গল্প: বাধন হারা বেনী পর্ব ১৭

 গল্প: বাধন হারা বেনী

লেখনী: সানজিদা আহমেদ শাহারা

পর্ব: ১৭


- শব্দ ভান্ডারে কি শব্দরা নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে নাকি হারিয়ে যাচ্ছে? নাকি শব্দের সাথে শব্দের জোড়া লাগাতে ভুলে যাচ্ছেন সেই বেপার টা আমি বুঝতে পারছি না মিস তাহিয়ানা।


- আসলে,মানে,হয়েছে কি...


- অযথা বাক্য অপচয় না করে সমস্যা খুলে বলুন।


-নাহ কিছু না( আপনার সামনে এলেই তো শব্দরা আমাকে ধোকা দিয়ে বনে পালায়)।


- তাহলে আপনি যেতে পারবেন না তাই তো?


- না না আমি যাবো। শুধু আমার বাসায় বলে দিতে হবে।

 

আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার ডির্পাটমেন্ট এর প্রোফেসর এর সাথে কথা বলুন।


- আপনি বললে...


- নো মিস তাহিয়ানা, আপনি এখন আসতে পারেন।


তাহিয়ানা মেহরাব এর রুম থেকে বের হয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিলো।মেহরাব স্যারের সামনে গেলে তার ভীষন প্রেম প্রেম পায় ইশ লজ্জা লজ্জা।


তাহিয়ানা ভাবতে থাকে আনমনে,

-আচ্ছা মেহরাব স্যারের মুখে তাহিয়ানা নাম টা আরো বেশি সুন্দর লাগে শুনতে তাই না।তবে যতটা ভালো

 ভেবে ছিলাম তত টা ভালো না। কচ্ছোপের খোলসে সিংহ টাইপ লোক।তাতে আমার কি?  আমার তো তাকেই লাগবে হায় হায় উনি এতো কিউট! না জানি আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চা কাচ্চা,নাতি-পুতি কত্তো কিউট হবে।আহা টমেটো বড়ই সুস্বাদু....।


মনে মনে এসব আবল তাবল বকতে বকতে চলল প্রফেসর'স দের রুমের দিকে।তাহিয়ানা অর্নাস ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।বাবা- মায়ের তৃতীয় সন্তান।বাবার অনেক সখের মেয়ে সে আগেই দুই ভাই আছে তার।তার বাবার বরাবরই সখ ছিলো একটি কন্যার একে একে দুটি ছেলের পর এই মেয়ে যেনো তার আস্তো কলিজা।দুনিয়া এদিক ওদিক হবে কিন্তু মেয়ের চোখে পানি আসবে না।তাহিয়ানার বড় ভাই কামরুল শেখ একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্ম কর্তা।অন্য ভাই আমিরুল শেখ একজন ইন্জিনিয়ার।তার বাবা আসলাম শেখ একজন বিশিষ্ট ব্যবসাহী।তহিয়ানার মা তহমিনা বেগম একজন গৃহীনি আবার ফ্রিলেন্সিং ও করেন।তাহিয়ানার পরিবারের ইচ্ছা সে একজন ব্যারিস্টার হবে।তাই তাকে এত দুরে পড়তে পাঠানো।ফাস্ট ইয়ারে মাত্র ছয় মাস হলো ক্লাস শুরু হয়েছে ইতি মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস তার উৎপাতে অতিষ্ঠ।সবার একটায় কথা এতো লাফায় কেন এই মেয়ে?দেশের মধ্যে যেকোন জায়গায় যেতে তার কারো অনুমতি লাগে না তবে দেশের বাইরে যেতে তো অনুমতি লাগবেই। তার পরিবার তাকে এখনি যেতে দেবে কি না সে বুঝতে পারছে না।এজন্যই প্রফেসর কে দিয়ে বাসায় বলাবে যাতে না বলার সুযোগ না থাকে।তার ভাবনা অনুযায়ী কাজ হয়ে যায় একজন বৃদ্ধ প্রফেসর রাজি হয় বাসায় জানাতে।বাসায় প্রথমে আপত্তি দেখালে ও নিরাপত্তার কথা জানতে পেরে যেতে দিতে রাজি হয়।অবশেষে তাহিয়ানা যাবে স্টাডি ট্যুরে।তার কাছে এটা যতটা না স্টাডি ট্যুর তার থেকে দিগুন হলো ক্যাম্পাসের বাহিরের আউট ফিটে মেহরাবকে দেখতে পাওয়ার আকুল ইচ্ছা।


মেহরাব আজকে অনেক দিন পর তার বাগানে এসেছে।এটা সেই বাগান যেখানে সে একসময় দিনের ও রাতের অধীকাংশ সময় পার করতো।তবে এখন শুধু কাজের জন্যই আশা পড়ে।ব্যাস্ততা বড়ই খারাপ জিনিস।বাগানের গাছ গুলোর যত্ন নিতে নিতে সে ডুব দেয় অতীতে।


সেবার যখন তাসলিমা বেগম এর কেস টা সমাধান করে বাড়িতে এলো।তারপর একদিন মতো সে বেশ অসুস্থ ছিলো।সেদিন রাতে ভীষন পিঠে ও ঘাড়ে ব্যাথা করছিলো তার।বাগানে কাজ করলেই রাতে তার এই ব্যাথার উৎপত্তি হয়।সে ব্যাথায় বেশ নাজেহাল পেইন কিলারে ও বিশেষ কাজ হয়নি।ঘন ঘন দম নিচ্ছিলো  আলোরা তখন কোথা থেকে এসে হাজির। মেহরাব একটা প্যান্ট পড়া আর উদাম গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো।আলোরা মাথা নিচু করে তার কাছে এসে দরজাটায় ছিটকিনি দিতে গিয়ে নাজেহাল সে ছোট কিনা লম্বায়।মেহরাম হুশ করে একটা দম ছাড়ে।উঠে গিয়ে দরজায় ছিটকিনি আটকায়।আর সরু চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে


-কি চায়?


আলোরা নির্ভয়ে উত্তর দেয়।

- আপনি ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন তাই একটু গরম পানি করে এনেছি ছেক দিলে ভাল্লাগবে।


- কে দেবে ছেক?


- আমি দিবো।


- তুই দিবি? চোখ তুলে তাকাতে পারছিস না আর তুই কি না দিবি ছেক?কই তাকা আমার দিকে?


- আমি পারবো, শুধু আপনি তাকাবেন না।


- আমি তাকাবো না?


- না


- কেনো?


- আপনার চোখ দুইটা কেমন জানি?


- কেমন?


- জানি না


- আচ্ছা যা করতে আসছিস কর আর বিদায় হ'।এমন রাত-বিরাতে আর আসবি না আমার রুমে।ব্যাড ম্যানর্স।


- সে দেখা যাবে


- আগে আপনি শুয়ে পড়েন।


- মেহরাব গিয়ে শুয়ে পড়ে।


টিউব লাইট অফ করা সাধা ডিম লাইট জ্বলছে।আলোরা গরম পানির পাত্র থেকে ভাব নিয়ে মেহরাব এর পেটের কাছে বসে পিঠে আর ঘাড়ে ভাব দিতে থাকে।মেহরাব এর আরাম লাগতে শুরু করে।সে মনে মনে ভীষন খুশি হয় আচ্ছা এই উপকারের বদলে সে আলোরাকে  কি উপহার দেবে?আচ্ছা টুক করে একটা চুমু খেলে কি ও চমকে যাবে?না থাক এমন করা ঠিক না।হঠাৎ মেহরাব আলোরার দিকে ঘুরে শোয় আর 

সরু চোখে তাকায়।


-কি হয়েছে?খারাপ লাগছে?


-না রে


-তাহলে


-এখন অনেক রাত তো ক্ষুধা লাগছে


-কি খাবেন বলেন এনে দেয়।


- আলু ভার্তা


- এতো রাতে?


- হুম


- এখন আলু সিদ্ধ করে মাখতে তো  সময় লাগবে।


- আলু সিদ্ধ করা আর মাখানো সাথে খাওয়া সব আমার দায়িত্ব।


- আপনি করবেন?


- আমার জিনিস আমি ছাড়া কে করবে?


- আচ্ছা বেশ চলুন তাহলে


- কোথায় যাবো?


- আলু ভর্তা করতে।


- আরে আমার ভোলাভালা আলু আমি তো তোকে ভর্তা করবো।


কথাটা বলেই মেহরাব আলোরার গলায় মুখ ডুবায়।মেহরাব নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিলো না সেদিন আলোরা তার চুল খামচে ধরে তাকে আটকাতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যার্থ হয়।একটা সময় মেহরাব শান্ত হয়ে আসে নিজে থেকেই। কিন্তু গলায় একটা লাল কাচশিটে দাগ পড়ে যায় আলোরার।লজ্জায় সে মাথা তুলে দ্বিতীয় বার আর তাকাতে পারে না মেহরাব এর দিকে।দরজার কাছে দৌড়ে যেয়ে ও বের হতে পারে না।মেহরাব তার ছটফটানি দেখে হাসে।উঠে দরজা খুলে দিলে এক ছুটে আলোরা বের হয়ে যায় রুম থেকে।


মেহরাব তাদের এই অতীত স্মৃতি গুলো যত্ন করে তুলে রেখেছে।একদিন সে খুব কড়া করে জবাব চাইবে আলুর থেকে কেন তাকে মাঝ পথে একা ফেলে পালালো? কি দোষ করেছিলো সে?বাগানের কাজ শেষে উঠে হাত ধুয়ে চেয়ার এ বসে চুপ চাপ আকাশ পানে তাকায়।


-তুই বড্ড নিষ্ঠুর চাঁদ।কেউ না জানুক তুই তো জানিস সে কোথায়?তাও বলবি না?হ্যা রে চাঁদ বেঁচে আছে তো?শ্বাস নেয়?


মেহেরাব একটা শুকনো হাসি হাসে তার গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে এক করুন সুর...


Ek din aap yoon hamko mil jaayenge

Phool hee phool raahoon mein khil jaayenge, maine sochaa naa tha


Ek din aap yoon hamko mil jaayenge

Phool hee phool raahoon mein khil jaayenge, maine sochaa naa tha


Ek din zindagi itanee hogee haseen

Jhoomegaa aasamaan, gaaegi ye zameen

Ek din zindagi itanee hogee haseen

Jhoomegaa aasamaan, gaaegi ye zameen, maine sochaa naa tha।


- আমাদের গন্তব্য তো একই ছিলো চাঁদ।তাহলে আমাদের পথ ভিন্ন হলো কেনো? আমার সবটা জুড়ে তো সে তাহলে তার বিশালতায় আমি নেই কেনো?


তার চোখের কোনা বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে এসে নিচে পড়ে যায়।চাঁদ টা ডুবে যায় আধারের দুনিয়াতে সে লজ্জিত বোবা হওয়ার কারণে।


চলবে?

0 Comments:

Post a Comment