গল্প:বাধন হারা বেনী
লেখীকা:সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব:২০
আমি নিজে ও ভীষন এক্সাইটেড ছিলাম আপনাকে আপন করে পাওয়ার প্রতিক্ষা করছিলাম।কিন্তু আমার সেই প্রতিক্ষা বহু বছরের অপেক্ষায় পরিনত করে দিলো মামনি।মামনি আমার রুমে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে থাকে এই বিয়ে হলে আপনার জীবন সংকটে পড়বে।আমি আদ্য প্রান্ত বুঝতে না পেরে মামনিকে পা থেকে তুলে খাটে বসিয়ে পানি খেতে দিলাম।তারপর বললাম সব টা খুলে বলো
আমাকে মামনি।
মামনি বলল
- আমি কোন সাধারন মানুষ না আমি একজন জ্বীন সাপ।আমি মানুষ এবং সময় বিশেষ সাপে পরিনত হতে পারি।আমি জ্বীন রাজ্যের সর্পজ্বীনের সরদার মোসলেম এর কন্যা আমার বাবা সর্পজ্বীনের সরদার।তার ভীষন ইচ্ছা ছিলো সে আমাকে মানুষদের মাঝে পাঠাবে লেখাপড়া শিখে আবার রাজ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য।তোমাদের এখানে যেমন লেখা পড়ার কদর আছে ঠিক তেমন আমাদের ওখানে ও লেখা পড়ার কদর অনেক বেশি।বাবার কথায় মনে একরাশ ভয় নিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হই।প্রথম প্রথম ভীষন ভয় করতো মানুষদের এরপর আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব হতে লাগলো।বুঝলাম মানুষ শুধু খারাপ না ভালো ও আছে।
একদিন সকাল টা ছিলো ভীষন সুন্দর নীল আকাশে সাদা সাদা মেঘ উঠে বেড়াচ্ছিলো।সকালে স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকতে পথে একটা ছেলের সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগে।আমি বেশ ব্যাথা পায়।ছেলে টা নতজানু হয়ে সরি বলে আমার তার এই ব্যবহার ভালো লাগে আমি ও তাকে মাফ করে দিয়ে ক্লাসে চলে যায়।ক্লাস শেষে আমি বাড়ি ফিরছিলাম।হঠাৎ সুন্দর আকাশ টা কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।রাস্তার দু পাশে তেমন কোন ছাউনি ও নেই যে ঠায় নেবো দেখতে দেখতে এক ফোটা দু ফোটা করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেলো আমি তো নিরুপায়। নিমেষেই মন খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু পুরো বৃষ্টিতে ভেজার আগেই একটা ছাতা আমায় ঢেকে দেয়।সেই সকালে ধাক্কা লাগা ছেলেটা।প্রথমবার আমি আর কোন একটা ছেলে ছাতার নিচে এতটা কাছাকাছি লজ্জায় আমার দাড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়ে।দুজনে মিলে সেই ঝুম বৃষ্টিতে কিছুটা পথ হেটে একটা দোকানের সামনে এসে দাড়ালাম।এরপর আমাদের বন্ধুত্ব হলো কথা বাড়তে লাগলো।একসময় আমরা কলেজ এ উঠলাম একই কলেজ এ হওয়ার সুবাদে আমাদের মধ্যের বন্ধত্বের গভীরতা বাড়তে লাগলো।
একদিন সে আমাকে জানালো সে আমাকে ভালোবাসে। আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়।মানুষ হিসাবে সে অমায়িক হলেও আমি তো আর মানুষ না।আমি তো তাকে ভালো বাসতে পারি না।আমার তো ভালেবাসা বারন।আমি তাকে ফিরিয়ে দেয়।সে ফিরে যায় সেদিনের পর সে আবার আমার বন্ধু হয় আমার যত্ন নিতে থাকে।আস্তে আস্তে আমি তার প্রতি ভীষন দুর্বল হয়ে পড়ি।এরপর এক রাতে টিউশন শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম সে ও আমার সাথে ছিলো হঠাৎ কাল বৈশাখি ঝড় শুরু হয়।সেই ঝড়ে আমার জীবনেও এক সুখের ঝড় ওঠে।আমরা একটি দোকানের ভেতরে ঠায় নেই।দোকানে কেউ ছিলো না সম্ভাবত অনেক পুরনো দোকান ছিলো।বাতাসের দপট থেকে আর বৃষ্টির ছাট থেকে বাচতে আমরা সেই দোকানের মরিচা ধরা তালা ভেঙে সেই দোকানে ডুকি।দোকানের ভেতরে একপাশে একটা মাটির চুল্লি আর কয়েকটা কেটলি, চায়ের কাপ আরো কিছু জিনিস পড়ে আছে অন্য পাশে একটা খাট।আমি ভিজে জুবুথুবু অবস্থা।সাথে সে ও ভীজে জুপজাপ।আমার কাপুনি দেখে সে তো দিশেহারা।