গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১৬

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 16


🍂🍂🍂


তীব্রর হাত ধরে বসে আছে স্নেহা। তীব্রকে শিফট করার পর থেকে সারাক্ষণ তীব্রর সাথেই ছিল সে। কেবিনে একটা সোফায় বসে আছে রুদ্র। তার মা বাবাকে হাসপাতালে থাকতে নিষেধ করে দিয়েছে সে। স্নেহাকে মানা করতে চেয়েও করেনি কেননা এই অবস্থায় তীব্রর থেকে দূরে থাকলে স্নেহা চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে যেতো। আহিল, দিয়া, মেহের আর কাব্য এর মধ্যে বেশ কয়েকবার দেখা করে গেছে।

মেহের ধীর পায়ে কেবিনে ঢুকতেই প্রথমে চোখ পড়ে স্নেহা আর তীব্র এর দিকে। স্নেহা তীব্রর হাত ধরে বসে এটা সেটা বলছে আর তীব্র মুচকি হেসে মনোযোগ দিয়ে তার প্রেয়সীর কথা শুনছে। ওদের জুটি দেখে বরাবরই মুগ্ধ হয় মেহের। মেহের আলতো হেসে রুদ্র যেদিকে বসে আছে সেদিকে তাকায়। রুদ্র এক নজর মেহেরের দিকে চেয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দেয়। মেহের যেয়ে রুদ্রর পাশে দাঁড়ায়। হাতের ব্যাগটা ছোট টেবিলটির ওপর রেখে স্নেহার কাছে যায়। বাড়ি থেকে খাবার বানিয়ে এনেছে মেহের। এ কয়েকদিন প্রতিবেলা সে নিজ হাতে খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছে। কখনো নিজে না আসতে পারলে আয়মান কে দিয়ে পাঠিয়েছে। রুদ্রর মা রান্না করে পাঠাতে চাইলে মেহের কড়াভাবে নিষেধ করে দেয় যেনো সে কোনো কষ্ট না করে। তিনিও আর জোর করতে পারে না। মেহের যেয়ে স্নেহাকে আর তীব্র কে খাবার খেয়ে নিতে বলে। স্নেহা খাবার নিয়ে তীব্রকে খাইয়ে দিতে থাকে। মেহের রুদ্রর দিকে চেয়ে দেখে রুদ্র এক ধ্যানে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে। মেহের যেয়ে রুদ্রর পাশে বসে রুদ্রর জন্য খাবার বাড়তে নিতেই রুদ্র মেহেরের কোলে মাথা দিয়ে পেটে মুখ গুজে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ে। মেহের হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। স্নেহাদের দিকে চেয়ে দেখে ওরা দুজনই রুদ্রর কান্ড দেখে দাত কেলিয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে। মুহূর্তেই মেহেরকে ঘিরে ধরে একরাশ লজ্জা। মেহের হালকা হাতে রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে বলে,

কি হচ্ছে টা কি! ছাড়ুন বলছি। এভাবে সবার সামনে কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ার মানে আছে! লাজ লজ্জা নেই? উঠুন বলছি!!!

কিন্তু রুদ্রর এতে যেনো কোনো ভাবাবেগ নেই। মেহের আবারো ধাক্কা দিতেই রুদ্র বলে,

গত ২ দিন ধরে ঘুমাইনি মেহেরজান। প্লীজ ডিস্টার্ব করো না। আমি ঘুমিয়ে গেলে না হয় উঠে যেয়ো।

~তাই বলে এভাবে! আমি বালিশ এনে দিচ্ছি তাতে ঘুমান। কিংবা বাসায় যেয়ে শান্তিতে ঘুমান। আয়মান ভাইয়া, আমি আর স্নেহা তো এখানে আছি ই। (মেহের)

~বড্ড বেশি কথা বলো তুমি মেহেরজান। ভাইয়াকে রেখে আমি কোথাও যাচ্ছি না। একেবারে ওকে নিয়েই বাড়ি যাবো। আর আমি শান্তিতেই শুয়ে আছি। (রুদ্র)

