গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১০

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 10


🍂🍂🍂


তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পাশে বসে থাকা রুদ্রকে পর্যবেক্ষন করছে মেহের। কিছুক্ষণ আগে যে মেহেরের করা প্রশ্নটি আদৌ রুদ্র কানে শুনেছে কিনা বুঝতে পারছে না মেহের। কেননা রুদ্র আগের মতোই বসে আছে, দৃষ্টি তার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক জোড়া কপোত - কপোতীর দিকে। মেহেরও রুদ্রর দৃষ্টি অনুসরন করে সেদিকে তাকায়। দেখতে পায়, মেয়েটি হয়তো কোনো এক কারণে রাগ করে আছে আর ছেলেটি কানে ধরে উঠবস করে তার প্রেয়সীর রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে। মেয়েটিও আর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না বলে হেসে দেয়। প্রেয়সীর রাগ ভেঙেছে দেখে ছেলেটিও হেসে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আর মেয়েটিও তার প্রেমিক পুরুষটির বুকে মুখ গুজে দাড়িয়ে থাকে। কি মুগ্ধকর এক দৃশ্য। ওদের দেখে রুদ্র আনমনেই হেসে উঠে। মেহের এখনও ওদের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছে। এমন ভালোবাসা আজকাল খুব কমই দেখা যায়। রুদ্র মুচকি হেসে মেহেরের চেয়ে থাকে। তারপর রুদ্র বলে,

এত কি দেখছো? নজর লেগে যাবে তো।

রুদ্রর কথায় মেহেরের ধ্যান ভাঙে। রুদ্র এই মুহূর্তে কি বললো তা বুঝতে মেহেরের ছোট্ট মস্তিষ্ক কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো। বুঝে উঠতেই যেনো মেহের তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। রাগী সুরে জিজ্ঞেস করলো,

কেনো? নজর লাগবে কেন? আমি কি ওদের বাজে দৃষ্টিতে দেখছিলাম নাকি!

~তো কি করছিলে?

~ভাবছিলাম।

~কি ভাবছিলে?

~আজকাল এমন ভালোবাসা খুব কমই দেখা যায়! কি সুন্দর করে ছেলেটি মেয়েটির রাগ ভাঙাচ্ছিল। ইশ! কত্ত  কিউট লাগছিল দুজনকে।

~তোমারও কি এমন কাউকে চাই নাকি?

~অবশ্যই চাই। এমন ভালোবাসা কে না চায়? এই একটা জিনিসই তো মানুষকে হাসি খুশি ভাবে বেচেঁ থাকার আশা দেয়। সবাই ই চায় যে তাদের প্রিয় মানুষ তাদের রাগ অভিমান বুঝুক, তারা রাগ করলে প্রিয় মানুষটি যেভাবেই হোক তার রাগ ভাঙাক।

মেহেরের দিকে রুদ্র এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। হটাৎ ই মেহের বলে উঠে,

একটু আগে যেই প্রশ্ন করলাম তার উত্তর দিন।

~কোন প্রশ্ন?

~ঐযে কালকে রাতে আপনিই ছিলেন কিনা।

~আমার আগমনের কারনে পার্টি হয়েছে আর আমি থাকবো না! আজব! তোমার সাথেও তো বৌমনি পরিচয় করিয়েছি। ভুলে গেলে? (বাঁকা হেসে বলে রুদ্র)

~উফফ!!! আমি তখনকার কথা বলছি না।

~তবে? 

~কাল রাতে দ্বিতীয় তলার ওই ঘরে আপনি ছিলেন। খবরদার মিথ্যে বলবেন না। আমি আপনার গায়ের ঘ্রাণ পেয়েছিলাম। (রুদ্রর দিকে আঙুল তাক করে বলে মেহের)

~আমার ঘরে আমি না থাকলে আর কে থাকতো? (ভাবলেশহীন ভাবে বলে রুদ্র)

রুদ্রর কথা শুনে মেহেরের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। কিছুটা চিল্লিয়েই বলে,

তার মানে কাল রাতে অন্ধকারে ওই ঘরে আপনি ই ছিলেন!

~কেনো তখন অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলে নাকি তুমি?

~ফাইজলামি বন্ধ করেন! আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে ছোঁয়ার!

