গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ২০

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 20


🍂🍂🍂


আয়নার সামনে আনমনে বসে আছে মেহের। গায়ে হলুদ রঙের শাড়ি, ফুলের তৈরি গহনা আর মুখে হালকা মেকআপ। পাশেই দিয়া, আহিল আর কাব্য দাড়িয়ে মেহেরকে আজ কতটা সুন্দর লাগছে তার প্রশংসা করে করে মেহেরের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার অবস্থা। মেহের নানা নানি এসে মেহেরকে দেখে গেছে এবং তারাও অনেক প্রশংসা করে গেছেন মেহেরের। মেহের শুধু মুচকি হেসে সবার কথা শুনে গেছে।

আরে আন্টি! আসুন না।

দিয়ার কথায় সন্ধি পায় মেহের। আয়নায় দেখে মেহেরের মা ঘরে প্রবেশ করছেন। মেহরিশ টলমলে দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চেয়ে থেকেই এগিয়ে আসেন। মেহের উঠে মায়ের কাছে এগিয়ে যায়। আলতো হাতে মায়ের গাল ছুঁতেই এক ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে পরে। মেহের পরম যত্নে মায়ের চোখের পানি মুছে দেয়। হাজার কষ্ট হলেও নিজের কান্না মাকে কখনোই দেখাতে চায় না মেহের। হালকা হেসে বলে,

কাদছো কেনো? নিজেই তো ছেলে খুঁজে এনে বললে বিয়ে করতে। এখন আবার এত কান্নাকাটি কিসের?

মেহরিশ কান্নাভেজা গলায় বলে,

সব মা ই চায় তার মেয়ে সুখে সংসার করুক। বিদায় দিতে কষ্ট হবে বলে কি বিয়ে দেয় না কেউ?

মায়ের কথায় মেহের খিল খিল করে হেসে উঠে। মাকে জড়িয়ে ধরেই বলে,

বিদায়? কিসের বিদায়? বিদায় কাকে বলে? আমি কি মরে যাচ্ছি? কবরে রেখে আসছো? না তো! এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যাচ্ছি। তবে বিদায় কিসের? এই বাড়িতে প্রায়ই আসা যাওয়া হবে, রোজ ফোনে কথা হবে, তোমার তো খুশি হওয়ার কথা যে এত দিন একটা মেয়ে ছিল এখন আবার একটা ছেলেও পাচ্ছো।

~তোর নানা নানি তোকে এইসব বলে গেছে তাই না? তোর কান্না থামানোর জন্য তারা এইসব বলে বুঝ দিয়েছে এখন তুই আমার কাছে কপি পেস্ট করে আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করছিস না! আর কিসব অলুক্ষণে কথা বলছিস! মরা, কবর এইসব কি! মা বাবা তো তোকে এইসব বলেনি আমি জানি।

মেহের আবারো হাসে। মা এর বকা দেওয়া যেনো এখন তার কাছে ভারি মজার বিষয় মনে হচ্ছে। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাওয়ার মত হাসতে থাকে। আহিল, কাব্য, দিয়া, মেহরিশ সকলেই অবাক হয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে থাকে। মেহের মাকে ছেড়ে হাসতে হাসতে খাটে যেয়ে বসে। চোখ বন্ধ করে লম্বা এক শ্বাস নেয়। চোখ খুলে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায়,

তোমাদের বকাগুলো খুব মিস করবো মা। আগে বিরক্ত লাগলেও আজ এইসব কিছু উপভোগ করছি ভীষণভাবে।

মেহরিশ মেয়েকে জড়িয়ে ধরতেই মা মেয়ে এক সাথে কেঁদে উঠে। আহিল, কাব্য আর দিয়ার চোখেও পানি টলমল করছে। স্নেহা হাসি হাসি মুখে এক লাফ দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে বলে,

কি হচ্ছে এখানে? সবার চোখে পানি কেনো?

মেহেরকে ছেড়ে মেহরিশ বলেন,

তোরা এসে গেছিস।

~হুঁ। সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। চলো নিচে যাই।

~আমি আগে যাচ্ছি। তোরা আয়।

~আচ্ছা (দিয়া)

.

কিছুক্ষণ পর মেহেরকে নিয়ে স্টেজ এ যায় সবাই। সব রিচুয়াল এক সাথে হবে বলেই জানায় রুদ্র। বরাবরের মতই কেউ আর মানা করতে পারে না। হলুদ আর বিয়ে মেহেরের বাড়িতে হলেও মেহেদী - সঙ্গীত ও রিসেপশন রুদ্রর বাড়িতেই হবে। মেহেরকে দেখেই রুদ্র এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। হার্টবিট ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। রুদ্র মুচকি হেসে মেহেরের দিকে এগিয়ে যায়। মেহেরের সামনে হাত বাড়াতেই মেহের চোখ তুলে একবার রুদ্রর দিকে তাকায়। চারদিকে হইহুল্লোড় শুরু করে সকলে। মেহের লজ্জা পেয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। মেহের যেয়ে স্টেজ এ বসতেই রুদ্র মেহেরের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

এত মায়াবতী হতে কে বলেছিল তোমায়! আজ তোমায় দেখে হার্ট এ্যাটাক না করে বসি মেহেরজান।

রুদ্রর কথা শুনে মেহের মাথা নিচু করে বসে থাকে। রুদ্র হেসে উঠে। হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবার আগে রুদ্রকে মেহের আর মেহেরকে হলুদ লাগায় রুদ্র। তার এক কথা তার বউকে সবার আগে সেই হলুদ লাগাবে। মেহেরের তখন লজ্জায় জান যায় যায় অবস্থা। চারদিকে আরেকদফা হইহুল্লোড় শুরু হয়। হলুদের পাশাপাশি নাচ গান তো আছেই। রাত প্রায় ২ টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়। তাও রুদ্র বলায়। কেননা কালকে সঙ্গীত আর মেহেদী এর অনুষ্ঠান। এখন সকলেরই বিশ্রাম দরকার, বিশেষ করে মেহেরের। 


🍂🍂🍂


সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে মেহেরের। পিটপিট করে চোখ খুলে মায়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে,

শুভ সকাল মা।

~শুভ সকাল। দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়। এর পর আরো নিয়ম বাকি আছে আছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। আর হ্যা দিয়া আর স্নেহাকেও ডেকে তোল। 

~হুঁ

মেহরিশ যেতেই মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে দিয়া আর স্নেহার দিকে তাকায়। দিয়া কোলবালিশকে আর স্নেহা দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মেহের আগে ফ্রেশ হয়ে এসে ওদের ডাক দেয়। স্নেহা আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসতেই দরজায় আহিল আর কাব্য নক করে।

~উঠেছিস তোরা? (আহিল)

~হ্যাঁ। ভেতরে আয়। (মেহের)

~দিয়া উঠেছে? (ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলে কাব্য)

~না এখনও ঘুমাচ্ছে। (স্নেহা)

~দাড়া ওকে উঠাচ্ছি। ও আল্লাহ গো ভুউউউউত!!!(কাব্য)

কাব্যর চিৎকার শুনে দিয়া ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে নিজেও 'ভুত ভুত' বলে চিৎকার করতে থাকে। আহিল, কাব্য, স্নেহা আর মেহের কতক্ষন দিয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। তারপর একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সবাই এক সাথে হেসে উঠে। কাব্য আর আহিলের তো হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্হা। দিয়ার ঘুমের রেশ কাটতেই বুঝতে পারে যে কাব্য ওর সাথে প্রাঙ্ক করেছে। 

~শয়তান পোলা!!! আজ তোর একদিন কি আমার চব্বিশ ঘণ্টা 

বলেই দিয়া কাব্যর কে ধাওয়া করে। অনেকক্ষণ দৌড়াদৌড়ির পর মেহেরের ধমক খেয়ে কাব্য চুপ করে বসে আর দিয়া কাব্যর মাথায় এক গাট্টা মেরে মুখ ভেংচি দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

সকালে নাস্তা করে বাকি রিচুয়াল পূরণ করার পর আয়মান আর তীব্র নিতে এলেই সকলে আহমেদ ভিলায় যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment