#suddenly_fall_in_love
#লেখনীতে_সামিয়া_স্নিগ্ধা
#পর্ব_০৪
আকাশে রোদের ছিটেফোঁটাও নেই। মেঘলা আকাশ। উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া বইছে।কলেজের ছেলে-মেয়েরা মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
ক্লাস করে বেরিয়ে কলেজ মাঠে বসে আছে মাওয়া আর আরুশি। আরুশির বেশ মন খারাপ।সে তো আসতেই চায়নি। মাওয়া তাকে জোর করে নিয়ে এসেছে। আরুশিকে এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মাওয়া রীতিমতো বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। বিরক্তি নিয়েই বলে উঠলো,,,,
-এই হয়েছে টা কি তোর? এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন?
-কিছু না। ভালো লাগছে না।
-এই আগে তো তুই এমন ছিলি না। কদিন ধরে দেখছি একদম চুপচাপ হয়ে গেছিস?কি হয়েছে তোর?
-বললাম তো কিছু না। শরীর ভালো লাগছে না।
মাওয়ার দৃষ্টি মাঠের অপর প্রান্তে কলেজ গেইটে পড়তেই আরুশিকে বলল,,,
-ঐ দেখ,ভাইয়া আর ওর ঐ বন্ধুটা না?
মাওয়ার কথায় ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায় আরুশি। মাহমুদ আর তন্ময় ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মাওয়া বলল,,,
-চল,চলে যাই।
-কেন?নিজেই তো এসেছিলি আমাকে নিয়ে,এখন চলে যেতে চাইছিস কেন আবার?
-এত কথা বলতে ভালো লাগে না চল তো।
বলে টেনে দাঁড় করালো আরুশিকে। হাত ধরে টানতে টানতে একদম কলেজ গেইটের কাছাকাছি এসে পড়ল। তন্ময়দেরকে ক্রস করেই কলেজ গেট দিয়ে বেরোতে যাবে এমন সময় তন্ময় বলল,,,,
-আমাদের দেখে এভাবে পালাচ্ছো নাকি?
মাওয়া হেটে যেতে গিয়েও থেমে গেল।পিছু ঘুরে এসে তন্ময়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,
-আপনাদের দেখে পালাতে যাব কেন?
-সেটাই তো দেখলাম,আমাদের দেখেই তড়িঘড়ি করে কলেজ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলে।
-জ্বি না,আমরা এখন এমনিতেও বের হতাম।
মাহমুদ বলল,,,
-দুপুর তো হয়ে গেছে। বাইরে থেকে একেবারে লাঞ্চ সেরে তারপর বাড়িতে যাবি।
আরুশি মাওয়ার থেকে নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,,,
-আচ্ছা তুই তাহলে যা, আমি বাড়িতে গেলাম।
বলে কয়েক কদম এগোতেই মাহমুদ দৌড়ে আরুশির সামনে পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলল,,,,
-আরে,আরে কোথায় যাচ্ছেন?
-বাড়িতে।
-বললাম না সবাই মিলে লাঞ্চে যাব।
-আপনারা যান।আমার ভালো লাগছে না।
-এই জন্যই তো বলছি চলুন। গেলে আপনার ভালো লাগবে।
তন্ময় এগিয়ে এসে বলল,,,
-হুম চলেন ভাব.....
বলতে নিতেই মাহমুদ ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। তন্ময় যে ভাবী বলতে চাইছিল সেটা বুঝতে পারে মাহমুদ। মাহমুদকে এভাবে তাকাতে দেখে তন্ময় চুপ হয়ে যায়।আমতা আমতা করে বলল,,,
-না মানে চলুন।গেলে ভালো লাগবে,মনটাও ফ্রেশ হবে।
মাওয়াও এসে জোর করল। তাই ওদের সবার কথা আরুশি আর ফেলতে পারলো না।
ওরা সবাই মিলে একটা হোটেলে গিয়ে বসল। সবাই একসাথে লাঞ্চ করে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরল।
-----------
কয়েকদিন কেটে যায়,,,,,,,,
আজকে বিকালে মাহমুদ আর তন্ময় গ্রাম থেকে চলে যাবে।
এমনিতেই ওর অনেকগুলো ক্লাস গ্যাপ দিয়েছে। আর ক্লাস মিস দিবেনা বলেই তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে সে। অন্যবার এলে আরো কম থাকা হতো কিন্তু এবার এসে যে এভাবে হঠাৎ করে আরুশির প্রেমে পড়ে যাবে সেটা মাহমুদ ভাবতেও পারেনি।
আরুশির সাথে সময় কাটানোর জন্য, কথা বলার জন্যই এবার আরও কিছুদিন বেশি থেকেছে সে। আরুশির সাথে বেশ ভালো একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে।আপনি থেকে তুমি বলা শুরু করেছে। অবশ্য আরুশি আপনি করেই বলে।তন্ময় আর মাওয়ার মধ্যেও বেশ ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ বন্ডিং তৈরি হয়েছে।
---
পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের তেমন তেজ নেই। উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া বইছে।আরুশি ওর রুমের বারান্দায় চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে বসে বই পড়ছিল। মাওয়া দৌড়ে এসে বলল,,,
-ভাইয়ারা চলে যাচ্ছে।দেখা করতে চায় তোর সাথে।
প্রথমে আলসেমিতে যেতে ইচ্ছে না করলেও কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়ালো আরুশি।গায়ে ভালোভাবে চাদর জড়িয়ে মাওয়ার সাথে বেরিয়ে এলো।
ওদের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আম গাছের নিচে ব্যাগ কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে মাহমুদ আর তন্ময়।ওরা দুজন এগিয়ে যেতেই মাহমুদ বলল,,,,
-চলে যাচ্ছি, সাবধানে থেকো।আর নিজের খেয়াল রেখো।
-কবে আসবেন?
-জানি না।আসছি,বাই।
তন্ময় বলল,,,
-আসছি,ভালো থেকো তোমরা।
মাহমুদ ততক্ষণে কয়েক কদম এগিয়ে গেছে। পিছন ফিরে তন্ময়কে বলল,,,
-আয়,দেরী হয়ে যাচ্ছে আমাদের।
তন্ময় আসছি বলে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
----------------
গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে শহরের দিকে ঘুরতে এসেছে সুমাইয়া আর রাজু। একান্তে নিজেদের মতো করে একটু সময় কাটাবে,ঘুরবে বলে আবদার করেছিল সুমাইয়া,তাই রাজু ওকে ঘুরতে নিয়ে এসেছে।রাস্তার হেডলাইটের আলোয় ফুটপাত ধরে হাঁটছে দুজনে।রাজুর হাতে সুমাইয়ার হাত মুঠো করে ধরা। দুজনে হেঁটে চলেছে।
শীতের সন্ধ্যায় শহরের পরিবেশটাই অন্যরকম। গ্রামে এক রুপ,শহরে আরেক। এভাবে প্রিয় মানুষের হাতে হাত রেখে হাঁটতে বেশ লাগছে সুমাইয়ার।মাথার উপর খোলা আকাশ, প্রকৃতির হিমশীতল হাওয়া আর ভালোবাসার মানুষটির হাতে হাত ধরে হাঁটা,আর কি চাই।
চলবে.......
কেমন লেগেছে?অবশ্যই মন্তব্য জানাবেন।
0 Comments:
Post a Comment