~দেখুন ভাইয়া আর স্নেহা দেখছে। প্লীজ উঠুন। (মেহের)

~উহু... দেখুক। তাতে কি? আমি কি রোমান্স করছি নাকি? এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আজব! (রুদ্র)

~ধ্যাত!!! আচ্ছা উঠুন আগে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। তারপর না হয় ঘুমাবেন। (মেহের)

~পরে খাবো। এখন মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো। (মেহেরের হাত নিজের মাথায় রেখে বলে রুদ্র)

মেহের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুদ্রর মাথায় হাত বুলাতে থাকে। আর রুদ্র ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।


🍂🍂🍂


দীর্ঘ পাঁচদিন পর বাড়ি ফিরেছে তীব্র, স্নেহা আর রুদ্র। তীব্র কে দেখে তিথি বেগম অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেছেন। অনেক কষ্ট তার কান্না থামিয়েছে রুদ্র আর তীব্র। স্নেহা তার শাশুড়ির সাথে

ড্রয়িং রুমে বসে। ঘরে ফিরেই তীব্র বিছানায় যেয়ে আধশোয়া হয়ে বসে। রুদ্র কিছুটা দূরে থাকা সোফায় বসে কিছুক্ষণ ভাই এর দিকে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে। মাথায় আর হাতে সাদা ব্যান্ডেজ তার ওপরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ বিদ্যমান। রাগ যেনো আবারও মাথায় চেপে বসেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে রাগ নিবারণের চেষ্টা চালায় সে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তীব্র রুদ্রর দিকে চেয়ে আলতো হাসে। হাসি বজায় রেখেই জিজ্ঞেস করে,

বেচারা বেচেঁ আছে নাকি তোর মার খেয়ে পটল তুলেছে?

তীব্র এর হাসিটা যেনো এই মুহূর্তে পছন্দ হলো না রুদ্রর। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

তোমাকে ছেড়ে এখনও এক মিনিটের জন্য দূরে গিয়েছি? আমি এখনও ওই লোকের সামনে যাইনি। মান মেরেছে ওকে।

~তার মানে বেচেঁ আছে। তোর জন্য একটু জান বাঁচিয়ে রেখেছে। (পুনরায় হেসে বলে তীব্র)

~ওর মৃত্যু তো আমার হাতেই। সাহস কি করে হলো ওদের আমার পরিবারের দিকে হাত বাড়ায়! (দাতে দাত চেপে বলে রুদ্র)

~আজকে কি বার মনে আছে তো! মাত্র ৫ দিন আছে তোর বিয়ের। (তীব্র)

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তীব্রর দিকে তাকাতেই তীব্র হেসে বলে,

আমার জন্য বিয়ের তারিখ পেছানোর দরকার নেই। বিয়ে টা একদম প্ল্যান মতই হবে। নো চেঞ্জ, ওকে?

~তার আগে ওই বাস্টার্ড কে মারবো আমি। (রুদ্র)

~উহু এখন কিছু করিস না। বিয়ে টা হয়ে যাক আগে। বিয়ের মধ্যে এসব ঝামেলা করিস না। আমি একটু সুস্থ হই তারপর পেটাবো বেটাকে। এখন মারলে আমি মারতে পারবো না। (তীব্র)

তীব্রর কথায় রুদ্র নিঃশব্দে হাসে। উঠে যেয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে রুদ্র। ভাই এর অ্যাকসিডেন্ট এর খবর পেয়ে মনে অজানা ভয় ডানা বেধেছিল। তীব্র তার অনেক কাছের। তীব্রর কিছু হলে কি হতো ভাবলেই গায়ে কাটা দেয় রুদ্রর। তীব্র সবসময় রুদ্রর কাছে উত্তপ্ত রোদের মধ্যে মাথার ওপর গাছের শীতল ছায়ার মত। রুদ্র তার ভাইকে অনেক বেশি ভালোবাসে। ভাই এর চোখে নিজেকে হারানোর ভয় দেখে তীব্রর হাসি যেনো আরো বিস্তৃত হয়।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment