গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৪২

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 42


🍂🍂🍂


রুদ্রর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না মেহের। তখন থেকে একদম চুপচাপ। মেহের অনেক চেষ্টা করেও রুদ্রর অভিব্যক্তি বুঝতে সক্ষম হলো না। রাতে মেহের ডাকলেও রুদ্র খেতে গেলো না। চুপ করে শুয়ে রইলো। না খেলে মেহের আর তার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে তাই স্নেহা জোর করে মেহেরকে খাইয়ে দিলো। মেহের না চাইতেও একটু খেয়েই ঘরে ফিরে এলো। বাড়িতে স্নেহা আর দিয়া বাদে নিজের প্রেগনেন্সির ব্যাপারে এখনও কাউকে জানায়নি মেহের। রুদ্রর মনে কি চলছে তা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না মেহের। ঘরে এসে দেখলো রুদ্র ঘরের বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেহের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেও ঘুমাতে চলে গেলো। আজ কেনো যেনো ঘুম আসছে না মেহেরের। রুদ্রর এমন ব্যবহার খুব ভাবাচ্ছে মেহেরকে। সারা রাত এপাশ ওপাশ করতে করতেই ভোরের দিকে চোখে ঘুম নেমে এলো মেহেরের। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখলো রুদ্র পাশে নেই। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো সকাল দশটা বাজে। দিয়া জানালো রুদ্র আর আয়মান খুব সকালেই আজ অফিসে চলে গেছে। মেহের মন খারাপ করে ঘরে চলে এলো। দিয়া নাস্তা করতে বললেও করলো না মেহের। ঘরে এসে রুদ্রকে বেশ কয়েকবার কল করলেও রুদ্র রিসিভ করলো না। এমনিতে প্রথম বার রিং হতেই কল রিসিভ করে নেয় রুদ্র। এবার মেহেরের কান্না পেলো। মাথায় হাত ঠেকিয়ে খাট ঘেসে বসে রইলো মেহের। গাল বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছে। রুদ্র আগেই বলেছিলো সে বাচ্চা নিতে চায় না। মেহের তবুও নিলো। এবার কি রুদ্র আর তার সাথে কথা বলবে না? রুদ্র কি তার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে? সে কি এই বাচ্চা নষ্ট করতে বলবে? রুদ্র কি রাগ করে তাকে ডিভোর্স দিবে? হাজারো চিন্তায় মশগুল হয়ে গেলো মেহের।

~আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না। রুদ্র নিজেই যখন দূরত্ব তৈরি করছে তবে তাতেই সই।

মেহের বেরিয়ে আসতে চাইলো আহমেদ ভিলা থেকে। মিসেস তিথি, স্নেহা আর দিয়াকে বললো কিছু দিনের জন্য মায়ের বাড়ি যাচ্ছে। রুদ্রর কথা জিজ্ঞেস করায় মেহের থমথমে কণ্ঠে শুধালো,

তার খবর কি আমি নিয়ে বসে আছি? আমি মায়ের বাড়ি যাচ্ছি।

~আমিও আসছি তোর সাথে চল। (দিয়া)

~তুই কেনো যাবি? (মেহের)

~কেনো ওটা কি তোর রেজিস্ট্রি করা বাড়ি নাকি? হলেও আমি যাবো। তোর পারমিশন নিতে রাজি না আমি। চল চল।

মেহের চুপ করে দিয়ার পিছু পিছু গেলো। মেহেরকে একা ছাড়তে চাইছে না তা ইতিমধ্যে বুঝতে পারছে মেহের। 

________________________________


দরজা খুলে এতদিন পর নাতিনকে দেখতে পেয়ে বেশ আবেগী হয়ে পড়লেন মেহেরের নানি। মেহেরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলেন প্রায় আধঘন্টা। রুদ্রর কথা জিজ্ঞেস করলে দিয়া বললো,

ভাইয়া কাজে ব্যস্ত একটু। পরে আসবে।

মেহেরের নানা মেহরিশকে কল করে জানাতেই তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। মেহরিশ বাড়ি এসে মেয়েকে দেখতেই ছুটে তার কাছে গেলো।

~বলে এলি না যে?

~কেনো এখন এই বাড়িতে আসতেও মানা নাকি?

তাচ্ছিল্য হাসলো মেহের।

~সে কি কথা? মানা হবে কেনো? তোরই তো বাড়ি এটা।

মেহের কিছু বললো না। এক ধ্যানে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। হুট করে জড়িয়ে ধরতেই মেহরিশ হকচকালো। মেহের মিহি স্বরে মা কে বললো,

মাফ করে দিও মা। আমি তোমার যোগ্য সন্তান হতে পারিনি।

মেহরিশ বুঝলো না মেয়ের কথার মানে। মিনিট দুয়েক পরেই মেহের তার মাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই বললো,

আমার এক লম্বা ঘুম প্রয়োজন মা। কেউ ডিস্টার্ব করো না প্লীজ। একটু শান্তির ঘুম চাই।

মেহের যেতেই দিয়া ওদের সব জানালো। মেহরিশ এই ব্যাপারে কিছুই বললো না। মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কথা না বলাই ভালো। নিজেদের সমস্যা নিজেরা ঠিক করতে পারলেই ভালো।

