#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 22
🍂🍂🍂
আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে সামনে রুদ্রকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই একদফা অবাক হয় মেহের। রুদ্র দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাড়িয়ে আছে। অবাকতার রেশ কাটিয়ে উঠতেই রুদ্রকে প্রশ্ন করে,
আপনি এখানে কি করছেন?
মেহেরের কথা কর্ণকুহর হতেই রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে তাকায়। রুদ্র পাল্টা প্রশ্ন করে,
মাথা ব্যাথা কমেছে?
~হুঁ
~তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি সার্ভেন্ট কে বলছি খাবার পাঠাতে। তোমার ঘুমের কারণে তো দুপুরে লাঞ্চ করা হয়নি।
মেহের মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুদ্র মাথা চেপে সোফায় বসে আছে। একজন সার্ভেন্ট ছোট টেবিলটায় খাবার সার্ভ করছে আর একজন তার সাথে দাড়িয়ে আছে। মেহেরকে দেখে রুদ্র তার পাশে বসতে ইশারা করলেই মেহের চুপচাপ যেয়ে রুদ্রর সাথে বসে। খাবার সার্ভ করার পর সার্ভেন্ট কে ইশারা করতেই তারা চলে যান। দুটো প্লেট এ খাবার দেখে মেহের জিজ্ঞেস করে,
আপনি দুপুরে লাঞ্চ করেননি?
~উহু
~কেনো?
~তোমার সাথে খেতে ইচ্ছে করছিল তাই।
মেহের এক তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে। খাওয়া শেষে একজন সার্ভেন্ট এসে সব নিয়ে যায়। মেহের গালে হাত দিয়ে চোখ পিটপিট করে তাদের দিকে চেয়ে তাদের কাজ দেখতে থাকে। ওদের যাওয়ার সময়ও মেহের হা করে ওদের দিকেই চেয়ে থাকে। সকলের চোখেই রুদ্রর জন্য ভয় দৃশ্যমান এতক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তাই বুঝলো মেহের।
~মেহেরজান!
শান্তকণ্ঠে ডেকে উঠে রুদ্র। রুদ্রর কণ্ঠ শুনতেই মেহের যেনো স্তব্দ হয়ে গেলো। রুদ্রর এভাবে ডেকে উঠলে কেমন যেনো এক মিশ্রঅনুভূতি হয় যা মেহেরের কাছে একদম নতুন। রুদ্র আবারো ডাক দিতেই মেহের লম্বা এক শ্বাস নিয়ে রুদ্রর দিকে ঘুরে বসে। মাটির দিকে কতক্ষন চেয়ে থেকে জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে রুদ্র এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। চোখ তুলে মেহেরের দিকে করুন চোখে চেয়ে বলে,
একটু জড়িয়ে ধরবে প্লীজ।
রুদ্রর এমন আবেদন শুনে মেহের এর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এই মুহূর্তে কি বলা উচিত ভেবে পায় না মেহের, শুধু ফ্যালফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে থাকে। মেহেরের উত্তরের অপেক্ষা না করেই রুদ্র পরম স্নেহে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে। মেহের বিপরীতে জড়িয়ে ধরে না, থম মেরে বসে থাকে। রুদ্রর বুকের ডিপডিপ শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে মেহের। খুব দ্রুত বেগে তার হার্ট বিট করছে। আচ্ছা রুদ্র কি কিছু নিয়ে চিন্তিত? কিংবা কোনো কারণে ভয় পাচ্ছে? অকারণে তো কারো হার্ট এত দ্রুত বিট করে না। হাজারো প্রশ্ন মেহেরের মনে উদয় হচ্ছে কিন্তু তা আর জিজ্ঞেস করার সাহস করে না মেহের। মেহেরকে ছেড়ে রুদ্র মেহেরের গাল আর গলার মাঝ বরাবর দু হাত রাখে। রুদ্রর চোখে পানি চিকচিক করছে তা স্পষ্ট দেখতে পায় মেহের। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। রুদ্র এক তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করে কাপা কাপা গলায় বলে,