~সাহসটা জন্মগতভাবেই পেয়েছি। আর তোমাকে ছোঁয়ার জন্য আমার সাহস লাগবে কেনো? তুমি তো একান্তই আমার।

~আপনার মানে কি! আমি মোটেও আপনার নই। খবরদার আর কখনো আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।

মেহেরের বলতে দেরি কিন্তু রুদ্রর মেহেরের হাত টেনে নিজের কাছে আনতে দেরি হয় না। মেহের আর রুদ্রর মধ্যে এতক্ষণ যথেষ্ট দূরত্ব থাকলেও এখন মেহের রুদ্রর গা ঘেসে বসে আছে। হটাৎ এমন করায় মেহের তাজ্জব বনে যায়। রুদ্র শান্ত ভাবেই বলে,

তুমি বললেই তো হলো না রুদ্রানী। চেয়েছিলাম তোমার কাছে খুব সহজে ধরা দিবো না। পরে ভাবলাম আমি তো তোমারই। তোমার কাছে নিজেকে গোপন রাখার মনে হয় বলো। এতে উল্টো তোমার থেকে দূরে থাকা লাগতো। তাই তো গটগট করে সব বলে দিলাম।

~ছাড়ুন বলছি। অসভ্য, বেহায়া লোক! বিনা অধিকারে এভাবে আমাকে ছোঁয়ার আপনার সাহস কি করে হলো! এভাবে ছোঁয়ার পারমিশন কে দিয়েছে আপনাকে! ছাড়ুন বলছি!!! (রুদ্রর হাত সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে মেহের।)

~ইশশ ইয়ার রুদ্রানি!!! তোমাকে ধরলেই এমন ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেনো বলোতো! শুনো মেয়ে তোমার প্রতি এই রুদ্র ছাড়া আর কারো অধিকার নেই। কথা টা তোমার ছোট্ট মাথায় ঢুকিয়ে নাও। (হালকা হেসে বলে রুদ্র)

~আপনি বললেই হলো! আমার প্রতি আমার ভবিষ্যৎ স্বামীর অধিকার আছে। আপনার না বুঝলেন! সো আমাকে ছোঁয়ার অধিকার আপনার নেই। এই কথাটা আপনার অসভ্য মাথায় ঢুকিয়ে নিন। হুহ! (রেগে বলে মেহের)

~আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমার স্বামী হওয়ার চেষ্টা করলে তার মৃত্যু নিশ্চিত মেহেরীন। ভুলেও আমি ব্যতীত অন্য কাউকে ওই নজরে দেখার চেষ্টা করবে না। তোমাকে কিছু না করলেও তোমার সামনেই ওদের *খুন* করবো বলে দিচ্ছি।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের ভয় পেয়ে যায়। পরে করুন স্বরে বলে,

আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো বলুন তো। আমাদের তো কালই প্রথম দেখা হলো। আপনি প্লীজ এমন করবেন না।(বলতে বলতেই মাথা নিচু করে কেঁদে দেয় মেহের)

~হুশশ!!! মেহেরজান। প্লীজ ডোন্ট ক্রাই। তুমি জানো না তুমি আমার জন্য কত্ত বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। তোমাকে আমার প্রয়োজন। খুব করে প্রয়োজন। জীবনে ভালো থাকতে হলে আমার তোমাকে চাই।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের চোখ তুলে তাকাতেই রুদ্র মেহেরের চোখের পানি মুছে দিয়ে, মেহেরের দু গালে আলতো করে হাত রাখে। মিহি কণ্ঠে বলে,

তোমাকে কালকেই প্রথম দেখিনি আমি। অনেক আগে থেকে চিনি তোমায় আমি। তোমার অজান্তেই।

~কিভাবে?

~তা নাহয় বিয়ের পরেই জেনো। কোনো এক গোধূলি বিকেলে তোমার পাশে বসে সব বলবো তোমায়।

মুচকি হেসে বলে রুদ্র। মেহের রুদ্রর হাসি দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কি অমায়িক এই হাসি। কিন্তু লোকটা ভীষণ রগচটা স্বভাবের তা হারে হারে বুঝে গেছে মেহের। কিছুক্ষণ থেমে রুদ্র আবার বলে উঠে,

ইভান এর সাথে বেশি কথা বলবে না। ওর সাথে যেনো আর তোমাকে না দেখি। (হাত ঘড়ির দিকে এক নজর চেয়ে আবার মেহেরের দিকে তাকায়) এতক্ষণে হয়তো একটা ক্লাস শেষ। তুমি বরং বাকি ক্লাসগুলো করো যেয়ে। আমি আসি। নিজের খেয়াল রেখো।

বলেই মেহেরের কপালে হালকা ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। এতে মেহের অবাক হয়ে তাকাতেই মাথা চুলকে চোখ এদিক সেদিক ঘুরিয়ে হেসে চলে যায় রুদ্র। আর রুদ্রর যাওয়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে মেহের। মনে মনে ভাবে,

লোকটা এমন কেনো? এই ভালো তো এই খারাপ। এনাকে বোঝা মুশকিল। আচ্ছা যাওয়ার সময় ওনার গালে কিছুটা লাল আভা ছড়িয়ে ছিল। উনি কি লজ্জা পাচ্ছিল? হয়তো।

ফোন unlock করে দেখে যে ইভান মেসেজ দিয়েছে জরুরি এক কাজে বাড়িতে চলে যেতে হয়েছে তাই সে নোটস নিয়ে আজকে আসতে পারছে না। ফোন ব্যাগ এ রেখে হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে আসলেই একটা ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। মেহের এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্বিতীয় ক্লাস এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

~~~

চলবে?

0 Comments:

Post a Comment