গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪০

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 40


🍂🍂🍂


~তুই কি সত্যিই আন্টির বাড়ি যাবি না?

মেহের শান্ত চাহনী নিক্ষেপ করলো স্নেহার দিকে। হাতে থাকা আপেলটা কাটতে কাটতে বললো,

না। ইচ্ছে নেই। তোর এসব চিন্তা করা লাগবে না।

ফলভর্তি প্লেটটা স্নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

ফল খা।

স্নেহা নাক মুখ কুচকে প্লেটটা পুনরায় মেহেরের দিকে দিয়ে বললো,

সারাদিন খেতে ভালো লাগে না। এখন আর খাবো না।

মেহের প্লেটটা নিয়ে স্নেহার পাশে এসে বললো,

ভালো না লাগলেও খেতে হবে। আমার ভাগ্নি হেলথি হতে হবে। একদম গুল্লুমূল্লু টাইপ।

~সুফিয়ান ভাইয়া শুনলে আবার তোর সাথে কোমড় বেধে ঝগড়া শুরু করবে দেখিস। চাচীর জায়গায় নিজেকে খালা দাবি করিস কেনো তুই?

~তোর সুফিয়ান ভাইয়া পরে এসেছে। তাই চাচীর অধিকার পরে। আমি আগে আমার ভাগ্নির খালামণি।

~ভাগ্নি ভাগ্নি করছিস যে! সিওর কিভাবে যে ভাগ্নি ই হবে?

~হবে হবে। অবশ্যই হবে। আমার মেয়ে বাবু বেশি পছন্দ।

~তাহলে চলো আমরা একটা মেয়ে বাবু নেই?

রুদ্র কথায় চমকালো মেহের। চোখ বড় বড় করে বললো,

আপনি এখন? এখানে? কেনো?

বউকে মিস করছিলাম। ভাবলাম জলদি বাড়ি চলে যাই। তাই চলে এলাম। মিসড ইউ সো মাচ মেহেরজান!

মেহের রুদ্রর পেটে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বললো,

যেখানে সেখানে এভাবে কথা না বললে ভালো লাগে না আপনার? ঠোঁটকাটা স্বভাবের মানুষ কোথাকার!

~খারাপ কি বললাম? বউকে মিস করার কথা বলা যাবে না? (রুদ্র)

~অবশ্যই যাবে ভাইয়া। যাবে না কেনো? (স্নেহা)

~দেখলে বউমনি! তোমার জা আমার সাথে কি করে কথা বলে। সাজা স্বরূপ তুমি ওকে দিয়ে স্টার জলসার বউদের মতো কাজ করাবে। একদম দজ্জাল জা হয়ে যাবে। বুঝলে? 

রুদ্রর কথায় স্নেহা খিল খিল করে হেসে উঠলো। মেহের ধমকে উঠতেই রুদ্র দ্রুত ঘরে চলে এলো। বনের বাঘও তো তার বাঘিনীকে ভয় পায়। সেদিকে রুদ্র তো মনুষ্য। মেহের স্নেহার পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। স্নেহার দিকে তাকালে দেখলো স্নেহার হাসতে হাসতে চেহারা লাল হয়ে গেছে। এখনও হাসছে। প্রেগনেন্সির পাঁচ মাস চলছে। প্রেগনেন্সির কারণে স্নেহা আগের থেকে কিছুটা গোলুমোলু হয়েছে। দিয়া আর মেহেরের কাছে এখন স্নেহাকে বেশ কিউট লাগে। যখন তখন গাল টেনে দেয়। মাঝে মাঝে তো তীব্র ওদের সামনেই স্নেহার গাল টেনে বলে,

ওরে আমার ডোরেমন রে!

স্নেহা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সবাই হেসে উঠে। স্নেহার পেটটা আগের থেকে বেশ ফুলে উঠেছে। মেহের প্রায় সময় স্নেহার পেটে হাত দিয়ে এটা সেটা বলে। তার কাছে মনে হয় বাচ্চাটা যেনো তার কথা মন দিয়ে শুনছে।

__________________________________


~ওই কামের বেটি! আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আয়। জলদি জলদি।

কাব্যর কথা শেষ না হতেই দিয়া ধুম করে কাব্যর পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয়। কাব্য ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠতেই দিয়া রাগান্বিত স্বরে বলে,

কোন এঙ্গেল দিয়ে আমারে কাজের বেটি মনে হয় তোর?

~তোর চেহারা দেখলেই মনে হয় তুই কাজের মহিলা। তোর নাম দিয়া না রেখে জরিনা রাখা উচিত ছিলো।

দিয়া আহিলের দিকে রাগী চোখে তাকালে আহিল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,

চেয়ে আছিস কেনো? মেহমানদের খেয়াল রাখতে জানিস না?

রেদোয়ান আহমেদ আর তিথি আহমেদের দিকে চেয়ে বললো,

এই মেয়ে তো বহুত ফাজিল। বাড়ির বউ এত ফাজিল হয়? মেহমানদের খেয়াল রাখতে জানে না। কাজের মেয়েকে বিদায় করে দিন আংকেল আন্টি।

আহিলের কথায় রেদোয়ান আর তিথি হেসে উঠলো। দিয়াকে রেদোয়ান আহমেদ নিজের পাশে বসিয়ে বললো,

আমার বাড়ির ছোট কন্যা ইনি। মোটেও কাজের মেয়ে জরিনা বলবে না।

~হ্যাহ্! আমার বাবা আমার সাথে আছে। ইউ হতদরিদ্রের দল! যা বিদায় হ! (দিয়া)

~তুই যা। আমরা স্নেহার সাথে দেখা করতে এসেছি। তুই বললেই যাবো নাকি! সর সামনের থেকে! (কাব্য)

~মেহের কই রে? এসেছি পর থেকে দেখছি না যে?(আহিল)

___________________________________


মেহের ঘর থেকে বের হতে নিলেই রুদ্রর কণ্ঠ শুনে থেমে যায়।

~সারাদিন ছোটাছুটি করো। একটু পাশে এসে বসতে কি ক্ষতি?

মেহের রুদ্রর কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো,

আপনি কি রাগ করলেন?

রুদ্র মাথা নেড়ে না বুঝালো। মেহের রুদ্রর পাশে বসতেই রুদ্র মেহেরের কোলে মাথা দিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। মেহের আগের মতো আর চমকালো না। অসস্তি অনুভবও করলো না। একরাশ ভালো লাগা তার মন ছুঁয়ে গেলো। রুদ্রর মাথায় হাত বুলাতে থাকলো। রুদ্র শীতল কণ্ঠে ডাকলো,

মেহেরজান!

~হু?

~একটা কথা বলবো। রাখবে?

~বলুন। যথা সম্ভব চেষ্টা করবো।

~আমার বাচ্চা লাগবে না। আমার কোনো বাচ্চা লাগবে না।

রুদ্র এই এক কথায় মেহেরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। রুদ্রর থেকে ছিটকে দূরে সরে এলো। কম্পিত কণ্ঠে বললো,

মানে? কি বলছেন?

রুদ্র উঠে বসলো। মেহেরের দিকে এগিয়ে যেতেই মেহের পিছিয়ে গেলো। রুদ্র টান দিয়ে মেহেরকে আগের স্থানে এনে মেহেরের কোলে পুনরায় মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু আগের বারের মত আর মেহেরের পেটে মুখ গুজলো না। মেহেরের মুখের পানে চেয়ে বললো,

প্রেগনেন্সিতে অনেক রিস্ক। বউমনি প্রেগনেন্ট হওয়ায় ভাইয়ার অবস্থা দেখেছো? চিন্তায় কেমন সারাক্ষণ উদাসীন হয়ে ঘুরে। তোমার কিছু হলে আমি বেচেঁ থেকেও মরে যাবো বউ। আমার লাগবে না কোনো বাচ্চা।

মেহেরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। তেজপূর্ণ কণ্ঠে বললো,

কি বলছেন ভেবে বলছেন? প্রতিটা মেয়েই চায় মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে। হোক তাতে রিস্ক।

~তুমি বললে আমরা বাচ্চা এডপ্ট করবো। তবুও আমি চাই না তুমি রিস্ক নাও।

~রিস্কের ভয় করলে এই পৃথিবীতে আপনি, আমি কেউই থাকতাম না রুদ্র।

~রুদ্রাণী!

~প্লীজ রুদ্র! আপনার কথা আমার ভালো লাগছে না।

রুদ্র কিছু বলার আগেই দরজায় করাঘাতের শব্দ এলো। রুদ্র উঠে বসলো। গলা উচিয়ে বললো,

কে?

~ভাইয়া আমি রুমি।

রুদ্র উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই রুমি হেসে বললো,

আহিল ভাইয়া আর কাব্য ভাইয়া এসেছে। তোমাদের ডাকে। রুদ্র রুমিকে কোলে নিতেই মেহের ঘর থেকে বের হলো। রুদ্রর আগে সে নিজেই নিচে চলে গেলো। মেহের রাগ করছে তা বুঝতে পারছে রুদ্র। কিন্তু সে তার ব্যাপারে কোনো রকমের রিস্ক নিতে চাইছে না। তার রুদ্রাণীর কিছু হলে সে ভালো থাকবে কি করে?

~~~

চলবে~

(কেমন আছেন সবাই? গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। আর নেক্সট নেক্সট না বলে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লীজ। পরের পর্ব খুব দ্রুত দিবো ইন শাহ্ আল্লাহ। হ্যাপি রিডিং~)

0 Comments:

Post a Comment