গল্প suddenly_fall_in_love পর্ব ১

 #suddenly_fall_in_love

#লেখনীতে_সামিয়া_স্নিগ্ধা 

#পর্ব_০১ 


রাত দশটা কি এগারোটা,,, নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রীজের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে আরুশি। চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে। মুখে বিষণ্নতার ছাপ স্পষ্ট। এই মুহূর্তে তার কাছে জীবনটাকে বিষাক্তময় মনে হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটার অন্য কারো সাথে বিয়ের ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আরুশি। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ তীর ছুড়ছে। চোখের কোন থেকে জল গড়াচ্ছে। এ জীবন রাখার কোন ইচ্ছে নেই আরুশির।নদীতে ঝাঁপ দেয়ার জন্য উদ্যত হতেই কেউ একজন তার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টেনে এনে ব্রিজের মাঝখানে দাঁড় করালো।


-আর ইউ ম্যাড? এভাবে এত রাতে সুইসাইড করছেন কেন? 


আরুশি ক্রন্দনরত কন্ঠে বলল,,,ছাড়ুন আমার হাত। 


-আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন,এভাবে সুইসাইড করছেন কেন?


-আপনায় বলতে আমি বাধ্য নই,ছাড়ুন।


 বলে ঝামটা মেরে ছেলেটার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল আরুশি।


দু পা এগোতেই ছেলেটা ফের আরুশির হাত চেপে ধরে বলল,,,,


-এক্সকিউজ মি! কোথায় যাচ্ছেন? আবার নদীতে ঝাঁপ দিতে? জানে আপনার ফ্যামিলি?


একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ছেলেটা। আরুশির হাত ধরে রেখেই বলল,,,


-চলুন, আপনার বাড়ির ঠিকানা বলুন। আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি।


আরুশি খানিকটা চেঁচিয়ে উঠলো,,,


-ছাড়ুন আমার হাত।আমি বাড়ি যাব না। চলে যান আপনি। 


ছেলেটা গম্ভীর স্বরে বলল,,,,


-এত রাতে একটা মেয়েকে সুইসাইডের দিকে ঠেলে দিয়ে বাড়ি গিয়ে আমি শান্তি পাব না। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন চুপচাপ।


কোন উপায়ন্ত না পেয়ে আরুশি ছেলেটার সাথে যেতে লাগল। এখনো অনবরত অশ্রু গড়াচ্ছে তার চোখ থেকে। 


ছেলেটা আরুশির হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,,,,


-এবার বলুন তো? সুইসাইড করতে চাচ্ছিলেন কেন? 


-ভালোবাসি একজনকে। কিন্তু সে আমার ভালোবাসা কোনদিন বোঝেনি।পরশুদিন তার বিয়ে।যেটা আমি কখনোই নিজের চোখে দেখতে পারবো না। সহ্য করতে পারছি না আর। পুরো পৃথিবী বিষাক্ত মনে হচ্ছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই মরে গেছে। 


-তাই বলে আপনার ফ্যামিলির কথা চিন্তা না করে এভাবে মরে যাবেন? দ্যাটস নট রাইট। একজনকে ভালবাসেন বলে তাকে পাচ্ছেন না বলে মরে যেতে চাইছেন? একটাবারও ভাবছেন না আপনার পরিবারের কথা?তারা আপনাকে ছেড়ে কি করে থাকবে? 


আরুশি চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে।কোন কথা বলছে না। 


-আপনি যাকে ভালবেসেছেন সে হয়তো আপনার জন্য পারফেক্ট না। আপনার জন্য অবশ্যই আল্লাহ অন্য কাউকে পাঠিয়ে রেখেছে। যাকে হারিয়েছেন, সে হয়তো নিশ্চয়ই আপনার জন্য কল্যাণকর ছিল না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার জন্য বেস্ট কাউকে রেখেছে।


এরমাঝেই ছেলেটার ফোনে কল এলো। ফোনের স্ক্রিনে তন্ময় নামটা ভাসছে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তন্ময় বলল,,,


-হ্যালো মাহমুদ, বাড়ি পৌঁছেছিস ঠিকমত? 


-হ্যাঁ বাড়িতে যাচ্ছি। বাড়িতে গিয়ে কথা হবে,বাই।


-ওকে বাই। 


মাহমুদ কল কেটে বলল,,,


-যেটা বলছিলাম, আল্লাহকে বিশ্বাস করেন তো?


আরুশি ছোট্ট করে জবাব দিল,,, হুম। 


-তাহলে এটা জানেন তো আত্মহত্যা মহাপাপ? 


আরুশি চুপ করে রইল। 


-ভুলেও কখনো কারো জন্য সুইসাইড করতে যাবেন না। বিশ্বাস রাখবেন, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আপনার জন্য কেউ না কেউ আছে।


হাঁটতে হাঁটতে ওরা আরুশির বাড়ির কাছাকাছি এসে পৌঁছালো। আরুশিকে বাড়ি অব্দি নিয়ে এসে মাহমুদ বলল,,,


-কখনো আর এরকম সুইসাইড করার চিন্তা করবেন না।চলি তাহলে,কেমন।


বলে সে নিজের বাড়ির গন্তব্যে হাটা দিল।


--


মাহমুদের বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে রাত প্রায় বারোটা। মাহমুদ আজ গ্রামে ফিরবে বলে ওর বোন সুমাইয়া দরজা খুলেই অপেক্ষা করছিল। মাহমুদ এসে বাড়িতে ঢুকতেই ড্রয়িংরুম থেকে দৌড়ে এসে সুমাইয়া বলল,,,


-কিরে তোর এতক্ষন লাগলো বাড়িতে আসতে? 


-আর বলিস না আপু, অনেক ঘটনা।


-কি হয়েছে আবার? 


-ভিতরে চল, বলছি। 


মাহমুদ নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসলো। সুমাইয়া ওর জন্য রাতের খাবার বেড়ে দিল। মাহমুদ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,,,,


-মা-বাবা কি ঘুমিয়ে গেছে? 


-হুম।


সুমাইয়া খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল,,,


-এবার বলতো কি হয়েছে? 


মাহমুদ আসার পর থেকে আরুশির সাথের সমস্ত ঘটনা খুলে বলল,,,


সুমাইয়া চিন্তিত হয়ে বলল,,,


-মেয়েটার নাম কি?


-সেটা জিজ্ঞাসা করা হয়নি? 


-নামটা জিজ্ঞাসা করলি না? নাম শুনলে চিনতে পারতাম। 


-আচ্ছা যাই হোক, ওই মেয়ের কথা বাদ দে। তুই খেয়েছিস? 


-না এখনো খাইনি। 


-তাহলে বসে পড়। দুজনে মিলে একসাথেই খেয়ে নেই। দুদিন পর তো শ্বশুর বাড়ি চলেই যাবি, তারপর তো আর খাওয়া হবে না। 


মাহমুদ এভাবে বলাতে সুমাইয়ার চোখের কোনে জল চলে আসে। মাহমুদ সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,, 


-কাঁদছিস কেন? এখনই বিয়ের কথা মনে করে মন খারাপ করছিস?বসতো আমার সাথে।


মাহমুদ সুমাইয়ার হাত ধরে টেনে টেবিলে বসালো।দুইভাই বোন একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে নিল।


চলবে,,,,


[অনেকদিন পর সবার রিকোয়েস্টে কিছু লিখলাম।আশা করি বরাবরের মতো সবার রেসপন্স পাবো।]

0 Comments:

Post a Comment