আমি যতদিন বেঁচে আছি তোমার কিছু হতে দেবো না মেহেরজান। তুমি আমার প্রাণভোমরা, আমার মায়াবতী, #আমার_রুদ্রাণী। তোমাকে আমার থেকে আল্লাহ ব্যতীত কেউ দুর করতে পারবে না মেহেরজান।
এমন অনেক কথাই রুদ্র বলতে থাকে। বলতে বলতেই এক ফোঁটা পানি রুদ্রর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে। মেহের আজ অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে। রুদ্র কান্না করছে! ছেলে মানুষের কান্না কখনো দেখেছে বলে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না মেহেরের। ছেলেরা তো খুব সহজে কাদে না তবে কি এমন হয়েছে যার জন্য রুদ্র কান্না করছে? সে কি জিজ্ঞেস করবে? যদি বকা দেয়? দিলে দিবে কিন্তু তার এখন জানা খুব জরুরী যে কি এমন হয়েছে যার কারণে রুদ্র কান্না করছে। মেহের কাপা কাপা হাতে রুদ্রর চোখের পানি মুছে দিতেই রুদ্র চোখ বন্ধ করে তার মেহেরজানের ছোঁয়া অনুভব করে। চোখ খুলে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের প্রশ্ন করে,
আপনি কাদছেন কেনো? কিছু কি হয়েছে?
রুদ্র উত্তরে শুধু এতটুকুই বলে,
বিয়ের পর সব প্রশ্নের জবাব দিবে।
মেহেরকে কপাল কুঁচকে চেয়ে থাকতে দেখে রুদ্র আলতো হেসে মেহেরের নাক টেনে বলে,
~পিচ্চি একটা।
~আমি মোটেও পিচ্চি না।
~আমার জন্য তুমি পিচ্চি ই।
বলে আবারো গা দুলিয়ে হাসে রুদ্র।
~হুঁ? লোকটাকে কি জ্বিনে টিনে ধরলো নাকি! একটু আগে কান্না করছিল এখন আবার হিহি করে হাসছে! শেষ মেষ মা আমাকে এই জ্বীনে ভর করে ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে না তো। আয়হায়! এখন আমার কি হবে।
মাটিতে পায়ের নখ ঘষতে ঘষতে ভাবতে থাকে মেহের। রুদ্র মেহেরের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে,
উদ্ভট চিন্তা মাথা থেকে নামাও। আমাকে কোনো জ্বীনে ধরেনি। পিচ্চি একটা।
মেহের আবারো অবাক হয়ে তাকায়। কি করে বুঝলো যে ও কি ভাবছে। মেহেরের দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলে,
একটু পর পার্লার থেকে মানুষ আসবে তোমাকে রেডী করতে। ততক্ষণে তুমি রেস্ট নাও।
বলেই মেহেরের মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রুদ্র। রুদ্র যেতেই দিয়া, আহিল, কাব্য আর স্নেহা ঘরে আসে। ওরা এসে মেহেরের কাছে আজকে ওরা সারাদিনে কি কি করেছে, মেহের ঘুমিয়ে থাকার কারণে কি কি মিস করেছে সব বলতে শুরু করলে মেহেরও গালে হাত দিয়ে মনোযোগী শ্রোতার মত সব শুনতে থাকে।
🍂🍂🍂
ছাদে একজন গার্ড এসে রুদ্রকে কিছু একটা বলতেই রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
অনুষ্ঠান এর পর আমি আসবো। তত পর্যন্ত ওকে আটকে রাখবে। কিছুতেই যেনো পালাতে না পারে। বি কেয়ারফুল।
~জ্বি স্যার।
রুদ্র ইশারা করতেই গার্ডটি চলে যায়। রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে আবারো আকাশের দিকে চোখ নিবদ্ধ করে। বিড়বিড় করে বলে,
আমার রুদ্রানির দিকে যেই হাত বাড়াবে তার অস্তিত্ব এই পৃথিবী থেকে বিলীন করে দিবো আমি। অনেক সাধনার পর আমার রুদ্রানিকে আমার করে পাচ্ছি আমি। আর হারাতে দিবো না ওকে।
~~~
চলবে~
0 Comments:
Post a Comment