক ধ্যানে দূরে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। থেকে থেকেই দোলনা দোলাচ্ছে রুদ্র। পাশের কাউচ এ গালে হাত দিয়ে বসে আছে আয়মান। যেনো পারলে এখনই হাত পা ছড়িয়ে কান্না করে দিত সে। "এত সুন্দর করে রেডী হওয়ার কোনো মানে আছে! সেই তো বারান্দায় এসে বসে থাকা লাগছে। ধুর!!! ভাবছিলাম আজকে পার্টিতে অন্তত একটা গার্লফ্রেন্ড পটিয়েই ছাড়বো আর কই এদিকে বসে আছি।" বিড়বিড় করে বলে আয়মান।

কতক্ষন এদিক সেদিক চোখ ঘুরিয়ে আয়মান রুদ্রকে বলে,

স্যার প্রায় সব মেহমানই চলে এসেছে। ভাইয়া ভাবি কয়েকবার এসে ডেকে গেছে। সবাই আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।

আয়মান কথাটা শেষ করতেই রুদ্র রাস্তার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বাকা হাসে। ঘাড় ঘুরিয়ে আয়মানের দিকে চেয়ে বলে, চলো নিচে যাই। সবাই অপেক্ষা করছে তো, জলদি চলো।

বলেই দ্রুত দোলনা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।

আয়মান কতক্ষন হা করে চেয়ে থেকে বলে, আব হ্যাঁ চলুন।


🍂🍂🍂


মেহের আর ওর বন্ধুরা স্নেহার শশুর বাড়ী এসে সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। সাদা রঙের ডুপ্লেক্স বাড়ি, সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই দু পাশে মস্ত বড় বাগান, বাগানের মাঝেই সাদা ফাউন্টেইন বসানো, বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফল গাছ রয়েছে। মেহেরের মন চাইছিলো বাগানের মধ্যে কিছুটা দূরে রাখা দোলনাটায় যেয়ে বসতে কিন্তু সে আগে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করাকে বেশি গুরুত্ব দিলো। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করেই ৪ জন অবাক, চারিদিকে অনেক মানুষ রয়েছে কিন্তু সারা বাড়ি সাউন্ড প্রুভ হওয়ায় বাহির থেকে বোঝার উপায় নেই যে এখানে পার্টি হচ্ছে। ওদের দেখেই স্নেহা দৌড় ওদের কাছে আসে।

~ফাইনালি তোরা এলি! সে কখন থেকে তোদের অপেক্ষা করছিলাম জানিস!(স্নেহা)

~একে তো রাস্তায় জ্যাম ছিল। তারওপর এই ছেমরি গুলায় সাজতে যাইয়া দেরি করছে। আমার আর আহিল এর দোষ নেই। (কাব্য)

~মিথ্যা বলস কেন! আমি উল্টা রেডী হয়ে তোকে বার বার কল দিচ্ছিলাম আমাকে নিয়ে আসার জন্য।(দিয়া)

~থাম থাম আর ঝগড়া করা লাগবে না। বাই দ্যা ওয়ে, মাশাল্লাহ তোদের তো অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। যে কোনো ছেলে আজকে তোদের দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়বে দেখিস। (স্নেহা)

~উহুম! উহুম! আসার সময় আমিও তাই বলেছিলাম, এজন্য মেহের আমার মাথায় গাট্টা মেরেছে (আড় চোখে মেহেরের দিকে চেয়ে বলে দিয়া)

~তোকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। ভাইয়া কোথায়? ভাইয়া তো আজকে তোর থেকে নজরই সরাতে পারবে না। (স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে দুষ্টু কণ্ঠে বলে মেহের)

~আমার কথা কেউ জিজ্ঞেস করছিল বুঝি? (তীব্র)

~আরে ভাইয়া! কেমন আছেন?(কাব্য)

~আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তা এত লেট করলে কেনো তোমরা?(তীব্র)

আবারো কাব্য দিয়া আর মেহেরকে দোষ দিয়ে কিছু বলার আগেই দিয়া ধুম করে কাব্যের পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয় আর মেহের কাব্যের পায়ে এক পারা দেয়। এতে কাব্য এক চিৎকার দিয়ে লাফাতে থাকে তা দেখে দিয়া আর মেহের হাত তালি দিয়ে হাসতে থাকে।

~চলো তোমাদেরকে বাবা মায়ের সাথে দেখা করিয়ে আনি।(তীব্র)

~আচ্ছা (সবাই এক সাথে বলে)

তীব্র মি. এন্ড মিসেস আহমেদ এর কাছে নিয়ে যায় আর পরিচয় করিয়ে দেয় ওদের। ওদের সাথে এর আগে দেখা না হলেও স্নেহা ওর বন্ধু বান্ধবদের ব্যাপারে বাসায় অনেকবার বলেছে। মিসেস তিথি ওদের বাসায় আনতে বললেও ওদের আসা হয়ে উঠেনি। মি. এন্ড মিসেস আহমেদ অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় ওনারা মেহের আর তার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে শুরু করে।

~আচ্ছা যার জন্য এত বড় পার্টি রাখলেন সে কোথায়? (কাব্য)

~ওই তো আসছে (সিড়ির দিকে উদ্দেশ্য করে বলে তীব্র)

তীব্র এর দৃষ্টি অনুসরণ করে সকলেই সেদিকে তাকায়।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment