গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ১৭

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 17


🍂🍂🍂


শপিং মলের সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নামে আয়মান, দিয়া, আহিল, কাব্য, মেহের, রুদ্র আর ওদের পরিবার। রুদ্র অসুস্থ হওয়ায় স্নেহা আর তীব্র আসেনি। ওদের শপিং রুদ্র নিজে করবে জানিয়েছে। শপিং মলে প্রবেশ করেই প্রথমে শাড়ির শোরুমে যায়। অনেকগুলো শাড়ি আর লেহেঙ্গা দেখানোর পরও মেহেরের পছন্দ হচ্ছে না। পরে রুদ্র এসে মেহেরের পাশে বসে নিজেই কয়েকটা শাড়ি আর লেহেঙ্গা পছন্দ করে দেয়। রুদ্রর পছন্দ দেখে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে মেহের। মেহেরের চোখ মুখ দেখে কারোই বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে রুদ্রর পছন্দ করা কাপড়গুলো বেশ পছন্দ হয়েছে মেহেরের। মেহেরের বিয়ের কাপড় নেওয়া হলে মেয়েরা নিজেদের জন্য একেকটা কিনতে শুরু করে। সব মেয়েরা বিয়ে তে একই ডিজাইনের শাড়ি আর ছেলেরা সবাই একই ডিজাইন এর পাঞ্জাবি পড়বে বলে ঠিক করে। ড্রেসকোড হিসেবে নীল রঙটাকেই পছন্দ করে সবাই। শাড়ি কেনা হলেই সকলে পাঞ্জাবি এর শোরুমে যায়। ছেলেদের পছন্দ করতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু রুদ্র সব শেরওয়ানিই রিজেক্ট করতে থাকে। বিরক্ত হয়ে উঠে মেহের হেঁটে শোরুমটা ঘুরে দেখতে থাকে। হটাৎ একটা সাদা রঙের শেরওয়ানির দিকে নজর আটকে যায় মেহেরের। সাদা শেরওয়ানির ওপর গোল্ডেন রঙের সুতোর ডিজাইন করা। রুদ্রকে এটাতে বেশ লাগবে ভেবে শেরওয়ানিটি দেখতে থাকে মেহের। কিন্তু রুদ্রর যদি পছন্দ না হয় উল্টা সবার সামনে ঝাড়ি দেয় তাই আর ভয়ে কিছু বলে না। পেছনে ঘুরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। মেহের ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। কিন্তু রুদ্রর এতে যেনো কোনো ভাবাবেগ নেই। রুদ্র দাড়িয়ে একই শেরওয়ানির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে একজন সেলসবয় কে বলে ওটাই প্যাক করতে। সকলেই শেরওয়ানিটি খুব পছন্দ করে এমনকি মেহেরের শাড়ির সাথেও মিল আছে বলে সবাই জানায়। এরপর একে একে সব কেনাকাটা শেষ হলে সবাই একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে। সারাক্ষণ রুদ্র মেহেরের হাত ধরে ছিল। মেহের বেশ কয়েকবার ছাড়তে বললেও রুদ্র ছাড়েনি বরং বেশ কয়েকটা ধমক খেয়েছে। তাই আর ভয়ে কিছুই বলেনি মেহের। আহিল, দিয়া, কাব্য, আয়মান, মেহের আর রুদ্র এক টেবিলে বসেছে আর বড়রা অন্য টেবিলে। মুখ ফুলিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে মেহের। রুদ্র খাবার অর্ডার দিয়ে আরেকটু এগিয়ে মেহেরের গা ঘেঁষে বসে। মেহের আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবারো মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। রুদ্র আলতো হেসে মেহেরের উদ্দেশ্যে বলে,

আমি তো এখনও বেঁচে আছি। গালে হাত কেনো?

মেহের ভ্রু কুঁচকে রুদ্রর দিকে তাকাতেই রুদ্র বলে,

দাদী বলতো যে গালে হাত দিলে জামাই মরে।

মেহের কিছু বলছে না দেখে রুদ্র আবার বলে,

এই! তুমি কি আমাকে মারতে চাও? দেখো আমি মরলেও কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না। ভুত হয়ে তোমার ঘর মটকাবো তারপর তুমিও মরে আমার সাথে থাকবে। বুঝলে!

রুদ্রর কথা শুনে আয়মান, দিয়া, আহিল আর কাব্য হুঁ হা করে হেসে উঠে। মেহের চোখ মুখ কুঁচকে বলে,

আপনি কি পাগল! কি সব আবোল তাবোল বলছেন! আপনার মৃত্যু কেনো আমি কামনা করবো! কোন মেয়ে তার স্বামীর মৃত্যু কামনা করে! সবসময় এইসব আজগুবি কথা না বললে কি আপনার ভালো লাগে না!

রুদ্র খিলখিল করে হেসে উঠে মেহেরের কথায়। হাসি বজায় রেখেই রুদ্র বলে,

আচ্ছা শান্ত হও। এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? আমি তো just এমনিই বললাম।

মেহের ভেংচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নেয়। রুদ্র মেহেরের থুতনি ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। জিজ্ঞেস করে,

রেগে আছো কেন? কি হয়েছে?

~আপনাকে কেনো বলবো? (মেহের)

~কারণ আমি তোমার স্বামী (শান্ত কণ্ঠে বলে রুদ্র)

~হবু স্বামী। এখনও স্বামী হননি। যদি এমন হয় কোনো এক ভাবে আমার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেলো। তখন? (হেসে বলে মেহের)

~জানে মেরে ফেলবো মেহরীন। আপনার সাহস কি করে হয় এখনও অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করার!

মেহেরের গাল চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে বলে রুদ্র। আহিল, দিয়া আর কাব্য রুদ্রর রাগ দেখে হকচকিয়ে যায়। এতক্ষণ ওদের খুনসুটি দেখে সবাই দেখে মজা পেলেও এখন ভয় পেয়ে যায়। মেহেরের গাল বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু রুদ্রর হাতে পড়তেই যেনো রুদ্রর রাগ উড়ে যায়। দ্রুত মেহেরের গাল ছেড়ে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে। এবার যেনো সকলে আরেক দফা শকড হয়। একটু আগে রেগে গেল আবার মুহূর্তেই ভালোবেসে জড়িয়ে ধরছে। কাব্য বিড়বিড় করে বলে,

কি সাংঘাতিক মানুষ রে ভাই!

~আসলেই (মেহের আর রুদ্রর দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে এক সাথে বলে উঠে আহিল আর দিয়া)

ওদের কথা শুনে আয়মান বিড়বিড় করে বলে,

এরা একদিন দেখেই টাস্কি খেয়েছে। আর আমি! রোজ এই লোকের রাগ দেখে হার্ট এ্যাটাক করতে করতে বাঁচি। কবে যে বিয়ের আগেই বউকে বিধবা করে পটল তুলি আল্লাহ জানে। আমার আর প্রেম করা হলো নাহ!

সকলে পাশাপাশি বসায় একে অপরের কথা ভালোভাবেই শুনতে পায়। আয়মানের কথা শুনে আহিল আর কাব্যর গড়াগড়ি খেয়ে হাসার মতো অবস্থা। দিয়া ভ্রু কুচকে আয়মান এর দিকে চেয়ে থাকে। তা দেখে আয়মান জোরপূর্বক হেসে দ্রুত ফোন বের করে তাতে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে মেহের আর রুদ্র ওদের দিকে ধ্যান না দিয়ে ঝগড়া করতে ব্যস্ত। মেহের রুদ্রর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য রুদ্রকে ধাক্কাতে থাকে। মেহের যতই ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে রুদ্র ততই শক্ত করে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে। মেহের ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে কান্নাভেজা গলায় বলে,

ছাড়ুন বলছি! আপনি ভালো না। আজকে হাত ছাড়তে বলার জন্য সারাক্ষণ ধমক দিয়েছেন আমাকে। একটু আগে ব্যাথা দিলেন এখন আবার জড়িয়ে ধরে আদিখ্যেতা হচ্ছে! ছাড়ুন বলছি!

~সরি রুদ্রানি। প্লীজ রাগ করে না। কান্না বন্ধ করো প্লীজ! আমার কষ্ট হয়। (করুন কণ্ঠে বলে রুদ্র)

~ছাড়ুন আমাকে। আমার যত ইচ্ছে কাদবো। তাতে আপনার কি! ছাড়ুন!!!! (হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে বলে মেহের)

~সরি বললাম তো! দোষ তো তোমারই। বারবার হাত ছাড়তে বলছিলে কেন? এখন আবার অন্য কাউকে বিয়ের করার কথা চিন্তা করো কিভাবে! হাউ!!! এখন যদি আরেকবার ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেছো। দেন আই সয়ার আমি তোমাকে তুলে এক আছার মারবো। (কিছুটা ধমকের স্বরে বলে রুদ্র)

রুদ্রর ধমকে কেপে উঠে মেহের। ধমক খেয়ে শান্ত হয়ে রুদ্রর বুকে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে। মেহেরকে ভয় পেতে দেখে রুদ্র হেসে মেহেরের কপালে ঠোঁট ছোয়ায়। খাবার আসতেই রুদ্র মেহের ছেড়ে দেয়। রুদ্র ছেড়ে দিতেই মেহের মাথা নিচু করে বসে থাকে। মেহের খাবে না বলে দিয়ার দিকে তাকায়। দিয়া মেহেরকে রুদ্রর দিকে তাকাতে ইশারা করলে মেহের ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই দেখে রুদ্র চোখ রাঙিয়ে চেয়ে আছে। রুদ্রর চোখ রাঙানি দেখে মেহের জোরপূর্বক হেসে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে। খাওয়া শেষ হলে সকলেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

~~~

চলবে~

(এই এই খুব শীঘ্রই মেহের আর রুদ্রর বিয়ে। সবার দাওয়াত রইলো কিন্তু! গিফট্ ছাড়া এলে খাবার দেওয়া হবে না 😁)

0 Comments:

Post a Comment