#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 15
🍂🍂🍂
মাঝ রাতে হাসপাতালে খুব একটা মানুষের আনাগোনা দেখা যায় না। চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। হসপিটালের করিডোরে ব্যস্ত পায়ে হাঁটছে মেহের। তার সাথেই মেহেরের মা মেহরিশ বেগম রয়েছে। মেহেরের মনে ঝেঁকে বসেছে একরাশ ভয়। অপারেশন থিয়েটার এর সামনে এসে দাঁড়ায় মেহের। তার বাইরের চেয়ারে কয়েকজন চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে। চারদিকে নিশ্বাস এর শব্দ ছাড়া আর একটুও শব্দ বিদ্যমান নেই। মেহেরকে খেয়াল করতেই একটি মেয়ে কাদতে কাদতে ছুটে এসে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে। মেহেরও জড়িয়ে ধরে মেয়েটিকে। এতে যেনো তার কান্নার মাত্রা কয়েক গুন বেড়ে যায়। মেহের তার মাথায় হাত রেখে আশ্বাস দেয় যে 'সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না'। সে যেনো এতক্ষণ তার এই আশ্বাস এর অপেক্ষায় ই ছিল। কাদতে কাদতেই কাপা কাপা গলায় বলে,
ও অনেক বেশি ইঞ্জুরড মেহের। ওর কিছু হলে আমি কি ই করবো? ডক্টর সেই কখন ভেতরে গেছে। এখনও বের হচ্ছে না। ও ঠিক হয়ে যাবে না! বলনা প্লিজ! ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
এই মুহূর্তে আসলে কি বলা উচিত ভেবে পায় না মেহের। সে আসলেই ঠিক হয়ে যাবে কি না তা নিয়ে মেহের নিজেও চিন্তিত। যদি কিছু হয়ে যায় তবে কি হবে? ভাবতেই গা শিউরে উঠে মেহেরের। চোখে জমা হয় অজস্র অশ্রু কনা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে মেহের নিজেকে বোঝায় "কিছু হবে না। থিঙ্ক পজিটিভ। সব ঠিক হয়ে যাবে"। নিজেকে বোঝানো শেষে নিজের পাশে থাকা মেয়েটির দিকে তাকায়। যে কিনা এখন তার দিকে চেয়ে আছে। তার দৃষ্টি জানান দিচ্ছে যে সে মেহেরের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে চাইছে যাতে তার মন থেকে একটু হলেও ভয় দুর হবে। মেহের তার দৃষ্টি বুঝতে পারে। মেহের যেনো তাকে ডিসেপয়েন্ট করতে চায় না। আশ্বাসের স্বরে বলে,
চিন্তা করিস না। আল্লাহ ভরসা তীব্র ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে। উনার কিছু হবে না দেখিস তুই। প্লীজ কান্না করিস না।
কান্নাভেজা চোখে মেহেরের দিকে তাকায় স্নেহা। তীব্রকে সে কতটা ভালোবাসে তা জানান দিতে যেনো ওর চোখই যথেষ্ট। পাশের সিটেই তিথি বেগম মুখে আঁচল চেপে কান্না করছেন। তাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মেহেরের মা। ওপর পাশের সিটে বসে মাথায় হাত চেপে বসে আছেন রেদোয়ান আহমেদ। তার পাশে বসে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে আয়মান। মেহেরের চোখ অটির দিকে যায় এবার। অটির গেট এর পাশের দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে এক যুবক। পেছন থেকে দেখেই মেহেরের বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে দাড়িয়ে থাকা লোকটি আর কেউ না বরং তার হবু বর রুদ্র। মেহের সেদিকে এক নজর চেয়ে স্নেহাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সেখানে আহিল, কাব্য, দিয়া আর দিয়ার বড় ভাইয়া উপস্থিত হয়। দিয়া এসে স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে। পাশে আহিল, কাব্য আর দিয়ার ভাই দিয়ান দাড়িয়ে আছে। প্রায় অনেকক্ষণ পর স্নেহার কান্না কিছুটা কমে আসে। দিয়ার কাধে মাথা রেখে একটু পর পরই ফুপিয়ে ফুপিয়ে উঠছে। এখন রুদ্রর মায়ের পাশেই বসে আছে মেহের। একটু পর পরই রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে। এসেছে পর থেকে একই ভাবে রুদ্রকে দাড়িয়ে থাকতে দেখছে। ওর কাছে যাবে কি যাবে না তাই ভাবছে মেহের। আহিল এসে মেহেরের পাশে দাড়াতেই মেহের আহিলের দিকে মাথা তুলে তাকায়। আহিল ধীর কণ্ঠে বলে,
এসেছি থেকে দেখছি ভাইয়া ওখানে একই ভাবে দাড়িয়ে আছে। এসে কথা বলেছিস তুই ওনার সাথে?
মেহের না বোধকে মাথা নাড়ায়। আহিল কিছু বলার আগেই রুদ্রর মা মেহেরের উদ্দেশ্যে বলে,
রুদ্র এমনিই অনেকটা গম্ভীর। ভাই এর এই অবস্থা দেখে হয়তো নিজেও ঠিক নেই। কারো সাথে কথা বলছে না। হয়তো তোর সাথে বলবে। কেউ ওর ভয়ে কথা বলতে যেতে পারছে না। তুই একটু যেয়ে কথা বলার চেষ্টা করে দেখ।
মেহেরের ভীতু দৃষ্টিতে রুদ্রর মায়ের দিকে তাকায়। এই দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে রুদ্রর মা বলে,
ও তোকে কিছু করবে না। সব থেকে বেশি তোকে ভালোবাসে। রাগ উঠলেও এক মাত্র তোর সামনেই ওর রাগ পানি হয়ে যায়। তাই তুই নির্দ্বিধায় যা।
মেহের কি করবে বুঝতে পারছে না। স্নেহার দিকে একবার চেয়ে বলে,
পরে যাই? স্নেহা একা তো।
আহিল বলে, আমরা আছি ওর সাথে। তুই চিন্তা করিস না। তুই ভাইয়ার কাছে যা।
মেহের আর উপায় না পেয়ে রুদ্রর কাছে এগিয়ে যায়। রুদ্রর পাশে দাড়িয়ে রুদ্রর দিকে তাকায় মেহের। সকালের সেই ফরমাল ড্রেসটাই এখনও পড়ে আছে রুদ্র। সাদা শার্টে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে, মাথার চুল এলোমেলো, বাম হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে ডান হাতটা পকেটে রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অটির গেট এর ছোট কাচের জানালার ওপাশে চেয়ে আছে। রুদ্রর চেহারা অত্যন্ত শান্ত, বুঝার উপায় নেই যে এখন তার মন মস্তিষ্কে কি চলছে। মেহের পাশে যেয়ে দাড়াতেই মেহেরের বাম হাতটি শক্ত করে ধরে রুদ্র। দৃষ্টি এখনও একই দিকে স্থির। মেহের রুদ্রর দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
মন খারাপ করবেন না। ভাইয়া ভালো হয়ে যাবে।
রুদ্র উত্তরে কিছুই বলে না। মেহের এবার রুদ্রর দিকে দৃষ্টি স্থির করে। ডান হাত দিয়ে রুদ্রর গাল স্পর্শ করে। কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করে,
আপনার কি কান্না পাচ্ছে?
এবারও রুদ্র নিশ্চুপ। মেহের আবার জিজ্ঞেস করে,
আপনি কি রেগে আছেন?
রুদ্র এবার চোখ ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে তাকায়। মেহেরের হাতটি গাল থেকে সরিয়ে হাতে নিজের ঠোঁট ছোয়ায়। এরপর মেহের হাতটি নিজের বুকে চেপে ধরে। মেহের হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। অবাক হয়ে সবার দিকে চোখ বুলায়। নাহ! কেউ দেখেনি। সকলেই নিজের মতো বসে আছে। রুদ্র ধীর গলায় বলে,
চিন্তা করো না। ইন শাহ্ আল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।
একটু পর ডাক্তার বের হয়ে আসে। সকলকে জানায় যে তীব্র এখন ঠিক আছে। ২৪ ঘণ্টা আন্ডার অবজারভেশন এ রাখবে। এরপর তাকে কেবিনে শিফট করা হবে। ডাক্তার এর কথা শুনে সবাই শান্তির নিশ্বাস নেয়।
~~~
চলবে~
0 Comments:
Post a Comment