_________________________________


রুদ্র মিটিং শেষে কেবিনে এসেই চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। টানা চারটা মিটিং করে ক্লান্ত সে। আপাতত মেহেরকে নিয়ে ভাবতে চাইছে না সে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মেহের উনিশবার কল করেছে। রুদ্র চেয়েও কল ব্যাক করলো না। আয়মান এসে ডাক দিতেই আবারো চলে গেলো মিটিং রুমে।

_____________________________________


আজ সারাদিনেও ঘর থেকে বের হয়নি মেহের। মেহরিশসহ বাড়ির সকলেই ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিয়ে মেহেরকে ডেকেছে। এত ঘুম তো মেহের ঘুমায় না। ঘুমালেও এক ডাকেই উঠে যায় মেহের। আজ কি তবে একটু বেশিই ক্লান্ত নাকি? দিয়া মেহেরের এমন খামখেয়ালীপানায় ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,

এই অবস্থায় ঠিক মত খাবার না খেলে যে অসুস্থ হয়ে পড়বে তা এই মেয়ের চিন্তায় আছে? এতো ডাকছি কোনো সাড়া দেয় না। কি এক ঝামেলা!

মেহরিশ বললেন,

রুদ্রকে কল করেছিস?

স্নেহা হতাশার সুরে বললো,

দিয়েছি কিন্তু ধরলো না। আয়মানও ধরলো না। আসুক আজ এই লোক। কুরুক্ষেত্র যদি না বাধিয়েছি!

মেহরিশ হাসলেন। বিদ্রুপের কণ্ঠে বললেন,

বর পেটাস নাকি তুই? এমন ফাজিল হলি কবে থেকে?

দিয়া মাথা চুলকে হেসে বললো,

কি বলো না আন্টি! ওনাকে মারতে গেলে আমাকেই তুলে এক আছার মারবে।

মেহরিশ সশব্দে হেসে উঠলেন। দিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বললেন ঘরে যেতে। মেহের হয়তো ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাঙলে নিজেই খেতে আসবে।

____________________________________


বাড়ি ফিরে রুদ্র যখন শুনলো মেহের মায়ের বাড়িতে গেছে তখন কিছুই বললো না। নিজে মা হতে চলেছে বলে হয়তো এবার মায়ের কষ্টগুলো অনুভব করতে শুরু করেছে সে। মা মেয়েকে ডিস্টার্ব না করাই উচিত হবে ভেবে নিয়ে আর কল করলো না মেহেরকে। আয়মানের থেকে খবর পেলো দিয়া বলেছে মেহের ঘুমাচ্ছে। হাতে থাকা বেলী ফুলের মালাটা খাটের ওপর ছুড়ে ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো রুদ্র। মেহের না থাকায় ঘরটা কেমন খালি খালি লাগছে ভেবে স্টাডি রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো আয়মানও ওই রুমে গালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে। রুদ্র গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসতেই আয়মান উদাসীন কণ্ঠে বললো,

বউ থাকলেও জ্বালা না থাকলেও জ্বালা। থাকলে মনে হয় এই মাইয়া এত কথা বলে কেমনে? আর না থাকলে মনে হয় কানের মধ্যে এত শান্তি সইছে না। দুদিকেই অশান্তি। আপনার বউ গেলো তো গেলো আমি কি দোষ করলাম? আমার বউরে নিয়ে কেনো গেলো?

রুদ্র হেসে উঠলো। আপাতত মেহেরকে যে খুব মিস করছে। কাল মেহেরের প্রেগনেন্সির খবর পাওয়ায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল রুদ্র। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছিল না। হটাৎ মাথা ব্যাথা হওয়ায় ওষুধ খেয়েছিল। যার ফলে জলদিই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে মিটিং থাকায় কথা হয়নি মেহেরের সাথে। আর সারাদিন ব্যস্ত থাকায় কল করতে গিয়েও করেনি। রাতে ফুল নিয়ে এসেছিল মেহেরকে সারপ্রাইজ দিতে। কিন্তু এসে যেনো সে নিজেই বেক্কল হয়ে গেলো। রুদ্র বললো,

ঘরে যাবি না আজকে?

~ঘরে বউ নাই। গিয়ে কি করবো? এই ঘরেই থাকি। আপনি যাবেন না ভাইয়া?

রুদ্র চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

তোর আর আমার দশা একই। দুজনই বউ পাগলা। এখন এদিকে বসে আজ বউ বাপের বাড়ি যাওয়ার দুঃখ পালন করি আয়।

~ড্রিঙ্কস আনবো?

~রুদ্রাণীর নেশায় পড়ার পর থেকে আর কোনো নেশা কাজে লাগে না। 

রুদ্রর কথা শুনে আয়মান হাসলো। সে নিজেও তো এমন নেশাতেই মত্ত। ভালোবাসা নামক অসুখে পড়েছে সে নিজেও।

~~~

চলবে~

(রিচেক করা হয়নি। বানান ভুল হলে অবশ্যই কমেন্ট এ জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)

0 Comments:

Post a Comment