গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৫

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 35


🍂🍂🍂


বাইক থেকে নেমে এক নজর হাতের অ্যানালগ ঘড়িটির টিকে তাকালো আহিল। মাত্র সাড়ে দশটা বাজে। বাড়িতে প্রবেশ না করে সে বাগানের দিকে হাঁটা দিল। ঠিক বাগানের মাঝে গিয়ে ঘাসের ওপর ধপ করে পা টান করে বসলো। একধ্যানে নিজের বাবা মা এর ঘরের ব্যালকনি এর দিকে চেয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর বাড়ির কেয়ার টেকার আবদুল্লাহ এসে দাড়ালেন আহিলের পাশে। দাদা দাদীর মৃত্যুর পর এই বাড়িতে এক তার সাথেই টুকটাক কথা হয় আহিলের। এই মানুষটাই তার যাবতীয় সব কিছুর খেয়াল রাখেন। তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বুঝলেও আহিল তার দিকে তাকালো না। আবদুল্লাহ বললেন,

সোজা বাগানে চলে এলেন যে? ঘরে যাবেন না আহিল বাবা?

আহিল স্বশব্দে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই ঘাসের ওপর শুয়ে পড়লো। আবদুল্লাহ এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো আহিলের চোখের দিকে। দুর থেকে ওকে দেখলে বেশ হাসি খুশি লাগলেও, কাছ থেকে না দেখলে বুঝতেই পারবে না যে তার চোখে এখন অশ্রুকনারা চিক চিক করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। আহিল হাসি থামিয়ে চুপ করে কিছুক্ষণ হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রইলো। বাড়ির দিকে দৃষ্টি রেখেই মাথার নিচে হাত রেখে বললো,

ঘর মানেই তো শান্তির নীড়, তাই না চাচা? তবে আমার এই ঘরে ফিরে আসতে এত বিতৃষ্ণা লাগে কেনো? এটা কি আদৌ আমার শান্তির নীড় নাকি শুধু মাত্র ইট পাথরে তৈরি এক দালান?

আবদুল্লাহ জবাব দিলেন না। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলেন। নিজেদের দ্বন্দ্বে যে তাদের সন্তান একাকীত্বের মাঝে গুটিয়ে যাচ্ছে তা কি কখনোই তাদের চোখে পড়ে না? তাদের কি চিন্তা হয় না? এ বাড়ির মানুষগুলোকে সে বরাবরই পাষাণ মানুষের তালিকায় ধরে। আহিলকে দেখলেই তার মন টা কেমন হুহু করে উঠে। প্রায় সময়ই আহিল বাড়িতে ফিরে না তাতেও তার মা বাবার মধ্যে তেমন ভাবাবেগ দেখে না সে। আহিল আবার বলে,

দাদু যাওয়ার পর আর এই বাড়িতে কারো হাসি মুখ দেখেছো চাচা? আমার না মনে পড়ছে না। তুমি দেখে থাকলে একটু বলো তো!

আবদুল্লাহ এর মৌনতা দেখে আহিল আবারো হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই এক ফোঁটা অশ্রু চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। হাসির মাত্রা না কমিয়ে কণ্ঠে বিদ্রুপের সুর টেনে বললো,

চলো যাই ঘরেএএএ।

______________________________


মেহের ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসেই দেখলো রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে চেয়ে আছে। মেহের পাত্তা না দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। রুদ্র দ্রুত মেহেরের সামনে এসে কপাল কুঁচকে চেয়ে রইলো। মেহের বললো,

কি সমস্যা?

রুদ্র হতাশ কণ্ঠে বললো,

বিদেশে যাওয়ার আগে তো তোমাকে একদম নাদুস নুদুস পিচ্চি দেখে গিয়েছিলাম। হুট করে এমন পাটকাঠি হলে কি করে?

মেহের অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো রুদ্রর দিকে। বিস্ময় নিয়ে বললো,

আমি মোটেও পাটকাঠি না। আপনার পাটকাঠি মনে হচ্ছে কেন!

