#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 13
🍂🍂🍂
মুখ কালো করে ঘরে বসে আছে মেহের আর দিয়া। ওদের ঘিরে বসে আছে কাব্য, স্নেহা, আর আহিল। রুদ্র হটাৎ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেনো এলো তা কারো মাথায় ঢুকছে না। এমনকি রুদ্র এতটাই ডেসপারেট হয়ে উঠেছে যে আগামী সপ্তাহে বিয়ের দিন ঠিক করেছে। এতে বাড়ির সবাই নাকোচ করলে রুদ্র জানায় যে সে মেহেরকে নিজের করতে দেরি করতে চায় না। রুদ্রর জেদ এর কাছে বরাবরের মতই হার মানতে হয় সকলকে। রুদ্ররা যেতেই মেহের আর দিয়াকে ওরা তিনজন ঘিরে ধরেছে। দিয়ার সাথে মেহের প্রায় সব কথাই শেয়ার করে তাই দিয়াকেও মেহের এর সাথে জেরা করতে শুরু করে। দিয়া বিরক্ত হয়ে পার্টিতে হওয়া সব ঘটনা জানায়। স্নেহা বলে,
এই কথা আমাদের আগে জানাসনি কেনো?
~তোরা জানলি কিভাবে যে ওটা রুদ্র ভাইয়া ছিল? (কাব্য)
~কখন জানতে পেরেছিস ওটা রুদ্র ভাইয়া ছিল? বলছিস না কেনো? (আহিল)
~উফফফ!!! বলছি তো! মনে আছে মেহের আজ লেট করে ক্লাস এ এসেছে। ইভেন আসার পর সবার সাথেই রুড বিহেভ করছিল।
🍂সকালে🍂
চোখে মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে ক্লাস এ বসে আছে দিয়া, আহিল, কাব্য আর স্নেহা। রুদ্রর ধমক খেয়ে ওরা ডানে বামে না চেয়ে সোজা ক্লাসে চলে আসে। আসার পর খেয়াল করে মেহের নেই ওদের সাথে। মেহের কোথায় দেখার জন্য যেই না বের হবে তখনই স্যার ক্লাস এ প্রবেশ করে। এই স্যারটা বরাবরই ঘাড় ত্যাড়া টাইপ। ক্লাস এর সময় বাইরে যেতে চাইলেই এক রাম ধমক দেয়। তাই চেয়েও কিছু বলতেও পারছে না ওরা। স্যার ক্লাস থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই যেই না ওরা মেহেরকে খুঁজতে বাহিরে যাবে তখনই দেখে মেহের ক্লাস এ প্রবেশ করছে। মেহের দিয়ার পাশে এসে বসতেই সবাই ড্যাব ড্যাব করে মেহেরের দিকে চেয়ে থাকে। ওদেরকে এইভাবে চেয়ে থাকতে দেখে মেহের বলে,
এই ভাবে বেক্কল এর মত সব কটা আমার দিকে চেয়ে আছিস কেনো?
~এতক্ষণ কোথায় ছিলি? (দিয়া)
~কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে, যেখানে সবাই আড্ডা দেই সেখানে। (মেহের)
~আমাদের সাথে ক্লাসে এলি না কেনো? (কাব্য)
~ইভান ভাই এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ওনার নোটস নিয়ে আসার কথা ছিল। (মেহের)
~কিসের নোটস? আমাকে দে আমিও কপি করবো। (আহিল)
~আরে কচু! বেটায় আসে নাই। কি এক কাজ পড়ে গেছে তাই নাকি বাড়ি যেতে হয়েছে। শুধু শুধু আমি এতক্ষন অপেক্ষা করলাম। এলো তো না ই। (বিরক্ত স্বরে বলে মেহের)
~সুফিয়ান ভাইয়া আর আয়মান ভাইয়া চলে গেছে?(স্নেহা)
রুদ্রর কথা শুনেই মেহেরের বুক ধক করে উঠলো। শুকনো ঢোক গিলে চেহারায় কৃত্রিম রাগ ফুটিয়ে বলে,
তোর কি মনে হয়? না গিয়ে আমার সাথে ওই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সংসার পেতেছে নাকি! আজব! (মেহের)
~আরে! তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো? কুল ডাউন। ও তো জাস্ট নরমাল একটা প্রশ্ন করেছে। (কাব্য)
~আমার ভালো লাগছে না এত প্রশ্নের জবাব দিতে। এসেছি পর থেকে এত প্রশ্ন করছিস কেন তোরা! অসহ্য লাগছে। প্লীজ চুপ যা।
মেহের এটুকু বলে চুপচাপ ব্যাগ থেকে বই বের করে বই এ মনোযোগ দিয়ে বসে থাকে। স্যার ক্লাসে এসেছে দেখে কেউ আর কিছু বলে না। মেহেরের আচরণে দিয়ার কিছুটা খটকা লাগলো। তাই দিয়া মেহের কে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
কিছু কি হয়েছে মেহের? এমন করলি কেনো সবার সাথে?
বই এর দিকে চোখ রেখেই মেহের বলে, পরে সব বলবো তোকে। ভার্সিটি শেষে আমার সাথে চলিস।
দিয়া 'আচ্ছা' বলে ক্লাসে মনোযোগ দেয়।
.
পার্কের একটা বেঞ্চ এ বসে আছে দিয়া আর মেহের। মেহের এর কাছে রুদ্রর বলা সব কথা শুনার পর থেকে থম মেরে বসে আছে দিয়া।
~দোস্ত! আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ঐটা রুদ্র ভাইয়া ছিল। দেখতে কি ভদ্র আর ইনোসেন্ট। ওই লোক এমন কাজ করলো! উনি এরকম হলে নির্ঘাত ওনার পি এ ও ওনার মতই। "সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে" যদি ভাইয়ার পি এ টাও ওনার মত হয়!
মেহের অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলে,
তুই এতক্ষণ এই সব ভাবছিলি! আর আমি ভেবেছি যে তুই এই ঝামেলার থেকে আমার মুক্তির উপায় খুঁজছিস।
~আরে ধুর কচু! রুদ্র ভাইয়া এমনিও তোকেই বিয়ে করবে। শুধু শুধু তোদের আলাদা করার প্ল্যান করে কি ফ্রী তে কেলানী খেতে যাবো নাকি! যা বুঝলাম রুদ্র ভাইয়া তোকে ভীষণ ভালোবাসে। দেখিস রুদ্র ভাইয়া ই আমার দুলাভাই আর তোর বর হবে।
দিয়ার কথা শুনে এইবার যেনো মেহের এর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। তার বোনের মতো বান্ধবী কিনা শেষে ওই রুদ্রর সাপোর্ট নিয়ে মীরজাফর এর মত পল্টি মারলো! এইটা মানা যায়! নাহ! যায় না। মেহের পারলে এবার বাপ্পারাজ এর মত বলে উঠতো "এ আমি বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করি নাআআআ!!!" কিন্তু কি আর করার বিশ্বাস করতেই হবে যে তার বান্ধবী ইতোমধ্যে রুদ্রকে মেহেরের বর হিসেবে মেনে নিয়েছে। মেহের এবার করুন দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে চেয়ে বলে,
এমন করতে পারলি দিয়া! ঠুস করে পার্টি বদল করে ফেললি! ওই বেটাকে আমি বর বানাতে যাবো কোন দুঃখে? এতো রাগী মানুষের সাথে আমি কোনো মতেই থাকতে পারবো না। কখনোই না। তুই কি বলিস? স্নেহাকে বলি ও যেনো ওনাকে বোঝায় যেনো আমাকে এইভাবে ডিস্টার্ব না করে।
~তা বলে দেখতে পারিস। কিন্তু আমার মনে হয় না যে স্নেহার কথা রুদ্র ভাইয়া শুনবে। তাও চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই।
~এখনই স্নেহাকে কল করে সব জানিয়ে দেই তবে।
~আচ্ছা
মেহের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে নানি বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় মেহের টের পায়নি। দেখতে দেখতেই আবারও নানীর কল আসে, মেহের সাথে সাথেই কলটা রিসিভ করে। ও পাশ থেকে চিন্তিত কণ্ঠে নানি বলে,
কোথায় আছিস মেহের? এতবার কল দিলাম ধরলি না কেন? জানিস কত দুশ্চিন্তা হচ্ছিল!
~চিন্তা করো না, ঠিক আছি আমি। আসলে ফোনটা সাইলেন্ট ছিল। তাই বুঝতে পারিনি।
~আচ্ছা। তুই জলদি বাড়িতে আয়। তোর মা তোকে আর তোর বন্ধুদের জলদি বাড়িতে আসতে বলেছে। আমি তোর বাকি বন্ধুদের জানিয়ে দিয়েছি। ওরা বললো দিয়া নাকি তোর সাথে। তাহলে তুই দিয়াকে তোর সাথেই নিয়ে আসিস।
~কেনো? কি হয়েছে?
ওপর পাশ থেকে নানি কিছু বলতেই একরাশ গম্ভিরতা মেহের চোখে মুখে ভর করে। গম্ভীরভাবেই বলে,
মা কি বাড়িতে আছে?
~হ্যাঁ
~আমি আসছি।
দিয়া এতক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে মেহেরের দিকে চেয়ে ছিল। মেহের এর মুখভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারে বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে। তাই চিন্তিত কণ্ঠেই জিজ্ঞেস করে,
কি হয়েছে?
~তোদের সবাইকে বাড়ি যেতে বলেছে।
~কেনো?
~বাড়ি গেলেই বুঝবি। চল।
পার্ক থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে মেহের আর দিয়া মেহেরের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
🍂বর্তমান🍂
~বাড়িতে আসার পরের ঘটনা তো তোরা জানি ই। আর এমনিও আমরা নিজেরাই জানতে পারেছি আজকে। আর উনি এতই ফাস্ট যে আমরা তোদের জানানোরই সুযোগ পাইনি। সরি (মাথা নিচু করে বলে মেহের)
~বিয়ে না হতেই উনি! বাব্বাহ! ( দুষ্টু হেসে বলে আহিল)
~রুদ্র ভাইয়া তোর জন্য এত্ত পাগল ভাবতেই মাথা ঘুরাচ্ছে। বাপরে বাপ। (মাথা ধরে দিয়ার পাশে ধুপ করে বসে যায় কাব্য)
~যাই বলিস সুফিয়ান ভাইয়া তোকে বউ বানাবে ভেবেই অনেক খুশি লাগছে আমার। আমি অনেক খুশি। তিব্রর আরেক ভাই থাকলে দিয়া কেও জা বানিয়ে নিয়ে যেতাম। তিন বান্ধবী একই বাড়ির বউ। হায়!!!
~উহুম উহুম!!! আয়মান ভাইয়া আছে তো। তাকেও সবাই ওই বাড়ির ছেলেই ভাবে। (আড়চোখে দিয়ার দিকে চেয়ে বলে মেহের)
আয়মান এর কথা শুনতেই দিয়ার বুক ধক করে উঠে। আয়মান এর কথা ভাবতেই গালে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়ে।
~ধুর তোরাও না কি উল্টা পাল্টা বলিস! (অপ্রস্তুত হয়ে বলে দিয়া)
~তোর না তার প্রতি ক্রাশ আছে! তাহলে তো তোকে বিয়ে দেওয়াই যায়। আন্টিকে বলি? (আহিল)
~দুই বান্ধবীর বিয়ে এক সাথে হলে খালি খাওয়া আর খাওয়া। ওরেহ!!! হ্যা বলে দে দিয়াইন্না। (কাব্য)
কাব্যের মাথায় এক চাপড় মেরে দিয়া বলে,
বাড়ি যেতে হবে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম।
বলেই ব্যাগ নিয়ে এক দৌড় দেয় দিয়া। দিয়ার যাওয়া দেখে সবাই হু হা করে হেসে উঠে।
~~~
চলবে~
(সবাইকে কি নেক্সট রোগে ধরলো নাকি?😒 গল্প সম্পর্কেও তো কমেন্টস করতে পারেন নাকি! যা দেখলে লেখিকার উৎসাহ বাড়বে😒)
0 Comments:
Post a Comment