গল্প: বাধন হারা বেনী
লেখনী: সানজিদা আহমেদ শাহারা
পর্ব: ১৮
-তুমি থ্রি ইডিয়েট মুভিটা দেখেছো কাফি?
- না আমি কখনো বলিউডের মুভি দেখিনি।
- তোমার মুভি টা দেখা উচিত ছিলো।
- বলিউডের মুভিতে এমন কি বিশেষত্ব আছে? যা আমার দেখা উচিত ছিলো।
- ওখানে প্রধান চরিত্র যে ছিলো সে কোন বিপদে পড়লে বুকে হাত দিয়ে চাপড় দিতো আর বলতো অল ইজ ওয়েল।তখন তার কথা বিশ্বাস করে ভাবতাম আসলেই তা বললে জীবন সহজ হয়ে যাবে।কিন্তু আসলে সত্যি টা কি জানো?
- কি?
- সত্যিটা এই যে বোকা হতে হতে মন ও চালাক হয়ে গিয়েছিলো,তাই সে সব ভালো, না বুঝিয়ে আমাদের বোঝাতে লাগলো সব ঠিক আছে।আর একদিন উপলব্ধি করলাম কিছুই আসলে কখনো ঠিক ছিলোই না।শুধু ভেবে গেছি ঠিক আছে।
- তাহলে এখানে শিখার কি আছে।
- না দেখলে তুমি বুঝবে না আসলে শিখার কি আছে সেই মুভিতে।
- আমি আজকেই দেখার ট্রাই করবো।
- গুড লাক।
- তুমি কি জানো কেনো চেয়ারম্যান স্যার আমাদের ডেকেছেন?
- না সঠিক কিছুই বলল না তো কেউ।
- আসো গিয়ে দেখি কি হয়।
আলোরা ও কাফি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ এর সামনে দাড়িয়ে আছে।তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন।গত দুই বছর যাবৎ চেষ্টা করার পর বাংলাদেশের একটি প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন টিমকে রাজি করাতে পেরেছি আমাদের হাসপাতাল আসার জন্য।তারা রাজি হয়েছে আমি চায় তোমরা তাদের সব দিক থেকে সাহায্য করো তবে হাসপাতালের রেপুটেশন বজায় রাখতে তাদের কর্মকান্ড যাতে প্রকাশ্যে না আসে সেদিকে একটু খেয়াল রাখবে।আশা করি তোমরা আমাকে হতাশ করবে না।
- টিম এর নাম?
- কিছু একটা তো বলেছিলো,উম আসলে খেলাল আসছে না ওভাবে। ও হ্যা মনে পরেছে।
- কি নাম স্যার
- shadow of mirror.
- দর্পনে ছায়া।
- হ্যা।
আলোরার শরিরের প্রতিটা পরদ কেঁপে ওঠে।সে ভুল শুনেছে।না ভুল সে শোনেনি।তবে কি শেষ রক্ষা আর হবে না?আলোরা চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখে।
এরপর যখন তার চোখ খোলে সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলো।সেলাইন চলছিলো পাশে তার হাতে হাত রেখে কাফি বসে রয়েছে।তার হুস ফিরতে দেখে কিছু টা সস্তি পায় কাফি।তুমি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আলোরা।
আলোরা উঠে বসতে চায়লে কাফি তাকে সাহায্য করতে চায় আলোরা তাকে ইশারায় না করে দেয়।জাপানে আশার দিন গুলো আলোরার জন্য সহজ ছিলে না।স্কলারশিপ এ আসলে ও তার প্রয়োজন ছিলো অনেক টাকার।সে শুরুর দিকে দিন গুলো ভীষন কষ্টে কাটায়।এরপর একটা লিপলেট দেখে যায় একটি রেস্টুরেন্ট এ।এরপর সেখানে কাজ করতে থাকে সেই রেস্টুরেন্ট এ গান গাইতো কাফি তার মা জাপানিস হলে ও বাবা ছিলেন খাটি বাঙালি। এরপর বাংলাদেশি হওয়ার সুবাদে তাদপর মধ্যে সখ্যতা হয়।তারা জানতে পারে তারা এক মেডিকেল এ পড়াশুনা করছে।তারপর থেকে টানা প্রায় সাত বছর আলোরার সাথেই আছে কাফি।বন্ধু হিসাবে তাদের সম্পর্ক ভীষন ভালো তবে যত ভালো বন্ধুত্বই হোক না কেনো তা বন্ধুত্বর বাইরে এক পা আগাতে দেয়নি আলোরা।কাফির আচরনে বোঝা যায় এক আকাশ সমান অপেক্ষা নিয়ে আলোরার সাথে পথ চলার আশায় বসে আছে সে।কিন্তু প্রতিবারেই আলোরা তাকে উপেক্ষা করে।
- এখন কেমন লাগছে?
