গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 1

(আমার লেখা প্রথম গল্প। আশা করি সবার ভালো লাগবে। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)


🍂🍂🍂



সন্ধ্যার হওয়ার ঠিক কিছুটা সময় আগে ছাদে কফি মগ হাতে দাড়িয়ে আছে মেহের। বসন্তের মৃদু বাতাসে থেমে থেমেই তার কোমড় অব্দি চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপাতত তা ঠিক করার ইচ্ছে নেই। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দুর আকাশে সীমাবদ্ধ। আজ যেনো জীবনে কি পেয়েছে আর কি হারিয়ে তার হিসেব কষতে ব্যস্ত সে।

প্রকৃতি নিয়মমাফিক কিছুক্ষণ আগেই সূর্য অস্ত গেলো, পাখিরা ফিরে গেছে তার আপন নীড়ে, এখনও ২/১ টা পাখি আকাশে দেখা যাচ্ছে। বাড়ির পাশের রাস্তায় একে একে জ্বলে উঠছে সোডিয়াম লাইট গুলো।

সন্ধ্যা হতেই সে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্দ্ব্যত হলো। একটু পর নাহলে তার নানু তাকে ডেকে অস্থির হয়ে যাবে। নানুর মতে, ভরা সন্ধ্যায় মেয়েদের ছাদে যাওয়া উচিত নয়। এ সময় নাকি জ্বীনদের চলাচল করার সময়। মেহের তখন তার নানুর চোখে নিজের জন্য অস্থিরতা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে।

অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী মেহের। পুরো নাম মেহেরীন রোজ। সবাই মেহের বলেই ডাকে। বয়স ১৯ বছর, কয়েকমাসের মধ্যেই ২০ বছর পূর্ণ হবে তার। বয়স অপেক্ষা যথেষ্ট ম্যাচুর সে। কিছুটা দুষ্টুও বটে। বাড়িতে সে যথেষ্ট গম্ভীর স্বভাবের, খুব একটা কারো সাথে কথা বলে না কিন্তু বাড়ির বাইরে তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার একটা গম্ভীর রূপ ও আছে।

.

.

সকালে ঘুম থেকে উঠে, রেডী হয়েই মেহের ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। নানু বার বার নাস্তা করতে বললেও সে করেনি। সকালে খাওয়া দাওয়া করা তার জীবনের অত্যন্ত বিরক্তিকর কাজের মধ্যে একটি বলে সে মনে করে।

ভার্সিটিতে গিয়েই সে সর্বপ্রথম তার ফ্রেন্ড সার্কেলকে খুজে বের করে। আহিল, দিয়া, স্নেহা, ও কাব্য তার সব থেকে কাছের বন্ধু। একে অপরের প্রতি এদের টান বরাবরই আপন ভাই বোনের মতো।

ভার্সিটিতে ঢুকতেই মাঠের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তার বন্ধুমহলের দেখা পেতেই মেহের হালকা হেসে তাদের দিকে ছুটে যায়। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই ক্লাসে চলে গেলো। ক্লাস শেষে তারা এক সাথেই ক্যান্টিন এ যায়। স্নেহাকে আনমনে বসে থাকতে দেখে দুষ্টু কণ্ঠে মেহের বলে উঠে,

~কিরে ভাইয়াকে মিস করস নাকি?

~মিস করাই স্বাভাবিক। ওর জামাই তো পুরাই আগুন রে ভাই। আমি নিজেও পোলা হইয়া ক্রাশ খাইছি। ওর তো আবার জামাই লাগে। আমি মাইয়া হইলে দেখতি তীব্র ভাইরে কিডন্যাপ কইরা নিয়া ভাগতাম। (চেয়ারে হেলান দিতে দিতে বললো কাব্য)

~কেনো রে! মেয়ের কি অভাব পড়ছে যে এখন আমার জামাই এর দিকে নজর দেওয়া লাগতেছে তোর। বেটা খচ্চর!!!(এক ভ্রু উচু করে বলে উঠলো স্নেহা)

~কি আমি খচ্চর! তুই খচ্চর, তোর জামাই খচ্চর (কিছুটা তেতে উঠে বললো কাব্য)

~কি বললি! বজ্জাত একটা! (স্নেহা)

~চুউউউপ!!! কি শুরু করলি তোরা! এক মিনিটও ঝগড়া না করে থাকতে পারিস না! (কিছুটা চিল্লিয়ে বললো মেহের)

এভাবেই কিছুক্ষণ খুনসুটি করে সবাই নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।


🍂🍂🍂


রং তুলি দিয়ে আঁকা এক মেয়ের ছবির সামনে দাড়িয়ে আছে একটি ছেলে। বয়স ২৬-২৭ বছর হবে। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ক্যানভাসে আঁকা মেয়েটির দিকে। চোখে মুখে বিরাজ করছে একরাশ মুগ্ধতা। কিছুক্ষণ পর পরই ছেলেটি গুন গুন করে গেয়ে উঠছে,

Jayaz hain tujhpe

Deewani meri,

Raago se rooh tak Hain

Rawangi teri...


ছেলেটি হটাৎ গান থামিয়ে ফোন বের করে কাউকে কল করলো এবং কিছুক্ষণ কথা বলে আবার ছবিটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

অনেকদিন অপেক্ষা করিয়েছি তোমায় রুদ্রানী। দীর্ঘ ২ বছর পর আবারো ফিরে আসছি তোমার জীবনে। এবার আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment