গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২৫

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 25


🍂🍂🍂


অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে মেহের। খাটের পাশে চেয়ার টেনে বসে মেহের হাতের মেহেদি তুলে দিচ্ছে আহিল। আরেক পাশে কাব্য বসে মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেহের এর পাশে কাছে দু পাশে স্নেহা আর দিয়া বসে আছে। স্নেহা বসে বসে আহিলের কার্যকলাপ দেখছে। মেহেরের হাতের মেহেদি ভীষণ গাঢ় রং ধারণ করেছে। মেহেরের মেহেদি দেখে স্নেহার মনে পড়ে আজ মেহেদি দেওয়ার সময় যখন মেহেদি আর্টিস্টরা বলছিলো "মেহেদির রং যত গাঢ় হয় স্বামীর ভালোবাসা তত গভীর" তখন তাদের কথা শুনে সেই কি হাসি। 

~মেহেদির রং আদৌ প্রকাশ করে নাকি! কি সব উদ্ভট কথা!

বলেই খিলখিল করে হাসছিল মেহের। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল। তখনকার হাসি হাসি মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে আছে এখন ভাবতেই স্নেহার কান্না চলে আসে। দিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। বুক সেলফ এর কাছে দাঁড়িয়ে আয়মান দিয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। "দিয়া কি তবে তার কাছে আসার আগেই ভয়ে দূরে চলে যাবে?" কথাটা মাথায় আসতেই মুহূর্তেই যেনো রাজ্যের ভয় ঝেঁকে ধরে আয়মানকে। তখন মাটির দিকে চেয়ে থাকলেও আয়মান বুঝতে পেরেছে যে দিয়া অবাক আর ভয়ের দৃষ্টিতে আয়মানের দিকে চেয়ে আছে। তখন দিয়ার দিকে চোখ তুলে না তাকালেও এখন দিয়ার দিকে সর্বধ্যান দিয়ে চেয়ে আছে কিন্তু সেখান থেকে আসার পর থেকে দিয়া একবারও আয়মান এর দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। অন্যদিকে তীব্র গম্ভীর হয়ে রুদ্রর পাশে বসে আছে। স্নেহাকে কি বলে বুঝাতে পারবে সে জানে। রুদ্র কি জন্য ওই লোকটিকে মারছিল তা ইতিমধ্যে সবাইকে বলেছে আয়মান। কিন্তু মেহের যদি বুঝতে না চায়? যদি রুদ্রকে ছেড়ে চলে যেতে চায় তবে রুদ্র যে কি করবে তার চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তীব্রর। মেহেরের জন্য করা রুদ্রর পাগলামি দেখেছে তীব্র। শুধু তীব্রই নয় বরং আহমেদ পরিবারের সবাই দেখেছে, স্নেহা বাদে। এবার যদি মেহেরের থেকে দূরে যাওয়ার বিন্দু মাত্র সম্ভাবনা থাকে তবে রুদ্র কি করবে জানা নেই। মেহেরের জ্ঞান ফিরতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। মেহেরের জ্ঞান ফিরতে দেখেই আহিল মেহেরকে উঠে বসতে সাহায্য করে। মেহের উঠে বসে মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। স্নেহা আর দিয়া এগিয়ে এসে মেহেরের আরো কাছ ঘেসে বসে। মেহের ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

মা এসেছিলো দেখতে? কিছু জিজ্ঞেস করেনি? কি বলেছিস তাকে?

~আন্টি আর মা এসেছিল। আমি বলে দিয়েছি তোমরা টায়ার্ড তাই তোমাদের রুদ্র ঘরে চলে আসতে বলেছে। তাই আর কেউ তোমাদের ডিস্টার্ব করেনি।

তীব্রর গলা শুনে কণ্ঠ অনুসরণ করে সেদিকে তাকায় মেহের। এতদিন এই মানুষটাকে নিজের বড় ভাই এর মত আর একটা ভরসার মত মানুষ ভাবলেও আজ যেনো তাকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিতে মন চাইছে মেহেরের। না জানি আর কত কথা লুকিয়েছেন এনারা কথাটি মন, মস্তিষ্কে আসতেই আবারও চোখে পানি জমা হয় মেহেরের। তীব্রর পাশে বসে থাকা রুদ্রর দিকে এবার চোখ যায় মেহেরের। আগের সেই রক্ত মাখা পাঞ্জাবিটা রুদ্রর গায়ে নেই, গায়ে রক্তের বিন্দুমাত্র ছিটে ফোঁটা নেই। গায়ে কালো রঙের শার্ট ও প্যান্ট, মাথার ভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে আছে, চোখ মুখে রয়েছে এক রাশ স্নিগ্ধতার ছাপ। দেখে বুঝতে পারে একটু আগেই সে গোসল করেছে। এখন রুদ্রকে দেখলে বুঝার জো নেই যে কিছুক্ষণ আগে এই লোকটিই এখন মানুষকে নির্মমভাবে মারছিল। তখনকার দৃশ্য মস্তিষ্কে বিচরণ করতেই আঁতকে উঠে মেহের। আহিলের হাতটি শক্ত চেপে ধরে বলে,

~ভাই উনি...উনি এখানে কি করছে? উনি মেরে ফেলবে আমাকে। আমি এখানে এক মুহূর্তও থাকবো না। আমাকে এখন থেকে নিয়ে চল। আমি থাকবো না এখানে, বিয়ে করবো না ওনাকে।

আহিল করুন দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকায়। যার জন্য সুপ্ত ভালোবাসা জন্ম নিতে দেখছিল এখন তার জন্যই ভয় দেখতে পাচ্ছে। এই মুহূর্তে কি করা বা বলা উচিত বুঝতে পারছে না সে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রুদ্রর দিকে তাকায় আহিল। রুদ্র সে কখন থেকে একই ভঙ্গিতে বসে মেহেরের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে এখন তার মনে কি চলছে। আহিল চোখ বন্ধ করে লম্বা এক শ্বাস নেয়। এই মুহূর্তে মেহেরকে শান্ত করা জরুরি ভেবে মেহেরের মাথায় হাত রাখে। মেহের কাদতেঁ কাদতেঁ বলে,

আমি থাকবো না এখানে। উনি ভালো না। আমাকেও মেরে ফেলবে। আমার ওনাকে দেখে ভয় করছে। আমাকে বাড়ি নিয়ে যা প্লীজ।

দিয়া এগিয়ে এসে মেহেরকে বলে,

প্লীজ তুই কান্না করিস না মেহের। শান্ত হ।

~সবাই নিজ নিজ ঘরে যাও। আমার মেহেরজান এর সাথে কথা আছে।

রুদ্রর কণ্ঠ শুনে মেহেরের ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। চিৎকার করে বলে,

না আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলবো না। আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। আহি, কাব্য তোরা আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা। আমি এখানে থাকবো না।

~কি বলেছি কানে যায়নি! নিজ নিজ ঘরে যাও সবাই!

রুদ্রর ধমকে সবার অন্তর আত্মা কেপে উঠে। তীব্র স্নেহাকে নিয়ে যেতে চাইলে স্নেহা হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। তীব্র শক্ত ভাবে স্নেহার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।

~তুই তো বলিস সব ঝামেলা কথা বলে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হয়। একবার রুদ্র ভাইয়ার সাথে কথা বল। এরপর যে সিদ্ধান্ত নিবি আমি তোর সাথে আছি। (আহিল)

~ভয় পাস না। আমরা তোর সাথেই আছি। (কাব্য)

মেহের করুন চোখে ওদের দিকে তাকায়। আহিল কাব্য আর দিয়াকে চোখ দিয়ে ইশারা করে চলে আসতে। দিয়া যেতে না চাইলেও আহিল এর কথায় যেতে হয়। দিয়ার পিছু পিছু আয়মান ও বের হয়। সবাই যেতেই রুদ্র শব্দ করে দরজা বন্ধ করে। মেহের ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে খাটে বসে থাকে। রুদ্র যেয়ে মেহেরের সামনে বসতেই মেহের ভয়ে পিছিয়ে একদম কর্নার এর সাথে লেগে বসে। রুদ্রও আরেকটু এগিয়ে বসে।

রুদ্র নিশ্চুপ হয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে। মেহের বলে,

আমাকে যেতে দিন প্লীজ! আমি... আমি থাকবো না এখানে। আপনার মত মানুষের সাথে আমি থাকতে পারবো না। আমি মা কে বুঝিয়ে বলবো যে আমি বিয়ে করবো না।

রুদ্র এবার মৌনতা ভেঙে বলে,

কথা শেষ? নাকি আরো আছে?

মেহের ভ্রু কুঁচকে রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র মেহেরের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মেহের অবাক হয়ে রুদ্রকে সরাতে যাবে তার আগেই রুদ্র বলে,

খবরদার উঠানোর চেষ্টা করবে না। এর ফল মোটেও ভালো হবে না মেহেরজান।

রুদ্রর ধমকে মেহের দমে যায়। ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে। রুদ্র শান্ত কণ্ঠে বলে,

তুমি আমার শুধুমাত্র পছন্দ না মেহেরজান। তুমি আমার ভালোবাসা, আমার আসক্তি, আমার ভালো থাকার একমাত্র কারণ।

আলতো হাসে রুদ্র। আবার বলে,

তোমার জান নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না মায়াবতী। তুমিই যে আমার প্রাণভোমরা। তুমি দুনিয়া ত্যাগ করলে আমি মরে যাবো এমন ফালতু ডায়ালগ আমি দেবো না। কিন্তু এটা সত্যি যে তুমি আমার কাছে থাকলে আমি আমার অন্ধকার জগতে কিছুটা আলোর রেখা পাই যা আমার মধ্যে বেচেঁ থাকার আশা যোগায়।

মেহের কান্না থামিয়ে রুদ্রর দিকে চেয়ে আছে এখন। রুদ্র এবার উঠে বসে। আলতো করে মেহের এর দু গালে হাত রেখে বলে,

আমি অকারণে কাউকে মারি না মেহেরজান। কিন্তু হ্যাঁ আমার প্রাণভোমরার দিকে হাত বাড়ালে আমি অবশ্যই ছেড়ে দিবো না।

রুদ্রর কথার মানে বুঝতে পারে না মেহের। প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। রুদ্র এক লম্বা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে...

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment