গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখিকা: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব: ৪
রাত পেরিয়ে সূর্যি মামা উকি দিচ্ছে আকাশের বুকে।আলোরা নামাজ পড়ে হাটতে বের হয়েছিলো বাগানে। ফিরে এসে ডাইনিং রুমে হট্টোগোলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে যায় সেদিকে।বাড়ির মোটামুটি সকলে সেখানে উপস্থিত কিন্তু জটলা টা পেকেছে কেনো তা জানতে এগিয়ে গেলে সে দেখতে পায় মানকি টুপি পরে বসে আছে ডাইনিং টেবিলে মেহরাব। আর সোহবার ভাই হেসেই লুটপুটি খাচ্ছে সে একটা নয় বাকিরা ও।আর ফুফু মামনি সহ বাকিরা কৌতুহলের নজরে তার কাছে কিছু একটা জানার চেষ্টা করছে।সকলের সামনে এভাবে মানকি টুপি পরে মেহরাব ভাইকে দেখতে পেয়ে আলোরার ও হাসি পাচ্ছে।কিন্তু সে হাসতে পারবে না। তাই সে জোর পায়ে রুমের দিকে হাটা দিলো এমনিতে ও সে কাল রাতের পর আর মেহরাব ভাইয়ের সামনে পড়তে চায় না। কিন্তু জানার বিষয় হচ্ছে এই ভ্যাপসা গরমে সে কেনো মানকি টুপি পরেছে।দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে আলোরা।বিষয়টা বুঝতে পেরে ভীষন হাসি পায় তার।সে কামড় দেওয়ার ফলে যেমন তার ঠোটে মেহরাবের রক্ত লেগে গিয়েছিলো ঠিক তেমনি তার দাঁতের ধারে যে ক্ষতোর চিহ্ন হয়েছে তা ঢাকতেই মেহরাব এর এই প্রচেষ্টা।বিষয় টা ভীষন হাসির কিছুক্ষন বিছানায় গড়িয়ে গড়িয়ে হেসে নেয় সে।এরপর উঠে বসে আয়নায় নজর পড়ে তার নিজের প্রতিবিম্ব দেখতেই তার কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।পুনরায় অসস্তি আর লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে সে।
আলোরার গাল দুটো টুকটুকে লাল হয়ে ওঠে লজ্জায়।
সে মেহরাব ভাই এর এতো কাছে গিয়েছিলো।মানুষটার বাহুতে হাত রেখেছিলো।তার চোয়ালে দাঁত দিয়ে দংশন করেছিলো।মেহরাব ভাই বাম হাতে তার কোমড় আকড়ে ধরেছিলো। ইস্! এই লজ্জা নিয়ে সে কিভাবে দ্বিতীয় বার তার সামনে যাবে।কাল সারারাত এই সব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে পারেনি।আর এখন আবার।ছি ছি এসব ভাবা ও পাপ জঘন্য পাপ।হায় আল্লাহ আমায় মাফ করো।
তার এমন গড়াগড়ি দেখে ওয়াসরুম থেকে মাথা বের করে দাড়িয়ে থাকা তনিমা ব্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।এরপর বলে
- পেট গুড় গুড় করছে? টয়লেট যাবি?
হঠাৎ নিজের রুমে কারো গলার আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে আলোরা।দরজা তো বন্ধ কথা বলল কে?
তনিমা বলে
-এই এদিকে তাকা আমি। আমার ওয়াসরুমের গিজারে কাজ করছিলো না তাই তোর রুমে এসেছিলাম।গোসল শেষ এ বেরিয়ে দেখি তুই এভাবে মাছের মতো খাবি খাচ্ছিস।কি হয়েছে?
তনিমাকে দেখে একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে আলোরা আরে না তেমন কিছু না এমনিতেই।তনিমা আবার ও ব্রু কুচকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সন্ধ্যা বেলায় সকলে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হেমলপুর( ছদ্মনাম) গ্রামের উদ্দ্যেশে। মেহরাব তাদের সাথে যায় নি সে যাবে পরে।সকলের রওনা দিতে বিকাল গড়িয়ে যায়।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে শহর পেরিয়ে এসেছে আরো বহু আগে খুলনার রুপসা ব্রীজ পার হয়ে গাড়ি চলতে শুরু করে আরো বহু দুর।একের পর এক বাস স্টপেজ ছাড়িয়ে গাড়ি টোটোন জুট মিলের সামনে এসে দাড়ায় তারপর সেখান থেকে সরু রাস্তা বেয়ে পাঁচ মিনিট চলার পর এসে পড়ে হেমপুর ঘাটে এই ঘাট পেরলেই সেই কাঙ্ক্ষিত গ্রাম। ঘাটে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি পার করার জন্য এদিক ওদিক ফেরি খুজতে থাকে সোহরাব কিন্তু সে ব্যার্থ,একটা চিতল মাছের মতো নৌকা ছাড়া কিছুই নজরে এলো না তার।সে ঘাটের নৌকা পারাপারের টাকা নেওয়া লোকটাকে প্রশ্ন করে নৌকা কিভাবে পার করবো? লোকটা নৌকার দিকে ইশারা করে বলে ঐটা দিয়েই পার হয়ে যেতে হবে।সোহরাব একবার গাড়ির দিকে আর একবার নৌকার দিকে তাকায় আর মনে মনে দোয়া পড়া শুরু করে।এদিকে সন্ধ্যা প্রায় হবে হবে
৬টার পর আর নৌকা পারাপার হয় না এইঘাটে।তাই শেষ বারের বার তারা পার হলো এরপর নৌকা বন্ধ হয়ে গেলো।সকলে নদি পার হয়ে হেমল পুর বাজারের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সরু মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলল গাড়ি নিয়ে।তারা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো তখন হঠাৎ তারা দেখতে পেলো তাদের গাড়ির পাশ দিয়ে সাইকেল নিয়ে সাঁই সাঁই বেগে কে চলে যাচ্ছে।এখন কথা হলো সাইকেল কিভাবে গাড়ির আগে যেতে পারে?তনিমা চাইলো এবার জানালার কাচ টা নামিয়ে দেখতে কিন্তু সোমেহরা তাকে বাধা দিলো।তার ব্যাপার টা অতি প্রাকৃত মনে হচ্ছে। এসব জিনিস তাদের মনোযোগ আর্কষন করতে চাচ্ছে হয়তো।তাতে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।
সোহরাব- আমারা রাহিলা বেগম কে দাদী নামেই ডাকবো এখন থেকে কারণ তিনি যথেষ্ট বৃদ্ধ এবং সম্মান পাবার মতোই একজন ব্যাক্তি।
তনিমা- ঠিকই বলেছ ভাই।
অনিমা- আমরা কি সোজা ওনার বাসায় যাবো?
আলোরা- না আমরা যাবো এই গ্রামের পুরনো জমিদার বাড়িতে। বিলিপ্ত ভগ্ন এই জমিদার বাড়ি আপাতত এই গ্রামের অতিথীশালা।আমরা যেহেতু গ্রাম ঘুরে দেখার উদ্দ্যেশে এসেছি সেহেতু এই জায়গাই থাকতে হবে।এতে আমাদের ভালো ও হবে কেউ ইনভেস্টিগেশন এ বাধা দিতে পারবে না।
অনিমা:এই ব্যাপারটা ঠিক বলেছ।আচ্ছা আর কতো দুর সেই জমিদার বাড়ি?
সোহরাব- এই তো প্রায় এসেই পড়েছি।
তাদের কথার মাঝেই গাড়িতে ধুপ করে একটা আওয়াজ হয় গাড়িটা দ্রুত বেগে চলছিলো হঠাৎই ধীর গতিতে চলতে শুরু করে। সোহরাব খানিকটা ভড়কে যায়।ভয় তার হচ্ছে না কারণ এর আগে ও বহুবার এমন ঘটনার শিকার সে হয়েছে।এটা নতুন কিছু নয় তবু ও সে একবার দেখতে চায় কি এমন জিনিস তার গাড়ির ছাদে এসে পড়লো।সেমেহরা তাকে বাধা দেয়।সে বুঝতে পারে এই কৌতুহল ও অতি প্রাকৃত কোন ইংগিত বা ইশারা।এরপর অনিমা সহ সকলে অন্যান্য বারের মতো একসাথে জোরে আয়তুল কুরসি পড়া শুরু করে।মিনিট পেরতেই গাড়ি স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু করে।
আয়তুল কুরসি পড়া শেষ হলে তারা নিজেদের শরির বন্ধ দিয়ে নেয়।এরপর আবার ও নিজেদের মধ্যে আলাপ চারিতা হতে থাকে আর গাড়ি চলতে থাকে।মাটির রাস্তা, বিলের রাস্তা,বেরিয়ে এখন গাড়ি গিয়ে উঠেছে ঘন জঙ্গলের রাস্তায় এই রাস্তার মাঝ পথেই সেই জমিদার বাড়ি।জি পি এস অবশ্য তাই দেখাচ্ছে।
চলবে
0 Comments:
Post a Comment