গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৮

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 38


🍂🍂🍂


মিটিং শেষে কেবিনে ফিরেই চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো রুদ্র। হাতে থাকা ফোনটি বেজে উঠতেই তাতে "রুদ্রাণী" নামটি জ্বলজ্বল করতে দেখেই মুচকি হাসলো রুদ্র। বিড়বিড় করে বললো,

আমার মানসিক শান্তি।

দ্রুত রিসিভ করে কানে রাখতেই মেহেরের আর্তনাদ শুনে চমকে উঠলো রুদ্র। মেহের চিল্লিয়ে বললো,

রুদ্র! আপনি শুনতে পাচ্ছেন? প্লীজ জলদি আসুন।

~আমি আসছি মেহেরজান। তুমি একটু wait করো প্লীজ।

ফোন রেখে রুদ্র চিৎকার করে আয়মানকে ডাকতেই সে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই কেবিনে চলে এলো। রুদ্র আয়মানের কাছে দৌড়ে এসে বললো,

জলদি গাড়ি বের কর মান। হাসপাতালে যেতে হবে আমাদের।

________________________________


হাসপাতালে পৌঁছে মেহেরের সামনে যেতেই মেহের রুদ্রর হাত ধরে কাদতে কাদতে বললো,

ক্লাস শেষে গাড়ির কাছে আসছিলাম আমরা। হটাৎ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ওর কিছু হবে না তো রুদ্র?

রুদ্র মেহেরকে জড়িয়ে ধরে বললো,

কাদে না মেহেরজান। কিছু হয়নি বউমনির। সুস্থ হয়ে যাবে সে। আমি... ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসছি।

মেহের মাথা নেড়ে সায় দিতেই রুদ্র ডক্টর এর কেবিনে চলে যায়। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে ধপ করে মেহেরের পাশের চেয়ারে বসে। মাথার চুল দুহাতে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

~ভাইয়াকে বলেছো?

মেহের মাথা না বোধকে নেড়ে নাক টানতে টানতে বলে,

বলিনি। আমি আর দিয়া খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনাকেই বলেছি শুধু।

রুদ্র মুচকি হেসে মেহেরের গাল টেনে বলে,

ওরে আমার কিউট বউ রে!

মেহের ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রুদ্র ঠোঁটের হাসি চওড়া করে বলে,

কংগ্রেচুলেশনস! তুমি চাচী হতে চলেছো।

~মানে? (আয়মান)

~মানে তুই ছোট চাচা হতে চলেছিস আর আমি বড় চাচা। (রুদ্র)

~স্নেহা প্রেগনেন্ট? (দিয়া)

রুদ্র দ্রুত মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মেহের লাফ দিয়ে দাড়িয়ে বলে,

সত্যি বলছেন রুদ্র?

~সত্যি মেহেরজান।

মেহের আর দিয়া একে অপরকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে লাফাতে বললো,

দোস্ত!!! আমরা খালা হতে চলেছি!!! ইয়াহু!!!

~খালা মানে? কিসের খালা? চাচী হবে তুমি। (আয়মান)

~চাচী কেনো হবো? স্নেহা আমার বোন। আমি খালামণি আর তুমি খালু হবে। (দিয়া)

~হোয়াট রাবিশ! (আয়মান)

~আরে রাখেন আপনার রাবিশ খবিশ। রুদ্র! কংগ্রেচুলেশনস! আপনিও খালু হচ্ছেন। (মেহের)

~মোটেও না। আমি চাচা আর তুমি চাচী হবে। (রুদ্র)

~ইহ! আপনি বললেই হলো? (মেহের)

~অবশ্যই (রুদ্র)

~তোদের ঝগড়া রাখ! আমার বউ কই?

তীব্রর কথায় সকলে তার দিকে তাকালো। রুদ্র আর আয়মান দৌড়ে গিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে বললো,

তুমি বাবা হচ্ছো ভাইয়া!!! কংগ্রেচুলেশনস!

তীব্র বিস্তর হেসে বললো,

তোদেরও কংগ্রেচুলেশনস। কিন্তু আমার বউ কই?

রুদ্র হেসে বললো,

তোমার বউ কেবিনে। ঠিক আছে উনি। ডক্টর বলেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।

~আচ্ছা তোরা আয় তবে। আমি ওর কাছে যাচ্ছি।


🍂🍂🍂


রাতে ঘরে ফিরতেই মেহের দেখলো রুদ্র চুপ করে জানালার বাইরের দিকে চেয়ে বসে আছে। মেহের গিয়ে রুদ্রর সামনে বসলো। গালে হাত ঠেকিয়ে রুদ্রর দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালো।

~আপনি কি কোনো ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত?

রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে আলতো হাসলো। মেহেরের কাছে আরেকটু এগিয়ে বসে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। মেহেরের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো,

ভালোবাসি রুদ্রাণী।

মেহের চোখ নামিয়ে নিলো। মুহূর্তেই গালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো। রুদ্রর মেহেরের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। 

~একটা জিনিস চাইলে দিবে?

মেহের চোখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকালো। রুদ্রর চোখের চাহনী আজ বেশ অদ্ভুত লাগলো মেহেরের কাছে। মাথা নেড়ে হ্যা বুঝাতেই রুদ্র আলতো হাসলো।

~বউমনি যেমন ভাইয়াকে বাবু এনে দিচ্ছে তেমনি আমারও তোমার কাছ থেকে একটা ছোট্ট বাবু চাই। এনে দিবে? 

মেহের অবাক হয়ে রুদ্রর দিকে তাকালো। গাল, কান দিয়ে যেনো ধোয়া বের হচ্ছে। মেহেরের লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে রুদ্র নিঃশব্দে হাসলো।

__________________________________


~ঘুম কেমন হলো দোস্ত?

দিয়ার প্রশ্নে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো মেহের।

~মানে? (মেহের)

~লাভ বাইট দেখা যাচ্ছে।

আপেলে এক কামড় দিয়ে বললো স্নেহা। মেহের শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করতে লাগলো। দিয়া বাকা হেসে বললো,

আমি আবারও শীঘ্রই আরেকবার খালা হওয়ার সুখবর পাবো মনে হচ্ছে।

~আমারও তাই মনে হচ্ছে।

দিয়া আর স্নেহার কথায় মেহের লজ্জায় গুটিয়ে গেলো। সে পারলে এখন কোনো এক কোনায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। স্নেহার আর দিয়ার কথায় লজ্জায় আটখানা হয়ে ঘরের দিকে দৌড় লাগালো মেহের।

~~~

চলবে~


(দেরি করানোর জন্য দুঃখিত। আজ রাতেই আরেকটা বোনাস পার্ট দিবো। হ্যাপি রিডিং~)

0 Comments:

Post a Comment