গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ১৯

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখনী: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব: ১৯


কত কথা বলা হলো না প্রিয়

কত সূর্যমুখীর মন ভার,

আমার শহর জুড়ে কুয়াশা ঘুম

নীরবে জমা ব্যথার পাহাড়। 

ভুলে যাওয়া গানের কলির মতো সময়

ফিরে ফিরে আসে শিশির ভেজা ঘাসে,

ভুলে যাওয়া গানের কলির মতো সময়

ফিরে ফিরে আসে শিশির ভেজা ঘাসে,

ছায়াপথ হেঁটে রোজ একা বাড়ি ফিরি

জোনাকিরা আমায় ভালোবাসে।

কত পথ হাঁটা বাকি রয়েছে প্রিয়

কত সন্ধ্যের পথ অন্ধকার,

হেঁটে চলি আজ সে পথ ধরে

যে পথ আমার একার।


-আপনি এতো সিরিয়াস সময়ে গান গাচ্ছেন? আপনার তো হাসপাতালের বেড এ রেস্ট নিতে হতো।আপনার জন্য আমি কতো চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম।


মেহরাব ব্রু কুচকে তাকায় তাহিয়ানার দিকে।কিছুটা অবজ্ঞা মিশ্রিত স্বরে বলে

- মিস তাহিয়ানা আপনার কি মনে হয় না আপনি একটু বেশি চিন্তা করছেন?এটা জাস্ট একটা প্যানিক এ্যার্টাক আর কিছু না।আর হ্যা আমি আপনার ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান তো নিজের জায়গা থেকে কথা বলবেন।এখন আপনি আসতে পারেন বিনা করনে আমার রুমে আপনাকে দ্বিতীয় বার যেনো না দেখি।

তাহিয়ানা আপমান টা গায়ে মাখলো না কিন্তু তার মনে ভীষন আঘাত করেছে।অবশ্য পছন্দের মানুষের কড়া কথা সকলেরই হৃদপিন্ডে দহনের সৃষ্টি করে।

তাহিয়ানা হতাশ হয় তবু ও গলায় তেজ রেখে বলে


- আপনি ডিন তো কি হয়েছে? সবার আগে আপনি মানুষ, আমি আপনাকে সাহায্য করেছি তাহলে আপনার স্বাস্থের খবর নেওয়া আমার দায়িত্ব আর হ্যা আমি গায়ে পড়া মেয়ে না।


মেহরাব আবার ও কড়া গলায় বলে

- গায়ে পড়া মেয়ে যখন না তখন এই রুমে এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো? রাত বাড়ছে নিজের রুমে যাও।

তাহিয়ানার এবার ভীষন কান্না পায় সে তবু ও চোখ মুখ শক্ত রেখে বেরিয়ে চলে যায়।বাইরে এসে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরুজা আটকে কান্না করতে থাকে।তাকে কখনো তার বাবা-মা ভাইয়েরা একটু উচু আওয়াজে কথা পর্যন্ত শুনাইনি সেখানে মেহরাব তার সাথে এমন জঘন্য আলাপ করলো?সে কি সস্তা নাকি যে, যে কেউ তাকে কথা শুনাতে পারে।কান্নার বেগ বাড়তে থাকে। এমন সময় তাহিয়ানার দরজায় নক করে কেউ সে চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে দরজা খোলে।

দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছে মেহরাব কিন্তু একটু আগে ও উনার মুখে দাড়ি ছিলো এখন নেই কেনো? ব্যাপার টা ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাহিয়ানার এর।


- উহুম উহুম...আমি সোহরাব, মেহরাব এর ছোট ভাই।আসলে ৫ মিনিট এর ছোট(কথাটা বলে একটা বেক্কাল মার্কা হাসি দেয়)।

তাহিয়ানা চোখ ছোট ছোট করে দেখতে থাকে তাকে।সোহরাব এবার মুচকি হেসে বলে 


- আসলে আমরা টুইন, জমজ।

তাহিয়ানা আবাক হয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকে সোহরাব এর দিকে।সোহরাব তার তাকানো দেখে বলে


- আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি কি ভেতরে আসতে পারি?

 তাহিয়ানা হ্যা না কোন উত্তরই দিতে পারছেনা তার মাথা টা কেমন ঘুরছে।হঠাৎ তাহিয়ানাকে ঢলে পড়তে দেখে সোহরাব তাকে যত্ন করে আগলে নেয়।এরপর তাকে তার রুমের বেড এ শুইয়ে দিয়ে ডাকতে থাকে তার শাড়া না পেলে টি-টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে পানির ছিটে দেয় চোখে মুখে।পানি চোখে মুখে পড়তেই তাহিয়ানার হুস আসে।সে এবার ও চোখের সামনে সোহরাব কে দেখে ভড়কে যায়।সোহরাব তাকে শান্ত করে।এরপর তাকে সবটা বুঝিয়ে বলে আর এ ও বলে তাকে দর্পনে ছায়া টিমে যুক্ত হওয়ার জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে সে কি রাজি? তাহিয়ানা পুরো বিষয় টা জানতে পেরে বেশ হকচকিয়ে যায়।সে এই ব্যাপারে ভাবতে সময় চায়।


