গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ১
-এই আলু অনেক পড়ে ফেলেছিস যা রুমে যা।
-মেহরাব ভাই আর একটু সময় দাও।
-এক মিনিট ও না, আমার বাগান টাকে কি তুই নিজের রাজত্ব পেয়েছিস?যা এখান থেকে।
-ভাই প্লিজ,এখানে বসে উপন্যাস পড়তে বেশ ভালো লাগে।
-এই তুই আমার মুখে মুখে কথা বলছিস?
-দুঃখিত ভাই
মাথাটা নিচু করে উঠে চলে গেলো আলোরা।সে জানে বাগানে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ কিন্তু এই নিষিদ্ধ জিনিসেই তো মানুষের টান বেশি থাকে।বাগানে কি ধন-রত্ন আছে কে জানে একটু গেলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে?মেহরাব আলোরার যাওয়ার পানে না তাকিয়ে আকাশের পানে তাকালো ঠোট দিয়ে বেরিয়ে এলো কিছু গানের লাইন...
" এমন ও নিদানের দিনে
বিনীত প্রার্থনা গো,
লক্ষ্য কোটি ভুল আর ত্রুটি
করিও মার্জনা গো,
শোনাইবো তোমারে আজ
করেছি বাসনা গো..
ঐরাবতের হৃদয় হতে ক্ষুদ্র এ রচনা
আমি কি করিব, কোথায় যাবো
কোন সাধনে পাবো গো,
আর একটি বার তোমারই দর্শন
আলোরার পা থেমে যায় গান টা যে তার বড্ড প্রিয় মেহরাব ভাই কি তা জানে? নাহ,,জানার তো কথা নয়। সে তো অতি গোপনে এ গান যত্ন করে তুলে রেখেছিলো নিজের হৃদকক্ষে।আলোরার ভাবনার মাঝে ভেসে এলো মেহরাব এর গম্ভীর স্বরের ডাক...
মেহরাব: আলু
আলোরা: জ্বি ভাই
মেহরাব: তুই কি আলু যে প্রতিবার ডাকের উত্তর দিস?
আলোরা: আপনি তো আর অন্য কোন নামে ডাকেন না। ডাক না শুনলে তো বাড়ি প্রলয় নেমে আসবে তাই উপায় হীনা হয়েই ডাক শুনি।
মেহরাব: ডাকবো ডাকবো একদিন বহু নামে ডাকবো।যা দুর হ' এখন সামনে থেকে।
মেহেরাব আবার আকাশ পানে চায়।আলোরা এবার আর দেরি না করে দ্রুত পায়ে হাটা শুরু করে নিজের রুমের দিকে।আলোরা চলে গিয়েছে বুঝতে পেরে নিজের গম্ভীর খোলস থেকে বারিয়ে আসে মেহরাব। গা টা রকিং চেয়ারে হেলিয়ে দিয়ে দোল খেতে শুরু করে।আশে পায়ের ফুলের গাছ গুলো থেকে নানা রকম ফুলের সুবাস এক সাথে নাকে এসে ধাক্কা লাগছে সাথে নীল আকাশের সাদা সাদা তারার মাঝে ঝকঝকে চাদঁ খানা বড্ড মানান সই।এই বাগানের প্রতিটা ইট-বালু-গাছের শেকড় সব মেহরাবের নিজের হাতে করা এখানে কারো ঠায় হয় না।মেহরাব ব্যাতিত এখানে অন্য প্রানীর অস্তিত্ব নশ্বর। আলোরা মাঝে মধ্যে বাড়ি না থাকলেই এখানে হানা দেয় তা সে জানে তবে কিছু বলে না।
আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ কে প্রশ্ন করে মেহরাব
- খুব কি দরকার ছিল আমাকে আনার এ ভূমণ্ডলে?
