#আমার_রুদ্রাণী
#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা
#part: 44
🍂🍂🍂
গালে হাত ঠেকিয়ে রুদ্রকে দেখছে মেহের। গত আধঘন্টা যাবৎ রুদ্র সারাঘর জুড়ে পায়চারি করছে। পায়চারি বললে ভুল হবে। সে তো রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করছে।
~এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছেন কেনো?
মেহের প্রশ্ন কর্ণপাত হতেই দাড়ালো রুদ্র। একবার মেহেরের দিকে চেয়ে আবারো পায়চারি করতে করতে বললো,
আমি দৌড়াচ্ছি না হাঁটছি।
মেহের ঠোঁট বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো,
এটাকে হাঁটা বলে? তবে দৌড় কাকে বলে?
রুদ্র আবারো দাড়ালো। মেহেরের দিকে চেয়ে রইলো কিছু মুহূর্ত। মেহেরও রুদ্রর দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকালো। রুদ্র দ্রুত পায়ে মেহেরের কাছে এসে বসলো। মেহেরের দু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মেহের চুপচাপ রুদ্রর কার্যক্রম দেখছে। ইদানিং অতিরিক্ত চিন্তায় মগ্ন থাকতে থাকতে লোকটা নিজের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে। দিনে দিনে যেনো রুদ্রের চোখে মুখে এক প্রকার অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে। রুদ্র অনুযোগের সুরে বললো,
আমার খুব ভয় করছে মেহেরজান! তুমি প্লীজ নিজের যত্ন নিবে। তুমি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো না করলে আমার খুব চিন্তা হয়। তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে ভালো থাকা সম্ভব না। তুমি অন্তত আমার জন্য হলেও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেচেঁ থাকার চেষ্টা করবে।
মেহের রুদ্রের কপালে ছড়িয়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলোকে হাত দিয়ে নেড়ে আরেকটু এলোমেলো করে দিলো। রুদ্র চোখ বুজে নিতেই খিল খিল করে হেসে উঠলো মেহের। বললো,
আপনি এতো চিন্তা করেন কেনো সবসময়? কিছু হবে না আমার।
রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেরের কোলে মাথা রাখলো। মেহের পেটে কান পেতে বললো,
শোনো বাচ্চা! আমি সব থেকে বেশি তোমার আম্মুকে ভালোবাসি। তাই পৃথিবীতে আসার সময় তোমার আম্মুকে বেশি কষ্ট দিবে না। নাহলে কিন্তু আব্বু ভীষণ রাগ করবে তোমার সাথে। তখন কিন্তু আর কোলে নিবো না।
মেহের আবারো খিল খিল করে হেসে উঠলো। রুদ্র মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো তার প্রেয়সীর পানে। একটু গলুমলু হওয়ায় আগের থেকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগে এখন মেহেরকে তার কাছে। মেহের ভ্রু নাচিয়ে "কি?" জিজ্ঞেস করতেই রুদ্র মাথা নাড়িয়ে "কিছু না" বুঝালো।
.
মেহের একটু নড়ে বসতেই রুদ্র ধড়ফড়িয়ে এসে মেহেরের কাছে বসলো। বিচলিত হয়ে বললো,
কি হলো? ব্যাথা করছে? হাসপাতাল নিয়ে যাবো?অনেক বেশি খারাপ লাগছে? কথা বলছো না কেনো? জবাব দাও!
মেহের বিরক্তি নিয়ে তাকালো। গত কয়েকমাসে এক প্রশ্ন শুনতে শুনতে কান যেনো ঝালাপালা হয়ে গেলো তার। একটু নড়েচড়ে বসলেই ভাবে মেহেরের পেইন শুরু হয়ে গেছে। মেহেরের বিরক্তিমিশ্রিত চাহনী দেখতেই চুপ করে উঠে ঘরে চলে গেলো রুদ্র। অন্যদিকে আহিল আর কাব্য রুদ্রর এ অবস্থা দেখে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে, পাশে বসে স্নেহা আর তিথি বেগমও ঠোঁট চেপে হাসছে। দিয়া এক প্লেট ফল মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো,
হাসছিস কেনো তোরা?
কাব্য তাদের হাসার কারণ বলতেই আড়চোখে একবার মেহেরের দিকে তাকালো দিয়া। বললো,
ওইদিন এই ফাজিল মাইয়া! রুদ্র ভাইয়ারে ভয় দেখানোর জন্য উফফ বলে উঠছে। আর রুদ্র ভাইয়া আমাকে ধমকাইছে। আমি নাকি ওর খেয়াল রাখি নাই ঠিক মতো।
মেহের ফিক করে হেসে উঠতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো দিয়া। চেঁচিয়ে বললো,
হাসবি না ফাজিল! তোর জন্য শুধু শুধু বকা খাইছি।
মেহের তাও থামলো না। হাসির রেশ আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। কাব্য বললো,
আর যা ই বলিস না কেন! রুদ্র ভাই কিন্তু মেহেরকে নিয়ে হেব্বি পসেসিভ।
~আই এগ্রি (দিয়া)
~ধমক খাওয়ার পর এগ্রি না করে উপায় আছে?
আহিলের কথায় আরো একবার হাসির রোল পড়ে গেলো সারাঘর জুড়ে।
🍂🍂🍂
~এই নে ধর।
~আবার খাবার?
মেহের গাল ফুলিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বাটিতে থাকা আম ভর্তা দেখেই চোখ চিক চিক করে উঠলো। বাটিটা ছো মেরে দিয়ার হাত থেকে নিয়ে খেতে খেতে বললো,
এই বিকেলের সময় কই পেলি? ইশ! আমার আসলেই খেতে ইচ্ছে করছিল।
দিয়া আলতো হেসে মেহেরের সামনে বসলো। মেহেরের পেটে হাত ছুঁয়ে বললো,
আগে বললেই হতো, এনে দিতাম। আচ্ছা ভাগ্নি হবে নাকি ভাগ্নে? ভাগ্নি হলে খুব ভালো হবে।
মেহের হাসলো। বললো,
তুই কবে বাবু নিবি?
দিয়া চোখ তুলে মেহেরের দিকে তাকালো। মিহি স্বরে বললো,
এখন না। আয়মান বলেছে আরো ২ বছর পর নিবে। রুদ্র ভাইয়া আর তীব্র ভাইয়াকে দেখে নাকি তার এতো জলদি বাবু নেওয়ার সখ জানালা দিয়ে পালিয়েছে। ভাইয়াদের মতো সে নাকি সাহসী না। প্রেগনেন্সির খবর পেলেই নাকি সে জ্ঞান হারাবে। তার আর বেহুঁশ হওয়ার জন্য ডেলিভারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে না।
মেহের জোরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তাও যেনো তার হাসি থামছে না। অনেক কষ্ট হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো। হটাৎ ই তার চোখের কোণে অশ্রুর অস্তিত্ব দেখতে পেলো দিয়া। বিচলিত হয়ে মেহেরের গাল ধরে বললো,
কাদছিস কেনো?
মেহের হাসি থামালো। হাতে থাকা বাটিটা পাশে রেখে দিয়ার হাত ধরে বললো,
বাবু হওয়ার সময় রিস্ক অনেক থাকে। মা বাঁচে নাকি মরে ঠিক নেই। আমার যদি কিছু...
দিয়া মেহেরের মুখ চেপে ধরলো। কড়া গলায় বললো,
এসব কি ধরনের কথা! ঠাটিয়ে একটা লাগবো।
মেহের দিয়ার হাতটি সরিয়ে বললো,
আমার কথা শেষ করতে দে দিয়া।
দিয়ার কাতর চাহনী উপেক্ষা করে আবারো বললো,
আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাচ্চাকে আর তোদের ভাইয়াকে তোরা দেখে রাখিস। তোর ভাইয়া আমি বলতে পাগল। আমার কিছু হয়ে গেলে সে যেনো নিজের ক্ষতি না করে। আমি চলে গেলে আমার সন্তানের মাঝেই আমাকে খুঁজে নিবি তোরা।
দিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো। মেহের বিছানায় শুয়ে বললো,
মন খারাপ করার কিছু নেই। আমার কিছু হবে না। যা ঘরে যা। আমি একটু ঘুমাবো।
দিয়া প্রতিবাদী কণ্ঠে বললো,
কেনো তোর ঘরে থাকলে কি হবে?
~ঐযে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদছিস। কান্নার আওয়াজে ঘুম আসবে না।
দিয়া দ্রুত চোখ মুছে বললো,
আমি মোটেও কাদঁছি না।
মেহের মুচকি হাসলো। এই পরিবার, বন্ধুবান্ধব সকলকে পেয়ে নিজেকে বেশ ভাগ্যবতী মনে করে। মাঝে মাঝে নিজের মধ্যেও ভয় কাজ করে যদি ডেলিভারির সময় তার কিছু হয়ে যায়? তখন রুদ্র আর তার বাচ্চার কি হবে? তাকে হারানোর শোকে রুদ্র কি তার বাচ্চার থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিবে? নাকি মেহেরের শেষ চিন্হ বলে বুকে আগলে রাখবে?
~~~
চলবে~
(এই! এই! গঠনমূলক কমেন্ট না করলে নায়িকাকে পরলোকে পার্সেল করে দিবো বলে দিচ্ছি। তখন কিন্তু বলতে পারবেন না যে স্যাড এন্ডিং দিলাম কেনো। অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্টস করবেন। আর হ্যা, হ্যাপি রিডিং~)
0 Comments:
Post a Comment