গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৯

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 39


🍂🍂🍂


রোদের প্রকোপ আজ যেনো একটু বেশিই অনুভব হচ্ছে। মেহের আকাশের দিকে চেয়ে কপালের ঘাম মুছে দিয়া, কাব্য আর আহিলের দিকে তাকালো। বললো,

ফুচকা খেতে যাবি? আজ বেশ ইচ্ছে করছে। চল না যাই।

~হ্যাঁ, হ্যাঁ। চল যাই। (দিয়া)

~কি যাই? দিয়াইন্না! এই ফুচকার মধ্যে পাস কি তোরা? কি নোংরা! (কাব্য)

~ফুচকাকে নোংরা বলিস! তোর সাহস তো কম না! তোর নামে তো ফুচকার মানহানির* মামলা করা উচিত! (দিয়া)

~এই আইন কি তুই বের করলি? (কাব্য)

~হ্যা। করলাম। (দিয়া)

~তোরা ঝগড়া করতে থাক। আমি গেলাম ফুচকা খেতে। (মেহের)

~এই না! আমিও আসছি। (কাব্য)

ফুচকার স্টলে যেতে যেতেই কাব্য প্রশ্ন করলো,

স্নেহার শরীর কি বেশি খারাপ?

মেহের কাব্যর মুখশ্রীর দিকে তাকালো। ছেলেটার চেহারায় চিন্তার রেশ বিদ্যমান। চোখ দুটো জবাবের আশায় তার দিকেই স্থির। মেহের মুচকি হেসে বললো,

প্রেগনেন্সির সময় এমন একটু আধটু অসুস্থ সকলেই হয়। চিন্তা করিস না।

~মা হতে গেলে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। তাই না?

মেহের ফের মুচকি হাসলো তবে জবাব দিলো না। কাব্যর চোখে পানি চিকচিক করছে এই ভেবে যে তার মা ও তো না জানি কত কষ্ট সহ্য করেছে তাকে পৃথিবীতে আনতে। স্টলে ওদের দেখে ইভান আর ফারাজও ওদের কাছে এলো। ইভান গিয়ে মেহেরের পাশে আর ফারাজ দিয়ার পাশে বসতে নিলেই রুদ্র ধপ করে মেহেরের পাশে আর আয়মান দিয়ার পাশে বসে পড়ে। এই মুহূর্তে এখানে রুদ্র আর আয়মানকে দেখে সকলেই বেশ অবাক হয়ে তাকায়। রুদ্রকে দেখে ফারাজ আর ইভানও অন্যদিকে চলে যায়। মেহের প্রশ্ন করে,

আপনি এখানে কি করছেন?

~তার আগে তুমি বলো ফোন ধরছিলে না কেনো? কত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। জানো?

মেহের দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ৭ বার কল দিয়েছে রুদ্র। ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারেনি। রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে কাব্য আর আহিলের উদ্দেশ্যে বলে,

তোমরা থাকতে ওর পাশে অন্য ছেলে বসতে আসছে কেনো? হাত পা ভাঙতে জানা নেই? 

~না জানলে বলো আমি নিজে ট্রেনিং দিবো। (আয়মান)

মেহের কপাল কুঁচকে বললো,

হাত পা ভাঙার ট্রেনিং মানে? আপনি আবারো গুন্ডাগীরি শুরু করেছেন!

~শোনো! বউকে বা বোনকে প্রোটেক্ট করার জন্য মারপিট করলে তাকে গুন্ডামি বলে না।

~আপনি বললেই তো হলো না।

রুদ্র বিরক্তিতে "চ্" শব্দ করে বললো,

এইখানে কি করছো?

~ফুচকার স্টলে কি করে মানুষ? অবশ্যই বিয়ে পড়ায় না।

 ~বড্ড সাহস বেড়ে গেছে দেখছি তোমার। মুখে মুখে তর্ক করো।

মেহের মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে ঘুরে বসে রইলো। রুদ্র নিঃশব্দ হেসে আরেকটু মেহেরের গা ঘেসে বসলো। কাব্য বললো,

ভাই আপনার কোনো দুর সম্পর্কের বোন বা কোনো সিঙ্গেল মেয়ে নেই?