- ভালো লাগছে।
- তখন কি হয়েছিলো,দেখলাম তুমি ভীষন নার্ভাস ফিল করছিলে।
- কিছু না।
- কিছু একটা ছিলো খুলে বলো আমাকে।
- তোমার জানার মতো তেমন আগ্রহ সূচক কোন বিষয় না কাফি।
কাফি পুনরায় হতাশ হয় কিন্তু আশা ছাড়ে না।আলোরা উঠে দাড়ায় নিজের কাপড় ঠিক করে হাটা ধরে। কেবিনে যেতে হবে।কাফি তার পিছু পিছু যায়।আলোরা ভাবে কিভাবে সে সবাইকে ফেস করবে? এতো বছর পর? সবার সাথে দেখা হবে তারা এখন কেমন আছে সকলে? আর মেহরাব ভাই! সে কি তার আলু কে মনে রেখেছে?হয়তো, হয়তো বা না।
অন্যদিকে মেহরাব সহ বাকি স্টুডেন্টরা সব গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সকলে এয়ারর্পোটে দেখা করবে।তাদের সাথে তাদের ফ্যামেলি মেমবাররা ও এসেছে।মেহরাব এর সাথে আরো দুজন প্রফেসার এসেছেন।সকলের থেকে বিদায় নিয়ে প্লেন যাত্রা শুরু করে তারা।প্লেনের শিড়ি দিয়ে উঠে ভেতরে প্রবেশ করতেই মেহরাব এর মাথা ঘুরতে থাকে।তার ভীষণ শরির দুর্বল লাগছে।আর কানের কাছে হাজারো সাপের ফস ফস শব্দ ভেসে আসতে থাকে।সে তার জায়গায় ব্যাগ টা রেখে ওয়াসরুমের দিকে আগায়।হাতে মুখে বার বার পানি দিতে থাকে।তার প্যানিক এ্যাটাক শুরু হবে এমন সময় তাহিয়ানা আসে তার কাছে অসুস্থা অনুভব করায় কোন ভাবে সে দরজাটা ভালো করে আটক দিতে পারেনি ওয়াসরুমের।এজন্য তাহিয়ানা আসে, সে মেহরাবকে এ অবস্থায় দেখে চমকে ওঠে।ভয় পায় এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত বুলায় তার চোখ মুখ পানি দিয়ে মুছিয়ে দেয় আর তার হাত শক্ত করে ধরে বসে থাকে অনেক্ষন।বেশ অনেক সময় পর মেহরাব এর শরিরে শক্তি আসতে শুরু করে।সে আস্তে আস্তে উঠে বসে।এরপর নিজের শরিরটা তাহিয়ানার কোলে দেখতে পেয়ে ছিটকে সরে আসে আর সরি ও ধন্যবাদ বলে নিজের ছিটে গিয়ে বসে।তহিয়ানা মনে মনে চিন্তিত হয়ে পড়ে মেহরাব এর কি হয়েছে হঠাৎ এমন হলো কেনো? আজ সে না থাকলে কি হতো।আবার সে এতো কাছাকাছও গিয়েছিলো মেহরাব এর ভাবতেই খুশিতে সে নেচে ওঠে।তার গালে লজ্জারা এসে ভর করে।
চলবে...
0 Comments:
Post a Comment