আজকে প্রায় অনেকদিন পর তনিমা অনিমা সোমেহরা সোহরাব আর মেহরাব এক জায়গা হয়েছে।এতো গুলো বছরে তারা কাজের সময় ছাড়া হয়তো খুব একটা এক জায়গায় হয়নি।তারা এর মধ্যে প্রায় আরো পঞ্চশটির বেশি কেস সমাধান করেছে।সর্বমোট তাদের কেস সংখ্যা এখন যটি ইনভেস্টিগেশন করবে সেটি নিয়ে বায়ান্ন টি।তনিমা সহ সকলে খোস হল্প করছিলো।মেহরাব তখন দৃঢ় কন্ঠে কেস টা সম্পর্কে জানতে চায়।অনিমা বলে কেস টার সব টা জানাতে একটু পর হাসপাতালে দুজন ডক্টার আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে।মেহরাব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯টা ৪৫।অর্থাৎ ১০ টায় আসবে।আবার ও সকলে খোস গল্প করতে শুরু করে।মেহরাব বরাবরের মত চুপচাপ ফোন টিপছে।


অন্যদিকে কাফি আর আলোরা দুজনে গাড়িতে বসে আছে এখান থেকে প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন টিম যে বাসায় উঠেছে সেখানে যেতে হেটে গেলে ১০ মিনিট লাগে আর গাড়িতে গেলে ৫ মিনিট লাগে।আলোরা ভীষন নার্ভাস লাগছে এতো গুলো বছর পর আবারো সেই মানুষ টা,তার কন্ঠস্বর, তার গায়ের সুবাস, তার সাক্ষাৎ নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে আলোরার।কাফি বার বার আলোরাকে পরখ করছে মেয়েটা শান্ত স্বভাবের কিন্তু তার মানে এই না যে সে নিশ্চুপ।তাহলে হঠাৎ এমন আমুল পরিবর্তন কেনো এই মেয়ের।কাফি কিছু জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে ও তা করে না পাছে আলোরা যদি রেগে যায়।গাড়ি থেকে নেমে তারা লিফ্টের ১০ তলায় চাপ দেয়।৫ মিনিট পর তারা ১০ তলার ১২৩০ নম্বর রুমের সামনে এসে পড়ে।রুমের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে কে একজন এসে দরজা খুলে দেয়।আলোরাকে দেখে বিষ্ময় নিয়ে 


মেহরাব বলে


-আলু....


মেহরাবের  আবেগ সব কিছু কে ছাপিয়ে যায় তার ছোট্ট কলিজাটা এতো দিতে শীতলতা পায় সকলকে উপেক্ষা করে সে আলোরাকে জড়িয়ে ধরে।ছোট্ট আলোরার চিকন দেহ খানা মেহরাব এর সুঠাম দেহের মাঝে বিলিন হওয়াই যেন বাকি।মেহরাব কাদে না তবে আলোরা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,হাও মাও করে কাঁদছে কত দিনের হাহাকার সে নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিলো সে নিজে ও জানে না।মেহরাব কে জাপটে ধরে এভাবে কাঁদতে দেখে কাফি অবাক হয় সাথে আলোরার উপর তার অদৃশ্য রাগ হয়। হঠাৎ  মেহরাব নিজের থেকে আলোরাকে ছাড়িয়ে কষে তার গালে দুটো থাপ্পাড় দেয়।থাপ্পড় এর ঘটনায় সকলে বোকা হয়ে যায় এমন টা তারা আশা করেনি।আলোরার কান্না তখনো থামেনি তবে এবারের কান্নায় আর জোর নেই আছে নিরবতা।আলোরার কান্না কিছুটা থামলে সোমেহরা তাকে এক গ্লাস পানি দেয় খেতে।আলোরা পানিটা ঢক ঢক করে গিলে খায়।এরপর চোখ মুছে কিন্তু ফাপাতে থাকে।মেহরাব তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে এনে আলোরাকে কঠিন কন্ঠে প্রশ্ন করে 


- আমি কোন বাহানা শুনতে চায় না সব টা সত্য শুনতে চায়।কেন? কিভাবে? কিসের জন্য?সবটা বলতে হবে।


- আলোরা নিষ্পলক চায় সকলের দিকে তাকে খুজে পাওয়া মুখ গুলো একদিকে যেমন আনন্দে ভাসছে তেমন অন্যদিকে অভিমান আর কৌতুহলে কোন ঠাসা হয়ে পড়ছে।এতক্ষনের কথা বার্তা কিছুই কাফির বোধগম্য হচ্ছে না।সে কথার মধ্যে কথা বলে ওঠে।


- আপনি কি আলু আলু শুরু করেছেন? ওনার নাম আলোরা।ডা.আলোরা শিকদার। তিনি আপনাদের হায়ার কথা এই হাসপাতাল এর একজন বিশিষ্টা হার্ট সার্জন।আর এভাবে মিস বিহেব করছেন কেনো ওনার সাথে? হাত ছেড়ে কথা বলেন ওনার।ওনি ওনাকে কেউ স্পর্শ করুক পছন্দ করে না।

মেহরাব একবার বাকা চোখে কাফিকে পরখ করে নেয়।ছেলেটা বড্ড বেশি কথা বলে।আলোরা কাফির দিকে তাকিয়ে বলে


- এরা আমার ভাই-বোন।আমার কলিজা আর উনি...

কাফি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে 


-তোমার বড় ভাই?তাই তো?

আলোরা একবার তাকায় কাফির দিকে আর একবার মেহরাব এর দিকে।

তখন পেছনের ওয়াসরুম থেকে গান গাইতে গাইতে সোহরাব বের হলে কাফি দুটো মেহরাবকে দেখে তব্ধা খেয়ে হুস হারায়।মেহরাব মনে মনে বলে


-আপদ একটা।


চলবে

0 Comments:

Post a Comment