চাঁদ বরাবরের ন্যায় নিরুত্তর।মেহরাব তাতে হতাশ হয় না।আলোরা রুমে গিয়ে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে।এখানে সে আছে গত ছয় বছর যাবৎ এটা তার ফুফু বাড়ি।বাবা-মা ছয় বছর আগে গ্রাম থেকে শহরে আশার পথে রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। এরপর একমাত্র ফুফু তাকে গ্রাম থেকে তাদের কাছে নিয়ে আসে।ফুফুর ভরা পরিবার সেই পরিবারের এখন সে ও একজন বিশেষ সদস্য। ফুফুর দুই মেয়ে তনিমা আর অনিমা। ফুফুর বড়জা মানে মামনির(চাচি) তিন ছেলে মেয়ে।বড় ছেলে মেহরাব,ছোট ছেলে সোহরাব আর মেয়ে সোমেহরা। ফুফুর একজন ননদ আছে তার নাম অনজুমান বেগম তার স্বামী শাহিন আলম ও এক ছেলে পাবেল আলম।ফুফুর শাশুড়ির আলোয়াকে বিশেষ পছন্দ না এ বাড়িতে -পরগাছা কিনা! মায়ের মন রাখতে ফুফুর ননদ ও ইচ্ছে মত অপছন্দের তালিকায় রেখেছে তাকে।এতে অবশ্য তার কিছু যায় আসে না।আর ক'টা দিন রিজাল্ট এলেই সে বাইরে চলে যাবে পড়তে।ফিরে এসে বাবার ব্যবসার হাল ধরবে যা এতো দিন ফুফা বকরুল সাহেব সামলে এসেছেন।আলোর ফুফু পরিনা বেগম একজন ভালো মানুষ সবাইকে নিয়ে চলতে তার ভালো লাগে।নিজের পরিবারকে এক সুতয় বাধা রাখতে তার আপ্রান চেষ্টা।
..........
মেহরাব এখনো চাঁদের দিকে উত্তরের আসায় তাকিয়ে আছে। চাঁদের কাছে সব কিছুর খবর থাকে না।তবু সবাই কেন চাঁদকেই এতো প্রশ্ন সুধায়?
মেহরাবের আজ মন ভালো নেই আর তো মাত্র ক'টা দিন তার পর সব আবার একবার ঝাকুনি দিয়ে নড়েচড়ে বসবে।তখন সে? সে কোথায় যাবে? চাঁদ হয়তো বুঝতে পেরেছে মেহরাব আবার তাকে কিছু সুধাবে তাইতো সে উড়ে আশা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে।
মেহরাব হাসে,হলকা হাসি,তাচ্ছিল্যময় হাসি,মনে মনে বলে
- এই চাঁদ তুই লুকাস কেনো? তুই তো রোজ আকাশের বুকে নিলজ্জের মতো উঠবি,আমার নিকে তাকিয়ে দেখ আমার বুকটা খালি হয়ে আছে।আমি একা হয়ে যাচ্ছি।আমার অভিশাপ লাগবে তোর চাঁদ তুই ও একা হয়ে যাবি।তোকে দেখলে আমার জ্বলে বুঝলি আমার কলিজা জ্বলে।
চাঁদ হয়তো তাচ্ছিল্যের প্রতি উত্তরে তাচ্ছিল্য দিয়ে বলে
- কে বলেছিলো অষ্টাদশীর প্রতি দুর্বল হতে।জ্বলো এখন তুমি, মিছে মিছে আমায় কেনো দোষারোপ করছো হে মূর্খ মানব।
-
মেহরাব আকাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘরে যেতে শুরু করে।দোতলায় উঠতেই তার মন টা ব্যকুল হতে থাকে।একটা ধমক দেয় নিজেকে
- না মেহরাব তুই এমন করতে পারিস না।রাত বি রাতে বেগানা নারীর ঘরে তুই কেন যাবি।এই তোর হৃদয়ের তুচ্ছ বাহানকে মাথা চাড়া দিতে দিস না।ঠাটিয়ে দুটো থাপ্পাড় মার নিজের গালে আর রুমে চল।
মনের বিরুদ্বে মস্তিষ্ক আর মস্তিষ্কের বিরুদ্বে মনের যুদ্ধকে বলা হয় দোটানা।এই দোটানায় জীত সর্বদা মনেরই হয়।মেহরাব ও তার ব্যতিক্রম নয় পা দুটো টেনে টেনে দু ঘর সামনে গিয়ে দাড়ায় দরজাটা মোড় দিতেই খুলে যায়। ভেতরে মৃদু আলোয় ঘুমিয়ে আছে এক অষ্টাদশী।মেহরাব একটা লম্বা নিশ্বাস ফলে শান্তির নিশ্বাস।তারপর দরজা টা আবার লক করে ফিরে যেতে থাকে নিজের রুমে.. আর গেয়ে ওঠে সেই গান...
" এমন ও নিদানের দিনে
বিনীত প্রার্থনা গো,
লক্ষ্য কোটি ভুল আর ত্রুটি
করিও মার্জনা গো,
শোনাইবো তোমারে আজ
করেছি বাসনা গো..
ঐরাবতের হৃদয় হতে ক্ষুদ্র এ রচনা
আমি কি করিব, কোথায় যাবো
কোন সাধনে পাবো গো,
আর একটি বার তোমারই দর্শন
চলবে?
গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব:১
No comments