এক সময় ঠান্ডার কারনে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সে তো হাসফাস করছে কি করবে আস্তে আস্তে আমার গা ঠান্ডা হতে থাকে উপায় অন্ত না পেয়ে সে আমাকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে যখন আমাদের সংবদ ফিরে আসে তখন সব থেকে পাপ কাজটি আমাদের করা হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু এত বড় পাপের পরে ও মনে কেনো যেনো কোন রকম ভয় হচ্ছিলো না।মনে হচ্ছিলো দুটি পবিত্র আত্মার মিলন ঘটেছে।কিন্তু যখন ঝড় বৃষ্টি থেমে যায় বাহিরে আলো ফুটতে শুরু করে নিজেদের করা পাপের জন্য অনুশোচনা হতে থাকে।সেই সাথে আমার ভয় বাড়লো বাড়তে থাকে আমি তো মানুষ না।সে আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিলো আমি তার কপালে চুমু দিলাম কারন আমি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার জীবন বাচানোর পরিবর্তে আমি ও তার জীবন বাচাবো।আমি এই কলেজ ছেড়ে অন্য কলেজ এ ভর্তি হয়।আর আমার পরিবার এর কাছে ফিরে যায় কিন্তু কিছু মাসের মধ্যে আমি আমার শরিরে পরিবর্তন দেখতে পায়।আমার ভয় বাড়তে থাকে আমার পরিবার আমার আচর আচারন দেখতে পয়ে সব জানতে চায় আমি ভয় পেয়ে সব বলে দেয়।তারা আমাকে এই সন্তান নষ্ঠ করতে বলে।আমি ততদিনে নিজের অস্তিত্বে সন্তানকে মিশিয়ে নিয়েছি।এটা আমার প্রিয় মানুষের ভালোবাসার নিশানি কিভাবে নষ্ঠ করতাম।তখন আমার বাবা আমাকে অভীশাপ দিলেন যে তুই যেমন ভালোবেসে আমার মান সম্মান নষ্ঠ করে দিলি।তেমন এই সন্তান ও একদিন বড় হয়ে কাউকে ভালোবাসবে আর বাসর রাতে সর্পাঘাত এ তার মৃত্যু হবে।এটি এই জ্বীন সরদার এর অভিশাপ লানত তোর উপর।বের হয়ে যায় এই রাজ্য থেকে তোর মতো নষ্ঠ মেয়ের এ রাজ্যে কোন জায়গা নেই।আমাকে সাত মাসের অসুস্থ অবস্থায় রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হলো।আমার শরির এতো অসুস্থ ছিলো যে আমি হাটতে ও পারছিলাম না এরপর যখন আমি এলোমেলো হয়ে রাস্তায় হাটছিলাম তখন একটি গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হতে হতে আমি বেচে যায়।সেই গাড়িতে ছিলেন আমার শ্বশুর আমাকে বাড়িতে আনলে আমার শ্বাশুড়ি ভীষন রেগে যান।আমি তখন ও জানতাম না এই বাড়ি সেই মানুষটার ও যাকে আমি ভালোবাসি।রাতে তার সাথে যখন খাবার টেবিলে দেখা হলো সে আমাকে দেখে কেঁদে দেয় আর তার বাবা মার কাছে আমার ব্যাপারে সব সত্যিটা বলে।তারা সব শুনে প্রথমে মানতে চান না কিন্তু পরে আমার পেটের সন্তানের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে যান।তারা তো আর জানতেন না আমি কে।আমি ও তাদের আদর স্নেহে সব ভুলতে বসি।এরপর আমি এক সাথে দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।আমার শ্বশুর তাদের নাম রাখে মেহরাব ও সোহরাব।সন্তার হওয়ার দিনই আমাদের বিয়ে হয়।কারণ সন্তান পেটে থাকলে বিয়ে বা তালাক হয় না। আমাদের একটা সুখের সংসার শুরু হয়।একে একে বহু বছর পার করে আজকের এই দিনে এসে উপস্থিত হয়েছি।কেউ জানে না মা, শুধু তুই জানিস।আমার এই সন্তানদের জন্য আমি সব ছেড়েছি।তুই ওদের জান ভিক্ষা দে তুই চলে যা।
আমি সেদিন শুধু চোখের পানি ফেলেছিলাম আর কিছুই আমার করার ছিলো না।কারণ ঐ মানুষ টাকে ও আমি ভালো বাসি আর যেখানে আপনার ভালো থাকার প্রশ্ন ছিলো সেখানে আমি কিভাবে থেকে যেতাম।দাদী তোফার সাথে আপনাকে বিয়ে দিতে চয়ে ছিলো আমি ভেবেছিলাম।আপনার তোফার সাথে বিয়ে হবে কিন্তু হয় নি।
সকলে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।তাদের বড়মা যার কোলে তারা মানুষ সে জ্বীন সাপ? সোমেহরা ও জ্বীন সাপ?এজন্য এদের গড়ন এতো সুন্দর এতো অমায়িক?কাফি সোমেহরাকে পরখ করে দেখতে থাকে।তার একটু একটু ভয় ও হচ্ছে যদি তাকে কামড়ে দেয়।
চলবে?
0 Comments:
Post a Comment