রুদ্র কপাল কুঁচকে বললো,

না তো! কেনো?

কাব্য হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

আমার মতো সিঙ্গেলদের আপনাদের প্রেম দেখলে দেবদাস টাইপ ফিল আসে। চিল্লিয়ে তখন গাইতে ইচ্ছে করে "বড় একা একা লাগে আমার, লাগে না ভালো আর... ওওও~"

দিয়া ধমকে উঠে বললো,

এই বেসুরা কাক! চিল্লানো বন্ধ কর! আমার কানের পর্দা শহীদ হলো বলে।

~তুই চুপ কর শয়তান মহিলা। বিয়া করছস সব বান্ধবী এক পরিবারে। একটাও ননদ নাই। এই খেয়াল করলি না তোদের ভাই দুইটা সিঙ্গেল থাকবো। ঢেং ঢেং করতে করতে নিজেরা বিয়া কইরা নিলি। আবার চিল্লাস!

কাব্যর কথায় আহিল সায় জানিয়ে বললো,

একদম ঠিক বিয়ে করেছিস তো করেছিস আবার আমাদের সামনে বসে প্রেম করিস। লজ্জা করে না?

কাব্য আর আহিলের কথায় আয়মান আর রুদ্র হেসে উঠলো। কাব্য উদাসীন কণ্ঠে বললো,

এককালে সিঙ্গেল অবস্থায় আমাদের সাথেই বসে হাসতেন আয়মান ভাই। আর আজকেও আপনি হাসতেছেন তবে বিবাহিত অবস্থায় তাও আমাদের ওপর হাসেন। সবই কপাল বুঝলেন!

______________________________________


~আপনি কি ইভান ভাইয়াকে মার দেওয়ার প্ল্যানিং করছেন?

আয়নায় মেহেরের প্রতিবিম্বর দিকে চেয়ে বাকা হাসলো রুদ্র।

~আমার সাথে থাকতে থাকতে বেশ বুদ্ধিমতী হয়ে যাচ্ছো দেখি বউ। স্বামীর মন, মস্তিষ্ক বুঝার চেষ্টায় আছো দেখছি? ভালো, খুব ভালো। আই লাইক ইট।

~ফাজলামো রাখেন রুদ্র। আপনি ওনাকে কোনো আঘাত করবেন না।

~আচ্ছা।

রুদ্রর কথায় চমকালো মেহের। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,

আপনি সত্যিই মারবেন না?

~অলরেডী যথেষ্ট মার খেয়েছে। আরও খেলে তো সে পটল তুলবে মেহেরজান।

~মানে?

~মানে তুমি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছো। অলরেডী সে আর ফারাজ মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

~কিহ?

~জ্বি। তাদের নিজ পায়ে দাড়াতেই কয়েকমাস লেগে যাবে দেখে নিও।

~কেনো? কেনো মারলেন এত?

~আমার বউ আর আমার বোনের দিকে পা বাড়িয়েছিল তাই। বাই দ্যা ওয়ে, আমি মারিনি। গার্ডস দিয়ে মার খাইয়েছি।

মেহের বিরক্ত হয়ে আর জবাব দিলো না। মানুষ অভ্যাসের দাস। এই দাসত্ব ছাড়াতে বেশ সময় লাগবে তা জানে মেহের। এখন ওর বা আয়মানের সাথে চিল্লিয়েও লাভ নেই। ফারাজ আর ইভান এর জন্য একরাশ খারাপ লাগা অনুভব করলো মেহের। বেচারারা চেয়ারে বসতে চেয়েছিল একটু। আর রুদ্র সোজা বেড এ পাঠিয়ে দিয়েছে। তাও যেনো তেনো জায়গার বেড নয়। সোজা হাসপাতালের বেড এ। একেই বলে যেচে বাঁশ খাওয়া। আরো যাও বিবাহিত মেয়েদের পাশের চেয়ারে বসতে।

~~~

চলবে~

0 Comments:

Post a Comment