গল্প: বাধন হারা বেনী
পর্ব:২৪
লেখনী:সানজিদা আহমেদ শাহারা
আলোরার বাড়িতে তার ভাইবোনেরা সিফ্ট হয়েছে কালকেই।সন্ধ্যার পরপরই ভার্সিটির বাচ্চারা ফিরে গিয়েছে দেশের উদ্দ্যেশে রয়ে গিয়েছে মেহরাব।আলোরা তার ফ্লাটের বেলকনিতে বসে আদা আর লেবু দিয়ে গরম গরম হালকা লাল চা খাচ্ছিলো।তার মনটা আজ বড্ড অস্থির কাফি হয়তো বাঁচবে না দুটো দিন কিভাবে যে কেটেছে আলোরার ভাবতেই মাথায় তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে।মেহরাব রুপী মানুষটা কেমন জানি গা বাওয়া। প্রচুর গা ঘেসে চলাফেরা করে।আলোরার মন খারাপ হয়ে যায় আজ মেহরাব থাকলে সে কি এতটা একা হয়ে পড়তো কোথায় আছে লোকটা কে জানে।চোখ বেয়ে টুপটাপ পানি পড়তে থাকে তার।পেছন থেকে তাকে শক্ত করে জঠিয়ে ধরে সোমেহরা।
সোমেহরা জানে মেহরাব রুপী যে ঘুরছে সে আসলে মেহরাব না।আলোরা তাকে প্রমানসহ বলেছে, অবশ্য আলোরা এমনি বললে ও সে বিশ্বাস করতো।কিন্তু বাকিরা জানে না। মেহরাব রুপী জিন টার সামনে সব টা সবাইকে বলা ও যাবে না পাছে সে টের পেয়ে গেলে উৎপাত শুরু করতে পারে।
সোমেহরা- চিন্তা করিস না ভাই ভালো আছে।
আলোরা- আপু তোমার কথায় যেনো সত্যি হয়।
সোমেহরা- চল খেতে চল।
আলোরা- না আপু ভালো লাগছে না।
সোমেহরা- আহা চলতো একটু খেতে হয়।
আলোরা জানে যত সময় না সে যাবে এভাবেই তাটা ছেচড়া চলতে থাকবে এজন্য সে উঠে দাড়ায় আর চলতে শুরু করে।সোমেহরা ও তার পিছু পিছু আসতে থাকে।রাতের খাবার খেয়ে যে যার মতো ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।
আলোরা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছিলো তখন তার কিছু একটা মনে পড়ে এরপর সে যায় মেহরাব রুপী জিন যে রুমে ঘুমাচ্ছে সেই রুমে।আলোরা জানতো জীনেরা ঘুমায় না।তার তাই মনে হতো তবে তার সেই অদৃঢ় ধারনাকে মিথ্যা প্রমান করে দিয়ে জীনটা ঘুমাচ্ছিলো।আলোরা তার কড়ে আঙুল ধরে আয়না তার মুখ বরাবর ধরে আয়তুল কুরছি পড়তে শুরু করে ব্যাস একটু বাদেই জীনটি আয়নায় বন্ধি হয়ে যায়।আলোরা হাসে হেসে আয়না টা নিয়ে রুমে চলে যায়।এরপর আয়নাটাকে সামনে এনে প্রশ্ন করে
আলোরা- কে তুমি? কেনো মেহরাব ভাই এর রুপ নিয়েছ?
জীন- আমি তাসাতুল্লাহ মাকরিম।আমার কাজ হলো মানুষপর রুপ নিয়ে তার জীবনের সকল প্রকার ভালো সম্পর্ক নষ্ঠ করে দেওয়া।
আলোরা- তুমি কারণ ছাড়া এনন করবে কেনো?
জীন-কারণ আমাকে হুমুম দেওয়া হয়েছে।
আলোরা- কে দিয়েছে।
জীন- মাজহারার সালেতাজ।
আলোরা- সে আবার কে?
জীন- তিনি আমার ওস্তাদ।আমার জীন ওস্তাদ।
আলোরা- আর তিনি তা কেনো করেছেন?
জীন- সে কথা যেয়ে তোর বসকে জিজ্ঞাসা কর।
আমাকে প্রশ্ন করার তুইকে।
আলোরা- পড়ব আয়তুল কুরছি, দেবো ফু তারপর দেখ আমি কে।
জীনটি আলোরার কথা শুনে ভয়ে না না করে ওঠে।আলোরার দুর্বিপাক যেনো শেষই হচ্ছে না।এখন মেহরাব কাছে থাকলে সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কষে কয়েকটা চুমু খেতো।যতই এমনটা ভাবুক মেহরাব এর সামনে সে জমে বরফই হয়ে যায়।আলোরা ভাবুক হয়ে যায়।আয়নাটা তার আলমারির এক গোপণ ড্রয়ারে রেখে দেয় সে।তারপর শুয়ে পড়ে বিছানাতে।কালকে সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে আর সবার আগে মেহরাব ভাইকে উদ্ধার করতে হবে।
অন্যদিকে মেহরাব এর যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে একটি কাঠের চার দেওয়াল এর মধ্যে আটকা অনেকটা কফিনের মতো। হঠাৎ করে ঘাবড়ে গেলে ও তারপর সে নিজেকে সংযত করে ভয় করলে বা উত্তেজিত হলে সে মারা যেতে পারে।
মারা যাওয়া যাবে না।কি করবে বুঝতে ও পারছে না।সে খেয়াল করল বেশ খানিক টা দুর থেকে একটা ঘন্টা নড়ার আওয়াজ আসে অথাৎ আশে পাশেই কোথাও চার্চ আছে।মেহরাব ধীরে ধীরে নিজেকে শান্ত করলো ফোন টা হাতের কাছে আছে কিনা খোজার চেষ্টা করলো পেয়ে ও গেলো এক পার্সেন্ট চার্জ আছে। কাকে ফোন দিবে? সোহরাব নাকি আলোরা? সোহরাব তাকে উদ্বার করতে তো পারবে কিন্তু এই জায়গা চিনে আসতে আসতে অনেক দেরি না হয়ে যাবে।আলোরা এখানকার অনেক বছরের অধীবাসী তাই সে দ্রুত আসতে পারবে।মেহরাব ফোন দেয় আলোরাকে কিন্তু ফোন যায় না পরপর চেষ্টা করে না পেয়ে লোকেশন পাঠায় আর একটি ভয়েস ম্যাসেজ।কিন্তু সেন্ড হয়েছে কিনা বোঝার আগেই হাতে থাকা ফোন টা বন্ধ হয়ে যায়।আলোরার ঘুম টা ঠিক হচ্ছে না এপাশ ওপাশ করছে কেন?বেড সাইডের পাশে রাখা ফেনটায় টং করে একটা আওয়াজ হয় আলোরা উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে চুপি সারে বেরিয়ে যায়।তাকে ফলো করে সোহরাব ও বের হয়ে পড়ে।দুজনে এসে গাড়ির কাছে মিট করে এক সাথে বাকি পথ যায়।অন্যদিকে মেহরাব এর অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে সে তার হাতে থাকা বন্ধ হয়ে যাওয়া ফোনটা দিয়ে কাঠের দেওয়াল গুলোতে আঘাত করতে থাকে। এভাবে আঘাত করতে করতে একটু ফাটে কাঠের দেওয়াল টা।মেহরাব এর তখন মনে পড়ে খুব ছোট বেলা একবার কেডি পাঠকের আদালতে এমন একটি দৃশ্য সে দেখেছিলো।তবে এমন অবস্থার সম্মুখীন যে সে কখনো হবে তা তার জানা ছিলো না।আসলে পৃথিবী বড়ই বৈচিত্র্যময়। সেই ফাটা জায়গায় সে আরো কয়েকবার আঘাত করে আঘাত করা জায়গা দিয়ে একটু বাতাস আসে।মেহরাব যেনো হাপ ছেড়ে বাচে।কিন্তু তার শরীর দুর্বল থাকায় সে আবার ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে।এদিকে আলোরারা লোকেশন অনুযায়ী জায়গাতে এসে পৌছায় কিন্তু কোন ভাবেই সেই জায়গার পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই যে কাঙ্খিত বস্তু পাওয়া মুসকিল তো বটেই অনেক টা না মুমকিন ও।হঠাৎ কোথা থেকে কয়েকটা কালল বেড়াল এসে তাদের উপর আক্রমন শুরু করে তারা ভীত হয়ে পড়ে এরপর আক্রমন প্রতিহত করার চেষ্টা করতে থাকে।
চলবে...
0 Comments:
Post a Comment