রুদ্র ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঘাড় ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে বললো,

ডায়েট করেছো না? আগেই তো ভালো ছিলে।

মেহের চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইলো। মানুষ টা বড্ড অদ্ভুত! সে মোটেও পাটকাঠি নয়। একদম পারফেক্ট দেখতে। আর তার কাছে পাটকাঠি মনে হচ্ছে! সিরিয়াসলি!

রুদ্র আবার বললো,

আমি এখন থেকে নিজে সামনে বসে তোমাকে খাবার খাওয়াবো। ডায়েট ফায়েট করতে হবে না। এতো শুকনা পাটকাঠি আমার ভালো লাগে না। খেয়ে গলুমলু হবা। বুঝলা?

মেহের প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলো,

মোটেও না। বললেই হলো! কত কষ্ট করে স্লিম হয়েছি জানেন আপনি!

রুদ্র নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,

তো?

~তো মানে! দেখুন! আপনি বাইরে গিয়ে মাফিয়াগিরি করুন গিয়ে। বাড়িতে কিন্তু আমি আর মামনিই বড় মাফিয়া বুঝলেন! মোটেও জোর জবরদস্তি করতে আসবেন না।

রুদ্র হু হা করে হেসে উঠলো। বিদ্রুপের সুরে বললো,

মা নাহয় বাড়ির মাফিয়া বুঝলাম। তোমার মতো চুনোপুটিকে মাফিয়া মানবে কে শুনি?

মেহের হা হয়ে চেয়ে রইলো। মানুষটা এবার রীতিমতো তাকে অপমান করছে। এতো অপমান মানা যায়! যায় না।

~আমি এখনি মামনিকে যেয়ে বিচার দিচ্ছি যে আপনি আমাকে চুনোপুটি বলেছেন।

~মাকে গিয়ে কি বলবে? গেলে দেখবে উল্টো তোমাকে এক হাড়ি খাবার দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। এই ব্যাপারে কিন্তু বাবাও মায়ের পক্ষে।

মেহের গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। জব্দ করতে এই লোকটা বেশ ভালো পারে। নির্ঘাত বিদেশ থেকে জব্দ করার কোনো কোর্স করে এসেছে। বেত্তমিজ লোক!

হটাৎ করেই রুদ্র মেহেরের হাত ধরতেই। মেহের ছিটকে দূরে সরে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

আস্তাগফিরুল্লাহ! আপনি হাত ধরছেন কেনো? সরুন বলছি!

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

আমি তোমার বর রুদ্রাণী! আস্তাগফিরুল্লাহ এর কি আছে?

মেহের নিজ মাথায় এক চাটি মেরে জোরপূর্বক হেসে বললো,

সরি, সরি! আমি ভুলে গেছিলাম।

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

হ্যাঁ! বিয়ের ২ দিন পর কেউ কি করে ভুলে যায় যে সে বিবাহিত? তুমি আসলেই একটা চিজ।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো,

দেখি বুকে আসো! জড়িয়ে ধরো।

মেহেরের গাল লজ্জায় লাল রঙ ধারণ করলো। মাথা নেড়ে না বললো যার অর্থ সে আসবে না। রুদ্র বললো,

তোমাকে রুদ্রাণী না ডেকে লজ্জাবতী ডাকা উচিত ছিলো। দেখি জলদি আসো।

বলেই জড়িয়ে ধরেই বেশ খানিক সময় বসে রইলো। মেহের ছাড়াতে চাইলেও ছাড়লো না রুদ্র। কিছু সময় পর রুদ্র মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে তার মুখপানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। মেহের একবার তার চোখের দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। রুদ্রর এই দৃষ্টিতে মেহের অসীম মায়া, ভালোবাসা, আর সম্মান দেখতে পায়। আদৌ কি এর মূল্য দিতে পারবে মেহের? যদি ব্যর্থ হয়?

~~~

চলবে~

(ভুলেও কেউ ছোট বলবেন না😒 অসুস্থ থাকায় এই কয়েকদিন গল্প দিতে দেরি হয়েছে। ইশ! আপনারা দেখি রীতিমতো রেগে বোম হয়ে আছেন। রাগ করা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক তাই রাগ না করে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন যেনো গল্প লিখতে আরো উৎসাহ পাই। তাহলে গল্পও শীঘ্রই দিবো। হ্যাপি রিডিং~)

0 Comments:

Post a Comment